সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইটিভির কোর্ট রিপোর্টার দীপক

সাদা হাফ শার্ট জামা আর সেই ওর কাঁধে একটা ঝোলা ঝুলছে। সাইড ব্যাগ। শান্তিনিকেতনের ঝোলা হবে বোধ হয়। ওর স্থির উজ্জ্বল দুটো চোখ আর গভীর দৃষ্টি। মুখে কাঁচা পাকা দাড়ি। খবরের দুনিয়ায় কাজ করেও একদম কোনো উত্তেজনাহীন একটা ব্যতিক্রমী চরিত্র এই বাংলা মিডিয়াতে। হাজার খবরের চাপেও একটা তাপ উত্তাপহীন একজন সাংবাদিক। যার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার খুব একটা তাড়া নেই যে। আদালত চত্বরে যে কোনো এজলাসে যার অনায়াস স্বচ্ছন্দ গতি। সেই আমার মনে পড়ে আদালতে ওর পকেটের মোবাইল বেজে উঠলে এজলাসে ওর মোবাইল কেড়ে নিল পুলিশ, আর যে হাসতে হাসতে বিচারপতিকে বলতে পারে আমার চাকরি যদি চলে যায় স্যার ,তার দায় থাকবে আপনার কিন্তু। আর এটা শুনে দীপকের পকেট থেকে নিয়ে নেওয়া মোবাইল ফেরত দিয়ে দেয় পুলিশ। এতদিন পরেও এই কথা মনে পড়ে গেলো যে।মহাকরণের সেই প্রেস কর্নার এর এক কোণে বসে যে একমনে জরিপ করে যাচ্ছে সবাইকে কারুর সাথে  বেশি কথা না বলেই। 

হ্যাঁ, এই রাতে আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই বাংলা মিডিয়া থেকে একদম হারিয়ে যাওয়া উধাও হয়ে যাওয়া আজ আমাদের সেই কোর্ট দীপকের কথা। সেই ইটিভির  বিখ্যাত দীপক দাস। সেই বারাসাতের দীপক দাস। রাজ্য প্রথম শব্দ শহীদের নামও যে দীপক। যাকে এই বাংলা টিভি মিডিয়াতে শুধু কোনো ভাবে কোনো বিট না পেয়ে যাকে গ্যারেজ করার জন্য সেই কোর্ট চত্বরে পাঠানো হলো অনেক ভেবে আর চিন্তা করে। যাতে সারাদিন এদিক ওদিক করে কেটে যায় ওর একটা গোটা দিন। আর ওর চাকরিটাও থেকে যায়। আসলে আগেকার দিনের 
বসরা বোধহয় এইভাবেই অফিস এর কর্মীদের সুখ আর দুঃখের কথা ভাবতেন। চাকরি বাঁচিয়ে রেখে দিতেন। এখনকার মতো নয় আর কি।

 অফিসের একটা লোক থাকলো হাইকোর্ট এর চত্বরে পাহাড়া দিতে। আর সুবিধা হলো কিছুটা দীপককে সামলাতে হলো না তাদের। আর দীপকের সুবিধা হলো বেশ ঘুরে বেড়িয়ে হেসে খেলে দিব্যি সারাদিন কাটিয়ে ফিরে আসা গেলো অফিসে ঘেরা টোপে। যেটা সে পছন্দ করত না একদম। বাংলা টিভি চ্যানেলে কোর্ট বিট তখনও এত জনপ্রিয় হয়নি। সেই দীপক সকাল সকাল পার্ক স্ট্রীটের অফিস এসেই ব্যাগ কাঁধে চলে যেতো গঙ্গার ধারের সেই হাইকোর্টের পাড়ায় কোনো ক্যামেরা ছাড়াই। যে হাইকোর্টে তখন সে প্রথম রিপোর্টার হয়ে প্রবেশ করলো এই কোর্ট এলাকায় টিভিতে। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেলো এই হাইকোর্ট পাড়ায়। সেই বিকেল বেলায় ওর হাইকোর্ট এর লম্বা বারান্দায় ধীর পায়ে এই ঘর ওই  ঘর, ঘুরে ঘুরে খবর যোগাড় করতো দীপক। এটাই ছিল ওর সারাদিনের রোজনামচা।


