সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কালো ডায়েরির সাদা কথা



কালো ডাইরির, সাদা কথা.....

কালো ডাইরির ,সাদা কথা লিখবো কি না সেটা নিয়ে অনেক টানা পোড়েন চলছিল আমার নিজের মধ্যে। সত্যিই কি সাদা জীবনে কালো কথা লেখা উচিত, না তাকে আড়াল করে রাখা দরকার জীবনে। এটা নিয়ে আমার নিজের মধ্যে একটা টানা পোড়েন চলছিল বহু দিন ধরেই। ভাবছিলাম জীবনের কালো কথা না হয়, অন্ধকারের মধ্যে মুখ লুকিয়েই থাক। কেনই বা সে আলোর মুখ দেখবে কোনোদিন। যে আলো আমাদের অনেককে রক্তাক্ত করে, সেই আলোর মুখ না দেখাই ভালো মনে হয় আমার। 

জীবনের সম্পর্কের সুতোয় বোনা আমন ধানের শীষের ভেজা শিশিরের বিন্দু বিন্দু ঘাম, মুছে ফেলা খুব কষ্টের যন্ত্রণার। তাই সাদা, কালো, অন্ধকার এর কথা ভাবলে কেমন এলোমেলো হয়ে যায় আমার জীবনটা। তবু আমি,আমরা কি পারি সেই সব টুকরো টুকরো যন্ত্রণাকে বুকে আগলে নিয়ে বেঁচে থাকতে। কে জানে একটুকরো নুড়ি পাথর ছিটকে এসে মনের জানলায় ধাক্কা মারে আচমকা। তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পর্কের সরু সুতোটা কেমন যেন আলগা হতে থাকে ধীরে ধীরে। বিশ্বাসের মূল্য কমতে থাকে জীবনে। বাড়তে থাকে অবিশ্বাস এর গরম শ্বাস। গরম ভাতের হাঁড়ি থেকে ধোঁয়া ওঠা লাভার স্রোতের মত বেরিয়ে আসে অনেক কিছু, যাকে ইচ্ছা হলেও আটকে রাখা যায় না। 

সাদা কথা, কালো কথা বলতে ইচ্ছা করে, কিন্তু সব কি আর বলা যায়, বলতে পারা যায়। জীবনের রাস্তাতে অনেক কিছু আছে, যাদের লুকিয়ে নিয়ে বাঁচতে হয় আমাদের। সংগোপনে তাদের সঙ্গে নিয়ে বাঁচতে হয় আমাদের সকলকে। যা প্রকাশ হলে মুশকিল হয় সাদার আর কলোর দু জনের। কিন্তু তবু আমি আজ এই গভীর নিস্তব্ধ রাতে সাদা, কালো কথা বলতে বসেছি, লিখতে বসেছি। চোখের সামনে কাল ডাইরিটা পড়ে আছে টেবিলের ওপর। চুপ করে একদম যেনো অন্ধকারে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে সে চুপ করে, সংগোপনে আর লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে। ঠিক যেভাবে নতুন বউকে লাল চেড়ী সরিয়ে তার লজ্জা ভাঙ্গতে হয়, সেই ভাবেই তার সাথে কথা বলতেই লজ্জা হয় আমার নিজেরই। কিন্তু আমি যে সেই কথা বলতে চাই। না হলে যে , কোনো দিন যন্ত্রণার আঁধার কাটবে না আমার নিজেরও। যে যন্ত্রণা, যে অপবাদ সহ্য করে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয় কিছুতেই। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই লিখতে বসা। যা না লিখলে অনেক অব্যক্ত যন্ত্রণা চুঁইয়ে পড়বে না আমার মনের আধার থেকে উপচে।হালকা হবো না আমি কোনো দিন।

 গৌড়চন্দ্রিকা অনেক হলো, অবশেষে কেনো এই ভূমিকা কেনো এই লেখা সেটাই বলি। এক সময় আমি ভাবি কেনো যে এই বিন্দাস জীবন ছেড়ে ,আবার কাজের জন্য হাত জোড় করলাম কারুর কাছে। কেনো যে আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে মিডিয়া নামক ভূতের কবলে পড়লাম আবার কে জানে। এই পঞ্চাশ বছর বয়সে কেনো যে এমন কিছু টাকা রোজগার করতে হবে ভেবে আগুনে ভস্মীভূত হলাম আবার সেটাই ভাবি আমি।

 বেশ তো ছিলাম আমি। বিন্দাস জীবন, টো টো করে ঘুরে বেড়ানো, এদিক সেদিক। মাঝে মাঝে একদম খারাপ যে লাগতো না কাজ নেই বলে সেটা নয়। সংসারকে রক্ষা করতে না পারার যন্ত্রণা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। কিন্তু দীর্ঘ তিন দশক পেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে মনে হয়েছিল টাকার জন্য আমি বোধহয় মানাতে পারছি না আর বাকিদের সাথে। তাই একদিন আচমকাই ভালো নিশ্চিত কাজ ছেড়ে দিলাম আমি দুম করে। ভাবিনি কি কঠিন লড়াইতে নামতে হবে আমায়, আমাদের পরিবারের সকলকে। নেমে পড়লাম রাস্তায় লড়াই করতে। দু একজন সুহৃদ বন্ধু ছাড়া কেউ হাত বাড়িয়ে দেয়নি আমার লড়াইয়ের, পাশে থাকেনি কেউ। শিরদাঁড়া সোজা রাখতে গিয়ে অনেক গুনোগার দিলাম আমি জীবনে। তবু নিজেকে বাঁচাতে, বদলে ফেলতে পারিনি কিছুতেই। 

একে একে সব কিছু হারিয়ে যেতে থাকলো আমার। আমায় ছেড়ে চলে গেলেন আমার, মা। চলে গেলো সংবামাধ্যম -এর সরকারি পরিচয় পত্রটিও। একে একে চলে গেলো আমার বহু পরিচিত মিডিয়ার বন্ধুদল। কিন্তু আমি পারিনি তবু নিজেকে বাঁচাতে, বদলে ফেলতে। অনেকক্ষন জাবর কাটা দেখে কেমন অস্থির হয়ে গেছে কালো ডায়েরিটা। তার অস্থিরতা দেখে আমিও চমকে উঠি। সত্যিই তো আবার কেনো যে আমি, বিশ্বাস করে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে মিডিয়ার কাজ করতে নেমে পড়লাম কে জানে। হয়তো সেই পুরোনো নেশার টানে নেমে পড়লাম মাঠে। একে একে লোকদের জোগাড় করে ফেললাম। তাদের বললাম আমরা সবাই মিলে মিশে কাজ করব একসাথে। ধীরে ধীরে সব কিছু ভুলে কাজের জগতে ভালোবেসে মিশে গেলাম আমি ও আমরা সবাই। বাতিল হয়ে যাওয়া মানুষরাও যে আবার ফিরে আসতে পারে, ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেটা বুঝতে পারলাম। 

সত্যিই জীবনের লড়াইতে হারতে হারতে ,দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার সময় ঘুরে দাঁড়াবার একটা অবলম্বন কে আশ্লেষে জড়িয়ে ধরলাম আমি। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম আমরা। সত্যিই মানুষ তো স্বপ্ন দেখেই বাঁচে। যে স্বপ্ন তাকে প্রতিদিন দৌড়তে সাহায্য করে। বাঁচার অক্সিজেন দেয়।বহুদিন পর মাঠের বাইরে থাকতে থাকতে যে কুড়েমি এসেছিল তাকে কাটিয়ে শুধু দৌড় আর দৌড়। বাতিল হয়ে যাওয়া লোকের মাঠ ফিরে পেয়ে শুধুই দৌড়। শুধু একটা কথা মনে পড়তো আমার কোনি সিনেমার কথা, কোনি ফাইট, ফাইট। একটা অসম লড়াইতে নেমে পড়লাম আমরা। একটাই কথা যে ভাবে হোক আমাদের বাঁচতে হবে। এই দৌড়ের মাঝে তখনও আমি বুঝিনি সম্পর্কের সরু সুতোয় ধীরে ধীরে মরচে ধরতে শুরু করেছে। কাজের জন্য যে টুকু দরকার তার পর আমার কোনো দাম নেই এখানে। কিছুটা হলেও নিজের ওপর অভিমান নিয়ে কাজের জগতে ডুবেছিলাম আমি। 


