সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুঠো ফোনে বন্দী অতীত

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধু একজনের কথাই কখনো এইভাবে আমি লিখবো সেটা আমিও ভাবিনি কোনোদিন আর কোনো সময় মনেও হয়নি আমার। হ্যাঁ, সেই যে কথা আজ সকালে হঠাৎ করেই আমায় লিখতে হলো শুধু একটি মুঠোফোনের এক বিশেষ পরিচিত জনের একটি মোবাইল বার্তা পেয়ে। যে মুঠোফোনের এই বার্তা আমার কাছে এলো প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর পর। সেই কলেজ ছেড়ে চলে আসার পর এমন ভালো কথার, মিষ্টি মধুর গন্ধ মাখা কথার বার্তা কবে যে পৌঁছেছে আমার কাছে সেটাই মনে করতে পারলাম না কিছুতেই আজ। বুড়ো বয়সে স্মৃতি যে খুব একটা আর সহযোগিতা করে না আজকাল আমার সাথে সেটা টের পেলাম বেশ অনেকটাই আজ।


 আমাদের সেই চেনা জলকলের মাঠ, কলেজের সেই সবুজ চেনা মাঠ, সেই সাদা গোল পোস্ট, সেই লাল রঙ্গন ফুলের সুবাস, সেই কলেজের বিশাল বিশাল বড় থামের আড়াল, সেই কাঠের সিঁড়ির খট খট আওয়াজ, ক্যান্টিনের বৃষ্টি ভেজা দিনে গরম ঘুগনি আর সেঁকা পাউরুটির নরম স্বাদ,সেই সন্ধ্যার জুটমিলের রাস্তায় পাখির কিচির মিচির ডাক, আর নদীর ওপর দিয়ে বয়ে চলা নৌকার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, আর লাইব্রেরির সেই আবছা আলো মাখা পুরোনো বই এর গন্ধ, একটা মুঠো ফোনের বার্তা এত কিছুই মনে করিয়ে দিলো আজ আমায় সকাল বেলায়। বহু বছর পর পেলাম কলেজের সেই হাসিখুশি সুন্দরী আমাদের সবার প্রিয় ঝুম এর একটা মেসেজ। আচমকা, অপ্রত্যাশিত ভাবেই এলো সেই বার্তা। যে মেসেজ পেয়ে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো আমার।

আমার এই এলোমেলো আর এলেবেলে জীবনের মাঝে হঠাৎ করেই এই মেসেজ যেনো একটা অন্য অনুভূতি এনে দিলো আজকে সকাল বেলায়। একটা লেখা, একটা ছবির দৌলতে আর একসময়ের বৈদ্যবাটির দাপুটে এক তৃণমূলের প্রাক্তন হাসিখুশি চেয়ারম্যান এর সুবাদে আমি পেলাম সেই ঝুমের মেসেজ। হ্যাঁ, কিছুটা ওর দৌলতেই এটা পেলাম আমি। সেই অজয় প্রতাপ সিং এর সৌজন্যে। বহুদিন পর কথা হলো সেই প্রাক্তন পুরপ্রধানের সঙ্গে আমার। যে প্রতি বছর নিয়ম করে মনে করে জগদ্ধাত্রী পূজোর নবমীর ঠাকুরের ভোগ পাঠিয়ে দেয় আমায় আজও। মিডিয়ার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরেও বলে চলে এসো কিন্তু নবমীর দিন ভোগ খেতে। বিশ্বাস করুন জীবনের ফেলে আসা অতীত দিনের কথা সেই পুরোনো স্মৃতির মরচে পড়া সরু গলিতে হেমন্তের সকালের নরম রোদ পিছলে পড়লো আবার। স্মৃতি মেদুরতায় জড়িয়ে ধরলো আমাকে। কেমন যেনো বিবশ হলাম আমি প্রায় সাড়ে তিন দশক পরেও একটা ছোট্টো মেসেজ পেয়ে। 


যাকগে এত কাব্য না করে সোজা কথায় চলে আসাই ভালো। ঝুম আর রাজা। এই অভিন্ন হৃদয় দুই জুটিকে দেখে আমার সেই হিন্দি সিনেমার এক দুজে কে লিয়ের কথা মনে পড়ে যায়। খুব সম্ভবত জুহি চাওলার সেই মিষ্টি মধুর হাসি, উজ্জ্বল চোখ, সেই কেমন যেন একটা ভালো লাগা লেপ্টে আছে ঝুমের মুখে সব সময়। ওদের দুজনকে একসাথে দেখে বেশ ভালই লাগত আমির কলেজ জীবনে। কিন্তু ওদের সেই ঝাঁ চকচকে জীবন এর মাঝে একটু ছোঁয়া বাঁচিয়ে আমি দূরে দূরেই সরে থাকতাম আমার অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে।

 ওদের কলেজ জীবনের হৈ চৈ হুল্লোড় করা জীবন থেকে একটু কঠিন আর কঠোর সংগ্রামের জীবন ছিল আমার। তাই একটু গুটিয়ে রাখতাম নিজেকে আমি। তবুও কলেজ জীবন থেকেই ওরা সেই ভোটের সময় হলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই সময়ের দাপুটে এস এফ আই পার্টির বিরুদ্ধে লড়াই করা, ভোট এলেই ক্লাসে ঢুকে বোঝানো, সেই রাজনীতির ময়দানে ঘুরতে ঘুরতে ঝুম আজ অনেক বড় রাজনীতির কুশীলব হয়ে গেছে, কাউন্সিলর হয়ে গেছে শ্রীরামপুর পুরসভার। 

সাংবাদিক হয়ে বেশ কয়েকবার শ্রীরামপুরে ওর সাথে আমার দেখা হয়েছে বটে। হাসি বিনিময় হয়েছে দুজনের। দেখা হয়েছে রাজার সাথেও। কিন্তু আজকের মত পুরোনো সম্পর্কের জেরে মন ভালো করা বিজয়ার শুভেচ্ছা বার্তা কিম্বা নতুন বছরের শুভেচ্ছা আসেনি কোনো তরফ থেকেই। আর সেটা আসার কথাও নয় ওর দিক থেকে। কারণ ও এখন সেই ঝম ঝম বৃষ্টির ছোঁয়া ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। তাই যেদিন আমার সেই প্রিয় শ্রীরামপুর কলেজের কোনো এক খবর নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় হলো ভেবেছিলাম জিজ্ঞাসা করব ওকে কি রে কি ঘটনা ঘটেছিল কলেজে। সবাই যে এই ভাবে আঙুল তুলছে তোর দিকে। ভরসা করে এগিয়ে গিয়ে দুরু দুরু বুকে সেটা আর জিজ্ঞাসা করতে পারিনি আমি কিছুতেই আজ পর্যন্ত।

আর তাই সেই চেনা কলেজ জীবনের সবার প্রিয় হাসিখুশি উজ্জ্বল মেয়েটার মেসেজ পেয়ে কিছুটা অবাক হলাম আমি। তাহলে কি সব সম্পর্কই এখন দেওয়া আর নেওয়া। পাওয়া আর না পাওয়ায় আটকে থাকে যুগ যুগ ধরে। আমার বিপদের দিনের একমাত্র বন্ধু হুগলীর বহু পুরোনো দিনের এক তৃণমূলের নেতা বর্তমান পুরপ্রধানের কথা, দাদা সবাই যা পারে আমি তুমি সেটা পারছি না। আর তাই বোধ হয় ঘরে বাইরে সর্বত্রই পিছিয়ে পড়ছি আমরা দ্রুতই। কিন্তু সবাই কি আর সবটা পারে। আমিও ভাবলাম হ্যাঁ ঠিক কথাই বলেছে ওই তৃণমূলের ডাকাবুকো চেয়ারম্যান। একসময়ের এই গোটা হুগলী জেলার সভাপতি। যে আজ কিছুটা হলেও একা হয়ে গেছে। 

কিন্তু এইসবের মাঝে একটাই আক্ষেপ আর দুঃখ সেই কলেজের ঝুম আর রাজার জুটি ভেঙে গেছে হঠাৎ করেই। রাজা আজ আর নেই। নেই সেই কলেজের হাসি মুখের তপতী গাঙ্গুলী। ভদ্রেশ্বর থেকে দৌড়ে দৌড়ে আসতো সে। একটু উচ্চ স্বরে কথা বলত কিন্তু সেই মেয়েটিও হারিয়ে গেলো সেই স্টিফেন হাউসের আগুনের লেলিহান শিখায়। হয়তো আমরা জানি না আরও অনেকেই রাজা, তপতীর মতই হারিয়ে গেছে আমাদের এই জীবন থেকে। শুধু পড়ে আছে কলেজের সেই চেনা রাস্তায় শুকনো পাতার খস খস শব্দ। যে শব্দকে বুকে আগলে নিয়ে আজও বেঁচে আছি আমি। একা, একদম একা। 

মুঠো ফোনে বন্দী অতীত - অভিজিৎ বসু।
আঠাশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...