সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গিরিধারী সাহার জন্মদিন

আজ শ্রীরামপুর পৌরসভার পুরপ্রধান গিরিধারী সাহার জন্মদিন। ফেসবুক জানিয়ে দিলো আমায় সেই কথা সকাল বেলায়। সেই কেষ্ট মুখোপাধ্যায় এর আমলে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন গিরিধারী সাহা। সেই কেষ্ট দা আর তিনি দীর্ঘ দিনের জুটি এই শহরের রাজনীতিতে। সেই শ্রীরামপুরে কংগ্রেসের শাসনে চলা এই পুরসভা। তখনও এত দাপটে রাজনীতির হাওয়া বইতো না এলাকায় এলাকায়। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা মানুষজন বেশ নিজের মতো করেই রাজনীতি করতেন। এতো টাকা আমদানি হয়নি পাড়ায় পাড়ায় সমাধান এর নাম করে।। সেই রাজনীতির লোকদের কাছে পৌঁছে যাওয়া যেত অনায়াসেই। এতো ঝাঁ চকচকে জীবন যাপন ছিলো না একদম সেই আমলে। 

সেই ভোটের সময় সাংবাদিকদের একবার মোবাইল ফোন দিলেন মনে হয় কেষ্ট দা বহুদিন আগের কথা। সেই পৌরসভার বড়বাবু ছিলেন তাপস দা। সেই মোবাইল রিচার্জ এর জন্য হাজার টাকা বরাদ্দ করলেন তিনি। আর নতুন বছরে সবার নামে নামে পল্লীডাক প্রেসে ডায়েরী পাঠিয়ে দিতেন তিনি। খবর করা যেতো সেই আমলে বেশ মজা করেই। আমি যদিও ডায়েরী নিলেও বাকী জিনিসের লাইনে নাম লিখিয়ে দাঁড়িয়ে পড়িনি কোনোদিন। কংগ্রেসের শাসনে বিশ্বাসী সব রাজনীতির মানুষজন তৃণমুল আমলে প্রথম প্রথম এতো বদলে যায়নি। ধীরে ধীরে সব কিছুই কেমন করে বদলে গেলো আর পাল্টে গেলো যেনো। তবু সেই গিরিধারী দা পুরোনো আমলের ধারা বজায় রেখে চলেছেন তিনি এখনও। সেই জনসংযোগ করেই তাঁর রাজনৈতিক জীবন যাপন করছেন তিনি হাসিমুখে।

 সেই ই ডব্লু এস সার্টিফিকেট এর জন্য ইনকাম সার্টিফিকেট আনতে তাঁর টিন বাজারের বাড়ী যেতাম আমি। সকাল বেলায় যাবার আগেই রঞ্জনকে ফোনে জানিয়ে দিতাম। গিরিধারী দা গেলেই বলতেন এই চা খাও মিষ্টি খেতে হবে পূজোর পর এসেছো তুমি। এখন কোন চ্যানেলে আছো তুমি। আমি বলতাম না দাদা কোনো জায়গায় নেই আর কিছুই খাবো না আমি। সেই ইটিভির পুরোনো আমলে ভাইস চেয়ারম্যান গিরিধারী সাহার কত বাইট যে নিয়েছি আমি আর মিন্টে আর সেই সৌরভ। সেই শ্রীরামপুরের খবর হলেই তাঁকে টিভিতে দেখাতাম আমি। কিন্তু তার জন্য কোনওদিন বিশেষ সুবিধা হবে এই আশায় এই কাজ করিনি আমরা কেউই। সেই আমার ফ্ল্যাটের ট্যাক্স বেড়ে গেলো ভাইস চেয়ারম্যানকে বললাম সেই কথা একদিন কথায় কথায়। বলে দিলেন ভাস্করদার সাথে দেখা করে নিতে। হ্যাঁ, কাজ হলো কিছু ট্যাক্স কিছু কমে গেলো আমার। এমন সহজ সরল সম্পর্ক ছিল আমাদের সাথে তাঁর।

 এখনো কোনো মিডিয়ায় কাজ না করলেও দেখা হলেই কথা বলেন তিনি। সেই পুরোনো আমলের লোকজন সব এনারা অন্য একটা ঘরানার। সেই দিলীপ যাদবের হাত ধরে পুরপ্রধান হওয়া তাঁর। সেই বহু পুরোনো জুটি তাঁদের এই জেলার রাজনীতিতে। যে রাজনীতি আজ অনেকটাই বদলে গেছে মনে হয়। দেওয়া আর নেওয়া। সেই গিভ এন্ড টেক পলিসি চলে এই রাজনীতিতে। সেই রাজনৈতিক ব্যক্তি আর সাংবাদিকের সঙ্গে শুধুই খবর এর সম্পর্ক নয় আজকাল আর এমনটিদেখা যায়না আর। আজকাল আর খবর করা যায়না যখন তখন যে কোনো ইস্যুতে। যাঁর তার বিরুদ্ধে খবরের লোক খবর করবে যে কোনও প্রশ্ন করবে অকুতোভয়ে সেই সব দিন আজ আর নেই মনে হয় এই বঙ্গের মিডিয়ায়। 

কেন এটা হলো সেই প্রশ্ন করলেই পাল্টা উত্তর আসে কোন চ্যানেল ভাই তুমি। ওই দালাল এর পক্ষের চ্যানেল তো জানি আমি। কই আগে বাম আমলে তো আমাদের এই দু পয়সার এই মিডিয়ার বিড়ি খাওয়া আর কোনও রকমে বেঁচে থাকা সাংবাদিকদের এমন কথা শুনতে হয়নি কোনওদিন। তাহলে কী এমন ঘটে গেলো এই বঙ্গের মিডিয়ায়। যে মিডিয়া জব একসময় বেশ সম্মানের ছিলো আর আনন্দের ছিলো। যে সময় যখন তখন মিডিয়ার লোকজন এম পি, এম এল এ, আর চেয়ারম্যানের আর ভাইস চেয়ারম্যান এর বাড়ীতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করার সাহস দেখাতো। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছের মতো দল বেঁধে লাইন দিয়ে ঘুরতে হতো না সাংবাদিকদের। 

সত্যিই এই আমলে কিছুটা হলেও যেনো বেমানান গিরিধারী সাহা। তবুও এইসব মানুষজন আছেন বলে এখনোও ভরসা পাই আমরা। কথা বলতে পারি, পৌঁছতে পারি তাঁর দরজায় যে কোনও দরকার হলেই। রঞ্জনকে বলতে পারি দাদা আছেন যাবো একটু। রঞ্জন হেসে বলে তোমায় আসতে হবে না আমি করে দিচ্ছি কাজ। সত্যিই এত বদলে যাওয়া আর পাল্টে যাওয়ার মাঝে এটাই প্রাপ্তি আমার। এই ৩৫ বছরের সাংবাদিকতার সুফল এটা। আজ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এইসব কথা লিখে ফেললাম আমি। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। সুস্থ থাকুন। আর মানুষের জন্য কাজ করে যান গরীব মানুষের জন্য কাজ করলে ভালোই হয়। রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো লোকদের কাছে সাধারণ মানুষ যে শুধুই একটু সাহায্য চায়। এর থেকে বেশী আর কি চায় তারা বলুন। এই দ্রুত গতিতে বদলে যাওয়া রাজনীতির ময়দানে আপনি একরকম থাকুন আমাদের সবার দাদা হয়েই। হ্যাপি বার্থডে দাদা। 

হ্যাপি বার্থডে দাদা - অভিজিৎ বসু।
ষোলো অক্টোবর দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...