ভাবিনি কখনো কি হতে চলেছে। ভুল ভাঙলো যখন একে একে নিজের লোকরা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে কাজ ছেড়ে চলে গেলো। বলা যায় কাজ ছাড়তে বাধ্য করা হলো তাদের। সত্যিই কিছুটা হলেও থমকে গেলাম আমি। যে গতি নিয়ে কাজ করছিলাম একটু থমকে গেল আমার গতি। কাজের চাপে অসুস্থ হলাম আমি সত্যি সত্যিই। একেবারে বিছানায় পড়ে গেলাম। সেই অবস্থায় অসুস্থ হয়ে কাজ করে গেছি আমি কোনো ভাবে। যাতে কোনো ভাবে গাফিলতি না হয় থমকে না যায় কাজ। কিন্তু তার মাঝে কাজ ছাড়তে বাধ্য হয় আরো দু জন। আরো একজন কাজ করবো না বলে ছাড়ার সময় আমায় বলে ,দাদা এখানে বুলডোজার চলছে। বলে কাজ ছেড়ে চলে যায় অন্য জায়গায়। অন্য জন বুলডোজার না বললেও, বলে আমি ব্রম্ভা বিষ্ণু মহেশ্বর এর সাথে কাজ করতে পারবো না দাদা। মনে মনে আমি কিছুটা হলেও ভেঙে পড়ি। নিজের হাতে তৈরি সংসারটা কেমন যেন অচেনা হয়ে গেল অল্প সময়ের মধ্যেই। আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকি একা ঘরে। না সেই সময় কেউ আর খবর নেয়নি আমার। 


দীর্ঘ সময়ের অসুস্থ্ অবস্থায় পড়ে থেকেও কেউ খবর নিল না। কিছুটা হলেও অভিমানে ভরে যায় আমার মন। সব মিলিয়ে একদম বিভ্রান্ত হয়ে যাই আমি। চেনা মানুষগুলো আমার কাছে কেমন অচেনা হয়ে বেঁচে থাকে একদম অচেনা রূপে। অহঙ্কার আর ক্ষমতার আস্ফালন নিয়ে চোখের সামনে হাত পা নাড়তে থাকে তারা। সত্যিই খুব অবাক হয়ে যাই আমি ওদের দেখে। ধীরে ধীরে বুড়িয়ে যায় আমাদের সম্পর্কের সরু মেঠো পথ। মনে হয় না এই ভাবে যারা আমার ভরসায় কাজে এলো তারা সত্যিই তো এই ভাবে পালিয়ে গেলো আমি কিছু করতে পারলাম না তাদের জন্য। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়, ছোটো মনে হয়। আর মনে হয় আমিও তো অসুস্থ্ তাহলে আমার কি এই অবস্থা হবে, ওদের মত হবে। 


কিছুটা ভয় আর কিছুটা অভিমান নিয়ে পালিয়ে বাঁচতে চাইলাম আমি। ফিরে যেতে চাই বিন্দাস জীবনে, যেখানে টাকার উত্তাপ নেই কিন্তু আমার জীবনের উত্তাপ আছে, ওম আছে। যে জীবন আমি কাটিয়ে এসেছি এতদিন ধরে শুধু জোনাকির আলোতে আলোকিত হয়ে। কই কোনো রকমে দিন গুজরান করলেও এত কষ্ট পাইনি তো। ভয় হয় ধীরে ধীরে কালো ডাইরির খস খসে পাতায় রাতের অন্ধকারে ধীরে ধীরে হাত বোলাতে থাকি আমি। চুপ করে সে বিধুর হয়ে পরে আছে আমার সামনে গুটি সুটি হয়ে।

