আমার বুটার কিছু ছবি পেলাম আজ গভীর রাতে। দেখতে দেখতে ওর কলেজ জীবন প্রায় শেষের পথে। সেই ক্লাস টুয়েলভ পাশ করে ওর সেই চন্দননগরের সেন্ট জোসেফ এর স্কুল জীবন শেষ করা। তারপর কি করবে আর কি পড়বে তাই নিয়ে টানাপোড়েন আর দুশ্চিন্তায় পড়ে যাওয়া ওর মায়ের আমার কোনোও চিন্তা বা দুশ্চিন্তা নেই কোনওদিন। সেই ব্যাঙ্গালোর সেন্ট জোসেফ কলেজে ভর্তি হয়ে যাওয়া সেই বি এস ডব্লু কোর্সে। তারপর ফের সেখান থেকে আমাদের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়া ওর ভাষা নিয়ে পড়বে বলে। প্রথমে ফ্রেঞ্চ ভাষা নিয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়া। পড়ে সেটা জাপানী ভাষায় ওর পড়া শুরু হয় স্নাতক স্তরে। বাংলা, ইংরেজি, অন্য সব বিষয় সমূহ ছেড়ে দিয়ে ওর জাপানি ভাষা নিয়ে পড়া শুরু ওর।
কেন জানিনা আমি আমার মেয়ের এই ভাষার প্রতি প্রেম জন্মালো। সেই কবে ছোটো বেলায় ক্লাশ তখন এগারো আর বারো ক্লাশ তখন সেই উল্টোডাঙ্গার অতুল চন্দ্র স্মৃতি রক্ষা কমিটির অনুমোদন নিয়ে ভাষা শিক্ষার ক্লাস করতে আসতো ও। সেই শ্রীরামপুর থেকে উল্টোডাঙ্গা চলে আসা সারাদিন বসে ওর পড়া করা তারপর ঘরে ফিরে আসা তিনজনে। সেই দু বছরের পড়া ওর কাজে লেগেছে পড়ে এই শান্তিনিকেতনে। সেই ঘরে ফেরার সময় পাখির হাট থেকে পাখি আর মাছ কিনে ঘরে ফেরা। সেই মায়ের কথায় আমগাছ কিনে আনা। গাছে আম হওয়া আর আজ সেই আমার মার হারিয়ে চলে যাওয়া।
শ্রীরামপুর থেকে সোজা সেই শান্তিনিকেতনে রতন পল্লী তে আশ্রয় নেওয়া ভাড়া বাড়িতে। সেই বিশ্বরূপ ঘোষের বাড়ী। সেই অমর এর দেখে দেওয়া ঘর। সেই রাতে গাড়ী নিয়ে চলে আসা এসে রাত্রি যাপন করা ড্রাইভার সাজাহানকে নিয়ে। আর সেই দেখা হয়ে যাওয়া ওর মাস্টার সৌহার্দ্যর সাথে। জাপানী ভাষার গৃহশিক্ষক। বেশ ভালো ছেলে সৌহার্দ্য। আজ ও না থাকলে হয়তো ওর এই কঠিন ভাষা শেখা হতো না ওর। আর আজ সেই ওর নিপ্পন ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ফেয়ার ওয়েলের দিন এর ছবি গুলো দেখে কত কথা যে মনে পড়ছে আমার।
সেই প্রথম প্রথম কঠিন ভাষা পড়তে গিয়ে নজেহাল হয়ে যাওয়া। সেই এই পড়া করতে পারবে না বলে হাত পা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দেওয়া। আর সেই অবস্থায় সৌহার্দ্যের বলা সব ঠিক হয়ে যাবে একটু কষ্ট হবে পড়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। সেটাই হলো ওর পড়ে। পর পর জে এল পি টি টেস্ট পরীক্ষায় জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি টেস্টে এন ফাইভ, এন ফোর আর এন থ্রি পাশ করে যাওয়া। আর এই গোটা বিষয়ে আর একজন মানুষ আমায় সব কথা বলে ভরসা দিয়েছেন তিনি সুচিক্কন দা। যিনি বলেছেন অভিজিৎ ও এই ভাষা নিয়ে পড়লে নিশ্চয়ই ওর ভালো ভবিষ্যৎ হবে। আজ ওর সেই কঠিন ভাষা নিয়ে পড়ার প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ও। সেই জি নিউজ এর আলফি খোন্দকার এর বোনকে বিয়ে করেছেন আলিউল স্যার। যে এই ভাষা বিভাগের প্রফেসর যিনি আমায় অনেক সাহায্য করেন সেই সময়।
