সকাল হতেই কেমন চারিদিকে ঘরে ফেরার ডাক। পূজোর আর বাকি মাত্র এক পক্ষ সময়। তার মাঝেই সেজে উঠেছে চারিদিক। মা আসছেন। সন্ধ্যা বেলায় আলো ঝলমল শহরের চেহারা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। খড়ের ওপর মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়ে গেছে কবেই। মাটির প্রতিমায় পড়েছে দুধে আলতা রঙের উজ্জ্বল প্রলেপ।
আশ্বিনের সকালে ঘুম ভেঙে যায় ভোরবেলায়। না, এই শহরে আর কোথাও শিউলির সুবাস পাই না আমি ঘুম থেকে উঠে আজকাল। ঘুমের ঘোরে ভোর বেলায় টুপটাপ করে মাটিতে ঘাসের ওপর শিউলির পড়ার শব্দ শুনতে পাইনা আর। ভোরের আলোয় নাম না জানা পাখির ডাক শুনতে পাই না আমি। কেমন একটা দম বন্ধ করা পরিবেশ চারিদিকে যেনো। চাপা দম বন্ধ করা রাস্তা ঘাট, ঘর দুয়ার, ফ্ল্যাট বাড়ির ফিতে দিয়ে মাপা ছোটো ছোটো কুঠুরি। সেই কুঠুরির মধ্য ঘুরে বেড়ানো সাজানো গোছানো সংসার একদম মাপা মাপা মাপের।
সেই সংসারে হাসি আর কান্না, আনন্দ আর দুঃখ সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে যে। এই কুঠুরির মাঝেই আশ্বিনের প্রথম সকালে ঘুম থেকে উঠে জানা যায় পূজোর আসার সময় হয়ে গেছে। না আশপাশে কোনো পুকুরে শালুক ফুলের সোঁদা গন্ধ নেই যে বুঝবো পূজোর বাদ্যি বাজলো। পাড়ার মণ্ডপে মণ্ডপে পূজা উদযাপন এর বাঁশ পড়া আর তার আওয়াজ শুনে বোঝা যায় যে মা উমা আসছেন। কোথাও সরকারের দেওয়া অনুদান নিয়ে আবার কোথাও সেই অনুদান ফিরিয়ে দিয়ে মা আসছেন আমাদের কাছে। ঘরে বাইরে সর্বত্র তার সুনিপুণ প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে।
পার্লারে সাজগোজ করতে গিয়ে কেমন করে যেনো চুলের মিষ্টি ঝাপটায় নাজেহাল সুন্দরী। রাস্তায় হাঁটতে নেমে দেখি হাতে হাত ধরে কাজল টানা চোখের মাঝে লুকিয়ে আছে গভীর আবেগ আর গোপন ভালোবাসার চিনচিনে সম্পর্কের হালকা ব্যথা। সেই আবেগকে বুকে জড়িয়ে তো ওরা কেমন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। এই শহুরে জীবনের মাঝেই মিলেমিশে একাকার হয় চেটেপুটে গিলে খায় ওরা আনন্দকে আর বুকের মাঝে আগলে রাখে গভীর গোপন ভালবাসাকে। মনটা ভরে যায় আমার ওদের দুর থেকে দেখে। এই শহরের দমবন্ধ করা ইট কাঠের ওই খাঁচাতেও তাহলে ভালোবাসার উত্তাপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে এদিক ওদিক। যে উত্তাপে দগ্ধ হয় ওরা এই ভীড়ের মাঝেও কেমন সংগোপনে।
ভোরের বেলায় দুর থেকে রেডিওর সুর শুনতে পাই না আমি। দেওয়ালের ধাক্কায় আটকে গেছে ভোরের ভাটিয়ালি সুরের সেই মন কেমনের গান আর মহালয়ার স্ত্রোত পাঠ। গাছের ডালে কেমন করে আটকে গেছে ওই ফিঙের নাচন। শালুক ফুলের সোঁদা গন্ধ। সেই নবমীর দুপুরে আমার ঘরে আচমকা ঢুকে পড়া হলুদ প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ। আর তার গায়ের মিষ্টি মধুর সুবাতাস। সব যে আজ বেমালুম উধাও হয়ে গেছে।
যে বাতাস গায়ে জড়িয়ে মেখে পূজোর গন্ধ উপভোগ করেছিলাম একবুক টাটকা ভালোবাসা নিয়ে। যে ভালবাসা আজও কেমন করে রয়ে গেছে এই শহরের আনাচে কানাচেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক আজও। যে গভীর গোপন ভালোবাসা এসেছিল এমন এক আশ্বিনের সকালে। যে সকালে শিউলির টুপটাপ আওয়াজ ছিল। যে সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হয়েছিল এই জীবন আর কিছুই চায়না শুধু মাত্র ওই গভীর গোপন ভালোবাসার সম্পর্কের চিনচিনে অনুভূতি আর অনুরণন ছাড়া।
যা লুকিয়ে আছে শহরে, গ্রামে, মাঠে, ঘাটে, জঙ্গলে, পাহাড়ে, প্রান্তরে। ভালোবাসাময় একটা জীবন। যে জীবন পূজোর গন্ধ মেখে প্রজাপতির ডানায় ভর করে তিরতির করে উড়ে বেড়ায় এদিক থেকে ওদিক। আর আমি কেমন করে যেনো তাকে এক দৃষ্টে দেখি চুপটি করে। আর খুঁজে বেড়াই আমার সেই হারিয়ে যাওয়া হলুদ প্রজাপতিকে।
হলুদ প্রজাপতি - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ সেপ্টেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
ভাল লাগল
উত্তরমুছুন