আজ ফাদার্স ডে বা বাবা দিবস। মা দিবস এরপর বাবা দিবস কেমন যেনো জোর করে ঢুকে পরেছে আমাদের রান্নাঘরের দরজা খুলে হেঁসেলে। আসলে আমার জীবনে মা যতটা ছিলেন বাবা ততটা কাছের নয় একটু দূরে ছিলেন এত দিন ধরেই। কিন্তু মা চলে যাবার পরে বুঝতে পারলাম একটা জোড় ভেঙে গেছে জীবনের। আর সেই জোড় ভেঙে যাবার পর বুঝলাম মা আর বাবা দুজন দুজনের মত করেই আমাদের সন্তানদের মাথায় ছাতা ধরে থাকে আশ্রয় দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন আমাদের।
আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কি আর এমন দিবস পালন এর হিড়িক ছিল। নাকি সিনেমার পর্দার মতো জীবনের এই সব দিনের কথা ফেসবুকে লিখে ঝুলিয়ে স্মরণ করা যেতো এইসব দিন গুলো সবার সাথে। কিছুই ছিল না সেই সব ব্যবস্থা সেই সময়। তবু বাবা কারখানা থেকে ডিউটি সেরে মাসের প্রথম দিকে ফেরার সময় মিষ্টি নিয়ে ফিরতেন আমার জন্য। সেই যে দূরে কোথায় কারখানা বন্ধের পর কাজে চলে গেলেন গঙ্গারামপুর মনে হয়। সেখান থেকে সাত দিন, পনেরো দিন পর বাড়ী ফিরে আসতেন সুন্দর মাখা সন্দেশ নিয়ে ভোরবেলায়। আর বিশ্বকর্মা পূজোর সময় আমায় নিয়ে গেছিলেন সেই মাঠের ধারে কাজের জায়গায়। এই সব সুন্দর কিছু স্মৃতি মনে আছে আমার আজও।
আমার আজও মনে আছে পড়া না পারায় বাড়ির প্রদীপ মাস্টার এর অভিযোগ পেয়ে কি মার খেয়েছিলাম বাবার হাতে সেদিন। আসলে মার ছায়া এতটাই ঘিরে রেখেছিল আমায় যে বাবা সেই ছায়া ভেদ করে প্রবেশ করতে পারেন নি আমার জীবনে কোনো দিনই। তারপর বাবার কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া। এদিক ওদিক ঘুরে কোনো রকমে সংসার চালাতে আগুনের ফুলকি চোখে নিয়ে সারা রাত কষ্ট পেয়েও পরদিন ভোর বেলায় উঠে সেই ফোলা চোখ নিয়ে ওয়েলল্ডিং এর কাজে আবার যোগ দেওয়া।
কোনো ভাবে সংসার চালাতে হিমসিম খেয়েও আমাকে পড়ানোর জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করা বাবার। এটা আমায় আজও বেশ সুন্দর অভিজ্ঞতা দেয় এই বাবা দিবসের দিনে। যে দিনে শুধু মাত্র বাবার ছায়া ঘেরা ভালোবাসার কথা বলতে পারছি আমার মাকে বাদ দিয়ে। তবে বাবার এই দিবসের দিনে যে কথা বেশি করে মনে হয় যে মা চলে যাবার পর আমি বাবার কথা বেশি করে ভাবতে থাকলাম। যার কথা এতদিন এত বেশী ভাবিনি।
মনে হলো একজন চলে গেলেন একজন তবু আছেন যে আমায় বাবু বলে ডাকে এখনো। যাকে এখনো ফোন করা যায়। আমার মোবাইল ফোনে বাপি বলে নম্বর সেভ করা আছে। যে নম্বরটা এখনো সচল আছে। মার নম্বর যেমন অচল হয়ে গেলো চিরদিনের জন্য, মা চলে গেলেন আমায় ছেড়ে। বাবা এই বয়সেও আমার জন্য ছুটে আসেন শ্রীরামপুরের বাড়িতে, বোলপুরে পেটাই পরোটা, লাল দৈ, কালো জাম, গাছের আম নিয়ে। হৈ হৈ করে বাঁচতে ভালোবাসেন।
এত দিন পর এই ফাদারস ডে তে এসে মনে হলো বাবা মা দুজন কেউ কারুর সম্পূর্ণ পরিপূরক নয় তার সন্তানের কাছে। কিন্তু তবু একজন সন্তানের দুজনকেই চাই বেঁচে থাকার জন্য। বাবা আর মা। একজনকে ছাড়া চলে না সন্তানের জীবন। তাই দিবস পালন হোক। নানা দেশে নানা সময়ে নিয়ম মেনে এই ফাদারস্ ডে পালন করা হোক। কিন্তু জীবনের এই ব্যালেন্সের খেলায় বাবা যেভাবে লড়াই করে সংসার বাঁচিয়ে রাখে সেটাই বা কম কি। আসলে বাবা মানেই একটা লড়াই, সংগ্রাম, ভালোবাসার ছাতা, যার নিচে দাঁড়িয়ে আবদার করা যায় অক্লেশে। ভালো থাকো তুমি। মার মতো এত দ্রুত আমায় ছেড়ে চলে যেওনা।
ভাল থেকো বাবা - অভিজিৎ বসু।
ষোল জুন, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন