সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইটিভির কোর্ট রিপোর্টার দীপক

সাদা হাফ শার্ট জামা আর সেই ওর কাঁধে একটা ঝোলা ঝুলছে। সাইড ব্যাগ। শান্তিনিকেতনের ঝোলা হবে বোধ হয়। ওর স্থির উজ্জ্বল দুটো চোখ আর গভীর দৃষ্টি। মুখে কাঁচা পাকা দাড়ি। খবরের দুনিয়ায় কাজ করেও একদম কোনো উত্তেজনাহীন একটা ব্যতিক্রমী চরিত্র এই বাংলা মিডিয়াতে। হাজার খবরের চাপেও একটা তাপ উত্তাপহীন একজন সাংবাদিক। যার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার খুব একটা তাড়া নেই যে। আদালত চত্বরে যে কোনো এজলাসে যার অনায়াস স্বচ্ছন্দ গতি। সেই আমার মনে পড়ে আদালতে ওর পকেটের মোবাইল বেজে উঠলে এজলাসে ওর মোবাইল কেড়ে নিল পুলিশ, আর যে হাসতে হাসতে বিচারপতিকে বলতে পারে আমার চাকরি যদি চলে যায় স্যার ,তার দায় থাকবে আপনার কিন্তু। আর এটা শুনে দীপকের পকেট থেকে নিয়ে নেওয়া মোবাইল ফেরত দিয়ে দেয় পুলিশ। এতদিন পরেও এই কথা মনে পড়ে গেলো যে।মহাকরণের সেই প্রেস কর্নার এর এক কোণে বসে যে একমনে জরিপ করে যাচ্ছে সবাইকে কারুর সাথে  বেশি কথা না বলেই। 

হ্যাঁ, এই রাতে আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই বাংলা মিডিয়া থেকে একদম হারিয়ে যাওয়া উধাও হয়ে যাওয়া আজ আমাদের সেই কোর্ট দীপকের কথা। সেই ইটিভির  বিখ্যাত দীপক দাস। সেই বারাসাতের দীপক দাস। রাজ্য প্রথম শব্দ শহীদের নামও যে দীপক। যাকে এই বাংলা টিভি মিডিয়াতে শুধু কোনো ভাবে কোনো বিট না পেয়ে যাকে গ্যারেজ করার জন্য সেই কোর্ট চত্বরে পাঠানো হলো অনেক ভেবে আর চিন্তা করে। যাতে সারাদিন এদিক ওদিক করে কেটে যায় ওর একটা গোটা দিন। আর ওর চাকরিটাও থেকে যায়। আসলে আগেকার দিনের 
বসরা বোধহয় এইভাবেই অফিস এর কর্মীদের সুখ আর দুঃখের কথা ভাবতেন। চাকরি বাঁচিয়ে রেখে দিতেন। এখনকার মতো নয় আর কি।

 অফিসের একটা লোক থাকলো হাইকোর্ট এর চত্বরে পাহাড়া দিতে। আর সুবিধা হলো কিছুটা দীপককে সামলাতে হলো না তাদের। আর দীপকের সুবিধা হলো বেশ ঘুরে বেড়িয়ে হেসে খেলে দিব্যি সারাদিন কাটিয়ে ফিরে আসা গেলো অফিসে ঘেরা টোপে। যেটা সে পছন্দ করত না একদম। বাংলা টিভি চ্যানেলে কোর্ট বিট তখনও এত জনপ্রিয় হয়নি। সেই দীপক সকাল সকাল পার্ক স্ট্রীটের অফিস এসেই ব্যাগ কাঁধে চলে যেতো গঙ্গার ধারের সেই হাইকোর্টের পাড়ায় কোনো ক্যামেরা ছাড়াই। যে হাইকোর্টে তখন সে প্রথম রিপোর্টার হয়ে প্রবেশ করলো এই কোর্ট এলাকায় টিভিতে। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেলো এই হাইকোর্ট পাড়ায়। সেই বিকেল বেলায় ওর হাইকোর্ট এর লম্বা বারান্দায় ধীর পায়ে এই ঘর ওই  ঘর, ঘুরে ঘুরে খবর যোগাড় করতো দীপক। এটাই ছিল ওর সারাদিনের রোজনামচা।


এই কোর্টের গল্প তো অনেক পরের গল্প। দীপকের বিখ্যাত গল্প হলো ইটিভির চেয়ারম্যান রামোজি রাও কলকাতায় এসেছেন মিটিং করতে দু হাজার সাল হবে। সবার সাথে হবে চেয়ারম্যান এর সাক্ষাৎ আর মিটিং। সেই মিটিং নিয়ে বেশ উত্তেজনা আর টেনশন সবার মধ্যে। নতুন ইটিভি বাংলা চ্যানেলের সব কর্তা ব্যক্তিরা উপস্থিত কলকাতায়। সবার মুখে চাপা টেনশন। ঘন ঘন লুকিয়ে সিগারেট খেয়ে টেনশন চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা বসদের। সেই তাজবেঙ্গল এর ঝাঁ চকচকে হোটেলে সুন্দর পিচ্ছিল মেঝেতে আমি, আর আমাদের সব নতুন সাংবাদিকরা ঘুরে বেড়াচ্ছি আর অবাক চোখে দেখছি  আমি সেই বিখ্যাত তাজ বেঙ্গল হোটেলের রূপ মুগ্ধ হয়ে। কত খাবার,কত সুন্দর সুন্দর ফুল, কি সুন্দর সাজানো আছে সব। ঠিক যেনো স্বর্গের ইন্দ্রপুরী বোধহয় এমন হয় যেভাবে সাজানো গোছানো থাকে। যেখানে এই সব দৃশ্য দেখা যায়। আগে তো কোনোদিন এই জায়গায় আমি আসিনি তাই অবাক চোখে তিনহাজার তিনশো একচল্লিশ টাকা বেতনের সাংবাদিক এর তাজবেঙ্গল দর্শন। 

সাদা জামা, প্যান্ট পরে রামোজি রাও হলঘরে মিটিং রুমে ঢুকলেন একদম ঘড়ির সময় ধরে। আমরা সব উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম চেয়ারম্যান স্যার কে দেখে। আশীষ দা, অম্বরিশ দা, শুভাশীষ দা, সেই এস আর রামানুজন ডিরেক্টর নিউজ টুডের সবাই হাজির। এক এক করে পরিচয় পর্ব হলো সবার সাথে। যে যার কথা বলবে চ্যানেল এর কাজ নিয়ে। দীপক এর পালা এলো, সেই চেয়ারম্যান এর কাছে বলতে উঠে ওর বলে দেওয়া কোনো পরিকল্পনা নেই সেটার জন্য রিপোর্টারদের কাজের অসুবিধা হয় কলকাতায়। এইটুকু দীপকের ইংরিজিতে কথা শুনেই আশীষদার মাথায় তখন বাজ পড়েছে। কালো ফ্রেমের চশমার ফাঁক দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছেন আশিষ দা। কি বলবেন সবার সামনে ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। 

চেয়ারম্যান এক মনে শুনে যাচ্ছেন সব কথা আর দীপক অকুতোভয় হয়ে বলে যাচ্ছে গড় গড় করে। স্যার স্যার করে। কোনো রকম ভয় ভীতি নেই ওর। তারপর ওকে বুঝিয়ে সেই মিটিং রুম থেকে ওকে বের করে এনে সেই তীর্থঙ্কর বসু, এখন যে বিখ্যাত মিডিয়া ম্যানেজার বাংলার একনম্বর চ্যানেলের, যে নিজের কেরামতিতে অনেক ওপরে উঠে গেছে আজ। আর আমি দুজন মিলে ওকে আলিপুর থেকে একটা হলুদ ট্যাক্সি করে একপ্রকার জোর করে নিয়ে এলাম তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ারের সেই ইটিভির পুরোনো অফিসে। তখনও গাড়িতে বসেও দীপক বলে যাচ্ছে আরও একটু বলার ছিল তার চেয়ারম্যান স্যারকে। কিন্তু কিছুই যে বলা হলো না তার। আমি বললাম অনেক বলেছিস তুই আর দরকার নেই ভাই। কিন্তু দীপক নাছোড়বান্দা আর একটু বলতে পারলে ভালো হতো বুঝলি। এই বলে আমার দিকে তাকালো দীপক। খুব সম্ভবত সেই ট্যাক্সি তে তরুণকান্তি দাস ও ছিলেন। যিনি বর্তমান থেকে জেলার বস হয়ে এসেছিলেন ই টিভিতে। যে আমার ইটিভির কাজ পেতে সাহায্য করেন সব থেকে বেশি। 

আমাদের সেই ইটিভির প্রথম দিকে ও বোধহয় জেলা ডেস্ক এর কিছু কাজ করত দীপক। সেই রাতের আমার বাংলা বুলেটিন এর পরে ফেলে দেওয়া খবর নিয়ে সকাল সাতটার খবর তৈরি করে ঘরে ফিরত দীপক। পড়ে দীপক ধীরে ধীরে আদালত এর দিকে পা বাড়ায়। তাকে ওই জায়গায় কাজ দিয়ে অফিসও কিছুটা চাপ মুক্ত হয়, কারণ দীপককে অফিসে রেখে চাপে পড়তে চায়না অফিসের বসরা। যাই হোক কিন্তু এই বাংলা টিভি মিডিয়াতে হাইকোর্ট বিট এর প্রথম যে রিপোর্টার কাজ শুরু করেছে তার নাম হলো দীপক দাস। যে সারাদিন ঘুরে ঘুরে নানা মামলার খবর জোগাড় করে এনে সন্ধ্যা বেলায় সেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে অফিস ফিরে আসতো। তারপর সেই কম্পিউটার এ বসে  এক কাপ চা নিয়ে সেই খবর লেখা আর তারপর ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়া সেই বারাসাতে। ওর মা অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন। সারাজীবন মা বাবাকে নিয়ে একাই জীবন কাটিয়ে দিলো দীপক। বোন এর বিয়ে দিল। ভাগ্নীর ডাক্তারি পড়াশোনার দায়িত্ব পালন করলো। এই ভাবেই গোটা জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে।


 ধর্ম আর সেবা নিয়ে আর অন্য চিন্তা করে কাটিয়ে দিলো সাংবাদিক হয়েও অন্য একটা বিশেষ জীবন নিয়ে। বেশ একটা সুন্দর জীবনের দর্শন আঁকড়ে ধরে বেঁচে রইলো দীপক হেসে আর খেলে। যেটা আমরা ভাবতেই পারলাম না কোনোদিন। দু দিন আগে দীপক আমায় একটা নিজের ছবি পাঠাল কেরল এর এক মন্দির থেকে। ওর ছবি দেখে কত কিছুই যে মনে পড়ে গেলো আমার। কেরলের আয়াপ্পা মন্দির সেখানে লক্ষ্মী আরাধনায় একহাজার প্রদীপ জ্বেলে বিশেষ অনুষ্ঠান হয় প্রতি বছর। সেই অনুষ্ঠানে হাজির আমাদের সেই দীপক দাস। একদম বদলে গেছে ওর চেহারা। মুখের চেনা সেই দাড়ি নেই। মাথায় টুপি। বেশ একটা সুন্দর সাধক এর মুখের অবয়বের ছায়া দেখা গেছে যেনো ওর মুখে। সত্যিই কত মানুষ যে কি করে একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দেয় কে জানে। 

সেই মহাকরণের অংশুদা, লাহিড়ী দা, তরুণ দা, শ্যামল দা, দীপক, কুন্ডু দা, রূপম দা, আরও কত যে সব ছিল পুরোনো লোকজন সব নাম মনে পড়ে না আর আজকাল আমার। সেই মির্জা গালিব স্ট্রীট এর সান্ধ্য অফিস। রাত নটার খবরের জন্য রিপোর্টারদের হুড়োহুড়ি ভি স্যাট রুমে। সেই মণীশ কুমার আর বেঁটে অমিতাভর চিরকালীন দ্বন্দ। সেই একাউন্টস এর পিয়ালির বর সন্দীপ, ইন্দ্রনীল আর আশীষ এর সুখের সংসার। কত যে পুরোনো স্মৃতি এই হেমন্তের ভোর বেলায় শিশিরে সিক্ত হয়ে ভেসে ওঠে কে জানে।

 সেই মহাকরণের প্রেস কর্ণারে পূজোর আগে মামার সাথে দীপকের ভাগ্নীর কলকাতা এসে বসে থাকা। সন্ধ্যায় কাজ সেরে ভাগ্নীকে নিয়ে ওর জামা কিনতে যাওয়া পার্কস্ট্রীট। আর রাতে ফেরার সময় বারাসাত স্টেশনে নেমে সমীরন পাল সেই ইটিভির সাংবাদিক এর সাথে সুখদুঃখের গল্প করে ঘরে ফেরা। এইতো দীপকের রোজনামচা। বর্তমানে সমীরন পাল এবিপিতে কর্মরত বড়ো মাপের এখনও ছুটে বেড়ানো দৌড়ে চলা এক বিখ্যাত সাংবাদিক।আমার মত  টোটো চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো জীবন নয় কারুর। 

হয়তো দীপক খুব বড় মাপের সাংবাদিক হতে পারে নি কোনোদিন। কিন্তু আদালত চত্বরে ওর যে এই ঘোরা ফেরা, ওর যে যোগাযোগ সেটা যদি এই ইটিভির অল্প কয়েক ঘণ্টার চ্যানেল না হয়ে চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেল হতো তাহলে বোধহয় দীপক বুঝিয়ে দিত হাইকোর্ট বিটে কাজ করা রিপোর্টার এর দম কত আছে ওর। কিন্তু দীপক সেই দৌড়ে যে সামিল হতে রাজি নয় কিছুতেই। যাই হোক বাংলা মিডিয়াতে সহবত শেখাতে আর অফিস এর বাবুরা এই আদালত কেই বেছে নেয়। তাই দীপককে গঙ্গার হাওয়া খেতে হাইকোর্ট পাঠানো হয়। আর সে তার বিন্দাস এলোমেলো এলেবেলে জীবন নিয়ে হাইকোর্টে বিচারপতিদের সাথে যোগাযোগ আর সুসম্পর্ক রেখে ভালো ভালো খবর করে দিব্যি কাটিয়ে দেয় ওর সাংবাদিক জীবন না দৌড়ে কারুর সাথে না প্রতিযোগিতা করেই। 

আবার সেই বাংলার বিখ্যাত এক সাংবাদিক ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিককে সহবত শেখাতে আর শিক্ষা দিতে হাইকোর্টের আর গঙ্গার হাওয়া খেতে পাঠিয়ে দেয় তার এক নম্বর চ্যানেলের সেই সবার স্বপ্নের সেই বিখ্যাত অফিস এর বাবুরা। সেও দিব্যি গঙ্গার হাওয়া খেয়ে আদালতের খবর করে, বাংলা টিভি চ্যানেলে যে গুরুত্ব পূর্ণ বিট হতে পারে এই আদালত সেটা প্রমাণ করে দিয়ে সে দিল্লী আর মুম্বাই পৌঁছে গেছে আজ । অনেক অনেক ওপরে উঠে গেছে সে এই আদালতের সিঁড়ি বেয়ে গড় গড় করে।

 কিন্তু দীপক সেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে পারেনি বা চায়নি উঠতে নিজেই। ওর যে জীবনের দর্শনটা একটু আলাদা। কিন্তু বাংলা টিভি মিডিয়াতে আদালতকে একটা খবরের জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে কিন্তু এই আমাদের হারিয়ে যাওয়া দীপক দাস। যে সেই রাতে ট্রেন ধরে ঝুলতে বারাসাত ফিরে যেতো হাসি মুখে। আবার পরদিন অফিস চলে আসতো ঘড়ির সময় ধরে। আসলে ওর সেই কেরলের মন্দিরের আর ওর ছবি দেখে এত কিছু মনে পড়ে গেলো আমার। 

যার সাথে আমিও দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি এই সাংবাদিক জীবনে। যে শুধু এটা বুঝেছিল জীবন মানে শুধুই দৌড়ে একে অপরকে টপকে ওপরে উঠে যাওয়া নয়। আর শুধু ছুটে বেড়ানো নয়। জীবন, জীবনের ভাবনা দর্শন উদ্দেশ্য তো আরও অন্য কিছুর জন্য বাঁচা। যে ভাবনার মাঝে চিন্তার মাঝে কামারপুকুরের মঠের সেই সন্ধ্যার আরতি, ঘন্টা ধ্বনি, মন্ত্র পাঠ লুকিয়ে থাকে। সেই ভাবনার মধ্য কেরলের মন্দির এর সেই প্রদীপ প্রজ্বলনের সেই সন্ধ্যার অনুভূতি হাতছানি দেয়। যাকে আঁকড়ে দীপক বেশ দিব্যি সুখেই হাসি মুখে আজ বেঁচে আছে। ওর মতো জীবনের এই দর্শন নিয়ে যদি আমিও বাঁচতে পারতাম। তাহলে কি ভালো যে লাগতো আমার। 

ইটিভির কোর্ট রিপোর্টার দীপক - অভিজিৎ বসু।
বিশে অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...