বোলপুর থেকে বাসে মাত্র আধ ঘণ্টার পথ। গ্রামের নাম বের গ্রাম। সুন্দর ছবির মত গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাই একটু আলাদা। সে কাজের সূত্রে হোক বা এমনই হোক। সকাল বেলায় উঠে ঝাঁকি দর্শনের মত গ্রাম দর্শন যারা করতে পারেন তারা সত্যিই বেশ ভাগ্যবান মানুষ। শহুরে জীবনের হাতছানি এড়িয়ে সবুজ ধান ক্ষেতের ওপারে মেঘের রাজ্যের অজানা ঠিকানা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে যাওয়া। মেঘলা আকাশ জুড়ে নীলের মাঝে সাদা ভেলার মন কেমন করে ভেসে যাওয়া এদিক থেকে ওদিক উদ্দেশ্যহীন ভাবে।
ওই দিগন্ত রেখা জুড়ে একটি দুটি গ্রামের বাড়ি, নিকোনো উঠোন, তুলসী তলায় গত সন্ধ্যার পিদিম এর তেল পড়ে আছে এখনো। নিকানো উঠোন জুড়ে কেমন মন কেমন করা সোঁদা গন্ধ, বড়ো রাস্তা পার করে নীল সাদা মেঘের চাদর গায়ে জড়িয়ে ছায়া মাখা পথ পেরিয়ে সাইকেল নিয়ে স্কুল যাওয়া গ্রামের ছেলে মেয়েদের কেমন হাসি মাখা মুখে। ওদের কেমন এই নিস্তরঙ্গ জীবনে জড়িয়ে আছে তরঙ্গের ঢেউ। যেখানে খুব বেশি জাঁকজমক নেই। খুব বেশি চাকচিক্য নেই। খুব বেশি সুবিধা পাওয়ার আশা নেই। তবু কেমন করে যে আনন্দে ওরা আছে তার সুলুক সন্ধান করতে পারে না আমার এই শহুরে জীবনের হা হুতাশ করা উদাসী বিধুর মন।
তাই সাত সকালে আমি যখন বন্ধ ফ্ল্যাটের সাজানো ঘরে অন্তরীণ হয়ে চুপ করে বসে থাকি গোমড়া মুখে। আকাশ দেখার সুযোগ পাইনি বলে হা হুতাশ করি। তখন এই সুন্দর আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে যে আমায় ছবি পাঠিয়ে বলে দেখো কি সুন্দর জায়গায় আজ কাজে এসেছি আমি। সত্যি তখন যে বড় হিংসা হয় আমার। কাজের জায়গায় গিয়ে এমন গ্রাম দর্শনের সুন্দর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফিরে আসার এই অনাবিল আনন্দ আর সুখের অনুভূতিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার যে কত সুখ সেটা বোধহয় মালুম হয় এই ছবি দেখে।
আপনারা বলবেন কি আদিখ্যেতা বাবা গ্রাম গ্রাম করে। যেনো হেদিয়ে মরলো গ্রামের প্রেমে। কিন্তু বিশ্বাস করুন গ্রামের মেঠো রাস্তা, হলদে সবুজ মাঠের সীমানা ছাড়িয়ে অজানা অচেনা জায়গায় পৌঁছে যাওয়া। রাস্তার পাশে নাম না জানা অচেনা মানুষের সাথে পরিচয়হীন হলেও হাসিমুখে পরিচয় করে দু দণ্ড দাঁড়িয়ে থাকা। গল্প করার অছিলায় জেনে নেওয়া তার মনের নানা কথা। যে কথার ভীড়ে লুকিয়ে পড়া নিজে নিজেই আপন মনে উদাসী বাউলের মত।
বিশ্বাস করুন আপনারা এটা আদিখ্যেতা নয় সেই জীবনকে দেখার নেশা। জীবনকে খুঁজে বেড়ানোর নেশা। যে নেশায় বুঁদ হয়ে যেতে ইচ্ছা করে আমার এই বুড়ো বয়সে এসে। এই জীবন দর্শন এর নেশায় মেতে উঠি আমি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ, প্রতি মুহূর্ত।আমার ইচ্ছা করে একা একাই মেঘের সীমানা পেরিয়ে, সবুজ মাঠ, ঘাট, প্রান্তর পেরিয়ে ঘুরে বেড়াই। যে পথের শেষ নেই। বন্ধ ফ্ল্যাটের দরজা ঠেলে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছা হয় আমার।
বের গ্রাম দর্শন - অভিজিৎ বসু।
আটাশ সেপ্টেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য দীপান্বিতা বসু।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন