সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের ছোটো ধ্রুব

এ এক অন্য ধ্রুবর গল্প। এ এক অন্য রকম একটা জীবনের গল্প। যে জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে অনেক হাসি, কান্না,উদ্বেগ, যন্ত্রণা, কষ্ট, হাসপাতালের বেডে শুয়ে দিন যাপনের নানা অভিজ্ঞতা আর দুশ্চিন্তা, নানাবিধ চিন্তা ভাবনা আরও কত কি। কিন্তু ধ্রুবরা বোধহয় এসব কিছুকে পাত্তা দেয়না আর পরোয়া করে না কিছুতেই। ভয় পেয়ে থমকে দাঁড়ায় না কিছুতেই রাস্তার ধারে। ওর সুন্দর শান্ত মুখের সেই ছোটো শুকনো ঠোঁটের হাসি নিয়েই বেঁচে থাকে বিন্দাস হয়ে। 


আসলে এই ডেস্ক এর ধ্রুব, মানে সেই আমাদের প্রস্তর যুগের ইটিভির হায়দরাবাদ ডেস্ক এর ধ্রুব। সেই ছোটো আর বড়ো ধ্রুব। সেই ছোটো ধ্রুবর সাথে বহুদিন পর হায়দরাবাদ এর পাট উঠে যাবার পর আমার দেখা হলো। আমার দেখা হলো পোদ্দার কোর্টের অফিসে চব্বিশ ঘণ্টা চ্যানেলে। ঠিক সেই একদম মার্জিত, রুচিশীল, সুন্দর একটি মানুষ। যে শুধু চুপ করে শব্দের জাল বোনে আপন মনে আর আপন খেয়ালে। আর বাবুই এর মতো বাসা বেঁধে যায় নিজে নিজেই। যার শব্দের জালে আটকা পড়তে বাধ্য হই আমি আপনি সবাই।

 সত্যিই বলতে কি ধ্রুবর গুরু যিনি আমার ও গুরু সেই রতন চক্রবর্তী দার কথায়, ধ্রুবর হাতে কিন্তু জাদু আছে। ধ্রুব তো আমারই চ্যালা বুঝলে অভিজিৎ। আর হ্যাঁ, ধ্রুব কিন্তু রতন দা বলতে একদম অজ্ঞান। কিছু কিছু মানুষ বোধহয় এইভাবেই পাথর ঠুকে ঠুকে মনিমানিক্য খুঁজে বের করেন। যে কাজটা বহুদিন আগেই রতন দা করেছিলেন একদিন। আর সেই কাজের ফল পাচ্ছে আমাদের এই বাংলা টিভি মিডিয়া। না হলে ওকে দেখে আমার মনে হয় ওর স্কুল শিক্ষকতা করাই ওর ঠিক কাজ ছিল এই পুতিগন্ধময় মিডিয়াতে কলম পেশার থেকে। এসব আর বলে কি হবে যা হবার সেতো হয়েই গেছে। 

যাকগে সেই হায়দরাবাদ ডেস্ক থেকে ফোন করলে যাকে চোখে না দেখেও কপি দিয়ে বুঝতাম আজ কিন্তু আমার এই স্টোরি যার হাতে পড়লো একদম পারফেক্ট রূপ পাবে কোনো চিন্তা নেই আর। নিশ্চিন্তে সন্ধ্যা বেলায় খবর দেখতে বসতাম সেদিন। আর সেটাই পরিলক্ষিত হতো সন্ধ্যায় আমার বাংলায়। যে কোনো বাংলা চ্যানেলের জন্য আমাদের ছোটো ধ্রুব কিন্তু সম্পদ। ওর সেই সুন্দর দাড়ি মুখ, উজ্জ্বল চোখ, ওর সুন্দর মিষ্টি হাসি, কোনো রকমে হাতের কাজ সেরে ব্যাগ গুছিয়ে ঘরে ফেরা নয়। একদম পরিপাটি করে সাজানো গোছানো একটা লেখা উপস্থাপনা করে তারপর বাড়ী যাওয়া। সেই ওর কাঁধের সাইড ব্যাগ নিয়ে, একটা চটি পড়ে কেমন অতি সাধারণ একটা পোশাক পরে ঘরে ফিরছে ও ধীর পায়ে, ধীর লয়ে।

খুব বাহুল্য, খুব ঝাঁ চকচকে জীবন ও বিশেষ বোধহয় পছন্দ করেনি কোনোদিনই। তাই হৈ চৈ হুল্লোড় এ কোনোদিন মিশে যায়নি ও। সেই পূজো এলেই ওর ঘাড়ে পূজোর বুলেটিনের দায়িত্ব দিয়ে সবাই বেশ বিন্দাস থাকতো অফিসে। কারণ একটাই ছোটো ধ্রুবকে দায়িত্ব দিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই কারুর। চিন্তা নেই জেলার বস এর। চিন্তা নেই লিড আউটপুট এর। চিন্তা নেই বুলেটিন প্রোডিউসার এর। আর চিন্তা নেই যে রিপোর্টার স্টোরি পাঠিয়েছে তাঁরও। চিন্তা শুধু মাত্র ওর। অভিজিৎ দা এই জেলার ছবিটা কি এসেছে একটু দেখে বলবে। কেমন সুন্দর করে বলতো আমায়। কোনোদিন এমন ভাব দেখায়নি ও যে এরা সব বাথরুম পরিস্কার করা এসাইনমেন্ট এর লোক এদের যেমন খুশি ভাবে বলা যায়। যেটা অন্যরা করতেন সেটা ধ্রুব কিন্তু কোনোদিন করে নি। যেটা ওর সব থেকে বড় গুণ। সবাইকে সৌজন্য আর সম্মান দেখিয়ে অফিসে কাজ করা। 

হ্যাঁ , এই সব নানা বড়ো চেহারার বড়ো মস্তবড় মাতব্বর দের নিয়েই লিখছি আমি খালি আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। কই মিডিয়ার খেতে খাওয়া সাধারণ মানুষদের কথা কোথায় লেখা হচ্ছে না তো। রাতের বেলায় এমন একজন আমায় জানালেন আজ হঠাৎ করেই। কেনো মিডিয়ার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথা, তাদের জীবন সংগ্রামের কথা লিখছি না কেনো আমি। এটা শুনে ভাবলাম সত্যিই তো। ঠিক কথা বলেছেন তিনি এই রাত দুপুরে। যদিও তাঁর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। হয়তো কোনো সময় কাজের ক্ষেত্রে একটু ঠোকাঠুকি হয়েছে। পরক্ষণে কাজ মিটলে সেটাও উধাও হয়ে গেছে। তাই তাঁর কথা মনে হলো একদম ঠিক কথা বলেছেন তিনি। মনে করিয়ে দিলেন তিনি আমায় সেই আমাদের সবার প্রিয় ছোটো ডেস্ক এর ধ্রুবর কথা। হ্যাঁ, মনে পড়ে গেলো সৌম্য দর্শন ধ্রুবর সেই সুন্দর মুখটা। 

আমাদের সেই সদা হাস্যময় ছোটো ধ্রুব কেমন করে চব্বিশ ঘণ্টার চাকরি করতে করতেই হঠাৎ অসুস্থ হলো। তখন আমিও চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলে কাজ করি। বিকল হলো ওর একটি কিডনি। সেই সদা হাস্যময় ছেলেটি কেমন একটু চুপ করে গেলো। ধীরে ধীরে ওর অফিস আসা কমে গেলো। সদ্য সংসার জীবন শুরু করেছে সে। ওর সিউড়ি সদরে বাড়ির কথা ওর মুখে অনেক বার শুনেছি আমি। বলেছিল অভিজিৎ দা একবার এসো কিন্তু। আমি বোলপুরে থাকি শুনে। আমার মেয়ে বিশ্বভারতীতে পড়ে শুনে।

সেই লকডাউন এর সময় ওর চিকিৎসা শুরু হলো। কেমন একটু শুকিয়ে গেল ওর শরীর। ধীরে ধীরে ওকে আর অফিস আসতে হবে না জানিয়ে দেওয়া হলো। ওর অসুস্থ অবস্থার কথা জেনে সেই সময় অনির্বাণ দা খুব সাহায্য করলেন ওকে। তারপর ওর কিডনি বদল হলো। ধ্রুব যুদ্ধে জিতল। জয় করে ফিরল আবার একদিন সেই চেনা অফিসে। সেই ওর মুখের চেনা হাসি নিয়ে। একদিন ধীরে ধীরে অফিস এলো। তারপর ওকে ল্যাপটপ দেওয়া হলো অফিস থেকে। বাড়ী বসেই অল্প করে কপি করে দেবে কাজ করবে ঘরে বসে জেনে বাড়ী চলে গেলো সে ধীর পায়ে।

