সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের দিব্যেন্দু চক্রবর্তী

সেই ঘন ঘনও দ্রুত বিড়ি টানা। দ্রুত কানে ফোনে শুনে নিয়ে পটপট করে খবর তোলা। সুন্দর হাতের লেখায় সেই খবরের নোটকে লিখে রাখা প্যাডে বা নোটবুকে। তারপর সেই লেখাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে লিখে ফেলা। গুছিয়ে খবর লিখে তৈরি করে রতনদার হাতে তুলে দেওয়া দাদা এটা দেখুন একটু। বেশ বানান, হেডিং, পরিপাটি লেখার কাজে স্বচ্ছন্দ ছিল ও বরাবরই। কলকাতা বিশ্ববদ্যালয়ের মাস্টার্স এর ছাপ আছে ওর গায়ে। বেশ পড়াশুনা করা ভালো স্টুডেন্ট ও। ইংরাজি ভাষা থেকে বাংলায় ভালো তর্জমা করতে পারে ও খুব দ্রুত। 

ওর সাথে কবে কোথায় দেখা হলো আমাদের কে জানে। সেই যে একজন হুগলীর জেলার জেলা সাংবাদিক পায়ে চটি পরে ঘুরে বেড়ায় এদিক ওদিক। আর অন্যজন দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার সাংবাদিক। মুখে চেন স্মোকার এর সেই পরিচিত বিড়ি বা সস্তার সিগারেট। আর মুখে সব সময় চিন্তা কি হবে আমাদের ভবিষ্যৎ। দু প্রান্ত থেকে দুজনে মিলে অফিসে খবর পাঠানো। আর খবর পাঠিয়ে দুই জেলা রিপোর্টার এর কাজ শেষ হয়ে যেত। দুজনের মধ্যে ফোনে সেই যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়ে যায় দীর্ঘদিন ধরে। 

খুব সম্ভবত সেই পট পরিবর্তনের কথা হবে বোধহয়। মাস মাইনে সাকুল্যে বোধহয় পাঁচশো টাকা। জেলা থেকে আমরা দুজনে চলে এলাম কোলকাতায় কাজ করতে সেই হংসরাজ সিনেমার গল্পের মতো। ও তবু কলকাতায় থাকে বেহালায় বাড়ী ওর। মাঝে মাঝেই ল্যান্ড ফোনে ওকে ফোন করি, কি খবর রে। জেলার খবর অফিসে ফোন ঘুরিয়ে পেয়ে যাওয়া যায়। তাই একদিকে সিটি রিপোর্টার এর কাজ আর জেলা রিপোর্টার এর কাজ পেয়ে গেলাম দুজনে একসাথে কলকাতায়। বোধহয় আড়াইশো টাকা বেতন বেড়ে সেটা সাড়ে সাতশো টাকা হয়েছিল আমাদের সেই সময় দুজনের।

সেই অনুপম অধিকারী কাগজের এডিটর ছিলেন। কৃষ্ণেন্দু ফটোগ্রাফার, সেই উৎপল দা, হীরক কর ছিল মনে হয়। রতন চক্রবর্তী নিউজ এডিটর পড়ে একজন এসেছিল রতনদাকে সরিয়ে নাম মনে পড়ছে না আর হ্যাঁ সেই নবীন এসেছিল পরে বোধহয়। সেই তাজা খবরের অফিস মৌলালির কাছে। একটা ছোট ঘরে পট পরিবর্তনের ছোট্ট অফিস। বাকি জায়গায় হিন্দি চ্যানেল আর সেই হিন্দি ছাপতে ছাপতে কাগজ চলে সেই ক্রিক রোর অফিসে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই হাতে গরম ছাপা কাগজ বের হতো প্রেস থেকে। সকাল থেকে কাজের ফল প্রকাশ হতো এইভাবেই কাগজ বের হয়ে। মেসিনের ঘড়ঘড় আওয়াজ শুনে বোঝা যেতো প্লেট চলে গেছে ঠিক সময়েই। কি খুশি সেই সময় সবাই হাতে গরম টাটকা কাগজ পেয়ে। সেই কাগজের গন্ধ আমাদের দুপুরের ক্ষিধে ভুলিয়ে দিত সেই সময়। শুধু চা খেয়েই সময় কেটে যেতো। 