 আমার কেমন যেনো ভয় হয় তার পাতা ওল্টাতে।রাতের অন্ধকারে আচমকা জানলার পাশে কে যেনো ডানা ঝাপটায়। কে জানে গভীর গোপন সংগোপনে ফিস ফিস করে বলে ,কালো কথা লিখবো বললেই কি লেখা যায় গো। সত্যিই তো নিজের গভীর গোপন কথা কি লেখা যায়। নিজের মধ্যে অজানা ভয় ছড়িয়ে পড়ে আমার সারা শরীরে। যদি আমিও অসুস্থ্ অবস্থায় আছি বলে, আমায় বলে দেওয়া হয় তুমি পারছো না আর। যা অন্যদের বলা হয়েছে শরীর অসুস্থ্ অবস্থায়। এই ভয় ধীরে ধীরে আমায় গ্রাস করে। আপ্রাণ চেষ্টা করি যাতে আমি ফিরতে চাই মাঠে কিন্তু না হাজার অনুরোধ জানান দিয়েও কেমন ক্লিশে হয়ে যায় সম্পর্ক। অভিমান নিয়ে কিছুটা বলে ফেলি আমি কাজটা খুব দরকার আমার। কিন্তু কোনো উত্তর আসে না অন্য দিক থেকে। আমি যে পারছি না সেটা অনেক জুনিয়র দিয়ে ভুল করছি অসুস্থ্ অবস্থায় সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হয় আমায়। মনে মনে একদম ভেঙে পড়ি আমি। অবশেষে নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হই।


 নিজের তৈরি সংসার ছেড়ে চলে যাই কিছুটা বাধ্য হয়েই। অভিমানাহতচিত্তে নিজে নিজেকে বাঁচাতে গুটিয়ে নি আমি। মনে হয় না ,আমার আর কোন প্রয়োজন নেই এই সংসারে। তাই বাধ্য হয়ে কাজটা ছেড়ে দিলাম আগু পিছু না ভেবেই। কি হবে, কি করে চলবো সে সব না ভেবেই। যাদের নিয়ে এসে কাজ দিলাম অসহায় অবস্থা নিয়ে তাদের জন্য কিছু করতে পারলাম না। তারা কাজ করবো বলে এসেও, চলে গেল বাধ্য হয়ে। সেই জায়গায় আমি কাজ করি কি করে। মনে হয়েছিল হয়তো আমার সিদ্ধান্ত ভুল সেটা শুধরে নিতে বলবে আমায় কেউ। যাদের নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি ,আমার পরিবার। কিন্তু না সেই ভাবনা ভুল ছিল আমার। অনেক পরে সুস্থ হয়ে বুঝতে পারলাম আমি। 


আচমকা অফিস এর ডাক পেয়ে তাই বোলপুর থেকে দৌড়ে গেলাম, ভাবলাম আমার ভাবনা চিন্তা ভুল। হয়তো আবার আমি ফিরে পাবো আগের দৌড়ময় জীবন। কিন্তু কালো ডাইরির খস খস শব্দ একটু অবাক চোখে দেখে আমায় রাতের অন্ধকারে আর মুখ লুকিয়ে হেসে ফেললো আলগোছে সন্তর্পনে। আমি বুঝতে পারলাম না, কেনো সে এমন করলো। সেকি আমায় কিছু বলতে চাইলো। কিছুটা রেগে গেলাম তার ওপর। প্রায় দেড়শো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেলাম আমার দৌড়ের মাঠের একদম কাছে। একদম অনাহুতর মত আমি অপেক্ষা করলাম মাঠের বাইরে। তার আগে অফিসের নিচে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম আমার প্রিয় মাঠের দুই সহযোদ্ধা বন্ধুকে। যারা মুখোশ পরে আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। কিন্তু পুরোনো সম্পর্কের টানে কোনো ভাবে আমায় চিনতে পারলো না ,বা চিনতে চাইলো না দ্রুত পায় তারা সন্ধ্যার অন্ধকারে হারিয়ে গেলো কিছুটা ইচ্ছা করেই। 

মনটা কেমন যেন অচেনা ব্যাথায় চিন চিন করে উঠলো আমার। ধীর পায়ে লিফটে উঠলাম আমি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার আকুতি নিয়ে আসছিলাম এক লহমায় সেই তাল কেটে গেলো আমার। বুঝলাম আমার সেই মাঠের ধারে আসা উচিত হয়নি একদম। অবশেষে আমার ঠাণ্ডা ঘরে ডাক পড়ল ঘণ্টা বাজিয়ে। ডাক পড়লো রাস্তায় চিনতে না পারা একজন সহযোদ্ধার। অন্য সহযোদ্ধা তখন তার নিজের ঘরে সেধিয়ে গেছে। কি হয় সেটা দেখার জন্য। চিত্রনাট্য তৈরি করে দিয়ে।

