সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের সবার ডিডি

সাদা জীবনের কালো কথা যে কেউ পড়ে। কেউ দেখে সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমার এই জীবনের নানা ঘটনা, নানা চরিত্রকে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা একটা বদভ্যাস বলতে পারেন। সেই আগের আমলে জমিদার বা রাজবাড়ীর দেওয়ালে তৈলচিত্র ঝুলিয়ে রাখার মত। যদি কেউ মনে করে দেখতে পারে এক ঝলক সেই চিত্র। এই আর কি, এর বেশি কিছুই নয়। 

আমার এই এলোমেলো আর এলেবেলে জীবনে এই সব অক্ষরের আঁকিবুঁকি যে একদম ফালতু যার কোনো দাম নেই হয়তো। তবে সেই লেখার জন্য রাত দুপুরে কোনো ফরমায়েশ পেলে বেশ ভালই লাগে আর কি। সেই লেখার জন্য রাত দুপুরে জেগে কেউ যদি হোয়াটসঅ্যাপ কল করে বলেন আমি চাই এমন লেখা আমায় নিয়েও হোক সেটা ভালো আর খারাপ দুই। তখন মনে হয় আমার যে তাহলে সাদা জীবনের কালো কথার এই আঁকিবুঁকি তো সত্যিই বেশ মজার। 

ফেলে আসা অতীত দিনের নানা সুখ আর দুঃখের স্মৃতি জড়িয়ে থাকাকে কি আর এই পোড়া জীবনে ভোলা যায় কি বলুন আপনারা। যতই বলি যে স্মৃতি মেদুরতা একটি বিশেষ রোগ আমাদের সবারই। পঞ্চাশ পার করলেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত আমাদের সবার মধ্যে। কিন্তু উপায় কি বাঁচার যে কোনো উপায় নেই আমারও। তাই রাত দুপুরে কলকাতার এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকার এক সাংবাদিকের ফোন পেয়ে একটু অবাক হলাম আমি। যার ফোন বহুদিন পরে পেলাম। ভালো লাগলো আমার নিজেরও। চেনা মুখ এর মানুষদের ফোন পেলে কার না ভালো লাগে। আর সে যদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য আর কাছের মানুষ হন। তাহলে তো কথাই নেই। 
মমতা ঘনিষ্ঠ এক বিখ্যাত দাদা সাংবাদিকের আবদার তার ছোটো ভাইয়ের কাছে। যেনো একটু সেই ফেলে আসা সাংবাদিক জীবনের নানা কথা লিখি আমি। যেগুলো বেশ সুখপাঠ্য হচ্ছে বলে কদিন আগেই লিখে জানিয়েছিলেন আমায় তিনি। জানি এসব শুনে আমার মেয়ে আমায় বলে কি হবে এসব লিখে টাকা তো রোজগার করতে পারো না তুমি কিছুই। হ্যাঁ, একদম সোজা সুজি বুকের মাঝে ছুরি মারে ও আমায়। আমি রক্তাক্ত হই, রাতের অন্ধকারে। কিন্তু কোনো উত্তর আসেনা আমার মুখে। সত্যিই তো জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আমায় কুড়ে কুড়ে খায় আমি কর্মহীন, অর্থহীন একজন মানুষ। 
তবু এর মাঝেও যদি কেউ বলে আমি যেনো সেই পুরোনো দিনের কথা লিখি যা তার জীবনের ফেলে আসা অতীত দিনের স্মৃতিকে একটু উসকে দেয়। কিছুটা সুখ আর দুঃখের অনুভূতির জারক রসে জারিত করে তাকে। তাই মেয়ের কথাকে একটু দূরে সরিয়ে রেখে পেটে গামছা বেঁধে আমি লিখতে বসি এই রাত দুপুরে। যে লেখা আমার ভালবাসার জড়োয়া গায়ে জড়িয়ে শীতের রাতে বেঁচে থাকে একা একাই।

 যে লেখা আমাদের ফেলে আসা সাংবাদিক জীবনের নানা অকথিত কথাকে মনে করিয়ে দেয় বারবার। যে লেখা আমার হারিয়ে যাওয়া জীবনের সুখ দুঃখের স্মৃতি জড়ানো একটা ফেলে আসা জীবনকে মনে করিয়ে দেয়। যে জীবনে একসময় কত কিছুই না ছিল।আজ সেসব শুধুই ওই পথের বাঁকে হারিয়ে গেছে কবেই। যাক এত বড় ভূমিকা না লিখলেও হতো বোধহয়। কিছুটা আবেগ বসত এত গুলো কথা লিখে ফেললাম আমি আজ। আমায় ক্ষমা করবেন আপনারা এর জন্য। 

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধু এক বিখ্যাত সাংবাদিক দাদার কথা বলব আপনাদের। যে বেপরোয়া সাংবাদিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব ঘনিষ্ঠ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে ওঠা বসা করা সাংবাদিকদের কোর টিমের সদস্য সে। একদম ডন স্টাইলের সাংবাদিক সে। তিনি হলেন আমাদের সবার খুব কাছের মানুষ সেই বর্তমান পত্রিকার চিফ রিপোর্টার সাংবাদিক দেবাঞ্জন দাস। অনেকেই যাকে ডি ডি বলে ডাকতো সেই সময়। যাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়। 

আসলে জেলায় জেলায় তখন ভগবানকে ভয় না পাওয়া সেই বিখ্যাত কাগজের প্রনম্য সাংবাদিক বরুন সেনগুপ্তর আমলে নানা সাংবাদিক বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে কাজ করছেন। হুগলী জেলায় বহু সাংবাদিক কাজ করেছেন বর্তমান পত্রিকার হয়ে। যাদের আমি দুর থেকে বিস্ফারিত নয়নে দেখতাম তাদের কেমন অবাক হয়ে। কিন্তু কাছে যেতে, ছুঁতে ভয় পেতাম আমি তাদের। যেমন হুগলী জেলায় কাজ করেছেন সেই বিখ্যাত সাংবাদিক পুলকেশ ঘোষ, সেই সমৃদ্ধ দত্ত, সেই তন্ময়। সেই দেবদাস দা অনেকেই। ছিলেন দেবাঞ্জন দাস।
 সেই চুঁচুড়া স্টেশন এর কাছের বাড়ী বিবি বীথির ঠিকানা হলো বর্তমানের জেলা রিপোর্টার এর ঠিকানা বা বাসস্থান। এদের মধ্যে দেবাঞ্জন দাস ছিলেন সবার থেকে একটু আলাদা ঘরানার মানুষ। অন্য ঘরানার, অন্য ধরনের সাংবাদিক। যেনো সেই ভোরের রাগ ভৈরব আর সন্ধ্যার রাগ ইমন এর মিশ্রণে তৈরি এক আদর্শ সাংবাদিক আর কি। যে হৈ হুল্লোড় করে নিজের জীবনের নানা ক্ষতকে ঢেকে রাখতে পারে অনায়াসেই হাসি মুখে কালো চশমা পরে। যে জানে জীবনের এই সব দুঃখের মাঝেও যে হৈ হুল্লোড় করে কাজে ডুবে থাকার মজাই আলাদা।

 আসলে এক গম্ভীর ঘেরা টোপে মুড়ে রাখা সাংবাদিক নয় সে কোনোদিন। কেমন বাঁধন ছাড়া একটা জীবন নিয়ে কলম ধরে কাটিয়ে দেওয়া এক হুল্লোড়বাজ সাংবাদিক হয়ে। যাকে সিপিএম, তৃণমূল, পুলিশ, নেতা, মন্ত্রী থেকে শুরু করে জেলার সব সাংবাদিক সবাই বেশ পছন্দ করে। আর জেলার যারা ছোটো খাটো অনামী সাংবাদিক হিসেবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তারাও কেমন করে যে এই মানুষটার ফ্যান হয়ে যায় কে জানে। আসলে সবটাই যে তার নিজের কেরামতি। কারণ খবর দেওয়া নেওয়া করতে দেবাঞ্জনদার জুড়ি মেলা ভার। কাউকে খবর দিয়ে সাহায্য করতে তার মতো লোক পাওয়া ভার জেলায়। যে খবর নিয়ে এত চাপাচাপি আর দাপাদাপি কেমন সহজে সেই খবর বলে দিয়েছেন তিনি যে কোনো রিপোর্টারকে কোনো বাছবিচার না করেই।
 বিবিবীথির সেই বিখ্যাত বাড়িতে সকাল হলেই চুঁচুড়া শহরের সাংবাদিকদের ভীড় জমে যেত। সেই আজকের যিনি হুগলী জেলার বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিলটন সেন , জী নিউজ তখন আলফা নিউজ এর সেই দামাল দুষ্টু মিষ্টি সাংবাদিক কিট্টূ বা বিশ্বজিৎ সিংহ রায়,তারা নিউজ এর সেই করিৎকর্মা আর প্রতিবাদী সাংবাদিক উপেন, টেলিগ্রাফ পত্রিকায় গম্ভীর মুখের সেই উত্তম, অন্য দিকে আজকাল পত্রিকার বিখ্যাত প্রথিতযশা কবি কাম সাংবাদিক নীলরতন কুন্ডু দা, ফাল্গুনী বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আরও অনেকেই ছিলেন হুগলী জেলায়। আর সবার ওপর ছিলেন আমাদের বড়ো রিপোর্টার আনন্দবাজারের গৌতম বন্দোপাধ্যায়।
এমন অনেক জুনিয়র সাংবাদিকের মাথায় বড়ো দাদা হয়ে ছাতা ধরে তাদের সবাইকে কাছে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো রেড করা খবরের জন্য। কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবরের ক্লু দিয়ে দেওয়া এটাই যে তার প্রধান ইউএসপি ছিল অন্ততঃ আমার সেটাই মনে হয় অন্যরা কে কি বলবেন আমি জানি না। যা কোনোদিন ভাঙতে পারেনি অন্য কেউ। জেলার বিখ্যাত সব সাংবাদিকদের আলাদা একটা এলিট শ্রেণীর দল থাকলেও কেমন করে যে সেই দল ভেঙে বারবার দেবাঞ্জন দাস বেরিয়ে এসেছেন খোলা মাঠে কে জানে। কত যে এর জন্য সেই বিখ্যাত সাংবাদিক ফাল্গুনী বন্দ্যোপাধ্যায় ওকে গাল দিয়েছে তারও কোনো হিসেব নেই যে। 

আমি তখন সবে  ইটিভির চাকরি পেয়েছি আর কি। কি খবর হবে জেলায় সেটা জানতে ফোন করতাম আমি সবাইকে। এস পি আর ডি এমের অফিস চুঁচুড়াতে থাকার জন্য চুঁচুড়াতে আসতাম সপ্তাহে তিন দিন। আর চুঁচুড়া আসা মানেই তো স্টেশনে নেমে বিবি বিথীর সেই বাড়িতে চলে যাওয়া। আর দেখতাম সেই ছোট্ট ওই পুঁচকে মেয়েটি লাল জলের গামলায় বসে জল থাবড়াচ্ছে একমনে। বাড়ির সামনে সব মোটর সাইকেল নিয়ে হাজির কখন দাদা বের হবেন। কোন দিকে বের হবেন। এটা ছিল।খুব পরিচিত দৃশ্য। 
 আমার চ্যানেল তখন বাজারে নেই। ড্রাই রান চলছে। দু হাজার সালের জানুয়ারি মাস। চারিদিকে ঘুরে ঘুরে সেই ইটিভির বিখ্যাত লাল লোগোকে দর্শকদের কাছে পরিচিত করা ছিল জেলা রিপোর্টার এর প্রধান কাজ। মানকুন্ডুর সেই গড়ের ধার এ খবর করতে গেছি আমি, 
দেবাঞ্জন দা আর মিলটন সেন। এক বৃদ্ধা বেড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা প্রশ্ন বাবা এটা কি টিভি গো কোনো দিন তো আগে দেখিনি বাবা তোমাদের। দেবাঞ্জনদার হাসি মুখে উত্তর মাসিমা এটা ইটিভি বাংলা। মানে হলো ইনাডু টিভি। কি কইলা বাবা কোন নাড়ু। সত্যিই তো সেই কোন নাড়ু বলা সেই ইটিভির প্রতিনিধি ছিলাম আমরা। যাকে গ্রামে গঞ্জে শহরে ঘুরে ঘুরে আমরা সেই টিভিকে বাজারে প্রতিষ্ঠা করেছি সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আসলে এটাই তো সেই বোকা বাক্সের যুগের পুরোনো দিনের স্মৃতি কথা। যা আজ সব ইতিহাস। কিছুদিন বাদে হয়তো সেই ইতিহাসও একদিন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে।

সেই টিভি চ্যানেল চালু হলো অফিস থেকে দেওয়া হলো টুটু। ঠিক যেনো সেই ট্রাফিক পুলিশের হাতে থাকা ওয়ারলেস সেট। যা থাকতো কলকাতা সংলগ্ন জেলা রিপোর্টারদের হাতে। অফিস থেকে নাম ধরে ডাকা হতো হাওড়া শাশ্বত কোথায় তুই। অভিজিৎ তোমার কি স্টোরি হলো। সেই টুটুর এক মজার কাহিনী আছে চুঁচুড়া স্টেশন থেকে আমরা শ্রীরামপুর আসবো। দেবাঞ্জন দাও আছেন আমাদের সাথে। দৌড়ে এসে ট্রেনের গার্ড এর কাছে আসতে পেরেছি আমি। বাকিরা এসে পৌঁছয়নি ষ্টেশনে। আমার হাতের সেই কালো টুটু দেখে গার্ড আমাদের সবাইকে ট্রেনে তুলে তারপর ট্রেন ছাড়লেন। হয়তো আমায় দেখে পুলিশের লোক ভেবেছিল গার্ড সেদিন।

সেই টুটুর যুগ তো কবেই শেষ হয়ে গেছে আমাদের সাংবাদিক জীবনে। শেষ হলো পেজার এর যুগ ও। এদের নিয়েই তো আমরা অনেকেই খবর করেছি সেই সময় ইতিহাসে পড়া সেই পুরোনো আদ্দিকালে। আজকের মত হোয়াটসঅ্যাপের যুগ তো আসেনি সেই সময়। এই নতুন আধুনিকযুগ তো এই কিছুদিন হলো এলো। আসলে এই ভাবেই তো ধীরে ধীরে এগিয়েছে বাংলা টিভি মিডিয়া। আজ না হয় সে উন্নত হয়েছে অনেকটাই। কিন্তু উন্নত হলেও সোজা হয়ে দাঁড়াতে কষ্ট হয় তার খুব। নিজের পায়ে সে দাঁড়াতে পারে না কিছুতেই। নিজের শিরদাঁড়ার জোরে সে দাঁড়াতে পারেনা বুক ফুলিয়ে। দুঃখ এটাই আমার। 

যাক গে যার জন্য এই লেখা সেই দেবাঞ্জনদার মেয়ে তখন একটু বড়ো হয়েছে। একটু একটু হাঁটতে পারে। খুব পাকা আর মিষ্টি কথা বলে সে। আমার বিয়ের সময় সেজে গুজে কালো ঘাগড়া পড়ে সে হাজির। একা একা ঘুরতে ঘুরতে সে কোথায় যে ভিড়ের মাঝে লুকিয়ে পড়েছে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। হৈ হৈ ব্যাপার বিয়ে বাড়িতে। মেয়ে কোথায় গেলো। দেখা গেলো ভিড়ের মাঝে সেই ছোট্ট মেয়ে সবাইকে ছেড়ে একা একা খেতে বসে গেছে লুচি। কারণ তার খিদে পেয়েছে যে খুব। 

সত্যিই তো জীবনের এই সব ঘটনা ঘটেছে আমার জীবনে। সেই যে আমার বিয়ে নিয়ে মার প্রবল আপত্তি। শ্রীরামপুর এর অঙ্কিত ভবনে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে সোমার বাড়িতে। মা রাগ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন শ্রীরামপুরের নন্দী মাঠের সেই ইটিভির 
অফিসে। হৈ চৈ করে বিয়ে হচ্ছে আমার।পুরোহিতের মন্ত্রচারন। আর ঠিক সেই সময়ে দেবাঞ্জন দার ফোন করা আমার মাকে সোমার বাড়ী থেকে। মাসিমা আপনার ছেলের বিয়ে হলো এই মাত্র। সেই 26520498 এর ল্যান্ড ফোনের নম্বর থেকে ফোন গেলো 26524090 নম্বরে ইটিভির অফিসে। মা ফোন ধরে সেদিন কোনো কথা বলতে পারেন নি।
যে নম্বরটি এক সময় হুগলী জেলায় খুব জনপ্রিয় ফোন নম্বর ছিল। সেই বিয়ের রাতে আকবর দা দিল্লী থেকে ছুটে এলেন রাতে শ্রীরামপুরে। গৌতম দা ছাড়া হয়তো এই বিয়ের রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হতো না কোনোদিন। এই ভাবেই তো একজন হুগলী জেলার বাসিন্দা না হয়ে এই জেলার ভূমিপুত্র সাংবাদিক না হয়েও কেমন করে যে মিশে গেলেন সবার সাথে কে জানে। আজ আমার মা নেই প্রায় দেড় বছরের বেশি হয়ে গেলো। লিখতে বসে মনে পড়ছে সেই সব সাংবাদিকদের নিয়ে আমাদের রিষড়ার বাড়িতে যাওয়া। সেখানে মার হাতে লুচি আর ধোঁকার ডালনা খাওয়া সাথে বোধ হয় শিমুই এর পায়েস ছিল। সব বিখ্যাত সাংবাদিক আমার মত একজন ছাপোষা মানুষের টালির ঘরে পা দিয়েছেন এটাই অনেক বড় ছিল সেই সময়। সেই দলে দেবাঞ্জন দাও ছিলেন। মাসিমা বলে মাকে প্রণাম করে ফেলেন তিনি।

 এই ভাবেই তো এগিয়েছে আমাদের ইটিভির খবরের নানা রঙের কথা। সেই রাতের বেলায় চাঁপদানিতে রায়ট লেগে যাওয়া। একসাথে টিম হয়ে সেই এলাকায় হাতে হাত মিলিয়ে ঘুরে খবর করা। অন্যকে সাহায্য করা এটাই তো ওর আসল চরিত্র। মানুষ বোধ হয় এই ভাবেই বেঁচে থাকে কাজের মাধ্যমে। নানা ঘটনার মাধ্যমে। সেই যে বার বিজুর বিয়েতে প্রতিদিন পত্রিকার তরুণ মুখোপাধ্যায় দা কোর্ট আর টাই পড়ে বিয়ে বাড়ীতে গেলেন। সেখানে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়লেন একটু। বৌদি রাগারাগি করলেন খুব।  

আর সেই যে সাংবাদিকদের পিকনিকে মজার মজার ঘটনা ঘটে যাওয়া। এসবের মধ্যে তো দেবাঞ্জন দাস বাইরের জেলার লোক হলেও আমাদের ঘরের লোক হয়েই গেছিলেন। কাছের লোক হয়েই গেছিলেন। খুব ভুল না হলে কোনো এক ইনসিডেন্ট কভার করে এসে চুঁচুড়া এসপি অফিসে এসে এসপির ঘর থেকে ফ্যাক্স করে অফিসে রিপোর্ট পাঠিয়ে এসপিকে খুব সম্ভবত এন‌ রমেশ বাবু এসপি ছিলেন হুগলীর। নিঃসঙ্কোচে তাকে বলা সাহেব খিদেতে পেট ফেটে যাচ্ছে যে। আর মনে করে বলা শুনুন, অভিজিৎ বসু কিন্তু নিরামিষ খায় ওর জন্য আলাদা খাবার আনতে  দেবেন। এটাই বোধহয় এত বড় লেখার উৎসাহ দিলো আমায় আজ এত দিন পর। 

শুধু নিজে মই বেয়ে ওপরে উঠে যাওয়া নয়।  অন্য আর পাঁচজনকে নিয়ে হাসি মুখে বেঁচে থাকা। সেই যেবার চমকাইতলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা হবে। গোঘাট এলাকায় সিপিএমের আমলে রাস্তা আটকে দেওয়া হলো। মোটর সাইকেল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চমকাইতলা পৌঁছলেন বৃষ্টি ভেজা দুপুরে। মাঠে অল্প কিছু লোক সেই সভায়। সেই মাঠে হাজির সাংবাদিক দেবাঞ্জন দাস, কাজল দা ফটোগ্রাফার বর্তমান। আমি আর আমার আরামবাগের ক্যামেরাম্যান সেই সুব্রত যশ। আজকাল যারা মুখ্যমন্ত্রী সফরসঙ্গী হন সেই সব কোর টিমের প্রধান মুখের সাংবাদিকদের দেখতে পাইনি আমি সেদিন সেই দুপুরে চমকাইতলায়। 

সেই রাতে মেদিনীপুরের রমাপ্রসাদ তিওয়ারি বাড়িতে গিয়ে মুড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে এই ভাবেই পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলায় ঘুরে বেড়ানো সিপিএমকে মোকাবিলা করার সময় 
দেবাঞ্জন দাস এর পাশে এই আমিও ছিলাম সেদিন। আজ হয়তো সেসব অতীত দিনের সুখ কথা। যা বলে সুখ নিতে গেলে সুখের থেকে দুখই বেশি হয় আমার। তবু তো সেই সব দিনগুলোতে একদম দাদার মতই আগলে রেখেছিল সেই আগুন ঝরা আন্দোলনের দিনে আমায়।

 জানিনা সেই আগুনের আঁচ কতজন পেয়েছেন আজ যারা কাজ করছেন ফিল্ডে। কিন্তু একজন বামপন্থী ঘরের ছেলে হয়েও যে মমতার বিশ্বাস ভাজন আর স্নেহের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে সেটা শুধু মাত্র ওর ওই কাজের জন্য। যে কাজ অনেকেই সেই সব পুরোনো দিনে করতে পারেনি গভীর গোপন ভাবে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন। আর সেখানেই বোধ হয় অন্য অনেকের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে গেছে আমাদের সেই সবার ডিডি। যাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।
 বহুদিন পর তাই সেই আমার চেনা মুখ অচেনা অজানা মানুষ নয়। আমায় পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া নয়। শুধু সেই পুরোনো দিনের সম্পর্কের বন্ধনকে সঙ্গী করেই তো রাতদুপুরে বলেছিলেন যে ভাই এর কাছে দাদার একটা আবদার। ভালো আর খারাপ দুই লেখা হোক। না,এই ক্ষুদ্র জীবনের সমুদ্রের ঢেউয়ে শুধু ভালো টুকুই বেঁচে থাক। সমুদ্রের ফেনায় ভেসে যাক খারাপ দিনের স্মৃতি। শুধু বেঁচে থাক চির চেনা সম্পর্কের বন্ধন। কোনো স্বার্থ আর শর্ত ছাড়া। ভালো থাকবেন আপনি। মাঝে মাঝে রাত দুপুরে এমন করে ফোন করবেন। এই বাতিল হয়ে যাওয়া সাংবাদিককে।

আমাদের সবার ডিডি - অভিজিৎ বসু।
ছাব্বিশ আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...