আমাদের দেখা হয়েছিল সেই বিরাটির অফিসে। সেই রাত এর বেলায় বালি হল্ট স্টেশনে নেমে পড়া আমাদের দুজনের। সেই হার্ডকোর সাংবাদিক, নিষ্ঠা নিয়ে পূজো করা এক ব্রাহ্মন। সেই গ্রামের দুর্গা পূজার জন্য ছুটি না পেয়ে সর্বভারতীয় চ্যানেলে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে আসা হাসি মুখে কাউকে একদম পাত্তা না দিয়েই। সেই গাড়ির মধ্য বসে দিল্লী থেকে এক বিখ্যাত সাংবাদিক এর মাধ্যমে বড়ো চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিয়ে কাজের সুযোগ পাওয়া। সেই সেখান থেকে ভাসতে ভাসতে গৌহাটির চ্যানেলে কাজ করা। অফিস এ বিশ্বকর্মা পূজো করা। সেই কবিতার ছন্দময় জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা খেলতে যে বেশ ভালোবাসে বরাবর। রাত গভীর হলে লাস্ট ডানকুনি লোকাল ধরে বাড়ী ফেরা ওর কুকুরের তাড়া খেয়ে ঘরে ফেরা। প্রতীক্ষায় থাকা ওর বাড়ীর দরজায় ওর মায়ের। কথা হয়েছিল একদিন যাবো ওর বাড়িতে। কথা হয়েছিল একসাথে অনেকটা পথ একসাথে কাজ করবো আমরা কিন্তু সেই সব কথা কী আর রাখা যায়। তাই দুজনের পথ চলা আলাদা হয়ে গেছে অনেক আগেই। তবু কেনো জানিনা আজ এতদিন পর হঠাৎ করেই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই সৌরজ্যোতির কথা মনে পড়ে গেল আজ।
সেই সূর্যের জ্যোতি নিয়ে, মুখে অমলিন হাসি নিয়ে, কাব্যময় গলায় কথা বলে, চুলের স্টাইল ঠিক করে, সুন্দর সেজে গুজে ফিটফাট হয়েই বেঁচে থাকা ওর। একদম গ্রামের মেঠো গন্ধকে গা থেকে তুলে ফেলে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হবার আপ্রাণ চেষ্টা করা ওর। মিডিয়ার এই শহুরে জীবনে মেনে আর মানিয়ে নিয়ে চলা ওর। যেটা আমি কিছুতেই পারলাম না তাই আমি টোটো চালক হয়ে বিন্দাস ঘুরে বেড়াই এদিক ওদিক। কারুর কাছে জবাব না দিয়ে আর কারুর কাছে মাথা নিচু করে পা না ধরে আর নিজেকে আত্মসমর্পন না করে। সে যাক গে যে যেভাবে বাঁচতে পারে এই একটা জীবনে। যে জীবন খুব জটিল আর প্রিয়। যে জীবনে জড়িয়ে আছে সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, বেদনা, যন্ত্রণা আর ভালোবাসার স্পর্শ মাখা জীবন। যে জীবনে ওঠা আর নামা।
যে জীবনে শুনতে হয় সিঙ্গুরে আমি নাকি দুধ পান করেছি বেড়ালের মতই লুকিয়ে লুকিয়ে। নিজের ধান্দায় আমি কাজ করেছি সিঙ্গুর আন্দোলনে। শুনে কেমন যেন লাগলো আমার। না, খুব কষ্ট আর পাইনা আমি আমার এই এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবনে। সেই সিঙ্গুরের মেঠো জমি, সবুজ সর্ষে ক্ষেত, সেই বিখ্যাত সব নেতাদের আনাগোনা, সেই সব অন্দোলন এর নানা দিনের উজ্জ্বল সব ছবি। যে ছবির মাঝে কোথাও কোনো ধরনের নিজের সাথে খবরের সাথে সমঝোতা চুক্তি করিনি আমি কোনোদিন। সমঝোতার রাজনীতি করা যেমন উচিৎ নয় ঠিক সমঝোতা করে খবরের দুনিয়ায় টিকে থাকাও ভালো কাজ নয়। আর সেটা ওর মুখে শুনে আমার মনে হলো সত্যিই তো জীবনে সমঝোতা করে বাঁচতে পারলে বোধহয় জীবনটা উপভোগ করা যেতো একটু। ভালোভাবে বেঁচে থাকা যেতো আজ। সেই বিখ্যাত সাংবাদিক বিজেপির বিটের খবর করে এক কলকাতার দাপুটে সাংবাদিককে কিছুটা চাপে ফেলে দিয়ে ওর মজা উপভোগ করা আর হাসি মুখে সেই গল্প করা। এই সমঝোতার কথা শুনে একটু মনটা খারাপ হয়ে গেলো আমার আর কী।
সেই সব দিনের কথা মনে পড়ে গেলো আজ আমার। সেই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে গল্প করা এক সাথে, কবে গৌহাটি থেকে লোক আসবে জানতে চাওয়া, কবে কাজের চিঠি মিলবে সেটা জানতে চেয়ে দুজনের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা আর ধীরে ধীরে স্বপ্নের জাল বোনা। যে স্বপ্ন বাঁচার স্বপ্ন যে স্বপ্ন পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন। যা কবেই আমার দেখা শেষ হয়ে গেছে আজ আমার এই ধূলি ধূসর জীবনে। তবু সেই ফেলে আসা নানা দিনের সুখ দুঃখের স্মৃতির স্বপ্নিল দিন গুলোর কথা আজ মনে পড়ে গেলো আমার এই ভোরবেলায়। ভালো থাকিস ভাই তুই। আর আমি সিঙ্গুরে কেনো কোথাও আমার দীর্ঘ ৩৫ বছরের মরচে পড়ে যাওয়া সাংবাদিক জীবনে সমঝোতা করে লুকিয়ে লুকিয়ে বেঁচে নেই ভাই। আমি আমার সাদা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে এলোমেলো এলেবেলে আর বিন্দাস হয়েই বেঁচে আছি ভাই। কারুর পা না ধরেই আমার মতো করেই। ভালো থাকিস ভাই তুই। আমাকে ভুল বুঝিস না। আর ভুল লিখলে ক্ষমা করে দিস পারলে এই টোটো চালককে।
সূর্যের জ্যোতি নিয়ে উজ্জ্বল সৌরজ্যোতি - অভিজিৎ বসু।
তেরো এপ্রিল দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন