সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কালীঘাট থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

কালীঘাট থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সিঙ্গুর থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। নন্দীগ্রাম থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বামেদের হঠিয়ে মহাকরণ থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। নবান্নের ১৪ তলা থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। কেউ বলছেন একেবারে ছক্কার ব্যাটিং একদম সৌরভের মতোই ছয় হাঁকিয়ে ফুল ফর্মে ব্যাট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার কেউ বলছেন একদম বোল্ড আউট হলেন তিনি। কেউ বলছেন বাবা এই মাটি বেশ শক্ত মাটি। ব্রিটিশদের ঘাঁটি বলে কথা মাটি তো শক্ত হবেই বাবা। এতো আর সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই, কেশপুর বা ফুরফুরা শরীফ এর চেনা মাটি নয়। যে ফুরফুরে বসন্তের বাতাস বইছে সেখানে হু হু করে।‌ চেনা মাটিতে চেনা বোলারকে সামলে দেওয়া হাসিমুখে বছর বছর নিজের আন্দোলনের জোরে। এতো একেবারেই কঠিন পিচে কঠিন বোলারের মুখোমুখি হওয়া।


 একপক্ষ মমতা পন্থী যাঁরা তাঁরা বলছেন জয় হয়েছে আমাদের দিদির। আর অন্যপক্ষ বিরোধী পক্ষ যাঁরা তারা বলছেন কে বলেছে এই সব কথা একেবারেই ঠিক নয়। গো হারা হার হলো দিদির এই লন্ডন যাত্রায়। কিন্তু তাতে আমার, আপনার আর কী যায় বলুন তো।অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতায় তার ব্রাঞ্চ খুললে আমার আপনার কি লাভ বলুন তো। ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজ কলকাতা লন্ডন উড়ান চালু করলে আমার, আপনার কি লাভ বলুন তো। যাঁরা আমরা এই রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে বাড়ির মানুষদের নিয়ে হাজির হই তিন মাস অন্তর যে ক্যাম্প বসে সেখানে কটা টাকা পাওয়ার আশায়। পাড়ার, এলাকার , ব্লকের, অঞ্চলের চেনা নেতাদের কাছে গিয়ে লক্ষ্মী ভান্ডার, বিধবা ভাতা, সমব্যাথী, রূপশ্রী, কন্যাশ্রী আর ঘর তৈরির টাকার জন্য হাত কচলে দাঁড়াই। নেতাদের ঝাঁ চকচকে বাড়িতে বা তাদের ঠাণ্ডা সুন্দর পার্টি অফিসে যখন যেতে বলেন তখন যাই পড়িমড়ি করে দৌড়ে সব কাজ ফেলে দিয়ে। যেখানে বিকেল বেলায় রোদ পড়লে পাড়ার চেনা ছেলে লাখ টাকার মোটর সাইকেল হাঁকিয়ে ফুল ছাপ জামা পড়ে মুখে পানপরাগ চিবিয়ে বলে কোনোও চিন্তা নেই জেঠিমা এইবার তুমি পাশ আর ফেল করবে না তুমি। ঠিক তোমার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে সামনের মাসে। শুধু সামনে ভোটের সময় দিদিকে মনে রেখো একটু। তোমার ঘরে লক্ষ্মী লাভ এই বার হবেই আমি ঠিক বলে দেবো আসল জায়গায় চিন্তা কোরো না তুমি জেঠিমা একদম। 

 আরে দেখো না টিভিতে দিদির এখন কত কাজ। লন্ডন থেকে প্লেন চালু করতে হবে। শিল্প বাণিজ্য বান্ধব এই রাজ্যের সরকার সেটা নিয়ে দিদিকে ভাষণ দিতে হবে। বোঝাতে হবে এই রাজ্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বিশ্বের দরবারে সবার সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে। আরে তোমার আমার বাড়ীর লোক না পড়ুক কলকাতা, সল্টলেক, নিউটাউন এর বড়ো বড়ো বাড়ীর ছেলে মেয়েরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই রাজ্যে এলে তারা সব পড়তে যাবে। সৌরভ গাঙ্গুলীর মেয়ে সানাকে আর বাবা মা কে ছেড়ে বিদেশে থাকতে হবে না মনে কষ্ট চেপে। কত কিছুই যে হচ্ছে জেঠিমা তোমরা এই সব খবর রাখো না তার কিছুই। তাই লক্ষ্মী ভাণ্ডার, সমব্যাথী, বার্ধক্য ভাতা এসব নিয়ে কি আর দিদির মাথা ঘামালে চলে গো। এখন যে অনেক বড় বড় ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে লন্ডনের টেমস নদীর তীরে। যদি দু চারটে লাল দোতলা বাস দিদি নিয়ে আসে তাহলে তোমরা কলকাতা গেলে আবার দোতলা বাসে চড়তে পারবে। কে কি বিক্ষোভ করলো আর বাঁদরামি করলো এসবে কান দিও না জেঠিমা তুমি একদম। আসলে কী জানো তো দিদিকে সব হিংসে করে যে।

জেঠিমা মনে মনে ভাবেন কি কুক্ষণে যে ওই লক্ষ্মী ভাণ্ডার এর কথাটা পাড়ার বিল্টুকে মনে করাতে গেলো সে। চিন্তা কি আর সাধে আসে তার। ঘরের শিক্ষিত ছেলেটা বেকার বসে আছে। সিভিক এর চাকরি পেয়েও লক্ষ টাকা দিলে তবে কাজ জোটে। গ্রামে কোনোও কাজ নেই। শহরে কোনো কর্মসংস্থান নেই। শিল্প নেই গোটা রাজ্যে। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। বহুদিন আগেই কারখানা বন্ধ হয়েছে এক পার্টির দুই দলের নেতাদের ঝামেলায়। কে কার হাতে ক্ষমতা থাকবে সে নিয়ে চাবি পড়েছে বিস্কুট কারখানায়। কি করে যে সংসার চলবে, কি করে যে স্বামীর ওষুধের টাকা জোগাড় হবে সেই ভেবেই রাতে ঘুম হয়না তার। তাই বারবার পাড়ার বিল্টুর কাছে ছুটে আসা যদি কটা টাকা সাহায্য পাওয়া যায় এই আশায়। সত্যিই তো এই নানা ভান্ডার আর সরকারের সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকা তাদের মত সাধারন মানুষের। এই রাজ্যের মা মাটির মানুষদের সত্যিই যে বেশ কঠিন লড়াই এর দিন। যে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে আমার, আপনার ঘরের চেনা পরিচিত সব মানুষজন। নিজেদের শিরদাঁড়ার জোরে নয় শুধুই অনুগ্রহ নিয়ে বেঁচে থাকা তাঁদের। আর হাত কচলে আবেদন করা দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে লাইনে দাঁড়িয়ে। জয় মা মাটি আর মানুষের জয়। জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। 

কালীঘাট থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় - অভিজিৎ বসু।
আঠাশ মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...