এই কোর্টের গল্প তো অনেক পরের গল্প। দীপকের বিখ্যাত গল্প হলো ইটিভির চেয়ারম্যান রামোজি রাও কলকাতায় এসেছেন মিটিং করতে দু হাজার সাল হবে। সবার সাথে হবে চেয়ারম্যান এর সাক্ষাৎ আর মিটিং। সেই মিটিং নিয়ে বেশ উত্তেজনা আর টেনশন সবার মধ্যে। নতুন ইটিভি বাংলা চ্যানেলের সব কর্তা ব্যক্তিরা উপস্থিত কলকাতায়। সবার মুখে চাপা টেনশন। ঘন ঘন লুকিয়ে সিগারেট খেয়ে টেনশন চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা বসদের। সেই তাজবেঙ্গল এর ঝাঁ চকচকে হোটেলে সুন্দর পিচ্ছিল মেঝেতে আমি, আর আমাদের সব নতুন সাংবাদিকরা ঘুরে বেড়াচ্ছি আর অবাক চোখে দেখছি  আমি সেই বিখ্যাত তাজ বেঙ্গল হোটেলের রূপ মুগ্ধ হয়ে। কত খাবার,কত সুন্দর সুন্দর ফুল, কি সুন্দর সাজানো আছে সব। ঠিক যেনো স্বর্গের ইন্দ্রপুরী বোধহয় এমন হয় যেভাবে সাজানো গোছানো থাকে। যেখানে এই সব দৃশ্য দেখা যায়। আগে তো কোনোদিন এই জায়গায় আমি আসিনি তাই অবাক চোখে তিনহাজার তিনশো একচল্লিশ টাকা বেতনের সাংবাদিক এর তাজবেঙ্গল দর্শন। 

সাদা জামা, প্যান্ট পরে রামোজি রাও হলঘরে মিটিং রুমে ঢুকলেন একদম ঘড়ির সময় ধরে। আমরা সব উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম চেয়ারম্যান স্যার কে দেখে। আশীষ দা, অম্বরিশ দা, শুভাশীষ দা, সেই এস আর রামানুজন ডিরেক্টর নিউজ টুডের সবাই হাজির। এক এক করে পরিচয় পর্ব হলো সবার সাথে। যে যার কথা বলবে চ্যানেল এর কাজ নিয়ে। দীপক এর পালা এলো, সেই চেয়ারম্যান এর কাছে বলতে উঠে ওর বলে দেওয়া কোনো পরিকল্পনা নেই সেটার জন্য রিপোর্টারদের কাজের অসুবিধা হয় কলকাতায়। এইটুকু দীপকের ইংরিজিতে কথা শুনেই আশীষদার মাথায় তখন বাজ পড়েছে। কালো ফ্রেমের চশমার ফাঁক দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছেন আশিষ দা। কি বলবেন সবার সামনে ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। 

চেয়ারম্যান এক মনে শুনে যাচ্ছেন সব কথা আর দীপক অকুতোভয় হয়ে বলে যাচ্ছে গড় গড় করে। স্যার স্যার করে। কোনো রকম ভয় ভীতি নেই ওর। তারপর ওকে বুঝিয়ে সেই মিটিং রুম থেকে ওকে বের করে এনে সেই তীর্থঙ্কর বসু, এখন যে বিখ্যাত মিডিয়া ম্যানেজার বাংলার একনম্বর চ্যানেলের, যে নিজের কেরামতিতে অনেক ওপরে উঠে গেছে আজ। আর আমি দুজন মিলে ওকে আলিপুর থেকে একটা হলুদ ট্যাক্সি করে একপ্রকার জোর করে নিয়ে এলাম তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ারের সেই ইটিভির পুরোনো অফিসে। তখনও গাড়িতে বসেও দীপক বলে যাচ্ছে আরও একটু বলার ছিল তার চেয়ারম্যান স্যারকে। কিন্তু কিছুই যে বলা হলো না তার। আমি বললাম অনেক বলেছিস তুই আর দরকার নেই ভাই। কিন্তু দীপক নাছোড়বান্দা আর একটু বলতে পারলে ভালো হতো বুঝলি। এই বলে আমার দিকে তাকালো দীপক। খুব সম্ভবত সেই ট্যাক্সি তে তরুণকান্তি দাস ও ছিলেন। যিনি বর্তমান থেকে জেলার বস হয়ে এসেছিলেন ই টিভিতে। যে আমার ইটিভির কাজ পেতে সাহায্য করেন সব থেকে বেশি। 

আমাদের সেই ইটিভির প্রথম দিকে ও বোধহয় জেলা ডেস্ক এর কিছু কাজ করত দীপক। সেই রাতের আমার বাংলা বুলেটিন এর পরে ফেলে দেওয়া খবর নিয়ে সকাল সাতটার খবর তৈরি করে ঘরে ফিরত দীপক। পড়ে দীপক ধীরে ধীরে আদালত এর দিকে পা বাড়ায়। তাকে ওই জায়গায় কাজ দিয়ে অফিসও কিছুটা চাপ মুক্ত হয়, কারণ দীপককে অফিসে রেখে চাপে পড়তে চায়না অফিসের বসরা। যাই হোক কিন্তু এই বাংলা টিভি মিডিয়াতে হাইকোর্ট বিট এর প্রথম যে রিপোর্টার কাজ শুরু করেছে তার নাম হলো দীপক দাস। যে সারাদিন ঘুরে ঘুরে নানা মামলার খবর জোগাড় করে এনে সন্ধ্যা বেলায় সেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে অফিস ফিরে আসতো। তারপর সেই কম্পিউটার এ বসে  এক কাপ চা নিয়ে সেই খবর লেখা আর তারপর ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়া সেই বারাসাতে। ওর মা অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন। সারাজীবন মা বাবাকে নিয়ে একাই জীবন কাটিয়ে দিলো দীপক। বোন এর বিয়ে দিল। ভাগ্নীর ডাক্তারি পড়াশোনার দায়িত্ব পালন করলো। এই ভাবেই গোটা জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে।


 ধর্ম আর সেবা নিয়ে আর অন্য চিন্তা করে কাটিয়ে দিলো সাংবাদিক হয়েও অন্য একটা বিশেষ জীবন নিয়ে। বেশ একটা সুন্দর জীবনের দর্শন আঁকড়ে ধরে বেঁচে রইলো দীপক হেসে আর খেলে। যেটা আমরা ভাবতেই পারলাম না কোনোদিন। দু দিন আগে দীপক আমায় একটা নিজের ছবি পাঠাল কেরল এর এক মন্দির থেকে। ওর ছবি দেখে কত কিছুই যে মনে পড়ে গেলো আমার। কেরলের আয়াপ্পা মন্দির সেখানে লক্ষ্মী আরাধনায় একহাজার প্রদীপ জ্বেলে বিশেষ অনুষ্ঠান হয় প্রতি বছর। সেই অনুষ্ঠানে হাজির আমাদের সেই দীপক দাস। একদম বদলে গেছে ওর চেহারা। মুখের চেনা সেই দাড়ি নেই। মাথায় টুপি। বেশ একটা সুন্দর সাধক এর মুখের অবয়বের ছায়া দেখা গেছে যেনো ওর মুখে। সত্যিই কত মানুষ যে কি করে একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দেয় কে জানে। 

সেই মহাকরণের অংশুদা, লাহিড়ী দা, তরুণ দা, শ্যামল দা, দীপক, কুন্ডু দা, রূপম দা, আরও কত যে সব ছিল পুরোনো লোকজন সব নাম মনে পড়ে না আর আজকাল আমার। সেই মির্জা গালিব স্ট্রীট এর সান্ধ্য অফিস। রাত নটার খবরের জন্য রিপোর্টারদের হুড়োহুড়ি ভি স্যাট রুমে। সেই মণীশ কুমার আর বেঁটে অমিতাভর চিরকালীন দ্বন্দ। সেই একাউন্টস এর পিয়ালির বর সন্দীপ, ইন্দ্রনীল আর আশীষ এর সুখের সংসার। কত যে পুরোনো স্মৃতি এই হেমন্তের ভোর বেলায় শিশিরে সিক্ত হয়ে ভেসে ওঠে কে জানে।

 সেই মহাকরণের প্রেস কর্ণারে পূজোর আগে মামার সাথে দীপকের ভাগ্নীর কলকাতা এসে বসে থাকা। সন্ধ্যায় কাজ সেরে ভাগ্নীকে নিয়ে ওর জামা কিনতে যাওয়া পার্কস্ট্রীট। আর রাতে ফেরার সময় বারাসাত স্টেশনে নেমে সমীরন পাল সেই ইটিভির সাংবাদিক এর সাথে সুখদুঃখের গল্প করে ঘরে ফেরা। এইতো দীপকের রোজনামচা। বর্তমানে সমীরন পাল এবিপিতে কর্মরত বড়ো মাপের এখনও ছুটে বেড়ানো দৌড়ে চলা এক বিখ্যাত সাংবাদিক।আমার মত  টোটো চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো জীবন নয় কারুর। 

হয়তো দীপক খুব বড় মাপের সাংবাদিক হতে পারে নি কোনোদিন। কিন্তু আদালত চত্বরে ওর যে এই ঘোরা ফেরা, ওর যে যোগাযোগ সেটা যদি এই ইটিভির অল্প কয়েক ঘণ্টার চ্যানেল না হয়ে চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেল হতো তাহলে বোধহয় দীপক বুঝিয়ে দিত হাইকোর্ট বিটে কাজ করা রিপোর্টার এর দম কত আছে ওর। কিন্তু দীপক সেই দৌড়ে যে সামিল হতে রাজি নয় কিছুতেই। যাই হোক বাংলা মিডিয়াতে সহবত শেখাতে আর অফিস এর বাবুরা এই আদালত কেই বেছে নেয়। তাই দীপককে গঙ্গার হাওয়া খেতে হাইকোর্ট পাঠানো হয়। আর সে তার বিন্দাস এলোমেলো এলেবেলে জীবন নিয়ে হাইকোর্টে বিচারপতিদের সাথে যোগাযোগ আর সুসম্পর্ক রেখে ভালো ভালো খবর করে দিব্যি কাটিয়ে দেয় ওর সাংবাদিক জীবন না দৌড়ে কারুর সাথে না প্রতিযোগিতা করেই। 

আবার সেই বাংলার বিখ্যাত এক সাংবাদিক ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিককে সহবত শেখাতে আর শিক্ষা দিতে হাইকোর্টের আর গঙ্গার হাওয়া খেতে পাঠিয়ে দেয় তার এক নম্বর চ্যানেলের সেই সবার স্বপ্নের সেই বিখ্যাত অফিস এর বাবুরা। সেও দিব্যি গঙ্গার হাওয়া খেয়ে আদালতের খবর করে, বাংলা টিভি চ্যানেলে যে গুরুত্ব পূর্ণ বিট হতে পারে এই আদালত সেটা প্রমাণ করে দিয়ে সে দিল্লী আর মুম্বাই পৌঁছে গেছে আজ । অনেক অনেক ওপরে উঠে গেছে সে এই আদালতের সিঁড়ি বেয়ে গড় গড় করে।

 কিন্তু দীপক সেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে পারেনি বা চায়নি উঠতে নিজেই। ওর যে জীবনের দর্শনটা একটু আলাদা। কিন্তু বাংলা টিভি মিডিয়াতে আদালতকে একটা খবরের জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে কিন্তু এই আমাদের হারিয়ে যাওয়া দীপক দাস। যে সেই রাতে ট্রেন ধরে ঝুলতে বারাসাত ফিরে যেতো হাসি মুখে। আবার পরদিন অফিস চলে আসতো ঘড়ির সময় ধরে। আসলে ওর সেই কেরলের মন্দিরের আর ওর ছবি দেখে এত কিছু মনে পড়ে গেলো আমার। 

যার সাথে আমিও দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি এই সাংবাদিক জীবনে। যে শুধু এটা বুঝেছিল জীবন মানে শুধুই দৌড়ে একে অপরকে টপকে ওপরে উঠে যাওয়া নয়। আর শুধু ছুটে বেড়ানো নয়। জীবন, জীবনের ভাবনা দর্শন উদ্দেশ্য তো আরও অন্য কিছুর জন্য বাঁচা। যে ভাবনার মাঝে চিন্তার মাঝে কামারপুকুরের মঠের সেই সন্ধ্যার আরতি, ঘন্টা ধ্বনি, মন্ত্র পাঠ লুকিয়ে থাকে। সেই ভাবনার মধ্য কেরলের মন্দির এর সেই প্রদীপ প্রজ্বলনের সেই সন্ধ্যার অনুভূতি হাতছানি দেয়। যাকে আঁকড়ে দীপক বেশ দিব্যি সুখেই হাসি মুখে আজ বেঁচে আছে। ওর মতো জীবনের এই দর্শন নিয়ে যদি আমিও বাঁচতে পারতাম। তাহলে কি ভালো যে লাগতো আমার। 

ইটিভির কোর্ট রিপোর্টার দীপক - অভিজিৎ বসু।
বিশে অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...