সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এঁদো পুকুরের গবা মামা


আমার জন্মের শহর। আমার ছোটবেলার শহর। আমার বড়ো হয়ে ওঠার শহর। আমার প্রথম জীবনে সেই স্কুলে যাওয়ার ভয় পাওয়ার শহর। আর ধীরে ধীরে ভয় কেটে আমার বড়ো হয়ে যাবার শহর। যে শহরে আমার জন্ম কিন্তু আমি জানিনা যে সেখানেই এই শহরেই আমি মরতে পারবো কি না। তবু এই ভীড় শহরের রাজপথে হাঁটতে নেমে দেখা হয়ে যায় চেনা চেনা নানা টুকরো মুখের সাথে। যে মুখ আজও অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আমার কাছে আমার জীবনের এই ধূলি ধূসর পথে। যাঁদের কথা দেখলেই মনে পড়ে যায় আমার অতীত দিনের নানা কথা। 

বোলপুর থেকে শ্রীরামপুরে এসে খুব যে আমি ভালো আছি সেটা নয়। তবু এই বদলে যাওয়া আমার এই প্রিয় মফঃস্বল শহরে এখন শপিং মলের উজ্জ্বল আলো, ঝাঁ চকচকে ঘিঞ্জি রাস্তা, মা মাটির মানুষের গন্ধ মাখা মানুষজন বেশ ভালই লাগে কিন্তু। এই শহরের পাশের গঙ্গা দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গার পানি বলবো না জল কে জানে। এই পানি আর জলের এখন বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছে ইদানিং আমাদের জীবনে। জল আর পানির এই দুজনের মধ্য ঠোকাঠুকি। আর সেটা নিয়ে রাজনীতির মাঠে ময়দানে বিস্তর উত্তেজনা এই সব নিয়েই তো সেই উইলিয়াম কেরির শতাব্দী প্রাচীন শহর এই শ্রীরামপুর আজও বেশ বিখ্যাত। যে শহর আমার ঘুড়ি ধরার শহর, গুলি খেলার শহর, কাদা মেখে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলার শহর। 

সেই শহরের পুরোনো দিনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখা হলো আমার সেই এঁদো পুকুরের গবা মামার সাথে বহুদিন পর। সেই মহাপ্রভুর বাড়ীর সামনে, আমার ছোটবেলার ভয়ে ভয়ে পড়তে যাওয়া সেই পূর্ণচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয় এর সামনে। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম না সেই আমার প্রাইমারী স্কুলকে। যে স্কুলের একটা অদ্ভুত হালকা গন্ধ ছিল সেই আলো আঁধারির সিঁড়ি, সেই শ্যাওলা পড়া চৌবাচ্চা, সেই কাঠের বড়ো বড়ো জানলা ওলা ঘর। সেই স্কুলের ভেতর ছোট্ট খেলার জায়গা। সেই ঘণ্টার আওয়াজ। সেই হেড মাষ্টার রামবাবুর ক্লাস করা ভয়ে ভয়ে। সেই লাঠির আওয়াজ। সেই খালধারের পাশে সেই ফর্সা মতন দিদিমণির কাছে পড়তে যাওয়া মাধবী দিদিমণি। কে জানে সেই বাড়িটা আজও আছে সেই দিদিমণি আজ হয়তো আর নেই। আর সেই বোন মাসীর হাত ধরে স্কুলে যাওয়া। ছোটো হলেও নিজের ক্লাশ ছেড়ে বড়ো মাসীর ক্লাসে গিয়ে কান্না থামিয়ে বসে থাকা। আর ছুটির পর মাসীর হাত ধরে বাড়ী ফেরা। সেই গোটা শৈশব এর স্কুলটাই আজ প্রোমোটারের দখলে চলে গেছে। 

