সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বর্ধমানের পার্থ অরূপ জুটি

ফুটবল খেলার মাঠে কৃশানু আর বিকাশ জুটি সেই জামশেদ নাসিরি আর চিমা ওকেরি জুটি, মেসি আর নেইমার এর জুটি এমন নানা জুটির কথা শুনেছি আমরা। এতো সব ফুটবল মাঠের বিখ্যাত বিখ্যাত জুটির কথা। কিন্তু খবরের মাঠে, খবরের দুনিয়ায় এমন জুটির কথা আগে শুনিনি আমি কোনওদিন। সেই ২৪ ঘণ্টার পার্থ আর অরূপের সেই বিখ্যাত জুটির কথা। ট্রেন বর্ধমান থামলেই আমি তো ওদের দুজনের কাউকে না কাউকে ফোন করে ফেলি আজও এতদিন পর মিডিয়ার কাজ না করেও টোটো চালক হয়ে গিয়েও। 

কেনো জানিনা বেশির ভাগ সময় অরূপকে ফোনে জিজ্ঞাসা করি কি খবর রে। পার্থ কোথায় আছে? ও বলে পার্থ দা বাড়ীতেই আছে অভিজিৎ দা। আর
পার্থকে ফোন করলে বলি অরূপ কোথায় রে। পার্থ বলে, অরূপ এই তো ওর বাড়ী গেলো দাদা সেই গুসকরায় সারাদিন কাজ করে। কি করে ওদের জুটি তৈরি হলো সেটা আমার ঠিক জানা নেই। সেই পুরোনো ২৪ ঘণ্টার আমলের সেই বিখ্যাত জেলার রিপোর্টার তৈরির সময় এই পার্থ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন জায়গায় লোক নিয়োগ করার। ভালো ভালো কিছু ছেলে যারা এই নতুন ২৪ ঘণ্টার চ্যানেলে কাজ করবে মন দিয়ে। সেই সময় বর্ধমানের পার্থ সেই নিজের হাতে একে একে দক্ষিণবঙ্গের এই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন স্থানে রিপোর্টার নিয়োগ এর গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেই বাম আমলে। 

সেই আমল থেকেই এই পার্থ চৌধূরী আর অরূপ লাহার জুটি গড়ে ওঠে। যে জুটি হাজার ঝড় ঝাপটা সামলে সেই বর্ধমান জেলার লালদুর্গকে সামলে আজ মা মাটি মানুষের তৃণমূল সরকারকে হাসিমুখে সামলে যাচ্ছে দুজন মিলে কার্জন গেটের নিচে দাঁড়িয়ে। কিছু 
 কিছু জন এইভাবেই হাসিমুখে যখন বাম আমলে ক্ষমতা থাকার সময় একভাবেই জীবন কাটিয়ে দিলো ঠিক তেমনি ভাবেই তৃণমূল আমলেও ওরা দুজন মিলে মিশে একসাথে জীবন কাটিয়ে দিলো। একজন এর বাড়ী বর্ধমান তো অন্যজনের বাড়ী গুসকরায়। আর এতেই বেশ ভালো লাগে আমার। ঠিক যেনো ফুটবল খেলার মাঠের জুটি ওরা। লেফট আর রাইট স্ট্রাইকার। একে অপরকে বিশ্বাস করে নিয়ে ভরসা করে খেলে যাওয়া ওদের। একজন হাঁফিয়ে গেলে ক্লান্ত হলে অন্যজনকে সাহায্য করা। 

আর আজ তাই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই পার্থ আর অরূপের কথা লিখতে ইচ্ছা হলো আমার এই রাতদুপুরে। যে পার্থ কোনোদিন ক্ষমতা থাকলেও ক্ষমতা দেখাতে হয় কি করে সেটা দেখাতেই পারলো না কোনোদিন। সেই বাম আমলে ক্ষমতার কাছে থেকেও কেমন যেন ক্ষমতাহীন হয়েই হাসি মুখে সাংবাদিকতা করে কাটিয়ে দিলো ও। আর ওকে দেখে অরূপ লাহাও সেই পার্থর পথ অনুসরণ করলো। আর সেই ভাবেই জুটি বেঁধে কাজ চালিয়ে গেলো ওরা দুজন মিলে। যা দেখে আমার বেশ অবাক লাগে। 

সেই করোনার সময় ওদের জেলার বিল আমি করতাম সেই সময় ২৪ ঘণ্টার চ্যানেলে। ওদের টাকা কমে যাবে কি করে চলবে সারা মাস সেটা নিয়ে কত যে আলোচনা করেছি আমরা তিন জন মিলে কে জানে। সেই বর্ধমান এর জামালপুর থেকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ী ফেরার পথে ওদের দুজনের সাথে দেখা হওয়া কতদিন পর সেই কার্জন গেটের সামনে। সেই সন্ধ্যায় পার্থ আমায় বলল দাদা বাড়িতে এই কাটোয়ার গুড় নিয়ে যাও ভালো খেজুর গুড়। সবাই মিলে একসাথে চা খাওয়া আর রুটি খাওয়া। বেশ ভালো লাগলো সেই সময় সেই সন্ধ্যায়। 

কেমন এই চারিদিকে জুটি ভাঙার যুগে ওদের এই জুটি বেঁধে থাকার চেষ্টা বেশ সুন্দর একটা উদাহরণ বেশ।  চারিদিকে যখন একা একাই এগিয়ে চলা আর বাঁচার চেষ্টা, সেখানে ওদের এই হাতে হাত ধরে বেঁচে থাকা যা সত্যিই বেশ ভালো উদাহরণ একটা সবার কাছে। যেখানে একে অপরকে নিয়ে আনন্দ করে বেঁচে থাকা। কেউ কারুর প্রতি দূরে সরে গিয়ে নয়। আর তাই সেই কবেকার পুরোনো দিনের জুটি বেঁধে আজও কেমন করে যেনো চলছে ওরা এই স্বার্থপরতার যুগেও।

ভালো থাকিস ভাই পার্থ। ভালো থাকিস ভাই অরূপ। এই আজকের দ্রুত গতিতে ছুটে একা এগিয়ে চলার যুগে কেমন করে যেনো তোরা জুটি বেঁধে আছিস সেটাই বড়ো রহস্য আমার কাছে। ভালো থাকিস তোরা দুজনে। এইভাবেই জুটি বেঁধে খবর করে যাস। যেখানে বর্ধমানের কথা মনে হলেই আমাদের মনে পড়ে পার্থ আর অরূপের কথা। সেটাই তো তোদের জুটির আসল জয়। 

বর্ধমানের পার্থ অরূপ জুটি - অভিজিৎ বসু।
বিশ মার্চ দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...