সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় পঙ্কজ দত্ত

বহুদিন আগে এক বর্ষার দুপুরে তিনি আমার কাছে ফিরে এসেছিলেন একদিন হঠাৎ করেই। আবার মৃত্যুর এতদিন পরেও তিনি আবার ফিরে এলেন আমার কাছে আচমকা এক রাতের বেলায়। কী জানেন এই জীবন আর মৃত্যুর দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা। এই জীবন আর মৃত্যুর সীমারেখার এপার আর ওপারের মাঝে থমকে হঠাৎ করেই দাঁড়িয়ে পড়া। হারিয়ে যাওয়া মানুষের স্মৃতিকে বুকে আগলে নিয়ে একা একদম একা।


 সত্যিই এই ভাবে তিনি ফিরে আসবেন আমি স্বপ্নেও ভাবিনি কোনওদিন। একটা অচেনা নম্বর থেকে আমার হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের মাধ্যমে একটা লিংক আসা। সেখানে লেখা ভাই দেখবেন, সহযোদ্ধা। আমি একটু অবাক হয়েই লিংক খুললাম। লেখা মুখর বাংলাতে ইন্দ্রানী। লেখা দ্য ম্যান নেভার ডাইস। সত্যিই তো মানুষ কী আর সত্যিই মরে যায়। তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে তিনি বেঁচে থাকেন। 

সেই প্রয়াত প্রাক্তন পুলিশ কর্তা পঙ্কজ দত্তর স্ত্রী একটি ইউটিউব চ্যানেলে বলছেন নিজের জীবনের কথা। জীবনের হঠাৎ করে সেই প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে তিনি একটু যেনো কেমন যেন বেসামাল হয়ে গেছেন। নিজের প্রিয় মানুষটা আজ আর তাঁর পাশে নেই। আর সেই তাঁর নানা স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে পঙ্কজ বাবুর মোবাইল ফোনে তিনি খুঁজে পেলেন এক সাংবাদিকের নিজের ব্লগের একটি লেখা। ব্লগের নাম আঁকিবুঁকি। যেখানে এক পুলিশ কর্তার ফোন নিয়ে এক সাংবাদিক কিছু তাঁর অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে তিনি তাঁর হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে ফিরে পাচ্ছেন। 

আসলে আমার এই নানা মানুষকে নিয়ে লেখা, নানা জনকে নিয়ে লেখা নিয়ে কতজন কতকিছুই যে বলে আমায়, হাসে বিদ্রুপ করে তার ঠিক নেই। আমার এই এলোমেলো, এলেবেলে বিন্দাস জীবনে আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় আমি লিখে যাই সব হারিয়ে যাওয়া জীবনের নানা কথা। যেখানে থাকেন পঙ্কজ বাবুর মত পুলিশ কর্তা, নানা সাংবাদিক, আবার গ্রামের মেঠো মানুষজন এর কথাও। আর সেই লেখাই তিনি মুখর বাংলা ইউটিউব চ্যানেলে তুলে ধরেছেন। বলেছেন সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি কথা। কেমন ছিল সাংবাদিকদের সাথে এই পুলিশ কর্তার সম্পর্ক সেই কথা।

আমি সেই সবটা শুনে একটু কেমন যেনো থমকে গেলাম। মনে পড়ে গেলো সেই ডাক অভিজিৎ কেমন আছো তুমি। আজ কিন্তু আমায় আর পাবে না তুমি আমি বুক হয়ে গেছি এবিপি আনন্দে। সত্যিই তিনি বুক হয়ে গেছেন একদম। সারাজীবনের জন্য তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন দূরে অনেক দূরে বুক হয়ে। কিন্তু দূরে চলে গিয়েও আজ কেমন করে যেন আবার তিনি ফিরে এলেন এইভাবেই আমার কাছে। 

একজন মানুষের চলে যাওয়া, তাঁর স্মৃতি, তাঁর কথা ধীরে ধীরে কেমন ফিকে হয়ে যায়। তবু সব কিছুর মাঝে এই তাঁর হঠাৎ করেই আবার ফিরে আসা আমার কাছে তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে আমার লেখার মাধ্যমে সেটা একটা অন্য অনুভূতি এনে দিলো যেনো। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। আমার প্রনাম নেবেন আপনি।

 আর যিনি আমার মত এই অকিঞ্চিৎকর একজনের লেখা বের করে পড়লেন তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ প্রনাম জানাই। আপনি এই যে আমার এই ব্লগের লেখা পড়ে সবাইকে জানালেন তাঁর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। জীবনের আঁকাবাঁকা পথে এটাই যে পাথেও আমার। ভালো থাকবেন আপনিও। 

আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় পঙ্কজ দত্ত - অভিজিৎ বসু।
চৌদ্দ এপ্রিল, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ইউটিউব চ্যানেল মুখর বাংলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...