সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুসমীর ও আমি

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার কলেজের বন্ধু সুসমীর এর কথা। ওর ভালো নাম সমীর ঘোষ। ওর বাড়ী শ্রীরামপুরে। আমার সাথে ওর আলাপ শ্রীরামপুর কলেজে পড়ার সময়। সেটা আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা হবে। আসলে কলেজের বেঞ্চিতে বসে ওর গলার গান শুনে মুগ্ধ হয়েছি আমরা সবাই। ছেলে মেয়ে সবাই ওর গানের ভক্ত হয়ে গেলাম একদিন ওর গান শুনেই। মেয়েরা তো ওর ফ্যান হয়ে গেলো ওর গানের জন্য। 

পরে আমাদের কলেজ জীবন শেষ করে আমরা এদিক ওদিক টুকটাক কাগজে লেখার জগতে দুজনেই প্রবেশ করেছি আমরা। একদিন খুব সম্ভবত বর্তমান কাগজে বিজ্ঞানের পাতায় দেখলাম সুসমীর দাস নামে এক জনের লেখা বেরিয়েছে।সেই সময় বিজ্ঞানের পাতা দেখতেন বর্তমানের রূপকুমার বসু। আমার সাথেও পড়ে রূপদার আলাপ হয়েছিল এই লেখার সূত্রেই। 

মনে পড়ে প্রতি লেখায় পঞ্চাশ টাকা দিত বর্তমান‌ কাগজ সেই সময়। সমীর তখন বিজ্ঞান নিয়ে লিখছে, আকাশবাণী তে নানা অনুষ্ঠান করছে। এরপর তারা নিউজ ডেস্ক এর কাজে যোগদান করে সে। দীর্ঘ দিন তারা নিউজ এর কাজ করেছে সে। এই হলো সুসমীর এর জীবনের রেখাচিত্র। 

কিন্তু আমার সাদা জীবনের এমন এক সাদা মানুষের কথা সেই হলো সমীর ওরফে সুসমীর। যার সাথে আচমকাই শ্রীরামপুরের ভীড় রাস্তায় দেখা হলো আজ দুজনের বহুদিন পরে। সেই যে বড়ো সাইকেলে করে শহরে ঘুরত সে একসময় সমীর। কিন্তু এখন আর বড়ো সাইকেল নেই ওর মনে হয়। দেখা হলো, কলেজের কথা হোলো কত গল্প হলো। গানের কথা বলতে গিয়ে সমীর আগের মতোই হেসে উঠলো, বললো এমন গান এর কথা আর কি মনে আছে রে ভাই। এখন কিছুটা বয়স বেড়েছে স্তিমিত হয়েছে সব কিছু সাথে গলাও।

 সত্যিই তো আমাদের বয়স বাড়ছে। আর সেই বেঞ্চি 
বাজিয়ে ক্লাশ শেষের মাঝে লুকিয়ে গান এর মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ নেই এই জীবনে। সাথে জোরে সিটির আওয়াজ। এই সব কিছুই যেনো হারিয়ে গেছে ধীরে ধীরে জীবন থেকে কবেই। তবু সমীরকে দেখে কি ভালো যে লাগলো আমার কি বলবো আপনাদের। ভজনকে ,প্রসেনকে ফোন করে বললাম ওর কথা। ওর গল্পের অনলাইনের ম্যাগাজিন এর লিঙ্ক দিলো সমীর। বেশ ভালো লাগলো ওর এই অনলাইন এর লেখা পড়ে। আমাকেও লিখতে বললো ওর পত্রিকায়। 

আসলে সমীর এরকমই। একদম সোজা সাপটা সরল একটি বন্ধুবৎসল ছেলে। যে গল্পের জীবন নিয়ে বেঁচে আছে এলেবেলে হয়ে ওর নিজের মত করেই নিজের সংসার নিয়ে কষ্ট করেই। যার কোনো তাড়া নেই জীবনে শুরু থেকে শেষ অবধি। অন্যকে ঠেলে ফেলে দিয়ে দৌড়ে সামিল হতে ওপরে ওঠার কোনো তাড়া নেই ওর এই জীবনে। বেশ একটা পরিপাটি ভাবে সারা জীবন কাটিয়ে দিলো কঠিন কঠোর সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার জন্য সে। 

সত্যিই বড়ো ভালো লাগলো ওকে দেখে আজ। ওর সেই মুখের ঝক ঝকে হাসি। চোখের উজ্জ্বল আলো। এলোমেলো চুল। গলার গান নিশ্চয়ই হারিয়ে যায়নি আজও ওর। ফেলে আসা কলেজের এলোমেলো স্মৃতিকে কিছুটা হলেও এই ভীড় রাস্তায় আমাদের দুজনের জং পড়া স্মৃতিকে কিছুটা হলেও এলোমেলো করে দিলো আবার এই বুড়ো বয়সে। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম একে অপরের সামনে। সেই গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা কলেজের মত স্থির হয়ে, স্থবির হয়ে,
 স্থানুর মত চুপ করে। 

মনে পড়ে গেলো বৃষ্টির দুপুরে ওর সেই বিখ্যাত গাওয়া গান মেরে স্বপ্ন কি রানি সেই গানের কথা। সত্যিই তো আমাদের মনে পড়ে যায়, কলেজের জীবনের সেই স্বপ্নের রানী তো কবেই হারিয়ে গেছে এই জীবন থেকে। হারিয়ে গেছে জীবনের ছায়াঘেরা স্বপ্ন গুলো। হারিয়ে গেছে আরোও কত কিছুই। তবু এই ভীড় রাস্তায় ওকে দেখে হারিয়ে যাওয়া জীবন, হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন গুলোকে কিছুটা হলেও ফিরে পেলাম এক ঝলকের জন্য। ভালো থাকিস সমীর তুই। এইভাবে এলেবেলে, এলোমেলো জীবন নিয়ে এইভাবেই ভালো থাকিস তুই তোর মুখের অমলিন ওই হাসি নিয়ে।

 সুসমীর ও আমি - অভিজিৎ বসু।
পনেরো। জুন, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...