বাড়ীর পাশে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আচমকা দেখা হয়ে যাওয়া তাঁর সাথে। কখনও চায়ের দোকানে। কখনও লাল পার্টির সেই এক সময়ের গমগমে সরু গলির মোড়ে চায়ের দোকানে যে লাল আজ বহু আগেই অস্তমিত সেই ফাঁকা দোকানের সামনে চায়ের ভাঁড় হাতে সস্তার সিগারেট এর ধোঁয়ায় এখনও যিনি মনে করেন বাংলা সংবাদের জায়গাটা ক্রমেই কেমন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে দিন দিন। একটা নতুন কাগজ করলে কেমন হয়।
সেই যাঁকে কলকাতা থেকে গাড়ী পাঠিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে সেই কত বছর আগে এক কাগজের বিখ্যাত কর্তা তুলে নিয়ে তাঁকে যুগান্তর এর পত্রিকায় চাকরি দিয়েছিলেন সেই অমিতাভ চৌধুরী। যিনি সেই চাকরি করে গেছেন কিন্তু একাউন্টস বিভাগে গিয়ে যে বেতন নিতে হবে মাসের শেষে সেটা না বুঝেই খবর লিখে গেছেন মনের আনন্দে মাসের পর মাস। আসলে নিশির মতই নেশায় পেয়ে বসেছে যে সেই কাঁচা বয়সে খবরের নেশা।
যে বয়স আঠারোর স্বপ্ন দেখে জীবনের সাদা কালো রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আপন মনে আর আপন ছন্দে। সেই যিনি বলতে পারেন কাগজ তো সমষ্টিগত মানুষের ফসল। যেখানে উচ্চ নীচ পদ থাকলেও একসাথে মুড়ি খাওয়া সেই জ্যোতি বসু কে গণা বলে ডাকা বিখ্যাত সাংবাদিক এর অনিলদার সাথে কাজ করা। সেই মহীরূহ সব সাংবাদিক মিহির গাঙ্গুলী দা। সেই সময়ের বরানগর হত্যা কান্ড ঘটনার পর যে কাগজ সরকার এর বিরুদ্ধে লিখতে ভয় পায় নি একদম। আজ যা বলা যায় গল্প কথায় সহজেই কিন্তু বর্তমানে দাঁড়িয়ে এই আমলে ভাবাও ভয়ের চিন্তা করা তো দুরস্ত।
সেই আমলের পড়ে ধীরে ধীরে এই বাংলা কাগজের যুগেও চলে এলো কর্পোরেট এর হালকা ছোঁয়া। সেই ৯৬ রাজা রামমোহন রায় সরণীর কাঁচের ঘর বন্দী এডিটর। সেই একটু একটু করে বদলে যাওয়া এই বাংলা কাগজের চেনা সংসার। যেখানে তিনি হয়তো আজকাল পত্রিকায় না গিয়ে অঞ্জন বসুর হাত ধরে প্রতিদিন কাগজেই চলে আসতেন। তবু সেই কবে থেকে শুরু এই পথ চলা শুরু তাঁর। যাঁর হাতের কলমে অনায়াসেই লিখতে পারেন তিনি জলপাই কাঠের এসরাজ। যিনি একদিকে কবি। একদিকে সাংবাদিক। ১৯৭০ দশক থেকে যাঁর কবিতার চর্চা। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'জলপাইকাঠের এসরাজ" ।
যাঁর সাথে দেখা হয় কথা হয় সেই যাঁকে একদিন যুগান্তর পত্রিকায় একটি খবর ফ্রন্ট পেজ ভর্তি খবরে কোনো খবর না ফেলে কি করে নতুন একটি খবর ফ্রন্ট পেজে জায়গা করা যায়।সেই পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন শুধু একটি ছবি ফেলে দিয়ে। যার জন্য জুটলো পুরস্কার কাগজের অফিস এ যার নাম ছিল প্রমোশন। এমন নানা ধরনের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বেরিয়ে এলো একে একে নানা কথা সেই আজকালের আয়নায় নিজের লেখা বের করে দেবার সুযোগের কথাও বলে দিলেন হাসতে হাসতেই।
সেই ত্রিশ বছর বা বেশি সময় এক শহরে থেকেও কত দূরে ছিলাম আমরা। আর আজ এই আয়োজনহীন এক সন্ধ্যায় দেখা হয়ে গেলো তাঁর সাথে আমার এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবনে সমীরের হাত ধরে। সেই কবি মৃদুল দাশগুপ্ত। সেই একদা বিখ্যাত ডাকাবুকো সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্ত যিনি এখনও স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন এই বাংলায় একটা ভালো কাগজ করা যায়। যে কাগজে থাকবে বাংলার মাটির গন্ধ। বাংলার জীববৈচিত্রের নানা রূপ। রাজনীতির ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে সেই কাগজ আর কলম থমকে যাবে না কোনোও ভাবেই।
সেই বরানগর হত্যা কান্ডের ঘটনা লিখতে সেই আমলে হাত কাঁপেনি যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক এর ও কাগজের সাংবাদিকদের। ঠিক সেই সময়কে স্মরণ করেই এই বয়সেও স্বপ্ন দেখেন তিনি বাঙালির যে বাঙালিয়ানা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে নানা পারিপার্শ্বিক চাপে তাকে যে কোনোও মুল্যে ধরে রাখতে হবে। সেই চেনা কাগজের চেনা নিউজ প্রিন্টের সোঁদা গন্ধ, সেই মেসিনের আওয়াজ, সেই ভোরের আলোয় নতুন ঝকঝকে তকতকে সুন্দর একটি কাগজ যে কাগজে লিখতে ভয় করে না। কারুর কাছে জবাবদিহি করতে হয়না। হ্যাঁ, হাতজোড় করে ভিক্ষা পাত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে সাদা কে সাদা আর কালোকে কালো বলতে দ্বিধা, দ্বন্দ আর ভয় হয়না।
সত্যিই যদি এই বুড়ো বয়সে এসে এমন একটা কাগজ করা যেতো কি ভালোই যে হতো। জানিনা আমি আজ আর সেই দিন ফিরে পাওয়া সম্ভব কী না। কোনোও ভাবেই। তবু আমিও আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই বিখ্যাত সাংবাদিক এর মৃদুলদার পুরোনো কিছু এলোমেলো কথা সেই ছবি ধরে রাখলাম। হয়তো একদিন নিশ্চয়ই সেই জলপাই কাঠের এসরাজ এর মতই বেজে উঠবে সেই এসরাজ। বাংলায় ফিরবে নতুন এক স্বপ্ন মাখা ভোর। যে ভোরবেলায় জনমত গঠন করে বেরিয়ে পড়বে বাংলার নতুন এক কাগজ। যে কাগজ সরকার এর নয়। যে কাগজ বিরোধীদের নয়। যে কাগজ শুধুই আমার,আপনার সবার। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। আপনার এই বয়সের স্বপ্ন দেখা সফল হোক। কবিরাই যে স্বপ্ন দেখেন। যে স্বপ্ন বহুদিন পর হয়তো একদিন ভোরবেলায় সত্যিই হয়েই ধরা দেয় আলগোছে।
নতুন স্বপ্ন দেখা মৃদুল দাশগুপ্ত - অভিজিৎ বসু।
এগারো মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন