সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভিখারী অন্তর্ধান রহস্য দ্বিতীয় পর্ব

সাদা জীবনের কালো কথায় সেই ভিখারী অন্তর্ধান এর আজ দ্বিতীয় পর্ব। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময় বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন এই যে ভিখারী পাসওয়ান এর অন্তর্ধানের ঘটনা। আর সেটার মধ্যে একটা রাজনীতির অনেক রসদ আর পুঁজি লুকিয়ে আছে ভালই। আর তাই তার সেই সময়ের বিশ্বস্ত সহচর ও ছায়াসঙ্গী হুগলীর নেতা আকবর আলী খন্দকারকে বলেন এই এলাকায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। কোনো ভাবেই সিপিএমকে জমি ছাড়া যাবে না। আর দিদির বাক্যকে যে সারা জীবন বেদ বাক্য বলে মেনে এসেছেন সেটাই করলেন তিনি। নিজের জীবনকে বাজি রেখে আকবর আলী। তারজন্য তার ওপর হামলাও হয় বলে অভিযোগ। এমনকি তার শেওড়াফুলির বাড়িতে বোম মারার অভিযোগও ওঠে।

যে কোনো উপায়ে এই রাজনীতির ফসলকে নিজের ঘরে তুলতে হবে এটাই ছিল সেই সময় বিরোধী দলের নেত্রীর একমাত্র চিন্তা। সেটাই তো আমরা এই তৃণমূল আমলেও দেখতে পাচ্ছি। কোনো ঘটনায় পুলিশের ও প্রশাসনের ব্যর্থতা ধরা পড়লেই হলো। যে করে হোক ক্ষমতার শীর্ষে বসে থাকা ব্যক্তিকে যে করে হোক মাটিতে নামিয়ে আনতে হবে। যে কোনো উপায় অবলম্বন করে সরকারকে উৎখাত করতে হবে। জুটমিল এলাকায় সিটুর দাপট থাকা সত্ত্বেও ভিখারী ইস্যু নিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় শাসক দল সিপিএম। আর ক্রমেই গোটা মাঠ জুড়ে খেলে বেড়াতে থাকলেন একা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

ঠিক তেমন এক রাতের গল্প। বৃষ্টি পড়ছে অঝোরে। হঠাৎ খবর এলো ভিখারীর বাবা লখীচাঁদ পাসওয়ান খুব অসুস্থ। খবর পেয়ে কলকাতা থেকে সেই রাতেই ছুটে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। আমায় ফোন করে খবর দিলো আকবর আলী খোন্দকার নিজেই। বললো শোন দিদি আসছে ভিখারীর বাড়িতে।একটু পরেই আকবর দার পিএ, সিএ আর ইয়ে যাই বলি সেই সিংদার ফোন এলো। অভিজিৎ দা, বড়ো ভাই ফোনে কিছু বলেছে তোমায়। আমি সিংদাকে বললাম হ্যাঁ এইমাত্র বলেছে দিদি আসছেন এই রাতে। 
এই সিং দা আমাদের হুগলীর সাংবাদিকদের যে কি করে নানা গুরুত্বপূর্ণ খবর দিয়ে, খবর করতে সাহায্য করেছেন তার হিসেব নেই। সেই গল্প একদিন বলবো আমি।  সেই এই বৃষ্টিতে এত রাতে আমরা সব যাবো কি করে তেলেনিপাড়াতে। ফোন করলাম হায়দরাবাদ এ ইটিভির সেই সময়ের জেলার কো অর্ডিনেটর আমাদের সবার সেই ডাকাবুকো নেতা ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিককে। সব শুনলো ধ্রুব। বললো দাদা তুমি যাবে কি করে এই রাতে বৃষ্টির মধ্যে। আমি বললাম চলে যাবো দাদা কোনো চিন্তা করো না তুমি। এই খবরের নেশা তো আজও টিকে আছে আমার। বলেই আমার সেই বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান মিন্টেকে ফোন করে জানালা, বললাম চলো বেরোতে হবে এই রাতে।
 মিন্টের ভালো নাম জ্যোতির্ময় বসু। যে এখন নবান্নে নিউজ এইট্টিন এর হয়ে কাজ করে। মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সফরসঙ্গী বিখ্যাত ফটো জার্নালিস্ট এখন সে কলকাতায় পোস্টিং। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছেন ভিখারীর বাড়িতে মিন্টে কে বললাম আমি।
 মিন্টে আমার ফোন পেয়েই বলল আসছি আমি এখুনি তুমি রেডি হয়ে থাকো। সাইকেল নিয়ে অফিস চলে এলো আমার ক্যামেরাম্যান রাত তখন প্রায় এগারোটা বাজে। বৃষ্টির মধ্যে ক্যামেরার ব্যাগে প্লাস্টিক জড়িয়ে আমার সেই বিখ্যাত বাজাজ বক্সার গাড়ি নিয়ে চালক মিন্টে আর আমি পেছনে বসে আছি। ছুটে চলেছে বাইক অন্ধকার ভেজা রাস্তায় দ্রুত। গন্তব্য তেলেনিপাড়া। জলে ভিজছি দুজনেই কাক চান করে গেছি। আর মাঝে মাঝেই ধ্রুবর ফোন দাদা তোমরা সাবধানে যাও দাদা। দেখো তাড়াহুড়ো করো না কিন্তু। আমি বললাম না না কোনো চিন্তা নেই তোমার তুমি ঘুমিয়ে পড়ো দাদা। ধ্রুব বললো না গো আমি জেগে আছি। 
আমরা পৌঁছে গেলাম ভিখারীর বাড়ী। অন্য সব চ্যানেলের জেলার সাংবাদিকরাও সেই রাতে ভীড় করেছেন সেই পরিচিত ভিখারীর বাড়ির সামনে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলেন কিছু সময় পরে টালির ঘরে ঢুকলেন। কোনো ভাবে ছবি হলো হুড়োহুড়ি করে। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বললেন সব কথা। ভিখারীর বাবা খুব অসুস্থ। তাই তিনি দেখতে এসেছেন খবর পেয়েই। যেটা তাঁর রাজনীতির একমাত্র প্রধান কাজ ছুটে স্পটে পৌঁছে যাওয়া। আমরা তাঁর সব কথা রেকর্ড করলাম।
পুলিশের ভীড় সব সামলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই রাতে হাজির হলেন তেলিনীপাড়ায়। বৃষ্টির মধ্যে কোনো রকমে ক্যামেরার গায়ে কালো কাপড় জড়িয়ে আর মাথায় ছাতা ধরে কাজ হলো আমাদের। রাতের অন্ধকারে কোনো এক চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান রেকর্ড করতে করতে নর্দমায় উল্টে পড়ে গেলো। টলমল করতে করতে বোধহয় গভীর রাতে সে সুস্থ হয়ে আর দাঁড়াতে পারছিল না কিছুতেই। বৃষ্টির রাত বলে কথা। আর সেটা দেখেই কেমন ভয় পেয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। তাড়াতাড়ি বলা শেষ করেই গাড়িতে উঠে পড়লেন তিনি দ্রুত। বেশ মজার ঘটনা এটা। ক্যামেরা নিয়ে নর্দমায় পড়ে যাওয়া আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাইট দেওয়া থামিয়ে দিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়া। সত্যিই তো কত কি যে ঘটে যায়।
আমরা সেই বৃষ্টি মাথায় করে ঘরে ফিরছি রাত প্রায় আড়াইটে বেজে গেছে। আবার ধ্রুবর ফোন দাদা কাজ হলো সাবধানে ফেরো দাদা। আমি তোমার সাথে জেগে আছি দাদা। আমি সেইদিন থেকেই তো ওর ফ্যান হলাম। কলকাতার এক বিখ্যাত মাতব্বর সাংবাদিক এর সাথে যখন কাজ করতে শুরু করলাম চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলে। সেই সময় ধ্রুব সেই চ্যানেলে কর্মরত ডেপুটি এডিটর পদে। দুজনেই পাশাপাশি বসত ওরা দুজন। সেই মাতব্বর সাংবাদিক বার বার বলতো তুই কেমন ধ্রুবর কথা উঠলে তোর চোখগুলো চক চক করে যেনো। যদিও কিছুটা শ্লেষ ছিল সেই মাতব্বর সাংবাদিক এর কথায় সেটাও আমি জানি। 
কিন্তু আমার মনে হয় একজন খবরের মাঠের নেতা তো এইভাবেই বুস্ট আপ করে তার নিজের দলের খেলোয়াড়দের। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে থেকেও সেনাপতি মনে করিয়ে দেয় তার সৈন্যকে আমি তোমার সঙ্গে আছি, পাশেই আছি। তুমি লড়ে যাও, ভয় না পেয়ে। হ্যাঁ সেই বৃষ্টি ভেজা রাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতির কিছু ফসল ঘরে তুলে ফিরে গেছিলেন কলকাতা  হাসি মুখে তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে টালির ঘরে। কিন্তু হায়দরাবাদ আর হুগলীর সেই দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও সেনাপতি আর একজন সাধারণ সৈনিক এক অমলিন সম্পর্কের ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল সেই বৃষ্টি ভেজা রাতে। যে সম্পর্ক আজও অমলিন হয়েই টিকে আছে কোনো দেওয়া নেওয়া না করেই, কোনো হিসেব নিকেশ না করেই আমাদের দুজনের মধ্যে।
 হ্যাঁ ভিখারী অন্তর্ধান এর সেই বৃষ্টি ভেজা রাত এর কথা আমি সারা জীবন মনে রাখবো। আসলে এটা এক ধরনের নেশা, যেমন রাজনীতির লোকদের দৌড় করায়। ঠিক তেমন করেই সাংবাদিকদেরও দৌড় করায়। যে নেশায় বুঁদ হয়ে ছুটে বেড়াই আমরা এদিক থেকে ওদিক। আর এই ভাবেই ভিখারীর ডিভিডেন্ড ধীরে ধীরে পেতে শুরু করলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই এক ভাবেই আকবর আলি খোন্দকার হুগলী জেলায় একটা পরিচিত নাম হয়ে যায়। আর সেই জোরেই তো আকবর আলী খন্দকার চন্ডিতলা বিধানসভায় ভোটে দাঁড়িয়ে সিপিএমের মলিন বাবুকে হারিয়ে দিয়ে বিধানসভায় পৌঁছে গেলেন কেমন সহজেই। সেই বামেদের লাল পার্টির জমানায় এটা বড় কঠিন লড়াই ছিল। কিন্তু সেই কঠিন লড়াইতে জয় পেলো বিরোধী দল। 
এটাই তো সেই ভিখারী কে নিয়ে লেগে থাকার ফল পেলেন বিরোধীরা। আর আজও বিরোধী দলের আন্দোলনের বিরুদ্ধে যে করেই হোক প্রতিরোধ গড়তে চায় সরকার। আর তাই নানা ফন্দি ফিকির করা হয়। সেই আমলে বাম সরকার ভেবেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভকে নেভাতে হবে যে কোনো উপায়ে। তাই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হরমন প্রীত সিং কে বিদেশে ট্রেনিং এ পাঠানোর পরিকল্পনা করে সেই সময়ের বাম সরকার। যদিও সেটা পরে আটকে যায়। বামেরা ভাবে এই ভাবে যে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে একটু দূরে সরিয়ে দিলে হয়ত কিছুটা শান্ত হবে পরিস্থিতি। কিন্তু না পরিস্থিতি শান্ত হয় না কোনো ভাবেই। উল্টে আন্দোলনের জেরে সেটা আরও বাড়তে থাকে ক্রমে ক্রমে।
আসরে নেমে পড়ে এপিডিআর। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি তারাও বেশ চাপ বাড়াতে শুরু করে জুট মিলের নিখোঁজ ঠিকা কর্মী ভিখারির জন্য। মানুষের মধ্য আস্থা ফেরাতে সেই সময় বাম সরকার তিন জন পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে সরকারি স্তরে কিছু পদক্ষেপ নেয়। কারণ অভিযোগ ওঠে এই তিনজন সমর দত্ত, স্বপন নামহাট্টা ও আর একজন নাকি ভিখারী কে তার বাড়ি থেকে তুলে আনে। নিচু তলার পুলিশকে কিছুটা শাস্তি দিয়ে ওপর তলার পুলিশকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগ তোলে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি। তারা একটা ছ পাতার পুস্তিকাও প্রকাশ করে ভিখারী অন্তর্ধান নিয়ে। 
ভিখারী অন্তর্ধান ছাড়াও পুলিশ আরও কোন কোন এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। সিবিআই যে রিপোর্ট উল্লেখ করে ভিখারী অন্তর্ধান নিয়ে সেটা তাদের পুস্তিকায় প্রকাশও করে এপিডিআর। আর তাতেই অনেকটা চাপে পড়ে যায় তৎকালীন রাজ্য সরকার। তাদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম নিজের মতো করে অনুসন্ধান করে গোটা ঘটনা। তারা বলে পুলিশ ইচ্ছা করে নিজেদের দোষ ঢাকতে নানা পদক্ষেপ নেয়। এমনকি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী বিনয় চৌধুরীর কাছে এপিডিআর একটি স্মারকলিপিও পেশ করে। তারা বলেন, পুলিশ যেভাবে হোক এই ঘটনা ধামা চাপা দিতে চাইছে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। বিনয় চৌধুরী বলেন সিবিআই এর রিপোর্ট তিনি হাতে পাননি পেলে নিশ্চয়ই দেখবেন। 
যা যে কোনো বড়ো বড়ো ঘটনায় দেখা যায় সত্যকে চেপে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা। ঠিক তেমনি ভিখারীর ঘটনায় সেটাই দেখা যায়। কিন্তু ভিখারীর কোনো সন্ধান দিতে, হদিস দিতে কার্যত সেদিনও ব্যর্থ হয় সিবিআই। যা বার বার বড়ো বড় তদন্তে দেখা যায় বারবার সিবিআই সমাধান করতে পারে নি। নোবেল চুরি থেকে শুরু করে তাপসী মালিক হত্যা রহস্য নানা ঘটনায় তার প্রমাণ মিলেছে বারবার।
আসলে জানা যায় সেই বিখ্যাত পুলিশ অফিসার হরমন প্রীত সিং বেশ কঠিন ধরনের অফিসার ছিলেন। আর তাই তিনি এমন ভাবেই হয়তো শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন ভিখারীকে। আর তাতেই গোলমাল বেধে যায়। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত অন্য এক অভিজ্ঞ পুলিশের কথায় যিনি আমার খুব পরিচিত অফিসার, একসময় চন্দননগরের এসডিপিও ছিলেন তিনি। তাঁর কথায় ওই পুলিশ অফিসার এর মতে,ওই অফিসার হরমন প্রীত সিং কিন্তু কিন্তু বেশ ভালো অফিসার ছিলেন। 
যা আজও দেখা যায় রাজ্যের নানা ঘটনায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্দেশে আকবর আলি খোন্দকার সেই সময় কলকাতা হাইকোর্টে ভিখারীর মামলার তোড়জোড় শুরু করে সরকারকে চাপে ফেলে দেয়। আর তাতেই খবরের শিরোনামে চলে আসে ভিখারী অন্তর্ধান রহস্য। যে রহস্যের উন্মোচন আজও করা যায়নি। এপিডিআরও একটি মামলা করে তারা নিখোঁজ ভিখারীকে নিয়ে। 
দিন বদলে গেলো। ক্ষমতার পালা বদল হলো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যান রাজ্যের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগে ভিখারীর মা আবেদনও করেন আদালতে যাতে দ্রুত এই মামলার বিচার হয়, নিষ্পত্তি হয়। তাঁর নিখোঁজ ছেলের বিচার পান তিনি। কিন্তু না সেই বিচার আজও নিখোঁজ ভিখারী ওরফে অমৃতলাল এর মা লালতী দেবী পাননি।
যে হৈ চৈ আর হুল্লোড় ঘটে যায় ভিখারী পাসওয়ান ওরফে অমৃতলাল পাসওয়ান এর অন্তর্ধানকে ঘিরে সেই নব্বই এর দশকে। সেই হৈ হুল্লোড় আর উত্তেজনা চারিদিকে অনেকটাই আজ স্তিমিত। এখন তো শুধুই ভিখারীর অন্তর্ধান হলো একটা রাজনীতির বড়ো মাইলস্টোন আর ইতিহাস। যে মাইলস্টোন এর কঠিন ফলক পার করে, ইতিহাসের পাতা উল্টে সেদিনের সেই বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজকে আমাদের সবার মুখ্যমন্ত্রী। 

ভিখারী অন্তর্ধান রহস্য - অভিজিৎ বসু।
শেষ পর্ব
ঊনত্রিশ আগস্ট দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...