সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কালীঘাটের শক্তিপীঠ

শক্তির আরাধনায় গোটা বাংলা। মা কালীর এই আরাধনা অশুভ শক্তির নাশ করে শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করা দিকে দিকে। যার অলোকজ্বল উৎসব চলছে রাজ্যের সর্বত্রই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাড়ির এই মা কালীর পূজা সমস্ত শক্তির ভরকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। যেখানে হাজির মুখ্যমন্ত্রী নিজেই, হাজির অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবার। হাজির আরও অনেকেই। আর এই পূজোর অনুষ্ঠানে হাজির বেশ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। 


এই ছোটো বাড়ী শক্তিপীঠ না হলেও কালীঘাটের এই বাড়ী কিন্তু যে কোনো শক্তিপীঠ এর থেকেও কম যায় না কিন্তু। সবাইকে টেক্কা দিতে পারে সে হাসি মুখে। রাজ্যের যে কোনো শক্তিপীঠকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম এই টালির বাড়ীর মা কালীর পূজো। দেখতে দেখতে অনেক বছর পার করে এই পূজোর বয়স বাড়ছে দিন দিন। পুলিশ, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তা ব্যক্তিরা, আমলা, মন্ত্রী, নেতা, হাফ নেতা বিখ্যাত সব সাংবাদিক সবাই হাজির হন এই পুজোয় মাকে দর্শন করতে। একবার এই মার দর্শন পেলেই জীবন ধন্য। যাঁরা এই পুজোয় পৌঁছতে পারেন তারা সত্যিই সবাই বেশ ভাগ্যবান। আর যারা পারেন না তাঁরা সব আফশোষ করেন জিভ কাতেন বলেন নিশ্চয়ই সামনের বছর তালিকায় নাম উঠবে তাঁর। 

কে আসবেন, কত জন আসবেন তার নামের তালিকা নিশ্চয়ই অনেক বেছে গুনে করা হয় এই পুজোয়। সেই তালিকায় নাম ওঠা বা নিজের নাম তোলা সত্যিই বেশ কঠিন ব্যাপার আর কি। সেই মাধ্যমিকে কঠিন অঙ্ক পরীক্ষায় পাশ করার মতো বিষয় আর কি। অবাক লাগে কিন্তু বেশ এই ব্যাপার যে সব সাংবাদিকরা এই পুজোয় হাজির হয়ে বেড়ার ওপারে চুপ করে শুধু বসে থাকেন তাদের পয়েন্ট বেড়ে যায় বাজারে সেনসেক্স এর নিফটির মতই দ্রুত গতিতে উত্থানের মতই তাদের উত্থান হয় সব জায়গায় হাটে,বাজারে, কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় তাদের পয়েন্ট বেশ বেড়ে যায় একধাক্কায়।

 আসলে ক্ষমতা সম্পন্ন যে কোনো মানুষের সান্নিধ্যে আসতে পারলে ক্ষমতাবান লোকদের তেমন একটা লাভ হয় না। লাভ হয় যারা কম ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ তাদের। তারা পূজো দেখার পর বাইরে গিয়ে বলতে পারেন তাঁরা দক্ষিণেশ্বর মন্দির, তারাপীঠ মন্দির, নিদেন পক্ষে ঠনঠনিয়া কালীবাড়ী বা লেক কালীবাড়ি বা করুণাময়ী কালী দর্শন করেননি। তাঁরা একেবারে আসল শক্তিপীঠ এর  মা কালী দর্শন করে এসেছেন। যে কালী মাতার দর্শন সবাই  ভাগ্য করে পায়না একদম সামনে থেকে। 

 সোশ্যাল মিডিয়ায় রাত দুপুরে যারা যারা ওখানে গেছিলেন বেশ কিছু সাংবাদিক তাঁদের এই অভিজ্ঞতা ও যাওয়ার কথা জানিয়েছেন দেখলাম প্রায় ভোর রাতে। অনেকে আবার একে অপরকে প্রশংসা করে বলেন খুব ভালো লাগলো এমন একটা পুজোয় আসতে পেরে দেখা হলো অনেকের সঙ্গে। যা নিয়ে মাঝ রাত আর ভোর রাতও সরগরম এই শান্ত ঝিমিয়ে পড়া ফেসবুকও যখন সে সারাদিনের পর একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল সেই সময়েও তাকে উঠে পড়তে হলো আজকে সত্যিই অসাধারণ এই শক্তিপীঠের মাহাত্ম্য কি বলেন।

 জয় মা মঙ্গল করে মা। শক্তি দিও মা তুমি আমায়। দুর থেকে মাকে প্রণাম জানিয়ে বলি, মা তুমি আমাদের দুর থেকেই শক্তি দিও। কেউ ভাববেন না এই শক্তিপীঠ দর্শন করতে না পেরে আফশোষ করে এমন কথা লিখলাম আমি। এই সব জায়গা পারত পক্ষে আমি এভয়েড করি। ক্ষমতার ভরকেন্দ্র, হাজার ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের ঝনঝন শব্দ, তাদের দাপট এসব আমার ঠিক ভালো লাগে না আমি বেমানান হয়ে পড়ি এই সব জায়গায়। 

তার থেকে আমার মা কঙ্কালীতলার শান্ত নির্জন মন্দির, সেই ফাঁকা মন্দিরের চাতাল, সেই গাছতলায় বসে থাকি আমি কেমন আপন মনে এক একা। আর দূরে ঘন্টা বাজে মায়ের মন্দিরে। আমি হাত জোর করে মার কাছে প্রার্থনা করি মা আমার চৈতন্য দাও, বিবেক দাও, জ্ঞান দাও, ভক্তি দাও, নিষ্কাম চিত্তে তোমার পূজো করার ভক্তি দাও। আর সাধারণ মানুষের দুঃখ, কষ্টকে যাতে একটু হলেও দুর করতে পারি তেমন শক্তি দিও মা। এটুকুই তোমার কাছে সন্তান হয়ে চাইলাম মা। আর কিছুই চাইনা আমি তোমার কাছে। 

কালীঘাটের শক্তিপীঠ -, অভিজিৎ বসু।
পয়লা নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুক পেজ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...