সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আরামবাগের বন্যা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই বন্যার কথা। যে বন্যা নিয়ে কত গল্প কত সুখ দুঃখের স্মৃতিই না জড়িয়ে আছে আমার এই দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে। আসলে এই প্রকৃতির যে করাল রূপ যার কাছে মানুষ খুব অসহায়। তবু যেনো অসহায় হয়েও একে অপরকে ধরে, সাহায্য করে বেঁচে থাকার একটা মরিয়া চেষ্টা। যে বন্যার জলে তদারকিতে গিয়ে ভেসে গেলেন হুগলীর খানাকুল এক নম্বর ব্লকের বিডিও সঞ্জয় মুখার্জী। যার খোঁজ মেলেনি প্রায় দেড় দিন। গাছের ডাল ধরে কোনো ভাবে নৌকোয় আটকে বেঁচেছিলেন তিনি। সত্যিই অসাধারন এই সব গল্প কথা। 
 মোবাইলহীন জীবনে এই বন্যা দুর্গত এলাকায় খানাকুলের বিডিওকে হারিয়ে আরামবাগের মহকুমা শাসক গোপীনাথ মুখোপাধ্যায় এর তখন একরকম পাগল পাগল অবস্থা। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। একদিকে বিডিওকে খুঁজে না পাওয়া অন্য দিকে রাজনীতির সব মাতব্বর আর কুশীলবদের নানা ভাবে, নানা প্রকারের চাপ দিয়ে সুবিধা আদায় করার অপরিসীম প্রচেষ্টা। যাদের ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে মাথা উঁচু করে চাকরি করা দায়। এই সব নানা ঘটনা নানা গল্প নিয়ে আজ হুগলীর বন্যার কথা।
 বন্যা মানেই তো প্রতিদিন এক নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। কখন জল বেড়ে যাবে আর কখন কমবে তার অপেক্ষায় প্রহর গোনা ঘড়ি ধরে। জলে থৈ থৈ ভালবাসার স্পর্শ নিয়ে জলে ভিজে একশা হয়ে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা। জলে ভেসে যাওয়া পরিবারদের নিয়ে তাদেরকে সঠিক ভাবে সাহায্যে করার নামে রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো কিছু লোকদের মাতব্বরি আর ক্ষমতার আস্ফালন দেখা। যেখানে জলে ভেসে যাওয়া পরিবারদের সাহায্যর থেকে ক্ষমতা দেখানোই প্রধান উপজীব্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। 
পর পর দুটো বছরের বন্যার কথা আমার আজও মনে পড়ে যায় এই ভরা শ্রাবণে এত বছর পরেও। উনিশ শো নিরানব্বই ও দু হাজার সালের হুগলীর আরামবাগের এই দুটি বন্যার স্মৃতি অনেকটা ঝাপসা হয়ে গেলেও এখনো কিছুটা হলেও জেগে আছে সেই সব কথা ঠিক গঙ্গার মাঝে জেগে ওঠা ধূসর চরের মত। আসলে স্মৃতি খুব একটা বেইমানি করে না, মানুষ বেইমানি করলেও। তাই এই বন্যার জলে ভেসে যায় ঘর বাড়ি, মিশে যায় ধনী গরীব সব পরিবার মিলে মিশে এক হয়ে যায় একটু আশ্রয়ের সন্ধানে। সবাই আস্তানা নেয় এক ছাদের তলায় কোনো রকম ভেদাভেদ না রেখে গ্রামের উঁচু স্কুল বাড়ীতে।
 জলে ভেসে যাওয়া কলার ভেলা করে একটু ডাঙার সন্ধানে আমরা সবাই তখন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি।  সাংবাদিক, গ্রামবাসী সবার সাথে চুপটি করে জলে ভিজে কাতর সেই নিশ্চুপ সেই সাপও কেমন চুপটি করে কলার ভেলায় ভেসে চলেছে আমাদের সাথে সহযাত্রী হয়ে একটু আশ্রয়ের সন্ধানে। সত্যিই জীবনের বাঁচার জন্য কতই না লড়াই এই সাপে আর মানুষের কি অদ্ভুত সহাবস্থান। এই সব কথা মনে পড়লে আমার মনে হয় জীবনের এই সব নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়ে থাক। 
আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগের সেই আরামবাগ যাত্রা মানেই তো একটা বিভীষিকা। হুগলীর এই মহকুমা যেনো বিছিন্ন একটা দ্বীপ এর মত। তারকেশ্বর অবধি ট্রেন পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে দৌড়ে বাস ধরে তারপর আরামবাগ যাওয়া। তারপর সেখান থেকে আমার সেই ক্যামেরাম্যান সুব্রত যশকে সঙ্গী করে ওর গাড়ি চেপে আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট, কামার- পুকুর ঘুরে বেড়ানো খবরের সন্ধানে। সেই বড়ো কালো বিয়ে বাড়ির ক্যামেরা আর সেই ফিতে ওলা ক্যাসেট নিয়ে। আজকের টিভি চ্যানেলে যা সেই আদ্যিকালের ডায়নোসরের যুগের সঙ্গে তুলনা হবে। বলবে ও বাবা তোমরা সেই পুরোনো আমলের সাংবাদিক সব তাই ঠিক এডজাস্ট করতে পারছ না এই জেট গতির যুগে। তাই তো তোমরা সব বাতিলের দলে।
 কিন্তু যাই হোক ছোটো বেলার ঊনিশ শো আটাত্তর সালের সেই বিখ্যাত বন্যায় তখন আমি খুব ছোট আট বছর বয়স আমার। ভোরবেলায় সব ভেসে গেছে কোনো রকমে খাটের ওপর বসে আছি মা, আমি আর বাবা। ভোর বেলায় শ্রীরামপুর থেকে সাঁতরে একমাত্র বোনের খবর নিতে আমার মেজমামা রিষড়াতে এসেছিলেন। কোনো রকমে হারিকেনের আলোয়  দেখলাম মা, মেজমামাকে স্টোভ জ্বেলে চা করে দিলো। একটু গরম চা খেয়ে ফিরে গেলেন মামা নিজের বাড়িতে।  
সেই মোবাইল হীন যুগে এমন বিপদের দিনে খবর নেবার এ ছাড়া আর কি উপায় ছিল।  সত্যিই অসাধারন এই অনুভূতির সম্পর্ক, এক অন্য ধরনের ভালোবাসা একে অপরের প্রতি। কিন্তু এই ভালবাসাই তো কত ফিকে হয়ে গেলো কিছুদিন কিছু বছর পরে। মা মারা গেলেন একবছর আগে, মেজমামাকে বললাম মা আর নেই। না, আর দৌড়ে আসতে পারল না কেউই সেদিন মামার বাড়ির। হয়তো দিন বদলের তালে সময় বদলে যায়। মানুষের সম্পর্ক ধীরে ধীরে বদলে যায়, হয়তো ভালোবাসার ভাটা পড়ে যায়। জোয়ার আসা জীবনের দিনগুলোতে কিছুটা ভাটা পড়ে যায়। আর যে ভাটায় আটকে যায় মজে যাওয়া সম্পর্কের জটিল সব বন্ধন। 
সবে তখন আমি তারকেশ্বর থেকে বাস ধরে নেমে আরামবাগ এসডিও অফিসে পৌঁছে গেলাম। দ্বারকেশ্বর, মুন্ডেশ্বরী, আর দামোদরের জলে ভেসে গেছে খানাকুল এর বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘন ঘন টেলিফোন বাজছে এসডিও সাহেবের ঘরে। সেই ফোন নম্বর আমার আজও মনে আছে 03211 55041, মহকুমা শাসক গোপীনাথ মুখোপাধ্যায় এর তখন দম ফেলার ফুরসত নেই। কোথায় ত্রিপল কত যাবে। কত বস্তা চাল যাবে তার তদারকিতে ব্যস্ত এসডিও অফিসের কর্মীরা।
 গাছে ঘেরা অফিসে তখন চরম ব্যস্ততা। আর সেই কাজে নাক গলিয়ে আরামবাগের দাপুটে সাংসদ অনিল বসুর প্রতিনিধি মোজাম্মেল হোসেন কোন গ্রাম কত চাল ও ত্রিপল পাবে তার হিসেব করতে ব্যস্ত। মানে হলো এটাই ত্রাণ বিলিতেও লাল পার্টির নেতাদের সংকীর্ণ স্বার্থের রাজনীতি। যে রাজনীতির ময়দানে এই ভাবেই তারা কাটিয়ে দিয়েছে চৌত্রিশ বছর। এই ভাবেই তো দাপুটে সেই সাংসদ অনিল বসু গোটা দেশে হৈ চৈ ফেলে দিয়ে ছিলেন তার ভোটের ফল প্রকাশের পর।এটাই তো ছিল লাল দুর্গ আরামবাগ।
 যেখানে স্থানীয় প্রশাসন ভোটের সময় যে ভোট কেন্দ্র চিহ্নিত করে অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে সেই  চিহ্নিত কেন্দ্র বদলে যায়, উবে যায়। এটাই তো রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়ম। সেখানে চাল আর ত্রিপল উবে যাবে নিঃসাড়ে। এই গ্রামের বদলে অন্য গ্রামে যাবে ভোট কেন্দ্র সেটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। রাজনীতির চাপে কত কিছুই যে ঘটে যায় কে জানে। জলের ধারায় সে সব কিছুতেই ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় না।
যাই হোক এসডিও সাহেবের উদ্যোগে ত্রিপল এর সেই গাড়ি করে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গ্রামে যাবার ব্যবস্থা হলো আমাদের। আমরা উঠে পড়লাম সেই ট্রাক্টর এর উপর। শহর ছেড়ে গ্রামের উদ্দেশে চলল ট্রাক্টর। সেই কালো ত্রিপল এর ওপর আধবসা হয়ে আমরা বেশ কয়েকজন। তার মধ্য একজন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার অশোক মজুমদার। ছিল জেলার সাংবাদিক গৌতম বন্দোপাধ্যায়। সেই অশোক মজুমদার যিনি এখন মুখ্য মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ফটোগ্রাফার। 
কিন্তু একি অবস্থা মায়াপুর মোড়ে এসে হাজির হয়ে বুঝতে পারলাম দ্রুত গতিতে জল বাড়ছে হু হু করে। চেনা সেই মায়াপুর মোড় যেনো দ্রুত অচেনা হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আমাদের সেই ত্রিপল বোঝাই ট্রাক্টর এর গতি কমতে শুরু করলো জলের তোড়ে। কোথায় রাস্তা আর কোথায় মাঠ সব মিলে মিশে একাকার যে। এযে মুন্ডেশ্বরীর জলে সব ভেসে গিয়ে সমুদ্র হয়ে গেছে। তার মাঝেই কত জল ছাড়া হলো ডিভিসি থেকে সেটা নিয়ে চূড়ান্ত ব্যস্ততা এসডিও অফিসে। ঘন ঘন ডিএম সাহেবের ফোন ধরে দুর্গাপুর থেকে ছাড়া জল এসে পৌঁছল কি না তার জবাব দিতেই মহকুমা শাসক এর গলদঘর্ম অবস্থা। 
আর আমরা তখন সেই ত্রিপল বোঝাই ট্রাক্টর এর ওপর দাঁড়িয়ে শুধু জল আর জলের ছবি দেখতে দেখতে এগোতে থাকলাম। একি দেখছি যেনো জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না সেই লাইন মনে পড়ে গেলো। ড্রাইভার এর পথ ঘাট চেনা বলে রক্ষে না হলে যে গাড়ি কোথায় আটকে যাবে কে জানে। চেনা গ্রাম, চেনা জনপদ সব জলের ধারায় বৃষ্টির ধারায় ভেসে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সেই জলের ধারে মশারী নিয়ে বা অন্য কোনো মাছ ধরার জিনিস নিয়ে চরম আনন্দে চলছে মাছ ধরার আনন্দ। ঘর নেই, রান্নাঘর নেই, সব ভেসে গেছে কিন্তু মাছ ধরা আছে। 
সেই রাস্তার পাশ থেকে মাছ কিনে নিয়ে এসেছিলাম আমি একবার দিদির বাড়ী আরামবাগে। নিজে মাছ না খেলেও সেই মাছ নিয়ে আসার আনন্দ কিন্তু একটা আলাদা অভিজ্ঞতা ছিল। আরামবাগ গেলে আমার এই অচেনা অজানা দিদির বাড়ী কি করে যে নিজের বাড়ির মত আস্তানা হয়ে গেলো কে জানে। গ্রামের ঘর বাড়ি বন্যায় ভেসে গেলেও আমার ঘর ঠিক ছিল এই সবের মাঝেও। সারাদিন জলে ভিজে কাজ সেরে সন্ধ্যায় সেই শুক্লাদির বাড়ী এসে রাত্রি যাপন করতে বেশ মজা হতো। রিমা, দিশা, দিদি, সিমি, মেজদি, গৌতম দা  তখন বাইরে ডিউটিতে গেছেন। বন্যার জলে তখন সেই দিদির স্কুল বন্ধ। সারাদিন কাজের পর অন্য একটা অভিজ্ঞতা। যে দিদির সাথে সেই বন্যার দিনের সম্পর্ক আমার আজও রয়ে গেছে। আসলে সেই দিদির সাথে আমায় দেখা করিয়ে দিয়েছিল বর্তমান কাগজের সন্দীপন্দা। সেই গল্প অন্য একদিন।
 আজ শুধুই বন্যার কথা। এরপর সেই ট্রাক্টর থেকে নেমে গেলো ত্রিপল। রাস্তার পাশের অস্থায়ী ছাউনী তে তখন কচি একরত্তি দুধের শিশুর চিল চিৎকার। পেটের টানে। লজ্জা শরম কোনো ভাবে লুকিয়ে রাস্তার পাশে ঘর পাতা মা আড়াল করে ছেলেকে বুকের দুধ খাওয়াতে ব্যস্ত। বিচিত্র সব জলের ওপর নানা রঙের ছবি। এসবের মাঝেও কে ত্রান পাবে কত পাবে সেটা নিয়ে নেতাদের নানা মাতব্বরি। সত্যিই অসাধারন এই রাজার নীতি। না হলে কি আর এই সব রাজারা এই ভাবে কাটিয়ে দিতে পারত নিজেদের স্বার্থের জীবন শুধু একটু ক্ষমতা দেখিয়ে।
কিন্তু এসবের মাঝেও ঘর দুয়ার সব ভেসে গেছে বন্যার জলে। বাড়ির পেছনে নৌকো বা ডিঙ্গি বাঁধা আছে। এই বাড়ী থেকে বেরিয়ে দূরের বাড়িতে চলে যাওয়া নির্দ্ধিধায়। খাওয়া দাওয়া করা যেনো সবাই এই বিপদের দিনে একে অপরের পরম আত্মীয় স্বজন হয়ে গেছে। এই ভাবেই জড়িয়ে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা একে অপরের সাথে। এ যেনো আমাদের শহরের ফ্ল্যাট বাড়ির শিক্ষা নয়। বিপদে পড়েছে জেনেও হাসি মুখে মুখ ঘুরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে যাওয়া নয়। গ্রামের বন্যা একের সাথে অন্যর নিগূঢ় সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ করে দেয়। যে সম্পর্কে গরীব বড়লোকের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই মিলে একসাথে সেই সময় প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচার চেষ্টা করে। যেখানে কোনো কৃত্রিমতা থাকে না। একে অপরের হাত ধরে টেনে রেখে চলতে শেখায়।
 সত্যিই অসাধারন এই বন্যার ভয়াল রূপ কেমন করে যে মানুষদের এই ভাবে একে অপরকে জড়িয়ে নিয়ে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেয় সেটাই তো জীবনের সেরা উপহার। জলে ভেসে যাওয়া মানুষগুলো কেমন করে যেনো একটু একটু করে সবাই একে অপরের পরম আত্মীয় হয়ে যায়। বোধ হয় জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে এমন শিক্ষা লাভ করে তারা। 
জীবনের সবচেয়ে এই কঠিন দিনে কেমন করে যে সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় কে জানে। আজ বহুদিন পর, সকাল বেলায় জীবনের ফেলে আসা দিনের সেই সব জলে ভেজা স্মৃতির পাতায়, জল ফড়িং উড়ে এসে বসলো বহুদিন পর। যার ডানায় বৃষ্টির ছোঁয়া লেগে আছে। কেমন চুপটি করে সে বসে আছে। যে আনমনে আমায় মনে করিয়ে দিলো নানা ঘটনা, নানা কথা।
মোবাইলহীন জীবনের মাঝেও কত গভীর ভালোবাসা যে লুকিয়ে ছিল একসময়। যার কোনও ছবি নেই আমার কাছে। কিন্তু সেই পঁচিশ বছর আগের আমার হারিয়ে যাওয়া সাংবাদিক জীবনের কিছু ছবি আজ আমায় আবার ভিজিয়ে দিল এতদিন পরেও। আঁকাবাঁকা অক্ষরে জলে ভেজা রাস্তায় আঁকিবুঁকি অক্ষরে আমার ব্লগে কিছু কথা লিখে ফেললাম আমি।
 সবটাই তো সাদা জীবনের জলে ভেজা মেঠো রাস্তার কথা। যে রাস্তায় জোনাকির আলো আছে, যে রাস্তায় গভীর ভালোবাসা আছে, একে অপরকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা আছে, যে রাস্তায় সেই বেহুলা লখিন্দরের মত কলার ভেলায় ভেসে যাওয়া আছে। আজ এতদিন পর মনে হয় যদি আবার অমন করে ভেসে যেতে পারতাম আবার কি ভালই যে হতো। 

আরামবাগের বন্যা - অভিজিৎ বসু।
সাতাশে জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...