সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটি বিজ্ঞাপন ও আবেদন


ফেসবুকে এই বিজ্ঞাপনটি দেখেই আমার চোখ আটকে গেলো। বাহ দারুন সুন্দর বিজ্ঞাপন তো। বীরভূমের চৌ হাট্টায় একটি গ্রামে একটি আশ্রমে একজন লোক নিয়োগ করা হবে। আশ্রমে থাকার জন্য নিরামিষ খাবার খেতে হবে। একটু কাজকর্ম করে দিতে হবে আশ্রমের। ভাবলাম বাহ দারুন সুন্দর ব্যাপার তো এটি। এমন যদি দু বেলা একটু খেতে পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কি মন্দ হয়না বেশ। 

ঘরে বউ, মেয়ে আর শাশুড়ির গাল শুনে বাবার কাছে জ্ঞান শুনে দু বেলা দু মুঠো ভাত খাবার থেকে এটা বেশ ভালো ব্যাপার কিন্তু। একদম নিজের উদ্যোগে বেঁচে থাকা, পরের কাছে হাত পেতে চেষ্টায় আর অনুগ্রহে নয়। যা দিনকাল পড়েছে আজকাল তাতে এই কাজটি বেশ মন্দ নয় কিন্তু। আর সেই তালগাছের মত ঝড় ঝাপটা সামলে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বিরাট মাতব্বরদের দাপটে যে হারে সব টপাটপ করে সাংবাদিকদের চাকরি চলে যাচ্ছে দ্রুত হারে তাতে যে আর এই বাংলা মিডিয়ায় চাকরি জুটবে তার কোনও সম্ভাবনা নেই আর আমার এই শেষ জীবনে। 

তার ওপর আমার পঞ্চাশ পেরিয়ে এখন অবসর এর কোটায় চলে এসেছি প্রায়। কে আর বুড়ো বয়সে আমায় কাজ দেবে বলুন। সবাই এখন বাতিল মাল বলেই মনে করে আমায়। এইসব ভেবেই বিজ্ঞাপনের ইনবক্সে নিজের নম্বর দিয়ে লিখে ফেললাম আমি এই কাজ করতে চাই। আর সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেন এক মহিলা। রাত তখন বারোটা বেজে গেছে। যদিও আমার জীবনের বারোটা অনেক আগেই বেজে গেছে। 

আমার জীবনপঞ্জি নিয়ে পোস্টমর্টেম করা হলো বহুক্ষণ ধরেই। কাটা ছেঁড়া করা হলো আমি কি করি। আমার ঠিকুজি কুস্টি নিয়ে কত প্রশ্ন করা হলো। আমি তাঁকে বললাম আমি পঞ্চাশ বছর ধরে নিরামিষ খাই। আমি নেশা ভাং করিনা। ধর্ম নিয়ে চলি। অধর্ম করিনা জ্ঞানত। উপকার না করতে পারলে অপকার করি না। আর সবশেষে জানালাম তাঁকে, আমি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে সাংবাদিকতা করেছি। কিন্তু বর্তমানে একদম বেকার কাজ করিনা কোনও বাতিল মাল হয়ে গেছি এই বাংলা মিডিয়াতে। তাই এমন একটি কাজ হলে আমার বেশ সুবিধা হয়।

সঙ্গে সঙ্গেই মহিলার গলার স্বর বদলে গেলো একদম। আগে বেশ কঠিন প্রশ্ন, জীবনের দর্শন এর গুরুগম্ভীর নানা কথা। ধর্ম ও দর্শন এর কথা বলছিলেন তিনি আমায়। আর সাংবাদিক হয়ে কাজ করেছি শুনেই বললেন, না না দাদা খুব ভালো লাগলো আমার আপনার সাথে কথা বলে আলাপ করে। আপনি যে এমন জায়গায় আসতে চান এটা ভালো ব্যাপার বেশ। আসলে আপনার তো চেনা জানা অনেক লোক আছেন যদি কেউ আগ্রহী হন আশ্রমে থাকবেন বলে তাহলে একটু জানাবেন। তিনি একজন পশু প্রেমী আর আস্তিক মহিলা। আর আশ্রমে গেলে ভালই লাগবে বললেন তিনি। মা আছেন মা কথা বেশি বলেন না। বোলপুর থেকে আহমেদপুর হয়ে সেখান থেকে আশ্রমে যেতে হবে টোটো করে বলে যাবেন আমি জানিয়ে দেবো। 

দুজনের গুড নাইট বলে কথা শেষ হলো। মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় এটা লিপিবদ্ধ করে রাখা দরকার। একদিকে যখন বাংলার মা মাটি মানুষের আমলে মিডিয়ায় টুকটাক করে লোকজন কর্মহীন হয়ে আতান্তরে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন যখন তখন। আর সেই সময় তখন বিনা বেতনে কাজ শুধু দুটো ভাত এর বিনিময়ে সেটাও দিতে চাইছেন না কেউই। আশ্রমের এই বক্তব্যে আমার বেশ খারাপ লাগলো। বলতে পারতেন তিনি যে আপনি কি করে করবেন এমন কাজ। সেটা না বলে সরাসরি নাকচ করে দেওয়া। 

আমি তো এমন বিন্দাস এলোমেলো এলেবেলে জীবন নিয়ে কাটিয়ে দিতে চাই। সেখানেও এই বাংলার দাপুটে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের লোকজন বাতিল হয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকেও হাসতে হাসতেই মিষ্টি কথায় বলে দেওয়া হচ্ছে, যে না আপনাকে আমরা আর চাইনা। আপনার সন্ধানে যদি এমন কোনও কেউ থাকেন তাহলে জানাবেন আমরা দেখব তাঁকে নেওয়া যায় কি না। কিন্তু আপনাকে নয় কোনও ভাবেই। সত্যিই অসাধারণ এই সাংবাদিক জীবন আমাদের। 

যে সাংবাদিকরা পট পট করে ছবি তোলে ভিআইপি জোনে প্রবেশ করে, যে সাংবাদিকরা পট পট করে পরিবর্তনের সরকারকে মূখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে, যে সাংবাদিকরা পট পট করে তাদের চাকরি খোয়ায়। আবার সেই সাংবাদিকরা যখন এই বিনা বেতনে কাজ করবে বলে দু বেলা দু মুঠো ভাত পাবে বলে আবেদন করে সেখানেও তাদের আবেদন নাকচ হয় সপাটে। সত্যিই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের কি মহিমা। আর বিখ্যাত সেই সিনেমার লাইন রবি ঘোষের কন্ঠে, বাবা কি দাপট এর কথা মনে পড়ে যায় আমার। এই বাংলায় এখন দাপুটে সংবাদিকদের সত্যিই হাঁড়ির হাল। 

একটি বিজ্ঞাপন ও আবেদন - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...