দেখতে দেখতে বাবা দিবস পার। সকাল থেকে ফাদার্স ডের সকাল শেষ হয়ে এখন প্রায় মধ্যরাত। দূরে নাম না জানা পাখির চিল চিৎকার আর রাত পাহারা দেওয়া কুকুরের হাঁকডাক। আসলে আজকাল আমার বুটার কাছে বাবা বলে ওর সামনে দাঁড়াতে কিছুটা লজ্জাই হয় এই বুড়ো বয়সে পৌঁছে। কেনো জানিনা যে সকাল থেকেই এই কাজ না করা একজনের এত কাজের বা অকাজের ব্যস্ততা বৃদ্ধি হয়েছে ইদানীং যে মেয়ের সাথে একটু কথা বলাও হলো না আজ সময় করে আমার। যখন ওর ফোন এলো তখন আমি ব্যস্ত অন্য ফোনে।
যে বাবা কাজ না করেই দিব্যি পাঁচ বছর কাটিয়ে দিলো ওকে দেখভাল না করেই, ওর পড়ার খরচ জোগাড় না করেই সে আর কি করেই বা বাবা দিবসের ক্রেডিট কার্ডে পয়েন্ট তুলতে যায় মেয়ের কাছে কোন মুখেই বা বলে সেই কথা। তবু রাতে ওর ফোন থেকে ফোন আসা আমায় বেশ আনন্দ দেয়। যে ফোন ও সচরাচর করে না কাউকেই। সেই ও ফোন করলো বোলপুর থেকে শ্রীরামপুরে আমায়। সারাদিন খাওয়া হয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করলো আমায়। রাতে ভাত খেলাম কি না সেটাও টেক্সট করে জিজ্ঞাসা করলো গভীর রাতে।
এই ওর সাথে দূরে থাকা, একসঙ্গে না থাকা, একজন বোলপুরে আর অন্যজনের শ্রীরামপুরে থেকে যাওয়া। সেই কাজ নেই লোকের কোনোও কাজ না করেও দিব্যি কাটিয়ে দেওয়া বছর বছর। আর শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলছি বলে নিরন্তর চেষ্টা করা। তবু সেই ছোট্টো বুটার বু কে করা রাতের ফোনটা ধরতে না পেরে বেশ খারাপ লাগলো আমার এই বাবা দিবসে। মনে পড়ে গেলো আমার সেই ওর ছোটবেলার দিন গুলোর কথা। সেই যে মেয়েটির সব বায়না আর আবদার সব বু কে ঘিরেই আবর্তিত হতো সেও কেমন করে যেনো জেনে গেলো যে তার বু যে বাতিল হয়ে গেছে এই কাজের বাজারে। যে বাজার এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়েছে সে অনেকদিন আগেই।
তবু কেনো জানিনা মেয়ের ফোনে কথা বলতে না পেরে বারবার কেমন যেন নিজেকে অপরাধী লাগছে আমার। সেই ছোট্ট মেয়ের পড়া শেষ। এখন শুধুই ওর দৌড় আর দৌড়। আর আমার দৌড় শেষ হয়েছে কবেই। তবু কেন যে আজ সেই পুরোনো আমলের ছবি, সেই দুজনের বদলে যাওয়া ছবি দেখে মনটা বেশ ভালো হয়ে যায় আমার। মাথা ঠেকিয়ে আকাশ পানে দুজনের দাঁড়িয়ে থাকা। সেই পূর্ব পল্লীর মাঠে লাল টুপি পড়ে বসে থাকা। সেই দুপুর বেলায় বোলপুরে এক রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া। কত যে চেনা ছবি ধরা পড়ে গেলো বাবা আর মেয়ের। যা এই বাবা দিবসে শেষ রাতে ঘুমানোর আগে পোস্ট করলাম আমি। ভালো থাকিস বুটা। বাবা দিবসে আমার ভালোবাসা। যে বাবা হয়তো বহুদিন আগেই বাতিল হয়ে গেছে এই সমাজে আর সংসারে তবু মেয়ের কাছে কি আর তার বাবা কোনোদিন বাতিল হয়ে যায়।
বাবা দিবস ও বুটা - অভিজিৎ বসু।
১৬ জুন, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন