সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলা সংবাদপত্রের দিনবদল

সাত সকালে ধড়মড় করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো আমার। আগের রাতের ঝড়,জল,বেমক্কা গাছপড়া, নারকেল গাছের মাথায় বাজ পড়া, দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠা, রাস্তায় এদিক ওদিক আমগাছের নিচে আম পড়ে থাকা। বাজারে লিচুর একশো টাকা বান্ডিল ধরে দর হাঁকা। এই সব দেখতে দেখতে ভোর বেলায় সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে গেলাম আমি বোলপুর স্টেশনে। 


সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই কাগজ দেখার বাসনা নিয়ে বেঁচে থাকা আর কি। তার ওপর আবার এই শিক্ষক আর পুলিশের লাঠালাঠি আর লাথালাথির ঘটনার কথা দিনভর টিভির পর্দায় দেখে চোখ ব্যথা হয়েছে প্রায়। চোখ বুজলেই সেই সব বিখ্যাত কানে দুল মাকড়ি পড়া আর পায়ে দামী জুতো আর সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পড়া নেতার হাসি হাসি মুখ আর চ্যালা চামুণ্ডা পরিবৃত হয়ে নিজের ঢক্কা নিনাদ দেখতে দেখতে ক্লান্ত এই বিশ্ব বাংলার আপামর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

 আসলে এই বঙ্গে এখন মা মাটি মানুষের সরকার চলছে। এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। লাল পার্টির লাল চক্ষু ওলা নেতাদের সেই কঠিন আদর্শ মেনে চলা বাম আমলের নেতাদের লাল চা খেয়ে দিন যাপনের দিন শেষ হয়েছে কবেই। এখন তো মুক্ত অর্থনীতিতে ট্রাম্প এর জমানা চলছে। বিশ্ব বাণিজ্যের দুয়ার খুলে গিয়েছে কবেই। সেই বাণিজ্য যে করেই হোক। চাকরি বেচে, চাকরি খেয়ে, লাঠি পেটা করে, লাথি মেরে, যে ভাবেই হোক বাজার করো, ব্যাগ ভরো আর নিজের ঘরে টাকা করো। এটাই যে এখন এই পশ্চিমবঙ্গের সেরা রাজনৈতিক অফার। একদম ঠিক ডিয়ার লটারি কাটার মতই ব্যাপার। 

একদল ছেড়ে অন্য দলে চলে আসো আর নিজের রাজনৈতিক জীবনের উত্থান ঘটে যাক হাউই এর মতো। সে যাক দুরু দুরু বুকে পাঁচ পাঁচটা কাগজ কিনলাম আমি। কে কি লিখছেন দেখার জন্য। অবাক করা কাণ্ড। বাংলা সংবাদপত্র জগতের বেদ বেদান্ত যাঁরা। সেই সাদা বাড়ীর সাদা কাগজে লাল রক্ত মাখা মুখের দাগ আর ছবি ছাপা হয়েছে। যেটাই স্বাভাবিক। ছবিতেই বুঝিয়ে দেওয়া পুলিশের সন্ত্রাসের ভয়াবহতা ঘটনা সম্পর্কে। ঠিক ছবির সাথে সাযুজ্য রেখেই কাগজের হেডিং করা। দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেলো আমার।

একে একে ভগবান ছাড়া যে কাগজ ভয় পেতো না কাউকেই একদিন। সেই কঠিন বাম আমলে যে কাগজ জ্যোতি বসু আর বুদ্ধ বাবুর রাতের ঘুম কেড়ে নিতেন সেই কাগজের সামনের পাতা দেখে কেমন যেন চুপসে গেলাম আমি। উন্মাদ পাকিস্তানের হাতে পরমাণু অস্ত্র নয়। বিকাশ ভবনের ধুন্ধুমার এর খবর এর ঝাঁজ যেনো অনেকটাই কম। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গার লঙ্কার ঝাঁজ নয় একদম কম ঝালের লঙ্কা যেনো। কাগজের পাতায় কাঁচা মিঠে আমের মিষ্টি স্বাদ। 


ভাবলাম আমি হয়তো ভুল করছি পরের কাগজে পাবো ঠিক আসল ছবি। সদ্য হাত বদল হয়েছে যে কাগজের। সাদা বাড়ির মেধায় ভরপুর যে কাগজ সেই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে জানে যে কাগজ। সেই কাগজের একদিকে বিকাশভবন এর ছবি তবে মূল খবরে লস্কর জঙ্গি দিয়েই ভরপুর। বেশ মজার ব্যাপার কিন্তু এটা। একটু চালাকি করে মেধা আর মনন মিশিয়ে বেঁচে থাকা, ভেসে থাকা। রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে থাকা।

শেষের দিকের দুটো কাগজ এর পাতা উল্টে দেখলাম একটু ভয়ে ভয়েই। কাগজের মাথায় ভারতে কারখানা নয় অ্যাপলকে ট্রাম্প আর্জি। বেশ ভালো হেডিং ভালো খবর। গুরুগম্ভীর বিষয়। ট্রাম্প এর রাগী মুখের আর মুষ্টিবদ্ধ হাতের ছবি। কিন্তু বিকাশভবনের ছবি খবর আছে তুলনায় অনেকটাই কম। সেটাই স্বাভাবিক ঘটনা মনে হলো। শেষের কাগজে হেডিং দেখে আমার আক্কেল গুড়ুম। হাতে মা মাটি মানুষের সবুজ পতাকা। জন বার্লার তৃণমূলে যোগদান। উত্তরবঙ্গে বিজেপিকে ধাক্কা। বাহ দারুন ব্যাপার তো। ঠিক তারপাশেই একদা বাংলার সেরা বিখ্যাত সাংবাদিক এর নেপথ্য ভাষণ ছাপান্ন ইঞ্চিকে এক ইঞ্চির প্রশ্ন। হ্যাঁ, বিকাশ ভবন টিমটিম করছে গ্রামের মেঠো অন্ধকার রাস্তায় কুপি জ্বেলে। 

সত্যিই বাংলার এই পাঁচ কাগজের সাতসকালে পাঁচ কাহিনী লিখতে হবে আমায় সেটা আমি ভাবিনি কোনোদিন। আজ থেকে কত বছর আগে বেশিদিন নয় ত্রিশ বা চল্লিশ বছর আগে কি এমন ঘটনা ঘটলে বাংলা সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় এমন রামধনু রঙের উজ্জ্বল ছবি দেখা যেতো কে জানে। যে বঙ্গে মেধা, সাংবাদিকতা, শিষ্টাচার, রাজনীতির বাতাবরণ নিয়ে গর্ব হয়। যে বঙ্গে বরানগর হত্যা কান্ডের ঘটনা লিখতে ভয়ে বুক কাঁপেনি যুগান্তর নামক পত্রিকায়। সেই বঙ্গের আজ একি হাল হলো। সত্যিই অসাধারণ এই বাংলা অসাধারণ এই বাংলার সাংবাদিকতা আর সংবাদপত্র। জয় বাংলা। জয় জগন্নাথ। 

বাংলা সংবাদপত্রের দিনবদল - অভিজিৎ বসু।
পনেরো মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...