সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক মন খারাপের সন্ধ্যা

একটা ফেসবুকের পোস্ট দেখেই মনটা কেমন যেন হয়ে গেলো আজ। সাধারণত আমি একটু শামুকের খোলের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে রাখতেই বেশি পছন্দ করি আজকাল। ঝাঁ চকচকে মিডিয়ার দীর্ঘ জীবন থেকে এই মাটির জীবন কাটিয়ে বেশ ভালই লাগে আমার। কিন্তু আজ কেনো জানিনা একজনের হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতন আসার খবর পেয়েই কেমন যেনো আমার মনে হলো একবার দেখা করলে কেমন হয় তার সাথে। 


মনে পড়ে গেলো সেই রেডিওর রেকর্ডিং এর সময়ে হাতে করে যে স্পুন বা স্পুল নিয়ে যেতাম আমরা স্টুডিওতে। মনে নেই নামটা ঠিক আজ এতবছর পড়ে। সেই তার মতই চাকা ঘুরে কিছু খণ্ড খণ্ড চিত্র আর টুকরো ঝাপসা কিছু ছবি ভেসে এলো আজ আমার স্মৃতির সরণী বেয়ে। সেই সালটা কত ১৯৯৫ বা তার একটু আগে হবে বোধহয়। রেডিওর মানে আকাশ বাণীর সেই যুববাণীর ঘরের সামনে দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে যাওয়া একটি উজ্জ্বল মেয়ে। 

সেই বারান্দায় দেখা হওয়া বহু পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই সময় খুব সম্ভবত হলদে চুড়িদার পড়ে হন হন করে চলে যাওয়া তার। দ্রুত পায়ে মাথা নিচু করে কোনো দিকে না তাকিয়ে। আমি তখন সদ্য আকাশ বাণীর দরজায় পা দিয়েছি। কিছুটা ভয়ে সরে দাঁড়ালাম আমি একপাশে। পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া একদম দ্রুত পায়ে এই ঘর থেকে ওই ঘর। বোঝা গেলো আমার মত নতুন এই বাড়িতে প্রবেশ নয় তার। কিছুটা ভয়ে আর কিছুটা সঙ্কোচে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার সাহসও হয়নি সেদিন আমার।

আর তারপর বহুবার দেখা হয়েছে বাংলা বিভাগের সেই সমরেশদার ঘরে। সেই বিদিশার সাথে একসাথে ক্যান্টিনে। সেই অঞ্জন পাল দা, স্বাতী দি, যুববানীর মানস মিশ্র দা, কৃষ্ণশর্বরী দি, সমরেশ দা আরও যে কতজন সব নাম আজ আর মনে নেই আমার। কিন্তু আমি ছিলাম বিজ্ঞান আর স্বাস্থ্য নিয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করা একজন ক্যাজুয়াল ছোটো মাপের কর্মী। আর সেই দ্রুত পায়ে চলে যাওয়া মেয়েটি ছিল বাংলা বিভাগে কাজ করা সব বিখ্যাত মানুষদের সাথে কাজ করা একজন উচ্চ মাপের কর্মী। 

 যার উজ্জ্বল মুখ, চোখে চশমা, বেশ সপ্রতিভ আর নিজের ঘেরা টোপে বন্দী করে রাখা একজন। ইংরাজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেও বাংলা ভাষায় ভাষ্যপাঠ আর কথায় অসাধারণ। আর সেই নানা গুণ থেকেই ধীরে ধীরে নিজের কাজ দিয়ে, নিজের যোগ্যতা দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে একটা সবার সাথে মিশে যাওয়া তার। যেটা সেই আকাশ বাণীর কাজ করতে করতে কিছুটা রপ্ত করে ফেলে সে সেই সময় থেকেই। তারপর শুধুই এগিয়ে চলা আর দ্রুত গতিতে ছুটে চলা। 

বহুবছর পড়ে সেই চব্বিশ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসে একদিন হঠাৎ করেই দেখা হলো আমার ২০১৫ সাল হবে সেটা মনে হয়। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে দেখা হলো কিন্তু তখন বদল হয়েছে চেহারায় অনেক। একটু ভারিক্কি ভাব দিদিমনি হলেই মানায় বেশি। চশমার মোটা ফ্রেমের ভিতর থেকে অন্তর্ভেদী দৃষ্টি। তবু এন্টারটেনমেন্ট এর জগতে একটা ভালো সংযোগকারী কি বলব পি আর না রিপোর্টার। ভালো রিপোর্টার সেই, যে গুড পি আর মনে জনসংযোগ অফিসার। যাঁর ফোন কলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির যে কোনও লোকজন এক ফোনেই ধরে কথা বলে হেসে হেসে। সেই অনির্বাণ চৌধুরী ঘরেই দেখলাম তাকে আবার বহু বছরে পরে। তারপর তো একসাথেই কাজ করা বেশ কটা বছর। এক ছাদের নিচে আর এক অফিসে দিন যাপন। সেই এন্টারটেনমেন্টের বিখ্যাত সাংবাদিক শর্মিলা মাইতি, সেই রাজনীতা কোথায় হারিয়ে গেল কে জানে মেয়েটা, সেই অনুসূয়া যে আজ আর চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলে নেই, সেই অদিতি সেও আজ অন্য জায়গায় কাজ করে, সেই পূর্ণেন্দু এখনও কাজ করে যাচ্ছে চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলে। 


এই দু জায়গার স্মৃতি রোমন্থন করে কিছুটা নিজের নিয়ম ভেঙেই উত্তেজনায় আজ আমি ফোন করে ফেললাম তাকে কিছু না ভেবেই। জিজ্ঞাসা করে বসলাম ফেসবুকের কমেন্টস বক্সে। শান্তিনিকেতনে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে কোথায়। আর এই অনুষ্ঠান হবে কখন। উত্তর পেলাম সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক আগের মতই। বেশ উত্তেজনা আরও বেড়ে গেলো আমার। আর কিছুটা প্রগলভ হয়ে যে কাজ আমি পারতপক্ষে যা করিনা সেটাই করলাম আজ। সরাসরি ফোন করে বসলাম তাকে। আর এক রিং এই ফোন ধরে উত্তর বলো অভিজিৎ দা। আমি বেশ অবাক হলাম আমার নম্বর রাখা আছে এখনও। শুনলাম অনুষ্ঠান হবে কটায় তাদের। ত্রিশ সেকেন্ডের ফোন মাত্র কিন্তু কিছুটা হলেও যেনো ভালো লাগলো আমার।

মনে পড়ে গেলো কতদিন যে এমন ফোন আসতো আমার কাছে। অ্যাসাইনমেন্টের পরদিনের রিপোর্টার দের তালিকা তৈরি হয়ে যাবার পরেও। রাতে বা সকালে এন্টারটেনমেন্ট এর একটা ক্যামেরা লাগবেই হঠাৎ করেই একটা বিশেষ অনুষ্ঠান কভার করতে হবে এডিটর অনির্বাণ দা জানেন, তোমায় এটা জানালাম। অনেক উচ্চপদে থেকেও কোনোদিন কিন্তু সেই পদের অপব্যবহার বা খারাপ ব্যবহার পেতে হয়নি আমায় বা অন্য কাউকেই। যেটা সব থেকে বেশি প্রকট বর্তমানে এই মিডিয়ায়। যাকগে সেকথা বলে আর কি লাভ।

 কতদিন যে ব্রেকিং এর বানান লেখা নিয়ে এমন করেই ঝাঁপিয়ে পড়েছি আমরা সেই সময় দুজনে একসাথে। ব্রেকিং জয়ন্ত ঠিক বানান লিখলো কি না সেটা নিয়ে দুজনে মিলে তর্ক করেছি। যদিও এসবের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকত সেই সময় রেফারীর ভূমিকায় বিখ্যাত সেই শঙ্খ ঘোষ এর ছাত্র। যাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক বলে বিবেচনা করা হতো সেই সময়। আর পূজোর সময় টিভির পর্দায় দেখা যেতো তাঁকে নানা বিখ্যাত মানুষের সাক্ষাৎকার নিতে। তবুও বেশ ধরা আর ছোঁয়ার মধ্যেই বাস করতেন তিনি সদা হাস্যময় মুখে। যেটা বোধহয় সেই আকাশবাণীর কাজ এর সুবাদেই হতো হয়তো। দিনগুলো বেশ ভালই ছিল।

আর তাই তো আজ উত্তেজনায় ফোন করলাম সেই যে চৈ ওর মাকে বলেছে ককটেল কিনে দিতে হবে। আমার বাড়ীতে নানা পাখি আছে ককটেল আছে শুনে কত গল্প হলো সেদিন অফিসে মিডিয়া সিটির এগারো তলার অফিসে। কাজ ফেলে পাখি নিয়ে কত কথা বলে ফেলেছিলাম আমি সেদিন। বলে দিলাম টালা ব্রীজ এর কাছেই রবিবার পশুপাখির হাট বসে। সেখান থেকে পাখী পাওয়া যাবে। কিন্তু জোড়া কিনতে হবে একটা কিনলে হবে না কিন্তু। ককটেল জোড়া ছাড়া থাকে না। আমার মেয়ের চন্দননগর সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে পড়ার কথা শুনে জানলাম এক স্কুল থেকে পড়া করা তাঁরও। আর তাই মেয়ের রেজাল্ট বের হলেই সেই তাঁর টেবল এর সামনে গিয়ে খবর দিতাম আমি মেয়ে পাশ করেছে। ততদিনে ভয় কেটে গেছে অনেকটাই। সংকোচ বোধ থাকলেও অনেকটাই কম। হয়তো সেটা উচ্চপদ আর নাই পদ এর জন্য। তবুও আজ কিন্তু ফোনে যোগাযোগ করতে কোনো দ্বিধা হলো না আমার একদমই ।

