সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই ‘চিরকুমার’ রতন এর কথা। সেই চব্বিশ ঘণ্টার হাসিমুখের আর টাক মাথার ভিডিও এডিটর রতন। সেই একটু কথা বলতে গিয়ে আটকে যায় ওর কথা কিন্তু বেশ নির্বিরোধী আর শান্ত স্বভাবের সেই রতন। সুন্দর দাড়ি গোঁফ কামানো বিন্দাস রতন। সেই নরেন, সৌরভ বাবু, অনিল আর অশোকদার সাথে একসাথে কাজ করা সেই রতন। সেই রতন এর আজ শুভ জন্মদিন।
আর তাই মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় রতনকে নিয়ে কিছু লিখলে কেমন হয়। অনেকেই বলেন যে, কি দরকার এই নানা ব্যক্তির কথা লিখে। তাদের জীবনের কথা লিখে কি লাভ হবে আমার। না, এই ব্লগের লেখা কোনও লাভ বা ক্ষতির হিসেব করে নয়। এই ব্লগের আঁকিবুঁকি অক্ষরের দাগ শুধুই আমাদের সবার সাথে কাজ করা মিশে যাওয়া মানুষের কথা ধরে রাখার চেষ্টা করা মাত্র। তাদের জীবনের কথা মনে রাখার চেষ্টা করা। যে জীবন যাপন এর নানা গভীর গোপন কথা বলতে ইচ্ছা হয় আমার।
আসলে জীবন তো শুধুই নিজের ঘেরাটোপে অন্ধ গলির মধ্যে ঘুরে বেড়ায় না একা একাই। জীবনের মোরাম রাস্তায় রতন এর মত মানুষরা থাকে হাসিমুখে একটু সবসময় নার্ভাস হয়ে। এই বোধহয় কাজে ভুল করলো তারা এই ভেবে এই চিন্তা নিয়েই বাঁচে তারা। তাদের মনের সুপ্ত বাসনাকে বুকে চেপে আলো আঁধারির পথ ধরে এগিয়ে চলে জীবনের কঠিন রাস্তায়। আসলে রতন এর নাম যে কি করে বক্সার রতন হলো সেই মতি নন্দীর উপন্যাসের লেখা নামের মত কে জানে। সেটা জানা নেই আমাদের কারুরই। ওর চেহারা ভালো থাকায় ওকে বক্সার রতন বলা হতো একসময়। সেই থেকে রতন আমাদের কাছে হয়ে গেলো বক্সার রতন।
সেই যে বক্সার রতন। সেই সব সময় ছবি কাটতে দিলেই টেনশন করা রতন আমাদের সবার প্রিয় ছিল বেশ। কাজ শেষ করেই ওর চা খেতে চলে যাওয়া দল বেঁধে। কোনো নতুন ইন্টার্ন অফিসে কাজে এলেই তাকে নিজের হাতে ধরে কাজ শিখিয়ে দেওয়া। সেই টুনু মুনু হোক বা অন্য কেউ। নানা ভাবেই ওর চিরকুমার নাম বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বার বার। কিন্তু বিয়ের ফুল ফোটা কি খুব সোজা ব্যাপার। আর তাই বার বার রতন পাত্রী দেখতে গিয়েও কোনো না কোনো খুঁত ধরে ফেলে আর বিয়ে বাতিল হয়েছে তার। আর এই করতে করতে রতনের বয়স বেড়েছে। কিন্তু ওর মনের বয়স বাড়েনি একদমই। আর তাই ওর বহু দিনের শখ সেই রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট কিনে প্রথম দিনেই দুর্ঘটনা হবার ঘটনা ঘটে যায় ওর জীবনে। একবার নয় দু বার দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু ওর সেই বুলেট চালানোর শখ পূরণ করতে পিছপা হয়নি সে কিছুতেই।
আর এইভাবেই বেশ দিব্যি দিন চলে যায় ওর। ওদের হাসি মুখের সব চেনা সংসার। কেউ নরেনের মত একটু স্পিডে ছবি কেটে দেয় একবারে ভুল না করেই। আর রতন একটু হেলে দুলে ধীরে সুস্থে হাত চালিয়ে লুপ কেটে দেবার আগেই হেডলাইন রোল হয়ে যায় বুলেটিনে। আর রতনের ওপর সবাই চিৎকার করছে রতন ঘামতে ঘামতে বলছে এইতো দিচ্ছি আমি হয়ে গেছে। সত্যিই তো সবাই কি আর নরেন হতে পারে। হাতের পাঁচ আঙুল তো পাঁচ রকমেরই হয়।
ওর মাকে নিয়ে আর দাদাকে নিয়ে একসাথে থাকা। রতনের ওপর সংসারের ভার। এই করে বেশ ভালই দিন কেটে যাচ্ছিল ওর পোদ্দার কোর্টের অফিসে। পরে যে অফিস সেক্টর ফাইভের মিডিয়া সিটিতে চলে আসে আমিও ওকে দেখতাম বেশ বিন্দাস হাসি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক। ওর ট্রেডমার্ক ওর টাক আর হাসি। সেই রতন এর ২৪ ঘন্টা চ্যানেল এর কাজ চলে যায় তার। কারণ ঠিক দ্রুত তাল মেলাতে পারছে না সে। আর তাই রতন হয়ে যায় নন পারফর্মার। বেশ ভালো ব্যাপার কিন্তু। এক সংসারে থেকে বের করে দেওয়া নন পারফর্মার স্ট্যাম্প দিয়ে।
অগত্যা রতন ২৪ ঘন্টা ছেড়ে টিভি নাইন এর চ্যানেলে কাজে যোগ দেয়। নতুন এগারো তলা থেকে চৌদ্দ তলার ঝাঁ চকচকে অফিস। আর নিজেকেও বদলে নেয় সে একদম হঠাৎ করেই। উধাও রতনের চিরচেনা উজ্জ্বল টাক। বদলে গেছে রতন একদম। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা মাথায় ঘন কালো চুলের সমাহার রতনের। গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে রতন আমাদের হিরো সুপার স্টার রতন। প্রথম থেকেই প্রথমের পাশে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের ভোল বদলে অন্য এক অচেনা রতন এর ছবি দেখা গেলো সোশ্যাল মিডিয়ায়। বক্সার রতন এখন সবার কাছেই অচেনা রতন।
রতন ভেবেছিল এইভাবেই ভোল বদল করে নিজেকে ঝকঝকে সুন্দর করে। টাক মাথার জয় সর্বত্র এই স্লোগানকে বুকে ধরে আর যে কথা না বললেই হয় এই আপ্ত বাক্যকে স্মরণ করে এই নতুন অফিসে টিকে যাবে রতন হাসি মুখেই। কিন্তু না এই বারও কপাল খারাপ রতনের। নিজেকে বদলে নিলেও তার চেনা মানুষগুলো যে বদলে গেছে অনেক আগেই সে বুঝতে পারেনি এটা। আর তাই এই জায়গায় রতন আবার নন পারফর্মার হয়ে পিছিয়ে গেলো। আবার চাকরি গেলো রতনের।
সেই ওর হাসি মুখের টাক মাথার রতনের এখন মাথা ভর্তি কালো চুল। শুধু ওর মুখের সেই চেনা হাসিটা উবে গেছে। সেই ওর জীবনের বিন্দাস ভাবটাই আর নেই। যে জীবনের দৌড় করতে গিয়ে ও বারবার পিছিয়ে পড়লো। কত জনের কাছে বকা খেলো, কথা শুনলো, ঠিক করে কাজ করতে পারছে না বলে। কিন্তু কেউ ওকে একটু মেনে নিয়ে আর মানিয়ে নিয়ে চেনা সংসারে ওকে একপাশে সরিয়ে রেখে দিলো না। সেই রতন এর আজ জন্মদিন। ওর জন্মদিনে শুভেচ্ছা আমার। রতনকে আমার ফুলেল শুভেচ্ছা। ভালো থেকো তুমি রতন।
২৪ ঘন্টার ‘চিরকুমার’ রতন - অভিজিৎ বসু।
ছয় জানুয়ারি দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন