সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জয় বাবা তারকনাথ

সকাল সকাল বাবা তারকনাথ দর্শন। বাবার চরণে পূজো দেওয়া আর জল দেওয়া। ফুল, বেল পাতা দিয়ে বাবাকে পূজো দেওয়া। মনের ইচ্ছাকে তাঁর কাছে নিবেদন করা। সেই দুধপুকুর, সেই ভারামল্ল রাজার স্বপ্ন দেখা, সেই জঙ্গলে কপিলা গাই এর হারিয়ে যাওয়া, সেই পাথরের ওপর দুধ দেওয়া। আর সেই পাথর তুলতে কত কসরৎ করা। আর তারপর রাজার স্বপ্ন দেখা। স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব এর স্বপ্ন। যিনি এই সব কিছুর মাঝেই বিরাজ করেন নিজের মতো করেই। সেই স্বয়ম্ভু শিব। সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় এর মালিক যিনি। যিনি এই পৃথিবীর আদি, অন্ত, ভূত ভবিষ্যৎ সব কিছুই। 


সেই পুরোনো দিনের গল্প। সেই বদলে যাওয়া তারকেশ্বর স্টেশন,শহর, দোকানপাট, আরও কত কী। সেই চেনা ট্রেন পথ, সেই চেনা সিঙ্গুর, হরিপাল, আর নালিকুল পার হয়ে লোকনাথ এর পরেই বাবার ধাম তারকেশ্বর পৌঁছে যাওয়া। যে ট্রেন এক সময় ক্রসিং এর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো অনেক সময়। আমরা ছোটোবেলায় সেই দিদার সাথে গরমের ছুটিতে হরিপাল যেতে যেতে বিরক্ত হয়ে যেতাম। সেই নালিকুল থেকে ট্রেন ধরবো বলে দৌড়ে এসে দেখতাম না এই স্টেশনে ক্রসিং হয়নি। সিঙ্গুরে ক্রসিং হবে। আবার পরের ট্রেন একঘন্টা পরে। কেমন বসে পড়তাম হাঁফিয়ে। সেই হরিপাল, সেই নালিকূল আজ আর আমায় টানে না। ছিন্ন হয়ে গেছে চেনা সম্পর্কও।

আর আজ সেই লোকাল ট্রেন কেমন যেনো মাঠ পেরিয়ে ছুটে যাচ্ছে হর্ন বাজিয়ে। চেনা পথ পার করে ছুটছে ট্রেন। যে পথ এই তিরিশ বছরে কত অচেনা হয়ে গেছে যেনো। সেই কামারকুন্ডু স্টেশনের সামনে পানি ফলের চাষ এর পুকুর, সেই সিঙ্গুরের ফাঁকা জমি, সেই হরিপাল স্টেশনে কেমন যেনো অন্য রকম ছোঁয়া। সিঙ্গুর আর তারকেশ্বর স্টেশন এলাকায় এখন ফ্ল্যাট বাড়ির দাপাদাপি নজরে পড়ার মতো। এই সব দেখতে দেখতে স্টেশন চলে এলো সেই বাবার ধাম। সকাল সাতটায় স্টেশনে নেমে দাঁড়িয়ে রইলাম সুভাষ এর জন্য। 

এই সুভাষ আমার তারকেশ্বর মন্দিরের একমাত্র ভরসা। স্কুটার নিয়ে চলে এলো। দাদা আপনি এসে গেছেন সকাল সকাল। খুব ভালো হলো সকালে মন্দির চত্বরে ভীড় কম আছে আজ পূজো দিতে অসুবিধা নেই। ওর গাড়ী চেপে সেই সকালের মন্দির এলাকার ফাঁকা রাস্তা দিয়ে সেই মন্দিরের গেট পার করে সেই মহন্ত মহারাজের আশ্রম পার করে একদম মন্দিরের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। পুজোর জিনিস নিয়ে একদম সেই চেনা দুধপুকুরের ধারে। সেই পুকুর যার জল নিয়ে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের কত আন্দোলন আর উত্তেজনার সৃষ্টি হওয়া। আর সেই সব কভার করতে গিয়ে সাংবাদিকদের মার খাওয়া মন্দিরের পান্ডাদের হাতে। কত হৈ চৈ হুল্লোড় পড়ে যাওয়া আর কাগজে খবর বের হয়ে। আর সেই দুধপুকুরের জলে আজ পাম্প চলে। জলে নেমে স্নান নিষেধ। সত্যিই কেমন যেন অচেনা লাগল এই মন্দির চত্বর আর সেই 
দুধপুকুর কে। সত্যিই অসাধারণ এই বদলে যাওয়া। 

সুভাষ এর দেওয়া পুরোহিত আমায় হাত ধরে নিয়ে গেলো গর্ভ গৃহে মন্দিরের ভিতর। অন্ধকার বাবার স্থান। সেই দেবাদিদেব এর কাছে মাথা ঠেকিয়ে পুরোহিতের মন্ত্রচারণ, সেই আলো আঁধারির পরিবেশ। জয় বাবা তারকনাথ বলে বাবার কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ। সেই আমার এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস অকেজো জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর ছিনিমিনি খেলার মাঝে কেমন যেন বিহ্বল হয়ে যাওয়া এই গর্ভ গৃহে মাথা ঠুকে। সেই আদি ইতিহাস সেই পৃথিবীর ধারক বাহক হয়ে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন যুগ যুগ ধরে এই স্থানে। 

সেই শৈব তীর্থ তারকেশ্বর মন্দিরে পূজো দিয়ে এই শনিবার সকাল বেলায় মনটা ভরে গেলো আমার। সাংবাদিক হয়ে নয় একজন সাধারণ মানুষ হয়ে বাবার চরণে প্রার্থনা জানালাম আমি বাবা তুমি আমায় মোহমুক্ত করো। আমার আরও আরও চাই এই চিন্তা যেনো দুর করে দাও তুমি। চাহিদা যেনো না হয় এই ধূলিধুসর অকেজো জীবনে আমার। যেখানে শুধু তুমি প্রভু আর আমি দাস। হে জগতের নাথ, হে শিব, হে প্রভু তুমি আমায় শক্তি দাও যেনো আমি অন্যায় এর বিরুদ্ধে লড়তে পারি। যেনো অধর্মকে মেনে না নিতে পারি এই জীবনে। আর সবার মঙ্গল কোরো তুমি বাবা। ধুপ দীপ দিয়ে এই প্রার্থনা জানিয়ে বাবাকে প্রনাম করে বাড়ী ফেরার ট্রেন ধরলাম আমি। সুভাষ এর জন্য আজ এই সাত সকালে পূজো দিতে পারলাম আমি। জয় বাবা তারকনাথ। তুমি সকলের মঙ্গল করো বাবা। 

জয় বাবা তারকনাথ - অভিজিৎ বসু।
১৪ জুন, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...