সেই স্মৃতিময় রাস্তায় স্মৃতির উত্তাপ অনুভব করে হাঁটতে হাঁটতে পেয়ে গেলাম আমি গবা মামাকে। তাঁর ভালো নাম জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করিনি আমি কোনো দিন। সেই পাঁচ নম্বর এঁদো পুকুরের বাড়ী, তার উল্টোদিকের সেই কানু মামাদের রক, সেই তোতন মামার সাথে কদিন আগেই দেখা হয়েছো আমার গোস্বামী পাড়ার মোড়ে। সেই পদু আর বাবলু মামা। সেই সমীর মামা, আর গণেশ আর কার্তিক মামা, তপু মামা আজ আর নেই। সেই বড়ো ভাই আর ছোটো ভাই। সেই তরুণ এর দাদা। সব একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে এই রাতদুপুরে আলপথ বেয়ে গঙ্গার ধার ঘেঁষে আমার স্মৃতির শরণী বেয়ে। সেই পুরসভায় কাজ করা নবু মামা পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে ঘুরে বেড়ানো। সেই শ্রীরামপুরে উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজ করা লাল পার্টি করা গবা মামা, আর একজন ভাই ছিল তাদের। 

সেই পুরোনো বাড়ীতে আমার মা আর বাবার বিয়ের আসর বসা সেই কতবছর আগে। সেই পুরোনো বাড়ী সেই পাড়ার সবার সাথে মিলমিশ। একসাথে এক হয়ে বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়া। লোকাল কমিটি থাকা সত্বেও কেমন নিরুপদ্রব একটা জীবন। সেই জীবনের নানা অধ্যায়ে এঁরা ছিলেন আমার কাছে সব মামার বাড়ির মামা হয়েই। সেই নীলু দা, নন্টেদার ভাগনা বাপি হয়েই। সেই একসময়ের দাপুটে গবা মামা যাঁর জন্য আমি বাংলা স্কুলে মানে শ্রীরামপুরে উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেও। সেই সুযোগ করে দিলো গবা মামা নিজেই। মালীদির ছেলে বাপিকে ভর্তির সুযোগ করে দিয়ে আমার মতো খারাপ ছাত্র বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পারলো। যদিও তাতে খুব বিশেষ লাভ হয়নি আমার। 

সেই আমলে তো আর অন লাইন ফর্ম ফিল আপ করে ভর্তির এত দাপট ছিল না। স্কুল কলেজে ভর্তি নিয়ে এত মাতামাতি হৈ চৈ হুল্লোড় ছিল না রাজনীতির লালপার্টির লোকদের। যেটা এই মা মাটি মানুষের আমলে বড়ো বেশি প্রকট হয়ে গেছে আজকাল। আর তাই খুব কম নম্বর পেয়েও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলাম নাম উঠে গেলো আমার সেই তালিকায়। ওই স্কুলে তখন দেবী প্রসাদ কাঁড়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সেই শ্যামল বাবু আজ আর নেই, সেই বিশ্বজিৎ বাবু, গৌতম স্যার, ব্রম্ভপদ বাবু, আরও কতোজন যে ছিলেন সেই সময়ে। সেই ল্যাবরেটরি কক্ষ, সেই প্রতাপ, পরাগ এর সাথে খারাপ ছাত্র হলেও বন্ধুত্ব হয়ে যাওয়া।

 সেই অদ্ভুত সুন্দর একটা স্কুলের জীবন। যে জীবনে সেই বিবেকানন্দ সোশ্যাল ইউনিটি সেন্টার এর সাহায্য নিয়ে আমার ফ্রী কোচিং সেন্টার এ বিজয়দার কাছে পড়ে পাশ করা। আর সেই এগারো বারো ক্লাসের বই কিনে দেওয়া ক্লাব থেকে। সত্যিই গবা মামাকে দেখে কত কিছুই যে মনে পড়ে গেলো আমার এই বুড়ো বয়সে সন্ধ্যায়। সেই তাঁর দুই মেয়ে, সুন্দর সুখের সংসার। সেই বনেদি গাঙ্গুলী পরিবার এর দোতলা বাড়ীর সাথে টালির বাড়ীর সম্পর্ক স্থাপন হতে কোনো সমস্যা হয় নি কোনওদিন। যেটা আজকাল সচরাচর দেখাই যায় না। পাড়ায় পাড়ায় এখন ফ্ল্যাট কালচারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এই সব চেনা এলাকার মানুষজন। তবু গুটিকয় মানুষ ধরে রেখেছেন সেই পুরোনো পাড়ার গন্ধ। 

সেই ঝুমার হঠাৎ করেই চলে যাওয়া। সেই নানা ঘটনার কথা জানা হলো আজ। সেই আমার মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করা। আর হঠাৎ করেই মার আমায় ছেড়ে চলে যাওয়া। যেটা শুনে কিছুটা কষ্ট হয়েছিল তাঁরও। একদিন মার সাথে দেখা করার কথা বলেছিল আমায় গবা মামা। আজও জিজ্ঞাসা করলো তোর বাবা কেমন আছেন রে। সেই মা বাবার জীবনের শুরুর দিন, সেই নতুন সংসারে বিলু মামাদের বাড়িতে ভাড়া থাকার দিন। সেই বন্দনা মাসী আর শান্তনা মাসী আর কল্পনা মাসীর কথা মনে পড়ে যায়। সত্যিই জীবন বোধহয় এমন। জল রঙের উজ্জ্বল ছবি ধীরে ধীরে কেমন ফ্যাকাসে হয়ে যায়। যে ছবিকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকে মানুষ। আর হঠাৎ করেই একদিন সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হয় তাঁকে। 


আজ সেই সব কথা মনে পড়ে গেলো এই সন্ধ্যায়। একা একা হেঁটে বাড়ী ফিরলাম আমি। চলে গেলো গবা মামা নিজের বাড়ী। সেই পুরোনো দিনের পাড়ার হলদে আলোর লাইট পোস্ট, সেই ইঁট পাতা রাস্তা, সেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা টালির ঘর, সেই জানলার পাশে বড়ো বড়ো চেহারার মান গাছ, সেই টাপুর টুপুর বৃষ্টির আওয়াজ, সেই বাড়ীর ভেতর পেঁপে গাছ, সেই তুলসী মঞ্চ, সেই ভাই বলে দিদুর ডাক, সেই আমার বড় মামা যাঁকে বড়দা বলেই অভ্যস্ত আমি। সেই বৌদি। সেই মিষ্টু। তিনজনের কেউ আর নেই এই পৃথিবীতে। সেই ছুটু আর বুয়া। সেই লাইটের কাজ করা অরুন মামা, তপন মামা, সেই লক্ষ্মী মাসী আরও কতজন যে ছিল এই আমার ছোটকালের পাড়ায়। সেই মায়ের ভাইফোঁটা দেওয়া। কত আনন্দ হয়ে ওই একচিলতে ছোট্ট বাড়িতে সবার জড়ো হওয়া। সেই তিন ভাইয়ের মিলিজুলি সংসার। সব যে আজ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে কবেই। 

ভেঙেছে সংসার, ভেঙেছে সম্পর্কও। ভেঙেছে আরও, আরও অনেক কিছুই। শুধু মাত্র বেঁচে আছে এই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই পুরোনো দিনের গবা মামা। তাঁর সেই অমলিন হাসি। দাঁড়িয়ে পড়ে আমায় চিনতে পেরে জিজ্ঞাসা করা আর কথা বলা। আর সেই কথার মাঝেই আমার স্মৃতির ঝাঁপি বেয়ে ঝরঝর করে বেরিয়ে পড়া হাজার মণি মাণিক্য তার সাথে আরও অনেক কিছুই।

 একা একা হাঁটতে হাঁটতে ঘরে ফিরে এলাম আমি। আমার ফাঁকা দু কামরার ফ্ল্যাটে। যেখানে টাঙানো আমার মায়ের ছবি। কেউ আজ আর নেই আমার পাশে। আমি একা, একদম একা। এই রাতের অন্ধকারে একা একাই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। ঝাপসা হলো অক্ষর, ঝাপসা হলো আমার সাদা জীবন আর কালো কথার কালো কালো অক্ষর। মনে মনে ভাবলাম আমি, কেনো যে দেখা হলো আজ কে জানে। ভালো থেকো তুমি গবা মামা। আমার হারিয়ে যাওয়া শৈশব, কৈশোরকে বহুদিন পর খুঁজে পেলাম আমি। 

এঁদো পুকুরের গবা মামা - অভিজিৎ বসু।
ছয় মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...