সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর জন্মদিন


সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এমন একজন রাজনৈতিক নেতার কথা যে মানুষটার সাথে বাংলার রাজনীতির যোগ বহুদিনের। সেই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী আর সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর জুটির দুজনের কেউ আজ আর নেই আমাদের মাঝে। বাংলার এই হাজারো বৈচিত্রের রাজনীতিতে এখন আর সেই অমলিন হাসির সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দেখা যায় না কোনো ভাবেই। আজ সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর আটাত্তরতম জন্মদিন। 

মনে পড়ে গেল কত কথা। আসলে খবরের সন্ধানী সাংবাদিকদের কাছে সুব্রতদার সাথে তার ঘরে আড্ডা দেওয়া, পুজোয় তার সাথে আড্ডা মারা, আবার বিরোধী রাজনীতির ময়দানে নেমে তার সাথে নানা ধরনের রাজনীতির মারপ্যাঁচ আর কসরৎ দেখার সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছিলাম অন্য সবার মত আমিও কিছুটা। তবে যে স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আমার সব ঘেকে বেশি যে ছবির কথা আজও ভুলতে পারিনি আমি সেটা হলো সিঙ্গুরে সুব্রত দার টাটা মোটরস এর কারখানার জমি রাতে পাহারা দেওয়ার কথা লাঠি হাতে নিয়ে আর মশাল জ্বালিয়ে। 

আসলে ছবি কি করলে হয়, কি করলে নিষ্ফলা জমিতে ফসল ফলাতে হয় সেটা বোধ হয় এই পরিপক্কো রাজনীতিবিদ সুব্রত দা খুব ভালই জানতেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের এর কারখানার জমিতে তিনি এসেছেন আন্দোলন সংঘটিত করতে চাষীদের নিয়ে। দেখা হলো আমার সাথে সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া গ্রামে। কি রে, কি খবর কেমন আছিস তুই। আমি বললাম দাদা ভালো আছি। এখন তো সিঙ্গুরের ডেলি প্যাসেঞ্জার হয়ে গেছি আমি। সেই এক ইয়ার্কি করে বললেন তিনি কি আর করব বল আমাকেও তো মমতা পাঠিয়ে দিয়েছে শহর থেকে গ্রামে এই জমি পাহারা দিতে। মশার কামড় খেতে।ভাবটা এমন যেনো নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে তাঁকে সুদূর কলকাতা থেকে। এত আর সেই জেনিভাতে শ্রমিক সন্মেলনে হাজির হওয়া নয়। 

কিন্তু সেই নিষ্ফলা জমিতে হাসি মুখে ফসল উৎপাদন করে চারিদিকে হৈ হৈ ফেলে দিলেন সুব্রত দা। সেই আমাদের সকলের অতি কাছের মানুষ,চির সবুজ, প্রবীণ হয়েও যিনি চির নবীন এই রাজনীতিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আমায় বললেন খুব মশা কামড়ায় বসে বসে এই গন্ডো গ্রামে বুঝলি। আমি হাসতে হাসতে বললাম দাদা, তাহলে মশা তাড়াতে ব্যবস্থা নিন আপনি জমি পাহারার সাথে। বাস অমনি তার মাথায় খেলে গেলো বুদ্ধি। বললেন সন্ধ্যা বেলায় ক্যামেরা নিয়ে চলে আয়। আমি বললাম ঠিক আছে দাদা।

 একটু ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে সবে সেই সময়। অন্ধকার হবার আগেই লাঠি হাতে, মশাল হাতে সেই বাজেমেলিয়া গ্রামের জমিতে নেমে পড়লেন সুব্রত দা। সাথে সেই এখনকার বিখ্যাত নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। যে আর কোনো খবর নেয়না আমার। আর নেবেই বা কেনো। আর কোনো দরকার নেই তার আমাকে। আর কি হৈ হৈ করে ছবি হল সব ক্যামেরায়। আর দেখে কে জমি আন্দোলন করতে গিয়ে রাতে না ঘুমিয়ে মশাল জ্বালিয়ে জমি পাহারা দিচ্ছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ইটিভি চ্যানেলে দেখানো হলো সেই ছবি। পরদিন সব কাগজের প্রথম পাতায় সুব্রত দার সেই ছবি ছাপা হয়েছে। কলকাতায় বসে নেতাদের সব মাথায় হাত পড়লো, ঘুম ছুটে গেলো। এই হলেন আমাদের সুব্রত দা।

 সেই মানুষটার শুভ জন্মদিনে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই দাদা। ভালো থাকবেন আপনি যেখানেই থাকুন। আপনাকে সেই সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের কারখানার জমিতে ঢুকতে দেবে না হুগলির পুলিশ। পুলিশ সুপার সুপ্রতিম সরকার। আপনি আমায় বললেন কোন রাস্তা দিয়ে যাবরে সব দিকে পুলিশ ঘিরে রেখেছে। আমি বললাম দাদা গ্রামের এই রাস্তা দিয়ে চলুন আপনি। পৌঁছে গেলেন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সিঙ্গুরের গ্রামে। মিটিং করলেন চাষীদের নিয়ে। কারণ সেই মশাল জ্বেলে জমি পাহারা দেওয়ার পর সিপিএম এর আর বাম সরকারের চোখে ঘুম ছুটে গেছিলো সেই সময়। আবার কি করে বসবেন আপনি এই টেনশন ছিল পুলিশের। সিঙ্গুরে পৌঁছে গেলেন আপনি সেই গ্রামের শর্টকাট রাস্তা দিয়ে। পুলিশ আপনাকে ধরতে পারল না। আমায় হেসে বললেন তুই ভালো গোল দিলি আজ পুলিশকে। আমি বললাম না না দাদা। এই হলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।