সেই কাগজে নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখলে কি ভালো যে লাগতো দুজনের সেদিন। কোনোদিন দুজনের নাম দিয়ে দিতেন রতন দা ভালো কাজ করলে। সেই ও বুক পকেটে সেদিনের ছাপা টাটকা কাগজ নিয়ে হাতে সাদা সিগারেট বা বিড়ি ধরিয়ে হাঁটা শুরু হতো আমাদের। আমি যদিও সে সব কিছুই খাই না। সেই মৌলালীর ট্রাম লাইন পেরিয়ে ওয়েলিংটন স্কোয়ার পার হয়ে আমার বড়ো পিসির বাড়ি পেরিয়ে রাস্তার ফুটপাথ ধরে এগিয়ে যেতাম আমরা ক্ষিধে পেটেই।

 সেই লালবাজার এর গেট এলে উঁকি দিয়ে দেখতাম সেই পুলিশ হেড কোয়ার্টারকে। সেই সময় নজরুল ইসলাম ডিসি হেড কোয়ার্টার আর নারায়ণ বিশ্বাস ছিলেন ডিসি ডিডি ওয়ান। বুকে সাহস সঞ্চয় করে কোনোদিন আর ঢুকে আলাপ করা হয়নি একটা কাগজ নিয়ে। শহুরে সাংবাদিক নয়তো তাই বোধহয় একটা কেমন অস্বস্তি বোধ কাজ করত আমার। কিন্তু ফোনে খবর তুলে সেই খবর ছাপতে ওস্তাদ ছিলাম আমরা দুজনেই। 


এইভাবেই সেই হেঁটে লালদীঘির ধারে পৌঁছে যেতাম আমরা। কোনোদিন ঝুড়ি ভাজা চা, কোনোদিন মুড়ি কিনে খেয়ে কেটে যেতো দুজনের সময়। দূরে মহাকরণে ব্যস্ততা। মন্ত্রী, সান্ত্রী আর পুলিশের হুটার বাজিয়ে চলে যাওয়া দেখতাম। লালদীঘির ধারে বসে ছিপ ফেলছে বেশ কিছু মানুষ। সারাদিন তাদের বসে থাকা। আমরা কাগজ নিয়ে নানা আলোচনা করতাম। আর নিজেদের ভবিষ্যৎ কী সেটা নিয়েই বেশি ভাবতো ও।

 সন্ধ্যা নামতো কাকের দল ট্রাম লাইন এর তারের ওপর চিল চিৎকার জুড়ে জানান দিন দিত দিন শেষ। টেলিফোন ভবনের ওপর তলার ঘরে আলো জ্বলে উঠতো। ও বলতো চল কাল আবার সকালে অফিসে আসতে হবে। এই বলে ও বেহালার বাস ধরত আমি লঞ্চ পার হয়ে বা হেঁটে হাওড়া স্টেশন পৌঁছে যেতাম। ট্রেন ধরে রিষড়াতে ফিরে আসতাম। মা, অপেক্ষা করত কখন সারাদিন পর ঘরে ফিরবে ছেলে। মাসের শেষে সাদা খামে করে সাড়ে সাতশো টাকা এনে মাকে দিতাম। কী খুশি হতো যে মা।

সেই কাগজ ছেড়ে দিলাম আমরা দুজনের পথ আলাদা হলো। চলে এলাম টিভিতে। পরে ও চলে গেলো কাগজে আনন্দবাজার পত্রিকায়। আমি ইটিভির জেলার রিপোর্টার হয়ে। মাঝে মাঝেই কথা হতো ফোনে দুজনের। ধীরে ধীরে যোগাযোগ একদম কমে গেলো। শুভ্রর সঙ্গে ওর যোগাযোগ ছিল। মৃত্যুঞ্জয়দার বাড়িতে মাঝে মাঝেই ও যেতো বেহালায় থাকার সুবাদে। তারপর সব ধীরে ধীরে ছিটকে যাওয়া এদিক থেকে ওদিক।

 আজ হঠাৎ রাতে মনে পড়ে গেলো ওর কথা। এতক্ষণ ওর নামটাই বলা হয়নি আপনাদের। হ্যাঁ, সবার আমাদের পরিচিত সেই আনন্দবাজার ডেস্কের দিব্যেন্দু চক্রবর্তী। কেউ কেউ বোধহয় দিবে বলেও ডাকতো ওকে। সেই একদিন হঠাৎ পোদ্দার কোর্টের অফিসে এসে হাজির হলো। সব পুরোনো চেনা মুখের ভীড়। সেই চা খেতে যাওয়া কালাম এর দোকানে। বোধহয় তিনটার শিফটে কাজ যাওয়ার আগে একবার দেখা করতে এসেছিল আমাদের সবার সঙ্গে। সেই একটু লাজুক প্রকৃতির রূপ কিন্তু আমাদের সেই অভিন্ন হৃদয় বন্ধুত্বের মাঝে অমলিন সুন্দর খিস্তিটা মুখে রয়ে গেছে দেখলাম সেই সময়েও। 

ওর বাড়িতে ফোন করলেই একটা কুকুর এর আওয়াজ শুনতাম। ওর দাদার কথা বলত ও। বাবা মার সাথেও কথা হয়েছে আমার। হ্যাঁ, ফোন ধরো তুমি ওকে ডেকে দিচ্ছি আমি। এমন নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি সেই সময়। দুজনের কেউই আগে মাঝে মাঝেই রাতে গভীর রাতে ওর সেই আনন্দবাজার এর পাতা রেডি করার সময় ফোন করতাম আমি। ও বলতো অভিজিৎ, বাবু আমি খুব ব্যস্ত আছিরে এখন পড়ে করছি ফোন। 

কোনোদিন ভোরবেলায় বাড়ী ফেরার সময় কথা হতো কোনোদিন সেটাও নয়। ধীরে ধীরে একদম আজকাল আর যোগাযোগ নেই আমার ওর সাথে। কিন্তু আমার সাদা জীবনের কালো কথায় এই রাতে হঠাৎ মনে পড়ে গেলো সেই দিব্যেন্দু চক্রবর্তীর কথা। যার সাথে এক সময় কতদিন কলকাতার রাস্তায় পথ হেঁটেছি খিদে চেপে, হাসি মুখে একসাথে। ওর মুখে বিড়ির ধোঁয়ায় কেশে উঠেছি আমি। আর ও বলেছে ইস সরি রে বুঝতে পারিনি আমি একদম অভিজিৎ। 

সন্ধ্যা বেলায় সেই ট্রাম এর ঘন্টার আওয়াজ শুনে লাফ মেরে লাইন থেকে ফুটপাথে উঠে পড়েছি আমি কিম্বা ও। একসাথে দুজন মিলে হাতে সেই সান্ধ্য খবরের কাগজ নিয়ে পথ হেঁটেছি হাতে হাত ধরে বহুদূর পর্যন্ত কলকাতার রাস্তায়। পকেটে রেস্ত না থাকায় পা তখন একমাত্র ভরসা আমাদের বাস বা ট্রাম ধরতে পারিনি সেই সময়। হয়তো একটাকা ভাড়াও ছিল না সেই সময় ট্রাম এর। তবু সেটাও যে অমূল্য ছিল আমাদের।

তবু তো দুজন মিলে কষ্ট করেই বেঁচেছিলাম হাতে হাত ধরে একে অপরকে আঁকড়ে ধরেই সেই দিন। আজ দুজনের দুটো পথ একদম আলাদা হয়ে গেছে। ভিন্ন দুটি জীবন, ভিন্ন দুটি পথ। সেই জীবনের গল্প আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। ভালো থাকিস দিব্যেন্দু। মাঝে মাঝেই ইচ্ছা হয় সেই লালদীঘির ধারে বসে থাকতে দুজন মিলে। সেই দুজন মিলে কলকাতার রাস্তায় আবার পথ হাঁটতে এলোমেলো ভাবে, অবিন্যস্ত হয়ে।

 সেই ওর একমুখ দাড়ি, উস্কখুস্ক চুল, মুখে বয়সের ছাপ সুস্পষ্ট আজ ওর। আমার দাড়ি সব সাদা হয়ে গেছে। চুল সাদা হয়েছে অনেক আগেই। তবু কেনো যে সেই পুরোনো দিনে আবার আমার ফিরতে ইচ্ছা করে কে জানে। বয়েস হলে এই রোগটা বেশী করে ধরে বোধহয়। একে কি ঘোড়া রোগ বলে কে জানে।

আমাদের দিব্যেন্দু চক্রবর্তী - অভিজিৎ বসু।
ত্রিশ নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...