সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের সবার ফান্টুস দা

আলোর উৎসবে আমার কাছে এসেছে বহু মানুষের শুভেচ্ছা। তাদের অলোক উজ্জ্বল মুখের চওড়া হাসি। দুঃখকে বুকের মাঝে চেপে রেখে মুখে সিগারেট ধরিয়ে সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বিজ্ঞাপন দিয়ে দূরে উচ্চ আকাশে দৃষ্টি নিবন্ধের ছবি। অফিসের ডিউটি করা এই আনন্দ উৎসবে স্টুডিওতে বসে খবর পড়তে বসে মন খারাপের প্রহর গোনা মুখের ছবি। আবার কোথাও সবাই মিলে একসাথে দক্ষিণেশ্বর মায়ের মন্দিরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাসি মুখে ছবি তুলে জানান দেওয়া অলোক উৎসব কেমন আলোময় জীবন উপহার দিলো তাদের। 

কিন্তু এর মাঝে এমন একজনের 🪔 🪔 🪔 দিওয়ালির এই শুভেচ্ছা পেয়ে আমার মনে হলো এই শুভেচ্ছা জানানো মানুষটাকে নিয়ে একটু লিখলে হয় কিছু। আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। আগে আমিও বেশ এই উৎসব আর আনন্দের দিনে নিজের মোবাইল থেকে বহু মানুষকে এমন হরেক কিসিমের শুভেচ্ছা জানিয়ে তার কে উত্তর দিলো আর কে দিলো না তার সংখ্যা গুনে হিসেব রাখতাম আমি। সব সেই নানা মাপের বড়ো, ছোটো, মেজো,সেজো চেহারার মাতব্বর মানুষদের ঠিক শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের স্ট্যাটাসে একটু বেশি করে দাগ লাগিয়ে নেওয়া যেনো ঠিক ওই আলপনার উজ্জ্বল দাগ এর মত আমার এই জীবনে।

সেখানে আজ যার দিওয়ালির শুভেচ্ছা নিয়ে সাতকাহন লিখতে বসলাম আমি সেই অর্থে সে কোনো মাপেরই মাতব্বর মানুষ নয়। একদম সাদামাটা একজন মানুষ। যে মানুষটার ভালো নাম হরদীপ সিং। কিন্তু আমরা তাকে সবাই ফান্টুস দা বলেই ডাকি। বহুদিন আগে শ্রীরামপুরের সেই পল্লীডাক কাগজের অফিসে বসে থাকতাম আমি দেখতাম তাকে। একমুখ লম্বা দাড়ি, ঢিলে ঢালা পোশাক, হাতে বালা আর মুখে হাসি নিয়ে আসত আর হেসে বলতো প্রবীরদা ভালো আছেন তো আপনি। প্রবীরদা বলতেন আরে ফান্টুস ভাই যে। কেমন আছো তুমি। হাতজোড় করে সে বলতো দাদা ভালো আছি। সেই সময় থেকেই তার সাথে আলাপ আমার এর অল্প অল্প চেনা জানা। 

সেই কবে যে ফান্টুস পাঞ্জাব থেকে চলে এসেছিল বাংলায় ওরা সবাই মিলে কে জানে কত দিন আগে। তারপর সেই ড্রাইভার এর কাজ করতে করতে কবে যে ও সর্দারজি থেকে ড্রাইভার হয়ে গেলো ফান্টুস কে জানে। যাই হোক সেই আমাদের সবার প্রিয় ফান্টুস দা। সেই ছোটো বেলা থেকে সব গুড়ি গুড়ি বাচ্চাদের বাস করে, গাড়ি করে স্কুল পৌঁছে দেওয়া সবাইকে। সেই কেজির ছোটো বেলার স্কুল যাবে না বলে কান্না করে ভাসিয়ে দেওয়া বাচ্চাকে কেমন আদর করে হাসি মুখে গাড়িতে বসিয়ে পৌঁছে দেওয়া। এইভাবেই ছোটো সেই বাচ্চা থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়ে যাওয়া। 
হ্যাঁ, আমার বুটাও যে এই ফান্টুসদার সাথে সেই গাড়ি করে চন্দননগর স্কুল যেতো। সেই কবে ছোটো থেকে বড়ো অবধি। সেই হাঁটি হাঁটি পা পা থেকে বড়ো হয়ে গেলো আমার বুটা। পৌঁছে গেলো চন্দননগরের সেই সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে ওর কলেজ জীবনে। সেই সকাল সাতটা বাজলেই ফান্টুসদাকে ফোন করতাম আমি শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায়। বলতাম দাদা আজ মেয়ে স্কুল যাবে তুমি কিন্তু আমাদের বাড়ির কাছে এসে একটু ফোনে জানিও আমায়। আভেরী রেডি হচ্ছে। এইভাবেই তো সব বাচ্চাদের স্কুলে নিশ্চিন্তে পৌঁছে দিয়ে সেই হরভজন সিং ওরফে ফান্টুস দা আমাদের নিশ্চিন্তে নিরাপদে রাখতো। তারপর স্কুলের সামনে গঙ্গার ধারে সারাদিন বসে থেকে চা আর ছাতু বা কচুরি খেয়ে পরে আবার ওদের ঘরে ফিরিয়ে আনতো হাসি মুখে সারাদিন পর। এটাই হলো আমাদের সেই ফান্টুস দা। যে জীবনের বহু বছর শুধু এই ভাবেই আমাদের বুটাদের ছোটো থেকে বড়ো করে দিলো। 

দিওয়ালির রাতে সেই ফান্টুসদার মেসেজ পেয়ে মনটা কেমন ভালো লাগলো বেশ। বড়ো, মেজো, সেজো, ছোটো তেমন মাপের মাতব্বর নয় সে। তবু এমন একজন মানুষের দিওয়ালির শুভেচ্ছা আমায় কত কিছুই মনে করিয়ে দিলো। সেই চন্দননগর এর স্কুল, সেই গঙ্গার ধার, সেই স্ট্রান্ড ঘাট, সেই বোলপুরে গাড়ী নিয়ে গিয়ে আমায় ফোন করে রাস্তার ঠিকানা কোন দিকে জিজ্ঞাসা করা। বিশ্বাস করুন আজ বেশ মনটা ভরে গেলো আমার। 

যে মানুষটা সারা জীবন ধরে এইভাবেই ঝড়, জল, বন্যা আর রোদ কে সামলে নিয়ে আমাদের বাচ্চাকে নিরাপদে নিশ্চিন্তে স্কুলে নিয়ে গেছে আবার ঘরে ফিরিয়ে এনেছে। আমরা নিশ্চিন্তে ঘরে বসে থেকেছি ফান্টুসদার জন্য। সেই মানুষটার এই কিছু টাকার বিনিময়ে এই চোদ্দো বছরের সার্ভিস কিন্তু ভোলার নয়। তাই তাঁর এই দিওয়ালির শুভেচ্ছা বিনিময় আমাকে সত্যিই আবিল করে দিলো। ভালো থেকো তুমি। যেটা আমি তোমায় মনে করে দিতে পারলাম না এই দিওয়ালির দিনে সেটা তুমি আজ আমায় দিলে। 

আমাদের সবার ফান্টুস দা - অভিজিৎ বসু।
পয়লা নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক ও মোবাইল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...