অবশেষে অনেক ভেবে চিন্তে হাজির হলাম আমি পূর্বপল্লীর সেই সোনাঝুড়ি নামের বাড়িতে সাইকেল নিয়ে একটু আলো আঁধারির পথ পার হয়ে একে ওকে জিজ্ঞাসা করতে করতে। দুর থেকে শুনলাম গানের আওয়াজ আসছে। অনুষ্ঠান তখন প্রায় শেষের পথে হাজির হলাম আমি। একটি অনুষ্ঠানে এসেছেন কলকাতার নানা বিখ্যাত সব মানুষজন গাড়ীর মেলা লাইন। সেই গাড়ীর ভীড়ে আমার প্রিয় সাইকেলকে দাঁড় করিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম আমি। যে অনুষ্ঠান রবীন্দ্রনাথ ও রথীন্দ্রনাথ এর এক যুগলবন্দীর মিলন অনুষ্ঠান।

 বাবা আর ছেলের এই যুগলবন্দী অনুষ্ঠানের ভাষ্যপাঠে দূরদর্শনের বিখ্যাত সেই চৈতালি দাশগুপ্ত। আর গানে রয়েছেন সুজয় প্রসাদ। যে অনুষ্ঠানের ঘোষক ছিলেন সেই বিখ্যাত আমাদের শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী। যা শুনলাম আমি সুজয় প্রসাদ এর মুখ থেকেই অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে। ভাবলাম নিশ্চয়ই দেখা হবে তাই বুকে সাহস নিয়ে ফের হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করলাম আমি তাঁকে। লিখলাম এসেছি আমি এই অনুষ্ঠানে, সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো আমি বেরিয়ে এসেছি। মনটা খারাপ হয়ে গেলো কেমন। সেই আকাশবাণীর শর্মিষ্ঠা, সেই চব্বিশ ঘণ্টার কত দিনের চেনা শর্মিষ্ঠার সাথে দেখা হলো না আমার।

পূর্বপল্লীর সেই সোনাঝুড়ি নামের বাড়িতে তখন চাঁদের এলোমেলো আলো লুটোপুটি খাচ্ছে। গাছের ফাঁক দিয়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ছে নরম চাঁদের মোম গলা আলো লাল আভার মত আলো। বাতাসে হালকা হিমের পরশ। মঞ্চে তখন অনুষ্ঠানের শেষ পর্ব চলছে। একটা আলো আঁধারির পরিবেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যুগলবন্দীর এক স্মরণ সন্ধ্যার অনুষ্ঠান। একদিন যেখানে বাবা আর ছেলের যে দুজনের বিচ্ছেদ হয়েছিল এই শান্তিনিকেতনের মাটিতেই। মান আর অভিমানের পর্ব মিটিয়ে আর কাছে আসা হয়নি আর কোনোদিন দুজনের।

 আজ সেই বিচ্ছেদের এত বছর পরেও কিছু রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষ বাবা আর ছেলের দুজনের মিলন ঘটালেন এই সন্ধ্যায় পূর্বপল্লীর এই বাড়িতে এক ছোট্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। গানে, কবিতায়, আলোচনায়, নিভৃতে, যতনে একে অপরকে কাছে টেনে আনলেন তাঁরা নিজেদের মতো করেই। এক অনবদ্য ঘটনা ঘটলো এই সন্ধ্যায় পূর্বপল্লীর এই বাড়িতে। যেখানে গাছের ডালে, গাছের পাতায় চাঁদের আলো মেখে রবীন্দ্রনাথ আর তাঁর প্রিয় রথীন্দ্রনাথ কাছে খুব কাছে এলেন বহুদিন, বহু বছর পরে। দেখা গেলো এক ফ্রেমে বন্দী বাবা আর ছেলের ছবি। 

আমি অন্ধকার পথ পেরিয়ে কেমন আলোয় ভাসতে ভাসতে সাইকেল চালিয়ে ধীরে ধীরে ঘরে ফিরলাম। দেখা হলো না শর্মিষ্ঠার সাথে আমার। কিন্তু যা আমি পেলাম এই সন্ধ্যায় তাই বা কম কি। মেলা মাঠ ভেসে যাচ্ছে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে উদ্ভাসিত হয়ে। মাথার ওপর গাছের ডালে বসে আছে নাম না জানা অজানা পাখি। গাছের নিশ্বাসের শব্দ গায়ে মেখে তারা ভোরের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে যেনো। মনের মাঝে জেগে উঠল সেই গানের সুর, আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে। 

আমি দ্রুত পায়ে সাইকেল চালাতে থাকলাম। মন খারাপের সন্ধ্যা কি করে যে আমার বিধুর মন হঠাৎ করেই ভালো হয়ে গেলো কে জানে। বহুরূপী মনের এই হঠাৎ করে এই রং বদল বুঝতেই পারলাম না আমি কিছুতেই। আর আজ সেটাই আমি আমার সাদা জীবনের কালো কথায় সেই কথাই লিখে ফেললাম আমি। আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। আঁকাবাঁকা পথ ধরে এলোমেলো এলেবেলে জীবন নিয়ে হেঁটে চলেছি আমি একা, একদম একা। 

মন খারাপের সন্ধ্যা - অভিজিৎ বসু।
আট ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক ও নিজের মোবাইল ফোনে তোলা ছবি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...