সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মহাকরণের রিপোর্টার শান্তশ্রী

মহাকরণের সেই লম্বা বারান্দা। সারি সারি ঘর। মন্ত্রী আমলা আর করনিকদের কত কাজের ব্যস্ততা। সেই ঘরের ভেতর মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে ধীরে ধীরে। কত লোকজনের আনাগোনা সেই সংরক্ষিত এলাকা দিয়ে হাতে পাশ নিয়ে। কত দরকারে মন্ত্রীর ঘরে আসা সব মানুষজনের। আর সেই মন্ত্রীর ঘরের ভেতর অনায়াসে হাসতে হাসতেই প্রবেশ করা সাংবাদিকদের। সংরক্ষিত এলাকা দিয়ে পুলিশকে একদম পাত্তা না দিয়ে। পকেটে পেন আর পকেটে নোট প্যাড নিয়ে। খবরের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো হাসিমুখে তাঁদের।


 সেই শান্ত ধীর স্থির হাসিমুখে ঘুরে বেড়ানো এক কম বয়সী রিপোর্টার চষে ফেলছে গোটা এলাকা। যে বেশ মাটির ছেলে যেনো। হ্যাঁ সেই শান্তশ্রী মজুমদার মনে হয় নামটি। শান্ত বলেই সবাই তাকে চেনে। সেই ওর মহাকরণের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা ছবিটা দেখে কত কিছুই যে মনে পড়ে যায় আমার আজ। সেই কত রিপোর্টার এর এই ঘর আর ওই ঘরে হানা দেওয়া দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। খবরের কাগজের লোক আর টিভির লোকদের আনাগোনা এই করিডর ধরেই। জাল ফেলে মাছ ধরার চেস্টা করা আর কি। আর এইসব এর মাঝে বড়ো কাগজের রিপোর্টারদের জালে মাছ তুলে বসে থাকা চুপটি করে ঘাপটি মেরে। সত্যিই বেশ ভালই দিন কাটতো সেই সময় এই সব মহাকরণের সাংবাদিকদের। 


আজকাল তো দিন বদলে গেছে অনেক। মহাকরণ নেই আর সংবাদিকদের খবরের ক্ষেত্র হিসেবে স্বচ্ছন্দ বিচরণ ভূমি। নবান্নে যেখানে সেখানে সাংবাদিকদের গতিবিধির ওপর নজরবন্দি অবস্থা এখন। যে কোনও জায়গায় যাওয়ার অধিকার নেই মিডিয়ার কর্মীদের। সেই চৌদ্দ তলার ঘরে সাংবাদিক বৈঠক করা হলে একতলায় প্রেস কর্ণারে বসেই সেটা শোনা যায় যন্ত্রের সাহায্য ও। মন্ত্রী আমলারা হাতের কাছে ধরা দেন না আর আগের মতোই। সাংবাদিকদের খবরের জানান দেওয়া আর হয়না খবরের সোর্সদের।

সেই সব খবর যা একদম এক্সক্লুসিভ বলে পরদিন কাগজের প্রথম পাতায় বের হতো আর সেই খবর করা সাংবাদিকরা কেমন বুক ফুলিয়ে মহাকরণে প্রবেশ করতেন হাসি হাসি মুখ করে। আর অংশু দা বলতেন এই তো কালকের কাগজে সামনের পাতায় আবার একটা বিগ নিউজ বের হবে। এই বলেই চা খেতে চলে যেতেন পাশের মন্ত্রীর ঘর অরূপ রায় এর ঘরে সাথে যেতেন শ্যামলেন্দু দা বা। যিনি সেই মন্ত্রীর ঘরে মাছের খবর লিখে হৈ চৈ হুল্লোড় ফেলে দিলেন একদিন। আর এইসব এর মাঝে চুপ চাপ কাগজে লিখে খবর করে সোর্স বাড়ানোর কাজটা করছে শান্তশ্রী। 

একদম কঠিন পিচে সুইং বলকে বাউন্ডারী মেরে হাসি মুখে ঘুরে বেড়ানো ওর। এটাই হলো আমাদের সেই শান্ত। যাঁকে আমিও চিনতাম একসময়ে। কত কথা হতো কুশল বিনিময় হতো। খবর দেওয়া আর নেওয়া হতো। আজ তো সবটাই অতীত। ভালো থেকো তুমি শান্ত। উত্তরবঙ্গে কাজ করে সে দিব্যি ভালোই আছে এখন এই মহাকরণ আর নবান্ন ছেড়ে। কলকাতা ছেড়ে এখন হয়তো মিস করে পুরোনো দিনগুলো ও নিজেও। তবুও বদলে গেলো আমাদের এই সংবাদিকদের জীবন। যেখানে আর এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা যায়না কিছুতেই। ঘুরে বেড়িয়ে খবর সংগ্রহ করা যায় না কিছুতেই। ভালো থেকো তুমি শান্ত। ভুল লিখলে ক্ষমা করে দিও তুমি। শুভ বিজয়া আর শুভ দীপাবলী জানাই তোমায়। ব্যাঙ্গালোরে বসে বাংলার কথা লিখে ফেললাম আমি। ফেলে আসা দিনের কথা ভুলি কেমন করে। 

মহাকরণের রিপোর্টার শান্তুশ্রী - অভিজিৎ বসু 
২৬ অক্টোবর দু হাজার পঁচিশ 
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...