সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হাসিমুখের ইন্দ্রানী

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধুই হাসি মুখের ইন্দ্রানীর কথা। সেই ওর রবিবার ছুটির দিন দৌড়ে দৌড়ে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কবিতার ক্লাস করতে যাওয়া ইন্দ্রানী। সেই ২৪ ঘন্টা চ্যানেলে একটু ভয়ে ভয়ে সাংবাদিক হতে চাওয়া ইন্দ্রানী। সেই কোনোও সময় গম্ভীর মুখে আর সিরিয়াস হয়ে বাঁচতে না পারা ইন্দ্রানী। সেই বৈদ্যবাটির স্টেশন থেকে দৌড়ে ট্রেন ধরে সেক্টর ফাইভ যাওয়া ইন্দ্রানী। সেই ওর বাড়ীর ছোট আদরের মেয়ে ইন্দ্রানী। যার সাথে একদিন কত কিছুই না গল্প করেছি, আড্ডা মেরেছি, একসাথে অফিস গেছি যার বিয়েতে যাবো বলে কত পরিকল্পনা করেছি কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সেই লকডাউনের সময় ছাদে উঠে টেলিফোনে কত গল্পই না করেছি আমরা। আসলে আজ কেনো যে হঠাৎ করেই সেই ইন্দ্রাণীর কথা মনে পড়ে গেলো কে জানে। সেই অ্যাঙ্কর কুণাল দার এক নম্বর ফ্যান ইন্দ্রানী হালদার নয় অভিনেত্রী। ইনি হলেন ইন্দ্রানী চট্টোপাধ্যায়। 


আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই বিখ্যাত ইন্দ্রানীর কথা। ওর সেই চেনা হুগলীর শহর ছেড়ে দিল্লীবাসী হয়ে যাওয়া ওর ছেলের বড়ো হয়ে যাওয়া। সেই পুরোনো পোদ্দার কোর্টের অফিসের নানা টুকরো টুকরো ছবি। যে ছবির জারক রসে নিমজ্জিত হয়ে বাঁচতে বড়ো ভালো লাগে আমার। আর তাই আজ ইন্দ্রাণীর কথাই মনে পড়ে গেলো আমার। সেই পুজোয় ওর দৌড় করে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে পুরস্কার দেওয়া সেজে গুজে। সেই ধ্রুব আর অনির্বাণ চৌধুরী আর শুভ্রনীল ঘোষের কাছে ওর নিজেকে কেমন যেন গুটিয়ে রাখা। সেই বিখ্যাত শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জীর কাছে ভয়ে ভয়ে কাজ করা। শুধুই ভয় পেয়েই বেঁচে থাকা ওর। কেনো যে মিডিয়ার জীবন যাপন করতে গেলে এত ভয় পেতে হয় কে জানে। যে ভয় পেয়ে জীবন যাপন করতে আমার আপত্তি প্রবল। 

সেই ইন্দ্রানীর কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যায় সেই কর্মহীন আমি, সেই বালি স্টেশনে ওর সাথে দেখা হয়ে যাওয়া, সেই কত চেনা মুখের সাথেও কেমন সংকোচে কথা বলার চেষ্টা করা। সেই আলগোছে সম্পর্কের একটি সরু বুনোট কবে যে বোনা হয়ে গেছে কে জানে। তবুও আজ এই ভোরবেলায় কেনো যে ওর কথা ওর হাসি মাখা মুখের কথা, ওর উজ্জ্বল চোখের কথা মনে পড়ে গেলো আমার কে জানে। সেই ওর চেনা হুগলীর শহর ছেড়ে কত দূরেই না চলে গেছে ও। দিল্লীতে বসবাস করা ওর। মা, বাবা, দিদি জামাইবাবু সবাইকেই ছেড়ে দিয়ে। এই মিডিয়া জীবনের হাতছানি এড়িয়ে বেশ ভালই করেছে সে।

 একটা নির্ঝঞ্ঝাট ভয়হীন জীবন। যে জীবনে মনে হয় হাসতে ভয় পেতে হয় না ওর আজ কিছুতেই ওর গোছানো সংসারে। যে জীবনে ওর আজ আর ভয় নেই, অনিশ্চয়তা নেই, কারুর কাছে লেট হয়েছে বলে জবাবদিহি নেই। ওর সুন্দর সাজানো গোছানো একটা মিস্টি সংসার আছে আর একটা সন্তান আছে। ভালো থেকো তুমি ইন্দ্রানী। সেই ট্রেন পথে কতদিন যে এক সাথে পথ চলা হয়নি আমাদের কে জানে। তুমি এখন দিল্লির মেট্রোর ব্লু আর হলুদ আর গ্রীন লাইনের যাত্রী। আর আমি শহর ছেড়ে দূরে অনেক দূরের এক অজ গ্রামের বাসিন্দা। যেখানে মানুষ কম, ভয় কম, প্রতিযোগিতা কম, দৌড় কম। আজ দুজন দুজনের এই পথ চলা রাস্তা কেমন করে যেনো আলাদাই হয়ে গেছে। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন যে জীবনের‌ পথের বাঁকে কখনও ভয়, কখনও হাসি আবার কখনও এমন গভীর গোপন অনুভূতি বেঁচে থাকে। সেই অনুভূতি নিয়েই বেঁচে থাকি আমি আর তুমি। ভালো থেকো তুমি দিদি। হাসিখুশি হয়ে ভালো থেকো। 

হাসিমুখের ইন্দ্রানী - অভিজিৎ বসু।
একুশে মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...