ফড়িং হয়ে উড়তে যদি মন সারাক্ষণ.. সত্যিই সন্তুর কেনো যে ফড়িং হয়ে উড়তে মন চায় আজকাল কে জানে। হয়তো এটাই ওর জীবনের ইচ্ছা। পাখি হয়ে ডানা মেলতে চায় না ও কোনোদিন। ফড়িং হতে মন চায় ওর। পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছিল সে। ২৪ ঘণ্টার অফিসে ওকে আমি প্রথম অ্যাসাইনমেন্টের টেবিলে দেখলাম। একদম ঠিক নুয়ে পড়া লজ্জাবতী পাতার মতই ওর স্বভাব। যে কোনোও কাজে সন্তু হ্যাঁ, দাদা বলে ঝাঁপিয়ে পড়া। ওর জীবনে না নেই একদম।
সেই একদিন ছুটির পর বাড়ী থেকে মুড়ি এনে সবাইকে খাওয়ানো। সেই সময় অফিসের দাদাদের টেবিলে গিয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে পড়া অনুগত ভৃত্যের মতোই। আর তারপর মুড়ি, চানাচুর আর বাতাসা খাইয়ে দাদাদের মন জয় করা বেশ অনায়াসেই। সেই ইনজেস্টের টেবিলে বসে ছবি ইনজেস্ট করা হোক কিংবা ফাঁকা অ্যাসাইনমেন্টের টেবিলে বসে ব্যাট করে সামলে দেওয়া হোক। তারপর ভাড়া বাড়িতে গিয়ে রান্না করে খাওয়া। বেশ করিৎকর্মা কাজ শিখে নেওয়ার প্রবল বাসনা ওর বরাবর। হাসিমুখ একদম রাগ নেই আর হ্যাঁ দাদা বলে অফিসের দাদাদের সব কাজকে হাসিমুখে দ্রুত সামলে দেওয়ার চেষ্টা করা। সে শৌনক ঘোষ হোক বা শুভ্রনীল ঘোষ হোক। বা আরও বড়ো কোনোও মাতব্বর সাংবাদিক হোক।
যাই হোক আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই সিনেমার সবুজ দ্বীপের রাজার সিনেমার সন্তু নয় এ হলো গ্রাম থেকে কাজের খোঁজে মিডিয়ার কাজ করতে আসা সন্তু। যে সন্তু গ্রাম থেকে শহরে এসে বেশ দিব্যি মানিয়ে নিয়েছে আর মেনে নিয়েছে অনেক কিছুই। ও জেনে গেছে যে এই শহুরে কর্পোরেট দুনিয়ায় কী করে টিকে থাকতে হয়। দাদাদের মনের মত হয়ে চলতে হয়। সত্যিই অসাধারণ কিন্তু ওর জীবনের এই দর্শন। একদিকে ওর মন ফড়িং হয়ে উড়তে চায় আবার অন্যদিকে ও কর্পোরেট দুনিয়ায় নিজেকে গ্রাম থেকে শহরে এসে অভিযোজিত হয়ে দিব্যি সুখেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। এই দুই এর মেল বন্ধন বেশ কঠিন কাজ কিন্তু আমি মনে করি ও এই কাজে ভালোই সফল।
ওর এই যেখানে যেমন যখন যেমন নীতি আমায় বেশ মুগ্ধ করে। এই মুগ্ধতা থেকেই আমি আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় ওকে নিয়ে লিখতে বসলাম এই ভোরবেলায়। সেই মেদিনীপুরের গ্রামের ছেলে সেই ২৪ ঘন্টা থেকে অন্য এক বড়ো টিভি চ্যানেলে কাজ করে আবার ঝাঁপ দিয়ে ৯ থেকে ওর ১৮ তে চলে যাওয়া আমার বেশ ভালই লাগে ওর এই ঝাঁপ ঝাঁপ খেলাও। সত্যিই আমি নিজেও সন্তুর একজন ফ্যান। গুণমুগ্ধ ভক্ত ওর। এই কর্দমাক্ত পঙ্কিল পথে সামলে নিয়ে নিজে বেশ ধরে ধরে ব্যাট করতে পারে ও। যেটা আমার অন্ততঃ নেই চরিত্রে। আমার কাছে হয়তো কাজের সুযোগ হয় কিন্তু আজ মনে হয় সন্তুকে দেখে শেখা উচিৎ আমারও। যে শিক্ষা আমি এই বুড়ো বয়সেও শিখতে পারলাম না সেটাই শুধু হেঁসে ও করে দেখিয়ে দিলো।
সেই ডেবরা পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এসে দিব্যি পরপর তিনটি কর্পোরেট মিডিয়ার অফিসে কাজ সামলে দিয়ে ঠিক গাভাস্কার এর মতই বল সামলে দিচ্ছে ও। পেশ বল, স্পিন বল, গুগলি বা অন্য যে কোনো কঠিন বল সামলে দিয়ে খেলছে সে হাসিমুখে। কতদিন যে ওর সাথে দেখা হয়নি আমার। সেই দাদা বলে মুড়ির কৌটো খুলে বলা দাদা নাও তুমি। আর আমরা সব ভুখা সাংবাদিক তাতেই ঝাঁপিয়ে পড়তাম তখন।
সেই মিডিয়া সিটির ১১ তলা পরে ওর ১৪ তলায় চলে যাওয়া। তারপর সোজা ঝিল পাড়ের অন্য বিল্ডিংয়ে আরও বড় চাকরিতে প্রবেশ করা ওর। যেটা আমার মনে মনে ওকে হ্যাটস অফ বলতে ইচ্ছা হয় আমার। ভালো থাকিস ভাই সন্তু। আর যদি পারিস আমায় এই যখন যেমন তখন তেমন কী করে অভিযোজিত হতে হয় সেটাই একটু দেখিয়ে দিলে সুবিধা হয় আর কী আমার যদি বুড়ো বয়সে তোর থেকে কিছু বেঁচে থাকার মন্ত্রটা কী, সেটা শিখতে পারি আর কী।
যাক ভালো লাগলো আমার এই সন্তুকে দেখে। যে সন্তু আকাশে উড়তে ভালোবাসে না। যে গ্রামের গন্ধ গায়ে মেখে ফড়িং এর মত তার মন যেনো উড়তে পারে সেটাই মনে মনে চায় সে। হাসি মুখে ঘুরে বেড়াতে পারে। আর সেই খিদে পেলে গ্রামে ওর মায়ের হাতে মুড়ি ভাজা এনে খেয়ে আর অন্যদের খাইয়ে আনন্দ দিতে পারে আমাদের সেই সবার ভালোবাসার আর সবার প্রিয় আমাদের হাসিখুশি সেই সন্তু। ভালো থাকিস ভাই সন্তু। কতদিন যে দেখা হয়নি তোর সাথে। মুড়ি খেতে পারিনি তোর বাড়ির। যে মুড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যেতো অফিসে এক সময়।
সত্যিই এমন কত যে চরিত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কে জানে। ভালো থাকিস ভাই সন্তু। দেখা হলে কিন্তু মুড়ি খেতে হবে সেই গ্রামের মিষ্টি মুড়ি।
আমাদের সন্তু - অভিজিৎ বসু।
ছয় মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন