সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই আমাদের উজ্জ্বল শান্ত মুখের, একদম কম কথা বলা হিরো আর সেই সুপার হিরো সাংবাদিক সৌরভ এর কথা। হ্যাঁ, সেই চুঁচুড়ার সৌরভ হাজরার কথা। হারিয়ে যাওয়া সেই সৌরভ। কোথায় চলে গেলো কে জানে। ও মিডিয়াতে আছে কি না আজ সেটাও জানি না আর আমি। বহুদিন আগে মাঝে রাতে ওর শরীর খারাপ এর সময় সেই ব্যাঙ্গালোরে যাবার সময় বোধহয় কথা হয়েছিল একটু। তারপর অনেক ঝড় বয়ে গেছে ওর জীবনে। ওর স্থির উজ্জ্বল চোখের অন্তর্ভেদী দৃষ্টির সামনে নিজেকে খুব ছোট মনে হয় আমার। যে ঝড় ঝাপটা খবর পেয়েও সেদিন আর কিছুই জিজ্ঞাসা করার সাহস পাইনি আমি। যার জন্য আজও কেমন চুপ করে লুকিয়ে বাঁচতে হয় যে আমায়। আমার এই সাদা জীবনের কালো কথা তো সেই সব অব্যক্ত কথা বলার জন্যই কলম ধরা। সে কলম স্বগতোক্তির কলম। সেই কলম অনুশোচনার কলম। সেই কলম অতীত দিনের ইতিহাসকে খুঁজে পাবার কলম, আর সেই কলম নানা ভালো আর মন্দ মিশেলের কলম।
যাক গে সেই সব কথা বাদ দিয়ে আমাদের সেই হিরো সৌরভ এর কথা বলবো বলেই তো আমি আজ ওর কথা লিখতে বসলাম। আমার ব্লগে এমন বহু লোকের বহু পুরোনো সাংবাদিক এর কথা দেখে কেউ কেউ ভাবেন এমন সব লেখার কি দরকার আছে। আবার কেউ কেউ বলেন, দাদা একে নিয়ে লেখো তুমি বলে উৎসাহ দেয় আমায়। মনে হয় সত্যিই তো জীবনের এই সব নানা অভিজ্ঞতা আর মানুষকে নিয়ে দু চার কথা লিখলে ক্ষতি কি। সেই চুঁচুড়া সদর শহরের বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর ইটিভি ছেড়ে আকাশ বাংলায় যোগদান করা। সেই সৌরভ হাজরার ইটিভিতে কাজের সূত্রে যোগ দেওয়া। বিখ্যাত মিল্টন এর কথা লিখবো একদিন।
সেই ওদের সুন্দর বাড়িতে গিয়ে চা খাওয়া কাজের শেষে। ওর বাবা মার সাথে আলাপ হওয়া। সেই ওর বাড়িতে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে আনন্দ করা সপরিবারে। ওর মিষ্টি সুন্দর বউ এর সাথে আলাপ হওয়া। সেই ওর শালা বিশ্বনাথকে দিয়ে ক্যাসেট পৌঁছে দেওয়া শ্রীরামপুরে অফিসে। এসব যে আজও অমলিন হয়েই টিকে আছে আমার মনের মণিকোঠায়। সেই যে নদী ভাঙনের খবর করতে গিয়ে সোমার সাথে সেই দিল্লির এজেন্সির হয়ে কত দূর মোটর সাইকেল করে দুজনের চলে যাওয়া। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত এর সময় চিন্তা করে যখন ভয় পেয়ে ভাবছি কি হলো। ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে ঠাণ্ডা গলায় সৌরভ জানালো এইতো আমরা পৌঁছে গেছি চুঁচুড়া স্টেশন। নিশ্চিন্ত হলাম সেই রাত দশটার সময়।
হৈ হুল্লোড় না করে একদম কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে কি সুন্দর যে ছবি তুলতো ও সেটা আজও মনে আছে আমার। কোনো দিন বলতে হয়নি এই ছবিটা মিস করলে কি করে। বা এই বাইট এর জায়গা রেকর্ড করলে না তুমি। একদম পরিপাটি সুন্দর গোছানো পরিপূর্ণ একজন চিত্র সাংবাদিক। যাকে নিয়ে কোনো সমস্যা তেমন কিছু ছিল না। সেই চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পূজোর সময় দুজনে ঘুরে ঘুরে ফাঁকা রাস্তায় দু চাকার ওর গাড়ি করে ঘুরে ঠাকুরের ছবি তোলার কথা আজ পূজো এলেই মনে পড়ে যায় আমার।
সেই তপন দাশগুপ্তর প্রতিক্রিয়া নিতে বড়বাজারে তৃণমূল এর অফিসে গিয়ে ভীড় এর মাঝে ঠিক কাজ গুছিয়ে নেওয়া। হাজার ঝামেলার জায়গায় কি করে যে অমন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে মাথা ঠাণ্ডা করে ছবি করতে পারত ও কে জানে। সেই চুঁচুড়া সদর শহরে রাতে গণ্ডগোল। সারারাত জেগে ওর ছবি করে ভোর বেলায় শ্রীরামপুরে ক্যাসেট পৌঁছে দিয়ে আবার স্পটে চলে যাওয়া। সত্যিই ইটিভির এই সব জেলায় জেলায় এমন সব লোকজন ছিল বলেই তো আজ সেই পুরোনো ইটিভির কথা আজও গ্রামে শহরে দর্শক মনে রেখেছে। যার জোরে আমাদের আজও লোকজন ইটিভির অভিজিৎ বসু বলেই মানত্যা দেয়। যার জন্য আজও এই বুড়ো বয়সে এসেও আমার গর্ব হয় যে এমন একটা চ্যানেলে কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম বলে।
ধীরে ধীরে সুখের দিন চলে গেলো। হাত বদলের ঘন্টা বাজলো ইটিভিতে। লোকজন কমতে শুরু হলো জেলায় জেলায়। আরামবাগের সুব্রত যশ, চুঁচুড়া শহরের সৌরভ হাজরার কাজ চলে গেলো। জেলায় একাই রাজত্ব শুরু করলো রানা কর্মকার। মিন্টে আর আমি চাকরি বাঁচাতে কলকাতা চলে গেলাম জেলা ছেড়ে। বহুদিন আর সৌরভের সঙ্গে দেখাই হয়নি। কথাও হয়নি। ওদের সেই চুঁচুড়া শহরের স্টেশনের কাছের অফিস। যে অফিসে সন্ধ্যা বেলায় খবর এর শুটিং হতো। জেলায় কেবল নেটওয়ার্ক চালানো সৌরভ এর সাথে বহু কেবল অপারেটর এর আলাপ ছিল সেই সময়।
হ্যাঁ, মনে পড়ে গেলো দীর্ঘদিন ও অসুস্থ থাকার পর ওর চন্দননগরে সেই পুলিশের ফাংশনে হাজির হওয়া। সেই ধীরে ধীরে হেঁটে মেরি মাঠে হাজির হওয়া ওর বউকে নিয়ে। ওর ফর্সা গালে চাপ সুন্দর দাড়ি দেখে যে কেউ ওর প্রেমে পড়ে যাবে। সেই অজয় কুমার সেই সময় হুগলী জেলায় পুলিশ সুপার ছিলেন। এসব যে আজও মনে পড়ে যায় আমার সৌরভ এর নানা কথা লিখতে গিয়ে। আসলে জীবনের হাজারও এই মানুষের ভিড়ে কিছু মানুষ চুপচাপ জীবন কাটিয়ে দেয়। জীবনের হাজার ঝড় ঝাপটা সামলে নীরবে নিভৃতে সব কিছু সহ্য করে। সৌরভ হাজরা তেমন একজন মানুষ।
যে নিজে মিডিয়াতে কাজ করেও কেমন নির্লিপ্ত হয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছে অনায়াসে। কাউকে নিজের ক্ষমতা আর কর্তৃত্ব দেখায়নি কোথাও কোনোদিন কোনো সময়। যেটা আজকাল বড়ো একটা দেখা যায়না। মিডিয়ার এই আত্মসর্বস্ব আর আত্মগর্বের দুনিয়ায় সদা ব্যাপৃত থাকা মানুষজনের মাঝে সৌরভ হাজরা একটা ব্যতিক্রমী চরিত্র। যাকে আজও আমি মিস করি। তুমি ভালো থেকো সৌরভ। আমায় ভুল বুঝো না তুমি।
চুঁচুড়ার সেই সৌরভ হাজরা - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ অক্টোবর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
সৌরভ আমার অত্যন্ত প্রিয় জন। এবং কাজের প্রতি ওর ভালোবাসা ছিল অপরিসীম।
উত্তরমুছুন