আজ এইভাবেই নানা কঠিন পথ অতিক্রম করে বুটা আজ জাপানি ভাষার স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করবে আর দু মাস পরেই। ওর সেই কান্নার দিন, সেই ওর কঠিন কাঞ্জির প্যাঁচে পড়ে কেমন ভয় পেয়ে যাওয়া। এই সব দিন গুলো কাটিয়ে আজ ওরা সেই কজন বন্ধু কেমন মিলেমিশে একাকার। সেই কলেজ জীবনের বন্ধু সব কেমন যেন কদিন পড় ছেড়ে দিয়ে চলে যাবার আগে একে অপরকে আঁকড়ে ধরা। হাসিমুখে, সেজে গুজে, জড়িয়ে।
জীবন এর এই সময় ওর বেশ মনে থাকবে। সেই হাসিখুশি কলেজ জীবন, সেই লক ডাউন এর সময়, সেই আমার দীর্ঘ বেকার টোটো চালকের জীবন, নানা মানুষের দেখেও না দেখা আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া। আর তার মাঝে আমার বন্ধু ধ্রুব, রাজনীতির মাঠে অন্য ধরনের নেতা দিলীপ যাদব আর জেলার সাংবাদিক হলেও যে অনেককে টেক্কা দিতে পারে সেই সোমা মাইতির অর্থ দিয়ে সাহায্য করা আমায়। না হলে হয়তো আমার মেয়ের এই কলেজে পড়া হতো না কোনোও ভাবেই। এই কথা প্রকাশ্যে বলতে কোনোও লজ্জা নেই আমার। আজ এই গভীর রাতে ওর সেই ছায়া সুনিবিড় শান্তির জাপানী বিভাগের সেই সুদীপ্ত স্যার, সেই সুদীপ স্যার, সেই গীতা দি আর অজয় দা আর অর্পিতা দি না থাকলে যে ওর এই ভাষা শিক্ষা হতই না। তবু আজ ওর সেই চেনা হাসি মুখ দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।
জীবনের এই দিন গুলো বেশ বড় ভালো দিন ছিল আমার। মেয়ের সাথে একসাথে থাকা। আঙ্গু পাঙ্গু আর গাঙ্গুর জীবন। যে জীবনে সুখ আর দুঃখ, যে জীবনে দুঃখ কষ্ট জড়িয়ে আছে একে অপরকে। যে জীবনে জড়িয়ে আছে কঙ্কালীতলা মেলায় বা গাছের নিচে তিনজনে মেয়ের হাতের তৈরি জিনিস বসে বিক্রি করা। কেউ কিনতে এসেছেন কেউ নেয়নি। সেই ক্ষিধে পেটে একসাথে কাঙালি ভোজন করতে বসা। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন আর জীবনের নানা ধরনের অধ্যায়। আজ ওর সেই চেনা মুখে হাসি দেখে কতকিছু যে মনে পড়ে গেলো আমার।
সেই সাইকেল করে তাল তুলে ঘরে ফেরা। ভজনের সাথে কথা বলা বৃষ্টি ভেজা রাস্তায়। আজ বুটার সেই পড়ার জীবনের একটা বড়ো অধ্যায় শেষ হয়ে এলো প্রায়। এরপর শুরু হবে ওর দৌড়ের জীবন। যে কর্মের জীবন, দৌড়ের জীবনে ও আবার নতুন করে বাঁচার লড়াই শুরু করবে আবার। শুধু মাত্র তার আগে ওর এই ছবিটা দেখে আমার মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় লেখা থাক কিছু কথা। বুটার জীবন এর এই উজ্জ্বল দিনের কথা।
সেই রতন পল্লীর মাঠ, সেই জানলা দিয়ে চুরি হয়ে যাওয়া, সেই মিশন কম্পাউন্ড এর ফ্ল্যাট বাড়ী, আর সেই রামকৃষ্ণ রোডের সুন্দর ফ্ল্যাট। সেই হাটতলার বাজার, সেই মেলার মাঠ, সেই রথীন্দ্র মেলা, সেই কলাভবনের ওর ক্লাশ, সেই মাটি মেখে কাজ করা দুপুর, সেই ওর মায়ের নিরলস পরিশ্রম করে মেয়েকে মানুষ করা। কর্মহীন স্বামীর জন্য লজ্জায় একাকার হয়ে বেঁচে থাকা মুখ লুকিয়ে। সত্যিই আজ আপনাদের সব কথা বলে ফেললাম আমি। আজ আমি সত্যিই খুব খুশি।
বুটা ও নিপ্পন ভবন - অভিজিৎ বসু।
সাত মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য আভেরী বসু।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন