সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ট্রাম কথা ও আমি

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ‌ অন্য এক সকালের কথা। যে সকালে বহুদিন পর একটি ছোট পত্রিকায় আমার একটি লেখা দেখে মনটা বড়ো ভালো হয়ে গেলো। আমার সাদা কালো অক্ষরে নিজের ছাপা নাম দেখে মনটা ভরে গেলো আজ। সত্যিই বলতে কি এই যতো আমরা বোকা বাক্সের পর্দায় বুঁদ হয়ে ডুবে থাকি সাংবাদিকতার নেশায় দৌড়ে বেড়াই এদিক থেকে ওদিক। সেই কাগজে নিজের লেখা নিজের ছাপার অক্ষরে নাম দেখে আজও যে অনুভূতি হয় সেটা বোধ হয় একটু ভিন্ন স্বাদের আর ভিন্ন ধরনের। সেই যেনো আধুনিক বিয়ে বাড়িতে চিকেন, বিরিয়ানী খাবার সাথে পুরোনো সাবেকি বিয়েবাড়িতে কলাপাতায় লুচি, ছোলার ডাল আর আবার বেগুন ভাজা খাবার কথা মনে পড়ে যায়। 

যাকগে সকাল বেলায় কলকাতার নবান্নের একজন সাংবাদিক যে আমায় ভুলে যায়নি এখনো সেই মোবাইল ফোনে লেখাটি পাঠিয়ে বললো চার এর পাতায় বেরিয়েছে তোমার লেখা। সত্যিই বিশ্বাস করুন আপনারা এই এতদিন পর বাতিল হয়ে যাওয়া একজন বাতিলের দলে প্রবেশ করা একজন খবর ভালোবাসা মানুষ যেনো কেমন করে আনমনা হয়ে গেল। হাজার কথার ভীড়, হাজার ঘটনার ঘনঘটা, হাজার ওয়াটের বাল্ব এর আলোর মতো আমার স্মৃতির সরণীতে ভীড় করে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল অনেকেই।

 মনে হলো এমন এক দিনের কথা সেই পনের নম্বর লোয়ার রেঞ্জের অফিস। সেই সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে সেই টেবিল এ পৌঁছে যাওয়া। সেই সুন্দর দেখতে মহিলা সাংবাদিক দেবরানী কর এর কাছে। সেই জেলায় ঘুরে ঘুরে ছোটো সাদা কালো ক্যামেরা নিয়ে মেলার ইতিহাস এর লেখা তুলে এনে জমা দেওয়া তাঁর কাছে। তারপর মাসের শেষে প্রতি লেখায় ষাট টাকা করে দক্ষিণা দেওয়া। লেখা বের হলো কি না শনিবার সকাল হলেই স্টেশনে এসে কাগজ উল্টে দেখা। বের হলে খুশি মনে কাগজ কিনে ঘরে ফেরা। আর মাকে চিৎকার করে বলা মা লেখা বেরিয়েছে আমার কাগজে আজ। দুপুর বেলায় মা খাবার পরে একমনে সেই লেখা পড়তেন। শীতের দুপুরে উঠোনে বসে রোদ পোহাতে পোহাতে। 

সেই মালদহের গৌড়ের রামকেলির মেলা, সেই হুগলী জেলার মহেশের রথের মেলা, সেই টাটা জামশেদপুরে গনেশ পূজো কভার করতে যাওয়া, সেই নবদ্বীপ এর মেলা কভার করতে যাওয়া, সেই ঘূর্ণির পুতুল এর লেখা এমন করেই ঘুরে ঘুরে বেড়ানো যে আমার নেশা সেই ছোটকাল থেকেই। কত বিখ্যাত সাংবাদিক যে সেই সময় ওভারল্যান্ড এর কাগজে কাজ করতেন। কাজীদা, অতীন দা, পুলকেশ দা, দেবাঞ্জন দা, হীরক দা, বিমল দা, হিমাংশু দা আরও কত সব নাম মনে আসছে না আর। আসলে বোধ হয় স্মৃতির পাতায় জং ধরতে শুরু করেছে যে আমার ইতিমধ্যেই। 

সেই ওভারল্যান্ড এর অফিস থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা ধরে সেই জোড়া গির্জার অফিস চলে আসতাম সন্ধ্যার সময়। কাঁচের ওপারে নানা বিখ্যাত সাংবাদিকের ঘোরা ফেরা দেখতাম জুলজুল করে। কাঁচের এপারে বসে স্লিপ দিয়ে অপেক্ষা করা রূপ কুমার বসুর জন্য। যিনি বিজ্ঞানের পাতার মূল কারিগর ছিলেন। সেই এসির ঠান্ডায় জমে কাবু হয়ে যাওয়া হাতে কলম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে এসে বলতেন কি রে লেখা এনেছিস। বিজ্ঞানের পাতায় লেখা লিখে পঞ্চাশ টাকা আয়। সারা মাসে এদিক ওদিক করে দুশো বা দেড়শো টাকা উপায়। সাথে মঙ্গলবারের পাতায় নিজের ছোট্ট কালির অক্ষরে নিজের নাম ছাপা দেখতে পাওয়া। যার গন্ধ যার স্বাদ যার বর্ণ আজও অমলিন হয়ে লেগে আছে আমার এই জীবনে। 

এরপর আবার হাঁটা শুরু ধীর পায়ে কোমর এর জোরে আর মনের জোর হাঁটতে হাঁটতে সেই রাজা রামমোহন রায় সরণীর আজকালের অফিসে পৌঁছে যাওয়া পেটের খিদে চেপে। আবার স্লিপ দিয়ে অপেক্ষা করা। আচমকা ডাক পাওয়া মৃদুল দাশগুপ্তর টেবিল থেকে। হাতে সিগারেট নিয়ে খুব ব্যস্ত সাব এডিটর তিনি। নিউজ রুম এর হৈ হুল্লোড় হট্টগোল। তার মাঝে আজকালের আয়নার জন্য লেখা দেওয়া। দক্ষিণা সেই আমলে ত্রিশ টাকা প্রতি লেখার জন্য। দূরে নিউজ এডিটর এর টেবিল এ অসীম মৈত্র বসে থাকা গম্ভীর মুখে পরে ওনার সাথে আলাপ হয় একদিন। সেই চিফ রিপোর্টার হয়ে খুব ব্যস্ত পিনাকী দা। লেখা জমা করে সেই গরম এসির হাওয়া খেতে খেতে বাইরে বেরিয়ে আসা। কোনো দিন  সার্কুলেশন এর স্বপন বক্সির সাথে দেখা হয়ে যাওয়া। হাসি মুখে বলা লিখে যা কিছু একটা সুযোগ পাবি নিশ্চয়ই তুই। স্বপনদার উল্টোডাঙ্গার বাড়িতেও গেছি আমি দুর্গা পূজার সময়।

 এমন কত যে স্মৃতি ভীড় করে এলো আজকের সকালে কে জানে। শুধু একটা লেখা একটা ছোট ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখে মনটা বড়ো অতীত কে দেখতে ইচ্ছা করলো আজ। কোনোদিন লেখা না বের হলেও সেই  ছয় নম্বর প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট এর ঠাণ্ডা রিসেপশন। স্লিপ দিয়ে হা করে অপেক্ষা করা। একসময় নাম ডাকা অভিজিৎ বসু। লিফট এ চড়ে ওপরে উঠে যাওয়া। সেই দেশ পত্রিকার ঘর পেরিয়ে সেই স্বর্গ রাজ্যর বাসিন্দাদের ডিঙ্গিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রমাপদ চৌধুরী, জয় গোস্বামী কে কাঁচের দরজার ভেতর বসে থাকতে দেখে পৌঁছে যেতাম সেই বিখ্যাত শিবদাস বন্দোপাধ্যায় এর টেবিল এর সামনে। সেই ঘর ভর্তি সব নক্ষত্র লোকের বিখ্যাত সাংবাদিক দের দুর থেকে দেখে মুগ্ধ হতাম আমি। সেই বাংলা সংবাদ জগতের দিকপালদের দেখে কেমন যেনো চলার শক্তি হারিয়ে ফেলতাম আমি ওই ঠাণ্ডা ঘরে বসে। ঠাণ্ডা না হয়ে কেমন কুলকুল করে ঘেমে যেতাম যেনো। তারপর স্লিপ সই করে দিয়ে শিবদাস বন্দোপাধ্যায় বলতেন আমায় বেরোতে হবে রাইটার্স, আমি উঠি ভাই। হ্যাঁ হ্যাঁ বলে সই করা স্লিপ নিয়ে সুন্দর স্বর্গ রাজ্য পেরিয়ে নেমে পড়তাম ঝপ করে খানাখন্দ ভরা কঠিন রাস্তায়।

 এর বহু বছর পর একবার ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ঠাণ্ডা রিসেপশন এ বহুক্ষণ অপেক্ষা করা। তারপর শরীর অসুস্থ থাকায় জ্বর নিয়ে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আমায় দেখে পছন্দ না হওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ঘনিষ্ঠ বাংলার বিখ্যাত এক সাংবাদিক এর। যাঁর সাথে কতদিন একসাথে ঘুরেছি আমি আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর সেই বিখ্যাত সাংবাদিক। যিনি এখন কাগজ ছেড়ে পোর্টাল এর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বুক ফুলিয়ে। না, আর কোনো দিন ওই সাদা বাড়িতে যাবার সৌভাগ্য হয়নি আমার। সেই নোনাপুকুর এর কাছে বন্ধ যুগান্তরের অফিসে যাওয়া সন্ধ্যা বেলায়। সেই বঙ্গলোক কাগজে চাকরির আশায় ঘুরে বেড়ানো শিয়ালদহ স্টেশন এর কাছে অফিস। সেই ভারত কথার অফিসে সন্দীপনদার কাজ করা পরে সেই কাগজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। সেই অনেক দূরে রাজপথের অফিসে গিয়ে লেখা জমা দেওয়া। সেই পার্ক স্ট্রিটের অক্ষর ভারত কাগজে পাঁচশো টাকায় কাজ করা। সেই পট পরিবর্তনে সাড়ে সাতশ টাকায় কলকাতার রাজপথে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা। বহু পড়ে ইটিভির চাকরি ছেড়ে কৃষ্ণ কুমার দাস এর সহযোগিতায় আর কিংশুক প্রামাণিক এর সাহায্যে হুগলী জেলায় প্রতিদিন কাগনেরু জেলার সাংবাদিক হয়ে যাওয়া।

 এমন হাজার স্মৃতির উত্তাপ জড়িয়ে আছে এই সাদা কালো ছাপার অক্ষরের ‌মাঝে। যে নেশা ছেড়ে দেওয়া খুব কঠিন কাজ। আজ এত দিন পর জ্যোতির্ময় দত্তের সৌজন্যে একটা ট্রাম নিয়ে লেখা  আমার স্মৃতিকে উস্কে দিল আবার। মনে হলো বাতিল হলেও সেই কলকাতা শহরে বাতিল হয়ে যাওয়া ট্রাম লাইনের ওপর দিয়ে আবার আমার লেখারহারিয়ে যাওয়া জীবন ফিরে এলো। লেখার উত্তাপ গায়ে মেখে কেমন নেশায় বুঁদ হয়ে গেলাম আমি বহুদিন পর। দেখলাম মোবাইল এ ভেসে এসেছে পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ, খুব ভালো লেখা শেয়ার করলাম আমি। 

মনটা আরো ভালো হয়ে গেলো। বাতিল মানুষের লেখা পড়ে সেই লেখা মন্ত্রী নিজে শেয়ার করে বললেন তুমি আরও লেখো অভিজিৎ। বিশ্বাস করুন হয়তো আবেগ প্রবন হয়ে পড়েছি আমি আজ। যেটা সাংবাদিক এর থাকা উচিত নয় তবু রক্ত মাংসের মানুষ তো আমি। তাই এই ট্রাম এর লাইন ধরে স্মৃতির সরণী বেয়ে বহুদিন পর আবার আমি বেঁচে থাকার চেষ্টা করলাম। শুধু এই ট্রাম কথা লিখে। 

ট্রাম কথা ও আমি - অভিজিৎ বসু।
তিরিশে সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...