ভেঙেপড়া রাজবাড়ী, ঠাকুর দালান, শিবমন্দির, বাড়ীর দেওয়ালে জমে থাকা বাপ ঠাকুর্দার পুরোনো স্মৃতি, সেই পুকুরের ঘাট, সেই সবকে বুকে আগলে নিয়েই তো বেঁচে থাকা তাঁর এই কালিকাপুর গ্রামে। সেই সব পূজো পাঠ নিয়ম কানুন বাবার কাছে শিখে নেওয়া সবকিছুই। শুধু বাবার আশীর্বাদে চলে যায় সংসার তাঁর। সেই কালিকাপুর এর রাজবাড়ীর শিব মন্দিরের পুজোয় একমাত্র তাঁরই অধিকার আছে যে। তিনি ছাড়া খুলবে না এই শিব মন্দিরের দরজা। এই করেই কেটে যায় দিন তাঁর। সেই এইবিখ্যাত কালিকাপুর রাজবাড়ির বংশ পরম্পরায় যিনি পুরোহিত সেই পিকলু চক্রবর্তী। যাঁকে একডাকে এই জঙ্গল পথে সবাই চেনে। সেই যদি কলকাতার শুটিং পার্টি থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ সবাই তাঁকে চেনে একডাকে।
সেই বিখ্যাত কালিকাপুর রাজবাড়ী দর্শন করতে গিয়ে আমার আলাপ হলো তাঁর সাথে। বেশ হাসিখুশি সুন্দর একজন মানুষ কিছুদিন আগেও যে তাঁর এতো বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। এই বিখ্যাত বাড়ীর পাশেই তাঁর বাড়ী। কিছু কিছু মানুষের সাথে হঠাৎ করেই এইভাবেই আলাপ হয়ে যায় আমার। এই আলাপ এর জন্য কৃতিত্ব যাঁর সেই দেবাশীষ বাবু হলেন মূল মাধ্যম আমাদের। এই দেবাশীষ বাবুর গল্প অন্য একদিন। সেই তাঁর ছোট্টো ঘর, সেই ঘরের বাইরে মাটির উঠোন, হাঁস মুরগির গন্ধ, তাজা ডিমের স্বাদ পাওয়া। গরুর গোয়াল ঘরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা সেই গৃহপালিত চতুষ্পদ জীবের। সেই তাঁর ছোট্ট মেয়ে। বেশ ভালই লাগলো আমার এই কদিনের আলাপে। আর তাই তাঁর সূত্র ধরেই এই পুরোহিত আর নাটক নিয়ে বেঁচে থাকা সেই ছোটো বেলা থেকেই।
পিকলু বাবু বরাবর নাটক আর যাত্রার নেশায় আচ্ছন্ন থাকেন তিনি। সেই ছোটো বয়স থেকে তাঁর নাটকের নেশা ছিল তাঁর। আর এই ফাঁকা বাড়িতে কলকাতা থেকে অনেকেই শ্যুটিং করতে আসতে চান। আর সেই সময় খোঁজ পড়ে তাঁর। পিকলু বাবুর নম্বর সবার কাছেই নাকি আছে কলকাতা থেকে যাঁরা এই বাড়িতে শুটিং করতে আসেন। আর এদিক ওদিক জায়গা ঠিক করে দেওয়া, স্পট ঠিক করে দেওয়া। কলাকুশলীদের দেখভাল করা সবটাই করেন তিনি হাসিমুখে।
কত যে জনপ্রিয় সিরিয়াল হয়েছে এই বাড়িতে তাঁর সাহায্য নিয়ে তাঁর ঠিক নেই। আর সেই সব নানা ধরনের অভিনয় হয়েছে এই জায়গায়। বহুরূপী, রং মিলান্তি, তাসের দেশ, গয়নার বাক্স, বাস্তু সাপ, কাজলের মা এই সব নানা শ্যুটিং হয়েছে এই বাড়িতে। যে বাড়ীর কুল পুরোহিত পিকলু বাবু নিজেও অভিনয় করতে বড়ো ভালোবাসেন তিনি এই বয়সেও। আর তাই এইসব কলকাতার শুটিং পার্টিদের কাছে কালিকাপুর এর পিকলুদা বেশ সমান ভাবেই জনপ্রিয়। তিনিই একমাত্র এই জায়গায় শ্যুটিং করার অনুমতি দেন বাড়ীর লোকদের সাথে কথা বলে।
সেই নিজের মোবাইল ঘেঁটে সেই জাগ্রত শিবের মন্দিরে পূজো করা আর তাঁর অভিনয় এর ক্লিপিংস দেখানো আমাদের। বেশ সুন্দর একজনের সাথে আলাপ হলো আমার যিনি পূজো করেন আবার শখ করে অভিনয় করেন। কত সিরিয়ালে যে অভিনয় করেছেন তার ঠিক নেই। এই অভিনয় জীবন বাঁচানোর অভিনয় করা নয়। ভালোবেসে অভিনয় করা। কোনো সময় পুরোহিত সেজে, কোনো সময় অন্য।চরিত্রে। আবার তার মাঝে এই বাড়ির পূজোর সব দায় দায়িত্ব সামলে দেওয়া। দুর থেকে শ্যুটিং করতে এলে তাঁর সাহায্য না পেলে শুটিং করে পারা যায় না।
সেই লাইট, একশন আর স্টার্ট এর প্রেমে পড়ে গেছেন পিকলু বাবু এই বয়সেও। আর তাই তিনি রাজবাড়ীর দেখভালের সাথে সাথে নিজের ভালোবাসা এই সাধের অভিনয়কেও চালিয়ে যাচ্ছেন আজও। এই প্রত্যন্ত গ্রামের এক মেঠো মানুষ এই ভাবেই টিকিয়ে রেখেছেন তাঁর স্বপ্নের অভিনয়কে। সত্যিই কত ভাবেই যে মানুষ তাঁর নেশাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে ভালোবেসে তার শেষ নেই। আর এইভাবেই হাসিমুখে জীবন কাটিয়ে দেন।
আমি কালিকাপুর না গেলে জানা হতো না পিকলু বাবুকে, দেখা হতো না তাঁর সাথে আমার। তাঁর জন্য ধন্যবাদ দেবাশীষ বাবুকে। ভালো থাকবেন আপনারা। জীবনের রাস্তায় এমন কত জনকে যে খুঁজে পাই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় কে জানে। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন আর সেই মেঠো রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো সব নানা ধরনের মানুষ। যাঁদের তাড়া কম, দৌড় কম, কেমন যেনো নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকা আছে শুধু। ভালো থাকবেন আপনি পিকলু বাবু। আর আপনার অভিনয় চালিয়ে যাবেন আপনি।
কালিকাপুরের পুরোহিত পিকলু চক্রবর্তী - অভিজিৎ বসু।
দশ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।
খুব ভালো লাগলো
উত্তরমুছুন