ফের সিংহাসন পুনরুদ্ধার। রাজা পুরু হঠাৎ করেই যেন একদিন আলেকজান্ডারকে হারিয়ে দিয়েছিলেন যুদ্ধে। আসলে ইতিহাস যদিও অন্য কথা বলে। আর তাতেই গোটা বিশ্ব জুড়ে, বাংলা জুড়ে, হৈ চৈ হুল্লোড় পড়ে গেছিল। উৎসব পালন হলো। কেক কাটা হলো। আতশবাজি প্রদর্শনী করা হলো। একদম ঠিক যেনো সেই হীরক রাজার দেশে হীরকাব্দ ঘোষণা করা ঢাক ঢোল পিটিয়ে উৎসব করে সবাইকে জানান দিয়ে।
দিকে দিকে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে আমরা ১৪ বছর পর সিংহাসনচ্যুত করতে পেরেছি সেই বাংলার সেরা একনম্বর চ্যানেলকে। ঘাড় ধরে টেনে মাটিতে নামাতে পেরেছি তাদেরকে অনেক কষ্টে। যদিও সেটার জন্য ব্র্যান্ডিং এর ভরসা ছিল সবটাই খবরের কন্টেন্ট এর থেকে। কিন্তু সারা জীবন প্রায় এক ভাবেই ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া এক ছাত্র কেমন হঠাৎ করে দ্বিতীয় হলে খটকা তো লাগেই। এই ফলে আবার দুধে জল মেশানো নেই তো। ঠিক ওই যোগ্য আর অযোগ্যদের মতই।
সাধারণ বাসে ট্রামে বাদুড় ঝোলা হয়ে অফিস করা ভেতো বাঙালি। দু বেলা যাদের জেলুসিল না হলে ঠিক ভাত হজম হয় না। সেই সন্ধ্যা হলেই গাল দিলেও পাউডার মেখে ফিনফিনে পাঞ্জাবি পড়ে ঘন্টা খানেক সময় ব্যয় না করলে যাদের রাতের ঘুম হয় না। সেই পরদিন কাগজে চোখ রেখে ট্রেনের কামরায় চিৎকার করে বলা ওই যতই দিদির চ্যানেল এক নম্বর বলে চিৎকার করুক ওই বাংলার আর বাঙালির রক্তে মিশে গেছে যে চ্যানেল অনিন্দ্য আনন্দ দেয় বাংলার দর্শককে সেই চ্যানেল দেখেই তো আমাদের দিন কাটে। তাহলে কি করে এই আনন্দ দেওয়া চ্যানেল দু নম্বর হয় কে জানে। ট্রেনের ভীড়ে ফিসফিস করে আওয়াজ ওঠে দাদা সব হয়। চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি হয় আর চ্যানেলের নম্বর নিয়ে দুর্নীতি হয় না এটা কি আর বিশ্বাসযোগ্য?
সত্যিই তো দুর্নীতি এখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এই বাংলায় মা মাটি আর মানুষের আমলে হয় কে নয় আর নয় কে ছয় করেই তো চলছে সবকিছু। সেখানে এই টিআরপি রেটিং এ একটু এদিক ওদিক করতে কি আর লাগে। একটু ক্ষমতা আর একটু অর্থ আর প্রভাব ও প্রতিপত্তি। এই জিনিস গুলো থাকলেই হয় আর সাথে মা মাটির আশীর্বাদ। সেই নিয়েই তো হঠাৎ করেই দ্রুত গতিতে উত্থান। উল্কার বেগে ছুটে চলা। হাত নেড়ে সবাইকে জানান দেওয়া আমরাই সেরা, আমরাই সেরা। কিন্তু তার রেশ একবছর ধরে রাখা গেলো না। আজ সকালে এই লক্ষ্মীবারে আমার কাছে উড়ে এলো সেই টিআরপি রেটিং। দেখা গেলো ক্লাসে বরাবর এর প্রথম হওয়া ছাত্র আবার প্রথম হয়েছে।
কোনোও উৎসব নেই, আতিশয্য নেই, চিৎকার নেই, কেক কাটা নেই, ঢাক ঢোল পিটিয়ে নিজের সেরা হবার খবর চিৎকার করে অন্যদের বলা নেই। একদম বেশ নিশ্চিন্তে নিরাপদে নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে আবার খবরের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ানো হাসিমুখে। ভাবটা এমন, এমন তো কতই হয়। এর জন্য আর হৈ চৈ হুল্লোড় করে কি হবে। সত্যিই অসাধারণ এই চ্যানেলের টিআরপির ওঠা আর নামা।
সিংহাসন পুনরুদ্ধার - অভিজিৎ বসু।
দশ এপ্রিল দু হাজার পঁচিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন