সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাখী বন্ধনে বাঁধা ইতিহাস

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ রাখী বাঁধার কথা। যে রাখী বন্ধন ভাই আর বোনের সম্পর্ককে আর নিগূঢ় করে, আপন করে, নিকটের করে। আজ সেই রাখিবন্ধন উৎসব পালন হচ্ছে গোটা দেশ জুড়ে।
রাখীবন্ধন ভাই ও বোনের মধ্যে প্রীতিবন্ধনের উৎসব। রাখীবন্ধন উৎসব বা রাখীপূর্ণিমা ভারতীয় উপহাদেশের একটি উৎসব। হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ ও শিখরা এই উৎসব পালন করে।এই দিন দিদি বা বোনেরা তাদের ভাই বা দাদার হাতে রাখী নামে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়। এই রাখীটি ভাই বা দাদার প্রতি দিদি বা বোনের ভালবাসা ও ভাইয়ের মঙ্গলকামনা এবং দিদি বা বোনকে আজীবন রক্ষা করার ভাই বা দাদার শপথের একটা প্রতীক। সেই রাখিবন্ধন বা রক্ষাবন্ধন এর দিন আজ।
হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব উদযাপিত হয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ বঙ্গভঙ্গের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই অনুষ্ঠানের পুনঃসূচনা করেছিলেন বাংলার মানুষের মনে ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এইবার সেই রাখীর উৎসবে লেগেছে রাজনীতির ছোঁয়া। নানা রং। নানা প্রতিবাদ। নানা আন্দোলন।
 ভাই বোনের সেই অকৃত্রিম ভালোবাসার সুতো জড়ানো রাখিতেও আজ কেমন যেনো রাজনীতির ছোপ ছোপ দাগ লেগে গেছে। কারণ একটাই সেই আর জি কর এর ঘটনার ঘনঘটা। যে ঘটনা আমাদের সর্বস্তরের মানুষকে আন্দোলিত করেছে। নাড়িয়ে দিয়েছে। দুলিয়ে দিয়েছে। যে দোলা লেগেছে আট থেকে আশি সর্বত্র। যার ঢেউ এর ধাক্কা লাগছে সমাজের সব জায়গায়। কোনো ভাবেই এই ঢেউয়ের হাত থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই যে। 
পৌরাণিক রাখীবন্ধন এর একটি গল্প আছে মহাভারতে। কৃষ্ণ ও দ্রৌপদীর গল্প। মহাভারতে আছে, একটি যুদ্ধের সময় কৃষ্ণের কবজিতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হলে পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল খানিকটা ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। এতে কৃষ্ণ অভিভূত হয়ে যান। দ্রৌপদী তাঁর অনাত্মীয়া হলেও, তিনি দ্রৌপদীকে নিজের বোন বলে ঘোষণা করেন এবং দ্রৌপদীকে এর প্রতিদান দেবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দেন। বহু বছর পরে, পাশাখেলায় কৌরবরা দ্রৌপদীকে অপমান করে তাঁর বস্ত্রহরণ করতে গেলে কৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষা করে সেই তাঁর রাখা প্রতিদান ফিরিয়ে দেন। এইভাবেই রাখীবন্ধনের প্রচলন হয় বলে জানা যায়।
আবার অন্য একটি গল্পে রয়েছে, দৈত্যরাজা বলি ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। বিষ্ণু বৈকুণ্ঠ ছেড়ে বলির রাজ্য রক্ষা করতে চলে এসেছিলেন। বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য এক সাধারণ মেয়ের ছদ্মবেশে বলিরাজের কাছে আসেন। লক্ষ্মী বলিকে বলেন, তাঁর স্বামী নিরুদ্দেশ। যতদিন না স্বামী ফিরে আসেন, ততদিন যেন বলি তাঁকে আশ্রয় দেন। বলিরাজা ছদ্মবেশী লক্ষ্মীকে আশ্রয় দিতে রাজি হন। শ্রাবণ পূর্ণিমা উৎসবে লক্ষ্মী বলিরাজার হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। বলিরাজা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে লক্ষ্মী আত্ম পরিচয় দিয়ে সব কথা খুলে বলেন। এতে বলিরাজা মুগ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে বৈকুণ্ঠে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। বলিরাজা বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেন। সেই থেকে শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথিটি বোনেরা রাখীবন্ধন হিসেবে পালন করে।
 রাখীবন্ধনের দিন গণেশের বোন গণেশের হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। এতে গণেশের দুই ছেলে শুভ ও লাভের হিংসে হয়। তাদের কোনো বোন ছিল না। তারা বাবার কাছে একটা বোনের বায়না ধরে। গণেশ তখন তাঁর দুই ছেলের সন্তোষ বিধানের জন্য দিব্য আগুন থেকে একটি কন্যার জন্ম দেন। এই দেবী হলেন গণেশের মেয়ে সন্তোষী মা। সন্তোষী মা শুভ ও লাভের হাতে রাখী বেঁধে দেন।
এছাড়াও ঐতিহাসিক রাখীবন্ধন আছে গল্পে। মহামতি আলেকজান্ডার ও পুরু রাজার গল্প। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহামতি আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করলে আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানা রাজা পুরুকে একটি পবিত্র সুতো পাঠিয়ে তাঁকে অনুরোধ করেন আলেকজান্ডারের ক্ষতি না করার জন্য। পুরু ছিলেন কাটোচ রাজা। তিনি রাখীকে সম্মান করতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি নিজে আলেকজান্ডারকে আঘাত করেননি। সেই কথা আমরা সবাই জানি।
রানি কর্ণবতী ও সম্রাট হুমায়ুন এর একটি জনপ্রিয় গল্প অনুযায়ী, চিতোরের রানি কর্ণবতী ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে একটি রাখী পাঠান। গুজরাতের সুলতান বাহাদুর শাহ চিতোর আক্রমণ করলে বিধবা রানি কর্ণবতী অসহায় বোধ করেন এবং তিনি হুমায়ুনকে একটি রাখী পাঠিয়ে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করেন। কর্ণবতীর রাখী প্রেরণে অভিভূত হয়ে হুমায়ুন চিতোর রক্ষা করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করেন।
 তবে হুমায়ুনের সেনা পাঠাতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। বাহাদুর শাহ রানির দুর্গ জয় করে নেন বলে জানা যায়। শোনা যায়, বাহাদুর শাহের সেনাবাহিনীর হাত থেকে সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য ১৫৩৫ সালের ৮ মার্চ রানি কর্ণবতী ১৩,০০০ পুরস্ত্রীকে নিয়ে জহর ব্রত পালন করে আগুনে আত্মাহুতি দেন। চিতোরে পৌঁছে হুমায়ুন বাহাদুর শাহকে দুর্গ থেকে উৎখাত করেন এবং কর্ণবতীর ছেলে বিক্রমজিৎ সিংকে সিংহাসনে বসান। সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের লেখা থেকে রাখী প্রেরণের কথা অবশ্য জানা যায় না। কোনো কোনো ঐতিহাসিক রাখী পাঠানোর গল্পটির সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন। তবে মধ্য-সপ্তদশ শতকের রাজস্থানী লোকগাথায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
তবে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। তিনি কলকাতা, ঢাকা ও সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোনকে আহ্বান করেছিলেন একতার প্রতীক হিসাবে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য। সেই সময় দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চরম পর্যায়ে ছিল। সেই সময় তাঁর এই ডাক সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আমরা আজ  সারা দেশ জুড়ে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করছি। কিন্তু ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা আনার জন্য রাখী বন্ধন উৎসব পালন করা হয়েছিল।
উনিশ শতকে আমাদের বাংলায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে ছিল যা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে অপরিমিত ভয়ের কারণ। এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় তারা বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করবে। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ সহ গোটা ভারতের বিভিন্ন নেতা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিল এবং বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন।
১৯০৫ সালের জুন মাসে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯০৫ সালের আগস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ জন্য আইন পাশ করা হয়। এই আইন কার্যকরী হয় ১৬ই অক্টোবর, ১৯০৫। শ্রাবণ মাসে হিন্দু ভাইবোনদের মধ্যে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগিয়ে তোলা এবং ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য আহ্বান করেন। রবীন্দ্রনাথ এই দিনটির উদ্দেশে একটি গান লিখেছিলেন। সেই বিখ্যাত গান। 

"বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু বাংলার ফল-

পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।

রাখিবন্ধন উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ আরো দুটি গান রচনা করেছিলেন, সে দু’টি গান হল -

জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ। 
ধন্য হলো ধন্য হলো মানবজীবন।।
অন্য গানটি হলো। প্রভু, আজি দক্ষিণ হাত রেখো না ঢাকি। এই গান তো একদম সেই ঈশ্বরের সাথে ভাব তত্ত্বের গান। তাঁকে কাছে ডাকার আকুল করা গান এক ভক্তের। প্রভুর হাতে রাখী পড়াতে পারলেই তো অন্য সবার সাথে বাঁধা পরা যাবে। তাহলে আর কেউ বাকি থাকবে না বাঁধা পড়তে। ভগবানের সাথে ভক্তের মিলনের অটুট বন্ধন। যে বন্ধন অমর, অক্ষয় হয়ে থাকবে সারাজীবন ইহকাল,পরকাল এর জন্য। প্রভুর সাথে তাই বিচ্ছেদ নয় শুধুই মিলন। সারাজীবনের এই রাখি বন্ধন গ্রথিত থাক আমাদের জীবনে। তাহলে এই রাখিবন্ধন সারাজীবন অটুট থাকবে। ভক্ত আর ভগবানের এই বন্ধনে গড়ে উঠবে সৌভ্রাতৃত্ব। 

প্রভু  আজি তোমার দক্ষিণ হাত
রেখোনা ঢাকি!
এসেছি তোমারে, হে নাথ,
পরাতে রাখী।

যদি বাঁধি তোমার হাতে
পড়ব বাঁধা সবার সাথে,
যেখানে যে আছে, কেহই
রবে না বাকি!

আজি যেন ভেদ নাহি রয়
আপন পরে,
আমায় যেন এক দেখি হে
বাহিরে ঘরে।

তোমার সাথে যে বিচ্ছেদে
ঘুরে বেড়াই কেঁদে কেঁদে,
ক্ষণেক তরে ঘুচাতে তাই
তোমারে ডাকি।

২৭ আশ্বিন ১৩১৬

রাখি বন্ধনে বাঁধা ইতিহাস - অভিজিৎ বসু।
উনিশে আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...