আজ আপনার জন্মদিনে এমন কত স্মৃতি উপচে ভীড় করছে আমার মনের মণিকোঠায়। যদিও খুব বড় মাপের সাংবাদিক আমি ছিলাম না কোনো দিন। তবু আপনি ছোটো গ্রামের এই মেঠো সাংবাদিক কে যে ভরসা করেছিলেন সেই দিন। আজ আমার সেই জন্যই বেশ গর্ব হয়। বহু পড়ে সরকারে এসে মন্ত্রী হলেন আপনি। আপনার মহাকরণের সেই ঘরে দেখে বললেন কি রে তুই এসেছিস। আমি বললাম হ্যাঁ দাদা একটু খবর দেবেন আমি কলকাতায় নতুন একদম কেউ চেনেনা আমায়। সেই একগাল চেনা হাসি হেসে বললেন ঠিক আছে আসবি তুই। 

কত খবর যে দিতেন সন্ধ্যার পর গল্প করতে করতে আমায়। বলতাম দাদা দু লাইন একটু বাইট দেবেন বলতেন, ওসব হবে না বাবা। বায়না করতাম দাদা হবে না আপনার মুখে কথা ছাড়া খবর চলবে কি করে। আর কোনো কথা বলতেন না আপনি। মাঝে মাঝে দেবুদা আপনার সেক্রেটারি এসে দেখে যেতেন ঘরে ঢুকে। আর সেই সোমনাথ আপনার ঘরের পাহারা দেওয়া সব সাংবাদিকের চেনা সেই সোমনাথ থাকতো ঘরের বাইরে। আপনি আর আপত্তি করতেন না বলতেন অল্প বলবো বলে কত বড় ইন্টারভিউ দিয়ে দিতেন আর বলতেন এসব দেখলে আবার মমতা না ক্ষেপে যায়। বলবে কেনো আমি প্রেসকে এসব বলেছি। রাত হতো অনেক গল্প করতে করতে আপনি হাসি মুখে অফিস ছাড়তেন। 

সত্যিই আপনাকে আমি,আমরা সাংবাদিকরা বড় মিস করি সুব্রত দা আজ। সেই যে নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ে একা একা গঙ্গার দিকের ঘরে একা বসে থাকতেন আপনি। কেউ যেতো না সেই সময় আপনার কাছে। মহাকরণ থেকে আপনার ঘর বদলে গেলো হঠাৎ একদিন। আপনার সেই সব বলা অব্যক্ত কথা হয়তো লিখবো না আমি কোনোদিন। কিন্তু যে অভিমান, অপমান সহ্য করেও আপনি চুপ ছিলেন মাটি কামড়ে পড়েছিলেন, সেটা দেখে বুঝেছিলাম এই জন্যই আপনি সব পিচের একজন সিজন রাজনীতিক খেলোয়ার। এই জন্য পরে আবার সেই আপনি জায়গা ফিরে পেলেন নতুন করে ,নতুন ভাবে। পঞ্চায়েত এর দায়িত্ব পেয়ে আপনার নেতৃত্বে কাজ করে দল বেড়ে উঠলো দ্রুত,দলে আপনার ক্ষমতা বাড়লো অনেকটাই আপনার আবার জায়গা হলো মহাকরণে। আপনার ঘরে উপচে আবার পড়া ভীড়। আমার সেদিন দেখে কি ভালো যে লাগলো কি বলব দাদা। 

আসলে সাংবাদিক আর রাজনীতির জীবনের এই ওঠা নামা থাকেই। তবু আপনার সেই প্রিয় সুব্রত জুটির ব্যাট হাতে ব্যাট করা, সেই কবে থেকে সেই ঘরানার সেই মাপের রাজনীতির লোক আর কই এখনএই বাংলার রাজনীতির ময়দানে। যে ব্যক্তি যে কোনো ভালো সময়, খারাপ সময়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্যে যে কোনো পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করবে তার রাজনৈতিক জীবনে। সে লাঠি হাতে মশাল নিয়ে জমি পাহারা দেওয়া হোক। কিম্বা ক্ষমতার উচ্চ শিখরে বসেও অবিচল থেকে মাটিতে পা রেখে চলতে জানা হোক। 

সেই মাটির হাসি মাখা মুখের মানুষ সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমার এই ক্ষুদ্র পোস্ট। হয়তো আরও কিছু কথা লেখার ছিল যা লিখলাম না কোনো দিন হয়তো সেই সব কথাও লিখবো আপনার স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে। সেই মুনমুন সেনের সাথে শুটিং এর গল্প করা। বাড়িতে বৌদির রাগ করার কথা। বাড়িতে খাবার টেবিলে কি রকম চাপা গুমোট আবহাওয়া সেই সব কথা। যা আপনি হাসতে হাসতে বলতেন আমাদের কোনো লুকোছাপা না করেই। আপনার সেই বিখ্যাত একডালিয়া এভারগ্রীন এর পূজোর কথা। যেখানে পূজোর সময় সাংবাদিকদের অবারিত দ্বার ছিল। কলকাতার থিম পূজোর জমজমাট ভিড়েও আপনার এই পূজোর আলাদা একটা গ্ল্যামার ছিল। যার জন্য হাজার হাজার মানুষ ভিড় করতেন আপনার পূজো দেখবেন বলে। আপনি সারা জীবন আমাদের সবার কাছে এভারগ্রীন হয়েই ছিলেন দাদা। আজ সেই এভারগ্রীন সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর শুভ জন্মদিন। আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকবেন দাদা। আমার প্রনাম নেবেন।

সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর জন্মদিন - অভিজিৎ বসু।
চোদ্দ জুন, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...