 আমার নিজের কেমন নিজেকে ছোট মনে হলো, করুণা হলো ওদের দেখে। কটা টাকার জন্য, পরিবারকে একটু আর্থিক সহায়তা দেবার জন্য এত কষ্ট কেন করবো। যারা মুখোশ পরে পাশ কাটিয়ে রাস্তায় চিনতে পারলো না তারাই ঠাণ্ডা ঘরে হেসে কথা বলছে। আমি অবাক বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। একমনে জরিপ করে দেখতে থাকি অচেনা অজানা মানুষের জীবনকে, যে জীবনের স্বাদ আমি গত কুড়ি বছরে পাইনি। যে জীবনকে আমি বহুদিন ধরে দেখে এসেছি এটা তো সেই জীবন নয়। ঠান্ডা ঘরে দাড়িয়ে আমি ঘামতে শুরু করি। এক একটা পল ,অনুপল যেনো একযুগ মনে হলো আমার। সত্যিই কি অদ্ভুত রহস্যময় সত্যকে বুকে চেপে ধরলাম আমি।

 আমায় শুনতে হলো আমি নাকি পূজোর সময় কাজ না করে অসুস্থ্ হবার নাটক করে ঘরে শুয়ে ছিলাম। যাতে আমায় সাবোতাজ করার অভিযোগে বিদ্ধ করা হয় আমার বিরুদ্ধে। ঠাণ্ডা ঘরে দাঁড়িয়ে আমি একা মাথা নিচু করে থাকি। কিছুই বলতে পারিনা আমি। চুপ করে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি আমি। তারপর ঘর ছেড়ে, চেনা মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসি আমি একা একদম একা। মনে মনে আমি ভাবি যে অভিযোগ কেউ আমার চৌত্রিশ বছরের মিডিয়া জীবনে দিতে পারেনি সেই কথাই আজ আমায় শুনতে হলো। এত কাজ করে আজ আমার এই পাওনা হলো। এই অভিযোগ শুনে আমি অবাক হয়ে মাথা নিচু করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। শুধু ভাবলাম ,বদলের এই রূপ না দেখলেই বোধহয় ভালো লাগতো আমার। এর জন্য এত কষ্ট করে দূর থেকে না এলেই ভালো হতো বোধ হয়। তাহলে আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতাম ওই বদলে যাওয়া রূপকে না দেখেই। তাতে এই অপবাদটা হয়তো আমায় শুনতে হতো না। যা প্রকাশ করা উচিত নয়, হয়তো এটা বলে আমি বিরাগ ভাজন হবো তবু বলে ফেললাম আজ।

 কালো ডাইরির খস খস পাতাটা আচমকাই উল্টে যায় নিজে নিজেই। রাতের অন্ধকারে হিজিবিজি লেখা কিছু শব্দ এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়, সাদা পাতার ওপর দিয়ে। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে কালো ডাইরিকে হাতে তুলে নিয়ে বুকে চেপে ধরি। রাতের অন্ধকারে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠি আমি একা একাই। কেনো যে বিন্দাস জীবন ছেড়ে, আবার সবুজ মাঠের ঘ্রাণ আর স্বাদ পাওয়ার আশায় গ্রাম ছেড়ে চলে এলাম শহরে শুধু পেটের টানে কে জানে। পেট ভরলো না আমার, জুটলো শুধুই অপবাদ। অন্ধকারের মধ্যে বসে কালো ডাইরির পাতায় গরম লাভার স্পর্শ অনুভব করলাম আমি। চুপ করে বসে রইলাম আমি কালো ডায়েরীকে বুকে চেপে, একা, একদম একা।

কালো ডাইরির সাদা কথা - অভিজিৎ বসু।
তেইশ নভেম্বর, দু হাজার তেইশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...