 আমার বেশ ভালো লাগলো ওকে দেখে সেদিন দুপুর বেলায় অফিসে দেখে। ওর এই জীবন যুদ্ধে হেরে না গিয়ে কামব্যাক দেখে। জীবন এর লড়াই দেখে। বেশ ভালো লাগলো আমার। জীবন তো যুদ্ধ করে হেরে যাওয়ার নয়, জেতার জন্য। সবাইকে দেখিয়ে তুড়ি মেরে মাঠে ফিরে এসে আবার খেলতে নামার জন্যই তো এই জীবন। সেটাই করে দেখালো আমাদের সেই ছোটো ধ্রুব। একদিন শুনলাম ও চব্বিশ ঘণ্টা ছেড়ে চলে যাচ্ছে এবিপি আনন্দ চ্যানেলে। সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো হাসি মুখে বাংলার এক নম্বর চ্যানেলে। আমাদের সেই সবার প্রিয় ছোটো ধ্রুব।

কিন্তু সেই এক নম্বর চ্যানেলের কর্মী হয়েও সেই মাটিতে পা রেখেই একদিন ওর সাথে অল্প একটু কথা হলো আমার। সেই হায়দরাবাদ এর চেনা মুখ নিয়ে, চেনা সম্পর্ক নিয়ে মেসেঞ্জার এর অল্প কিছু লেখা দেখলাম আজ। অভিজিৎ দা বড়ো ভালো লিখছো তুমি। খবরের লেখা দেখেছি আমি তোমার কিন্তু এত স্বাধীন লেখা, এই লেখাগুলো বেশ ভালো। হ্যাঁ, ওর কাছ থেকে এই লেখা পড়ে মনে হলো সত্যিই তো খবরের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ানো মানুষদের কথা আর কে জানে। তাদের জীবনের কথা, তাদের জীবনের যুদ্ধের কথা, তাদের গল্পের কথা কে জানে।

 আর ভাগ্যিস এই রাতে আমায় সেই আমাদের সবার তিন্নি। যে শুধু সারা জীবন ভোরবেলার ডিউটি করে নানা চ্যানেলের অফিসকে রক্ষা করে গেলো শীত, গ্রীষ্ম আর বর্ষায়। সে বললো বলেই তো আজ সেই আমাদের ছোট ধ্রুবর কথা লেখার সৌভাগ্য হলো আমার। হয়তো আরও অনেক কথা, গল্প, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে অনেকের ওকে নিয়ে। কিন্তু আমার ঝুলিতে শুধু এটুকুই। সেটাই লিখলাম আমি। 

জীবন যুদ্ধে লড়াই করে আবার হাসি মুখে মাঠে কামব্যাক করা সেই আমাদের ছোট ধ্রুব। যে আজ অনেক বড় মাঠে খেলছে ওর নিজের মতো করে, স্বচ্ছন্দে। ধন্যবাদ জানাই তিন্নিকে, আমার সাদা জীবনের কালো কথায় এমন এক হারিয়ে যাওয়া লড়াই করা এক সংবাদ মাধ্যমের কর্মীর কথা মনে করিয়ে দেবার জন্যে। না হলে হয়তো আর আমাদের সবার প্রিয় হাসিখুশি সেই ছোটো ধ্রুবর কথা লেখাই হয়ে উঠত না আর আমার কিছুতেই। আমার ভাবনার জাল বিস্তার করতে পারতাম না আমি। 

ভালো থেকো তুমি তিন্নি। তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমি। শুধু এই জীবনকে দেখ জীবন হলো বড়ো শিক্ষক। সেই এক জীবনকে দেখার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। ভালো থেকো ধ্রুব। টোটো চালকের লেখা পড়ে দেখো। তোমার মতো শব্দ দিয়ে যদি আমি ঐ বাবুই পাখির বাসা বুনতে পারতাম তাহলে হয়তো বর্তে যেতাম আমি এই জীবনে। কিছু ভুল লিখলে আমায় ক্ষমা করে দিও।

আমাদের ছোটো ধ্রুব - অভিজিৎ বসু।
চৌঠা নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...