ঘরে বউ, মেয়ে আর শাশুড়ির গাল শুনে বাবার কাছে জ্ঞান শুনে দু বেলা দু মুঠো ভাত খাবার থেকে এটা বেশ ভালো ব্যাপার কিন্তু। একদম নিজের উদ্যোগে বেঁচে থাকা, পরের কাছে হাত পেতে চেষ্টায় আর অনুগ্রহে নয়। যা দিনকাল পড়েছে আজকাল তাতে এই কাজটি বেশ মন্দ নয় কিন্তু। আর সেই তালগাছের মত ঝড় ঝাপটা সামলে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বিরাট মাতব্বরদের দাপটে যে হারে সব টপাটপ করে সাংবাদিকদের চাকরি চলে যাচ্ছে দ্রুত হারে তাতে যে আর এই বাংলা মিডিয়ায় চাকরি জুটবে তার কোনও সম্ভাবনা নেই আর আমার এই শেষ জীবনে।
তার ওপর আমার পঞ্চাশ পেরিয়ে এখন অবসর এর কোটায় চলে এসেছি প্রায়। কে আর বুড়ো বয়সে আমায় কাজ দেবে বলুন। সবাই এখন বাতিল মাল বলেই মনে করে আমায়। এইসব ভেবেই বিজ্ঞাপনের ইনবক্সে নিজের নম্বর দিয়ে লিখে ফেললাম আমি এই কাজ করতে চাই। আর সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেন এক মহিলা। রাত তখন বারোটা বেজে গেছে। যদিও আমার জীবনের বারোটা অনেক আগেই বেজে গেছে।
আমার জীবনপঞ্জি নিয়ে পোস্টমর্টেম করা হলো বহুক্ষণ ধরেই। কাটা ছেঁড়া করা হলো আমি কি করি। আমার ঠিকুজি কুস্টি নিয়ে কত প্রশ্ন করা হলো। আমি তাঁকে বললাম আমি পঞ্চাশ বছর ধরে নিরামিষ খাই। আমি নেশা ভাং করিনা। ধর্ম নিয়ে চলি। অধর্ম করিনা জ্ঞানত। উপকার না করতে পারলে অপকার করি না। আর সবশেষে জানালাম তাঁকে, আমি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে সাংবাদিকতা করেছি। কিন্তু বর্তমানে একদম বেকার কাজ করিনা কোনও বাতিল মাল হয়ে গেছি এই বাংলা মিডিয়াতে। তাই এমন একটি কাজ হলে আমার বেশ সুবিধা হয়।
সঙ্গে সঙ্গেই মহিলার গলার স্বর বদলে গেলো একদম। আগে বেশ কঠিন প্রশ্ন, জীবনের দর্শন এর গুরুগম্ভীর নানা কথা। ধর্ম ও দর্শন এর কথা বলছিলেন তিনি আমায়। আর সাংবাদিক হয়ে কাজ করেছি শুনেই বললেন, না না দাদা খুব ভালো লাগলো আমার আপনার সাথে কথা বলে আলাপ করে। আপনি যে এমন জায়গায় আসতে চান এটা ভালো ব্যাপার বেশ। আসলে আপনার তো চেনা জানা অনেক লোক আছেন যদি কেউ আগ্রহী হন আশ্রমে থাকবেন বলে তাহলে একটু জানাবেন। তিনি একজন পশু প্রেমী আর আস্তিক মহিলা। আর আশ্রমে গেলে ভালই লাগবে বললেন তিনি। মা আছেন মা কথা বেশি বলেন না। বোলপুর থেকে আহমেদপুর হয়ে সেখান থেকে আশ্রমে যেতে হবে টোটো করে বলে যাবেন আমি জানিয়ে দেবো।
দুজনের গুড নাইট বলে কথা শেষ হলো। মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় এটা লিপিবদ্ধ করে রাখা দরকার। একদিকে যখন বাংলার মা মাটি মানুষের আমলে মিডিয়ায় টুকটাক করে লোকজন কর্মহীন হয়ে আতান্তরে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন যখন তখন। আর সেই সময় তখন বিনা বেতনে কাজ শুধু দুটো ভাত এর বিনিময়ে সেটাও দিতে চাইছেন না কেউই। আশ্রমের এই বক্তব্যে আমার বেশ খারাপ লাগলো। বলতে পারতেন তিনি যে আপনি কি করে করবেন এমন কাজ। সেটা না বলে সরাসরি নাকচ করে দেওয়া।
আমি তো এমন বিন্দাস এলোমেলো এলেবেলে জীবন নিয়ে কাটিয়ে দিতে চাই। সেখানেও এই বাংলার দাপুটে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের লোকজন বাতিল হয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকেও হাসতে হাসতেই মিষ্টি কথায় বলে দেওয়া হচ্ছে, যে না আপনাকে আমরা আর চাইনা। আপনার সন্ধানে যদি এমন কোনও কেউ থাকেন তাহলে জানাবেন আমরা দেখব তাঁকে নেওয়া যায় কি না। কিন্তু আপনাকে নয় কোনও ভাবেই। সত্যিই অসাধারণ এই সাংবাদিক জীবন আমাদের।
যে সাংবাদিকরা পট পট করে ছবি তোলে ভিআইপি জোনে প্রবেশ করে, যে সাংবাদিকরা পট পট করে পরিবর্তনের সরকারকে মূখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে, যে সাংবাদিকরা পট পট করে তাদের চাকরি খোয়ায়। আবার সেই সাংবাদিকরা যখন এই বিনা বেতনে কাজ করবে বলে দু বেলা দু মুঠো ভাত পাবে বলে আবেদন করে সেখানেও তাদের আবেদন নাকচ হয় সপাটে। সত্যিই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের কি মহিমা। আর বিখ্যাত সেই সিনেমার লাইন রবি ঘোষের কন্ঠে, বাবা কি দাপট এর কথা মনে পড়ে যায় আমার। এই বাংলায় এখন দাপুটে সংবাদিকদের সত্যিই হাঁড়ির হাল।
একটি বিজ্ঞাপন ও আবেদন - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন