সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পাহাড়ের কোলে ভেসে বেড়ানো শর্মিষ্ঠা

কখনও পাহাড়ের কোলে ভেসে বেড়ানো এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবন নিয়ে কাউকেই পাত্তা না দিয়ে আর পরোয়া না করে। আবার কখনও মেঘের রাজ্য পেরিয়ে এবড়ো খেবড়ো পথ পেরিয়ে, গ্রামের মেঠো পথ পার করে মোটর সাইকেল নিয়ে এগিয়ে চলা ছুটে চলা খবরের খোঁজে আর কিছুটা খাবারের সন্ধানে। যে খবর করেই আজ বিখ্যাত সে এই বাংলায়। 


আর সেই বিখ্যাত খবরের সন্ধানী সাংবাদিককে কিছুটা ভয় আর কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই চলা আমার। একে মিডিয়ার জীবন যাপন থেকে অব্যাহতি নিয়ে শান্তিনিকেতনের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো আমার একা একাই এলোমেলো আর এলেবেলে হয়েই। কিছুটা ভবঘুরে আর আমার বিন্দাস জীবন নিয়ে। তবু মাঝে মাঝেই সেই রামোজি ফিল্ম সিটির পুরোনো দিনের স্মৃতি সেই পুরোনো দিনের ছবি দেখে কেমন যেনো থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয় এই আমার স্থবির জীবনেও।

 সেই পুরোনো দিনের অফিস আদ্যিকালের কম্পিউটার সেই সব পুরোনো দিনের চেহারার মানুষজন তাঁদের সাথে ফেলে আসা সম্পর্ক কেমন যেনো আজও জড়িয়ে আছে বটের শাখা প্রশাখার মতোই ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সেই পুরোনো দিনের ইটিভির নিউজ এর অফিস। সেই কলকাতার প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটের সাদা বাড়ীর সরকার বাবু নন, হায়দরাবাদ এর সরকার বাবুর চেনা নিয়ন্ত্রিত সেই খবরের ছোট্টো চেনা পরিধির সংসার। যে সংসারের সদস্য ছিলাম আমিও একদিন। যে সংসার বড়ো করার সুযোগ এলেও বড়ো করা সম্ভব হয়নি কোনোদিনই। যাকগে সেই প্রসঙ্গ থাক আজ না হয়। 

আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই বিখ্যাত সাংবাদিক বলবো না খবর সঞ্চালিকা বা পাঠিকা বলবো আমি জানি না কিছুটা দুরুদুরু বুকে সাহস সঞ্চয় করেই এই লেখার চেষ্টা করা কিন্তু আজ এই বাংলা মিডিয়ার দৌলতে খবরের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ানো দু চাকার যান চালিয়ে একা একা মাতব্বরি করে সেই বিখ্যাত অ্যাঙ্কর কাম শর্মিষ্ঠার কথা। 

সেই হায়দরাবাদে ডেস্কের চেনা মুখ শর্মিষ্ঠা এখন যে অনেকটাই অচেনা। সেই ইটিভির পুরোনো সংসার ছেড়ে নতুন সংসারে চলে আসা আর ওর মানিয়ে নেওয়া আর জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবার জন্য চেষ্টা করা। জেলা থেকে বা মফস্বল থেকে শহরে এসে প্রাণপণে নিজেকে প্রমাণ করার জন্যে মরিয়া চেষ্টা করা। আর পায়ের তলার মাটিকে শক্ত করার চেষ্টা করা। হ্যাঁ এইভাবেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু শর্মিষ্ঠার। যে লড়াই আজও করে চলেছে সে হাসিমুখে হাজার দুঃখ কষ্ট সহ্য করে।

মনে পড়ে যায় সেই নানা পুরোনো দিনের কথা, সেই এক রাতের কথা, হুগলীর চুঁচুড়া শহরে বাবা আর মেয়ের দুজনের থাকার এক অভিজ্ঞতার কথা, সেই এক দুপুরে ২৪ ঘন্টার অফিসে ওকে দেখার কথা। তারপর আজ বহুদিন পর পাহাড়ের কোলে ওকে ভাসতে দেখে হঠাৎ করেই ভয় কাটিয়ে ফোন করে ফেললাম আমি তাকে হয়তো যেটা করা উচিৎ হয়নি আমার। কিছুটা দ্বিধা, ভয়, জড়তা কাটিয়ে বুকে বল ভরসা নিয়ে। নাম বললাম নিজের। জেলার নাম বললাম। হ্যাঁ, আজকাল তো অনেকেই চিনতে পারেন না আর আমায় কিন্তু অবাক করেই ওপর দিক থেকে উত্তর এলো, অভিজিৎ দা বলুন কি খবর, কেমন আছেন আপনি। 

ধড়ে প্রাণ এলো ভয় কেটে গেলো আমার। টিভির পর্দায় দেখা শর্মিষ্ঠা, খবরের ভীড়ে জনতার ভীড়ের মাঝে হারিয়ে যাওয়া জনতা, সেই বৃদ্ধার হাত ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শর্মিষ্ঠা যাঁকে আজকাল অনেকেই গ্রামে গঞ্জে শহরে চিনে গেছে এই বোকা বাক্সের দৌলতে। সেই হায়দরাবাদের ডেস্কে এককোণে চুপটি করে বসে থাকা মেয়ে শর্মিষ্ঠা নয়। যে আজ সেই চেনা ইটিভির সংসার ছেড়ে নতুন অন্য সংসারে বেশ ভালই কাজ করে যাচ্ছে ছুটে বেড়িয়ে দৌড়ে হেসে খেলে।

সত্যিই তো জীবনের এই দীর্ঘ পথে এমন কত কিছুই যে মনে পড়ে যায় আমার। সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় লেখা হয়ে যায় সেই সব নানা জীবনের কথা। যেসব জীবন, জীবনের অনুরণন, নানা ঘটনার কথা মনে পড়ে যায় আমার এই বুড়ো বয়সে। যেখানে স্মৃতি আমায় রাতের অন্ধকারে ছুটিয়ে বেড়ায়, স্মৃতি আমায় দৌড় করায়। সেই মাঠের ধার ধরে, সবুজ ক্ষেতের পাশ দিয়ে, মোটর সাইকেল নিয়ে ছুটে যায় সেই চেনা মুখ যে আজ অনেকটাই বড়ো হয়ে গেছে নিজের কাজের দক্ষতায়। ভালো থেকো তুমি শর্মিষ্ঠা। এইভাবেই দৌড়ে ছুটে বেরিয়ে খবর করে যাও তুমি। 

পাহাড়ের কোলে ভেসে বেড়ানো শর্মিষ্ঠা - অভিজিৎ বসু 
চার মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...