সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হারিয়ে যাওয়া সেই রাজু সেন

সাদা মনের কালো কথায় আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় আজ বিখ্যাত সেই কাগজের সম্পাদক রাজু সেনের কথা। রাজু সেন হঠাৎ ধূমকেতুর মতো যাঁর আবির্ভাব হলো একদিন আমাদের অনেকেরই জীবনে। সেই হাসি হাসি মুখ দেখতে। কোর্ট প্যান্ট পড়া সুন্দর চেহারা ঠিক যেনো বাংলা সিনেমার উত্তম কুমার এর ফিরে আসা এই বাংলায় আবার এই এতদিন পরে। আমরা গুটিকয় মানুষ তাঁকে দেখে বাঁচার স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম ফের। তাঁর কাগজে লিখতে পেরে বাঁচার চেষ্টা করা। কিছু রোজগারের আশায় বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। সেই খবরের শিরোনাম কাগজকে আঁকড়ে ধরে। সত্যিই কত ভাবেই যে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে মানুষ কে জানে। 

আসলে কি জানেন তো যতই মিডিয়ার আঁচ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি আমি পারিনা কিছুতেই। নানা মানুষের উজ্জ্বল মুখের ছবি ঝাপটা মারে এই ভোর বেলায়। মনে পড়ে যায় সেই সব নানা গভীর গোপন যন্ত্রণার কথা। আমার, সমীর এর আর সেই নবান্নের ডিডি নিউজ এর জ্যোতির্ময় এর লড়াই এর কথা। আর সেই হাসিমুখে রাজু সেন এর জবাব দাদা সব ঠিক হয়ে যাবে কোনো চিন্তা নেই আপনাদের। আমি আছি তো নাকি আপনাদের সাথে। মাঝ সমুদ্রে জলে ডোবা মানুষের মতো সেটা শুনেই তাঁকে আঁকড়ে ধরা তাঁকে বিশ্বাস করে। পরিবারকে বাঁচাতে আর নিজে বাঁচতে। 
কিন্তু পারলাম কই বাঁচতে আর এই বুড়ো বয়সে এসে ডুবেই গেলাম নিশ্চিন্তে, নিরাপদে, নির্ভয়ে। 

যদিও বেঁচে থাকতে আমার আজকাল আর ইচ্ছাই করে না একদম। এই ধূলি ধূসর আত্মসর্বস্ব জীবনের মাঝে খালি স্বার্থপর সমাজে হাসিমুখে আর বাঁচতে চাই না আমি। তবু তো মাঝে মাঝে মানুষকে বিশ্বাস করতে ভালো লাগে আমার। মাঝে মাঝেই অজানা অচেনা মানুষকে নিজের ভাবতে বড়ো ভালোলাগে আমার। সেই মানুষের কাছে নিজের অবগুণ্ঠন খুলতে ভালো লাগে আমার। নিজের গভীর গোপন কথা বলতে ভালোলাগে আমার। সেই মানুষের কাছে বাঁচার জন্য স্বপ্ন দেখতে ভালোলাগে আমার। সেই মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে ভালোলাগে আমার। কিন্তু সব ভালোলাগা কি আর সত্যিই জীবনে সব কিছুকে মেনে নিয়ে হাসি মুখে চলতে পারা যায়। 

সেই তাঁর গাড়ী নিয়ে এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটে চলা। সেই কাগজের লেখা পড়ে নিজের নাম দেখে খুশি হয়ে যাওয়া। সেই ওভারল্যাণ্ড কাগজের কথা মনে পড়ে যাওয়া ফের এতদিন পরে। সেই আমার আর সমীরের লড়াই করে যাওয়া দিন রাত কটা টাকার আশায়। জ্যোতির বলা দাদা তুমি বসে আছো কিছু টাকা তো পাবে। সেই ব্যবস্থা হবে। আর সেই একবুক আশা নিয়ে কম্পিউটার এর কী বোর্ডে সকাল থেকে রাত অবধি আওয়াজ তোলা খট খট। সত্যিই অসাধারণ এই মিডিয়ার মহান পেশা। যে পেশার আড়ালে কত কিছুই যে লুকিয়ে আছে। চোরাগোপ্তা আক্রমণ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা তার ঠিক নেই। 

তবু আজ এই ভোর বেলায় ঘুম ভেঙে মনে পড়ে গেলো সেই বিখ্যাত সাংবাদিক রাজু সেন এর কথা, না সেই বিখ্যাত সুদীপ্ত সেন নন। যাঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে তিনি আমার লেখা ছেপেছেন নানা রকম লেখা। আমাদের কাজের সুযোগ দিয়েছেন তাঁর অনুগ্রহে লেখা দিতে পারলাম কিছুদিন। অর্থ দেবেন বলে কথা দিয়েছেন ভরসা দিয়েছেন কিন্তু সব কথা দিলে কি আর সেটা রক্ষা করা যায়। আর তাই বোধহয় জীবনে কিছু কিছু জিনিসকে মেনে নিতে হয় আর মানিয়ে নিতে হয়।

 ধূমকেতুর মতই হারিয়ে গেলো আমাদের সেই সংবাদ শিরোনাম এর দৌড়। সেই সমীর আর আমার দুজনের সেই আলোচনা করে কাগজে হেডিং ঠিক করা। সেই প্রতিদিন কাগজে পোস্ট এডিট আর অ্যাঙ্কর লেখা আমার একটু নিজের নাম আর কটা টাকার আশায়। সেই রাজু সেনের হাসি হাসি উজ্জ্বল মুখ। সেই কয়েকটি পরিবার এর স্বপ্ন দেখা তাঁকে ঘিরে। আশার আলো দেখে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। আর আজ সব কিছুর মাঝে মনে পড়ে যায় হারিয়ে যাওয়া, উধাও হয়ে যাওয়া সেই রাজু সেনের কথা। যাঁকে ঘিরে আমরা সবাই বিশ্বাস করেছিলাম আর স্বপ্ন দেখেছিলাম একটু বাঁচার আর পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন। ভালো থাকবেন আপনি রাজু বাবু। সুস্থ থাকবেন সুন্দর থাকবেন। আপনার কাগজের শ্রী বৃদ্ধি হোক। আর আপনার সেই মোয়ার কথা মনে পড়ে গেলো আমার আজ। ভালো থাকুন আপনি দাদা।

হারিয়ে যাওয়া সেই রাজু সেন - অভিজিৎ বসু।
নয় এপ্রিল দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...