সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী দিবস

বছরের প্রায় প্রতিটি দিনই কোনো না কোনো দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কোনোটি নির্দিষ্ট কোনো দেশের, কোনোটি কোনো জাতির, কোনোটি আবার আন্তর্জাতিক। বিশেষ মানুষ কিংবা বিশেষ কোনো কাজের স্বীকৃতি দিতেই উদ্ভব এসব দিবসের। আজ ২ জুন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী দিবস’।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সুপ্রাচীনকাল থেকেই এই অতি প্রাচীন এই যৌনপেশা চলে আসছে। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদেও এ পেশার উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও এ পেশা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। ধর্মীয় বা সামাজিক দৃষ্টিতে যৌনপেশা নিকৃষ্ট কাজের অন্তর্গত। তবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এ পেশাকে অনেক দেশ স্বীকৃতিও দিয়েছে।

যৌনকর্মীদের সমাজে একটু আড়চোখে দেখলেও আজকের দিনটি পালিত হচ্ছে যৌনকর্মীদের সম্মান জানাতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। জার্মান ভাষায় দিনটিকে বলা হয় ‘হারানট্যাগ’। স্প্যানিশ ভাষায় বলা হয় ‘দিয়া ইন্টারন্যাশনাল ডি লা ট্রাবাজডোরা সেক্সুয়াল’।

১৯৭৬ সাল থেকে এই দিনে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী দিবস। শুধু যৌনকর্মীদের সম্মান জানাতেই নয়, সঙ্গে তারা যে নির্যাতনের শিকার হন, সেই বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে পালিত হয় দিনটি। যৌনকর্মীরা প্রতিমুহূর্তে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোই এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য।
১৯৭৫ সালে ২ জুন ১০০ জন যৌনকর্মী ফ্রান্সের লিওনে সেন্ট নিজিয়ার চার্চে জড়ো হয়েছিলেন। তাদের অপরাধমূলক ও শোষণমূলক জীবনযাত্রার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা সে সময় একটি ব্যানার ঝুলিয়েছিলেন। যেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের শিশুরা চান না তাদের মা জেলে যাক’। এর কয়েকদিন আগেই ১০ জন যৌনকর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
 সে সময় টেলিভিশনে সরাসরি দেখানো হয় এই ঘটনা।পত্র পত্রিকায় লেখা হয় ব্যাপকভাবে। এরপর ফ্রান্সের যৌনকর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দেন। সেন্ট নিজিয়ার চার্চের যৌনকর্মীরা পুলিশি হয়রানির অবসান, তাদের কাজের জন্য হোটেল পুনরায় চালু করা ও যৌন কর্মীদের হত্যার সঠিক তদন্তের দাবিতে ধর্মঘট করেন। এই ধর্মঘট চলে টানা আট দিন। এর পরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়। আন্দোলনকারীদের সমস্যার কথা বিচার-বিবেচনা করা হয়। এরপর থেকে ২ জুন এই দিনটি পালিত হচ্ছে সারা বিশ্ব জুড়ে।
আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী দিবসে যৌনকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা, তাদের সমস্যার কথা জানা, বিভিন্ন রোগ প্রসঙ্গে তাদের সচেতন করা ও সমাজে তাদের যোগ্য সম্মান দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। এই দিন ন্যায় বিচারের প্রচার চালানো হয়। বিশ্বব্যাপী যৌনকর্মীদের সুরক্ষা, তাদের নিরাপত্তা ও তাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
আমস্টারডামের ডি ওয়ালেন লাল বাতি জেলায় ওডে কার্কের সামনে ব্রোঞ্জের মূর্তি বেলি। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে এটির উন্মোচন করা হয়েছিল, এখানে লেখা ছিল "সারা বিশ্ব জুড়ে যৌনকর্মীদের সম্মান করুন"।
১৯৭০-এর দশকে, ফরাসি পুলিশ যৌনকর্মীদের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রেখেছিল। পুলিশের প্রতিশোধমূলক আচরণ যৌনকর্মীদের গোপনে কাজ করতে বাধ্য করে। ফলস্বরূপ, যৌনকর্মীদের সুরক্ষা হ্রাস হতে থাকে এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আরও বাড়তে থাকে।
 দুটি হত্যাকাণ্ড হয়ে যাবার পরেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি না হওয়ায় এবং সেই বিষয়ে সরকারের কোন আগ্রহ না থাকায়, লিয়নের যৌন কর্মীরা রুয়ে দে ব্রেস্টের সেন্ট-নিজিয়ার গির্জা দখল করে ধর্মঘট শুরু করে। ধর্মঘটী যৌনকর্মীরা রাজনৈতিক সঙ্গীত গেয়েছিল এবং শালীন কাজের পরিবেশের দাবি করার সাথে সাথে কলঙ্ক অবসানের দাবি জানিয়েছিল।
এই ঘটনা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকস্তরে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল, শ্রম এবং নারীবাদীদের মত সংগঠনগুলির কাছ থেকে এই প্রতিবাদ সমর্থন পেয়েছিল। দখলের ৮ দিন পর, ১০ই জুন, পুলিশ জোরপূর্বক গির্জা থেকে মহিলাদের সরিয়ে দেয়, কিন্তু এই ঘটনার মাধ্যমে যৌন কর্মীদের অধিকারের জন্য তাদের একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলনের সূচনা হয়।
২০১১ সালের ২৯শে মে তারিখে জার্মানির বোখুমে, "ঘর ছাড়া নারী" শিরোনামের একটি পাঠচক্রে দেখানো হয়েছে যে ১৯৭৫ সাল থেকে যৌনকর্মীদের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পাঠটি প্রতিবেশী শহর ডর্টমুন্ডের সেই যৌনকর্মীদের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছিল, যারা ১৯৭৫ সালে লিয়নের যৌনকর্মী হিসেবে নির্যাতিত হয়েছিল। 
আজ সেই সব লড়াইয়ের দিনের স্বীকৃতি স্বরূপ সারা বিশ্বে পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক যৌন কর্মী দিবস।  হাজার হাজার বছরের পুরোনো এই পতিতা বৃত্তির স্বীকৃতি মিলতে কম লড়াই করতে হয়নি মেয়েদের। শরীর বিকিয়ে দুটো পেটের ভাত জোগাড় করতে গিয়ে লাঠি, গুলি খেয়ে মরতে হয়েছিল তাদের। সত্যিই তো লড়াই ছাড়া কিছুই মেলেনা। না স্বীকৃতি, না পেটের ভাত। 

আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী দিবস - অভিজিৎ বসু।
দোসরা জুন, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...