সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভূত চতুর্দশীর সেই রাত

জীবনে আলো নেই, এদিকে ঘরে টুনি লাইট লাগাচ্ছি আর স্টাইল করে ছবি তুলছি। সত্যিই কত বিচিত্র আয়োজন আর বিচিত্র জীবন। ভূত চতুর্দশীর সন্ধ্যার আলোকজ্বল এই অমলিন, ঝাপসা, ম্রিয়মান এই ছবিটা ধরা থাকলো আমার জীবনের টাইমলাইনের ফেসবুকের পাতায় আলতো করে।

 ঘরের দুয়ারে বাতি দিয়ে অন্ধকারের রাজ্যে চলে যাওয়া। আর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া আমার আত্মীয়দের পথ দেখালাম আমি। হ্যাঁ, যে পথ ধরে আমাদের ছেড়ে যাওয়া মানুষজন এসেছিলেন তাঁরা সেই মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে। তাঁদের তর্পণ করে স্বাগত জানিছিলাম আমরা সবাই। এতদিন ধরে এই উৎসবের আনন্দে আলোকমালায় কেমন ঘুরে বেড়ালেন তাঁরা খুশি মনে। আজকের রাত তাঁদের আবার সেই ফিরে যাওয়ার রাত। যে রাতে ঘুম আসেনা কিছুতেই। যে রাতের অন্ধকারে কত কিছুই যে ঘটে যায়। 

 যাঁরা এতদিন এই পৃথিবীর টানে, আপনজনদের টানে পৃথিবীর কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই তাঁরাই আজ আমাদের ছেড়ে প্রিয়জনদের সবাইকে ছেড়ে ধীরে ধীরে চলে যাবেন দূরে,অনেক দূরে। আর আমরা তখন ঘরের দুয়ারে, উঠোনে তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে সেই তাঁদের যাত্রাপথকে সুগম করবো আলোক সজ্জা দিয়ে। এটাই হলো ভূত চতুর্দশীর সেই আলো আঁধারির রাত এর ইতিহাসে লেখা কথা। যে রাতে একদিন ঘুম ভেঙে জানলার ধারে দেখেছিলাম সেই ভূতের রাজাকে। যে আমায় বর দিতে চেয়েছিল। তিন তিনটে বর। আমিও বেশ জবর জবর তিন বর পাওয়ার আশায় কেমন নড়ে চড়ে বসলাম ঘুম জড়ানো চোখে আড়মোড়া ভেঙে। ভাবলাম ভূতের বরে কাটিয়ে নেবো জীবনের অন্ধকার। কিন্তু না পারলাম না আমি।


 জীবনের এই সবার সব পারা আর না পারার বেড়াজালে আটকে গেলাম আমি সারাটা জীবনই কেমন করে। এই পারা আর না পারার সীমানায় তার বেড়াজালে আটকে গেছে আমার এই ভূত চতুর্দশীর রাত। এই টুক করে ভূতের রাজাকে নিজের মনের দুঃখ অভিমান কষ্টের কথা বলে একটু কিছু ব্যবস্থা করে নেওয়া। এই টুক করে একটু নিজেকে বদলে নেওয়া। না, সেটা আর হলো কই আমার এই পোড়া জীবনে। 


নিকষ কালো অন্ধকারের দাগকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ভূতের রাজাকে প্রনাম জানিয়ে বললাম, আপনি এসেছেন। কেমন অন্ধকার জানলার ওপার থেকে তাঁর তাকিয়ে থাকা আমার দিকে নরম মিষ্টি চোখে হাসি নিয়ে। আর আমিও কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি তাঁর দিকে। একবছর পর ফের দেখা হলো তাঁর সাথে। কোনো কিছুরই দাবি না নিয়ে, কিছুই না চেয়ে। ভূতের রাজাকে প্রনাম জানিয়ে বলি, আবার সামনের বছর আসবেন তো এমন দিনে। মাথা ঝুঁকিয়ে দুহাতে আশীর্বাদ করে তাঁর জবাব নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। কেমন একটা ভালো লাগা ছড়িয়ে পড়ে আমার গোটা শরীরে, মনে শিহরণ বয়ে যায়।

আর শুনি তিনি বলছেন, হাত নেড়ে তুই বড়ো ভালো ছেলে, ভালো ছেলে। বাঁকা পথে যাস না, যাস না। কোনোদিন বাঁকা পথে যাস না। সোজা পথে বেঁচে থাক, বেঁচে থাক। আমি অন্ধকার জানলার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা ভূতের রাজার কথা শুনে কেমন দ্রবীভূত হয়ে যাই। আমার জীবনের আলোহীন অন্ধকার রাতে কেমন যেন হাজার বাতির আলোয় আলোকিত হয়ে যায় আমার এই সাদা জীবন আর কালো জীবন।

 ধীরে ধীরে মিলিয়ে যান তিনি আমার জানলার ধার থেকে। আমি কেমন অপলক নয়নে তাঁর পথের দিকে তাকিয়ে থাকি ফ্যাল ফ্যাল করে। কানে বাজে একটাই কথা বাঁকা পথে যাস না, যাস না। হাজার দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা আর অপমানের মাঝেও কেমন যেন অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলোর ঝলকানিতে ছোটো মোমের আলোয় আলোকিত হয় আমার অন্ধকার এই ছোটো ঘরের দুয়ার, একচিলতে বারান্দা, গোটা ঘর কেমন আলোয় আলোকিত হয়ে যায়।

 আমি ভূতের রাজার জন্য ফের অপেক্ষা করি আরও একটা বছর। শুধু একটাই কথা শুনবো বলে বাঁকা পথে যাস না, যাস না। আর কিছুই চাই না শুধু ওই বাঁকা পথে না যাবার কথা শুনে, তাঁর সেই আশীর্বাদ নিয়ে। তাঁর মিষ্টি নরম চোখের উত্তাপ গায়ে মেখে আরও একটা বছর যেনো এইভাবেই সোজা পথেই চলতে পারি। সবাইকে ভূত চতুর্দশীর শুভেচ্ছা। 

ভূত চতুর্দশীর সেই রাত - অভিজিৎ বসু।
ত্রিশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

  1. শাবাশ, নিজের থেকে বেরিয়ে নিজেকে নিয়ে এভাবে লেখা সহজ নয়।এভাবেই চলুক আঁকিবুঁকি।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...