সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের নকীব

রিপোর্টার নকীব এর থেকে আমার অভিনয় করা নকীবকে বেশ ভালো লাগে। আসলে রিপোর্টার তো হতে তেমন কোনো কসরত করতে হয়না খুব বেশী। হাজার বুম এর ভীড়ে ডান্ডা বাড়িয়ে দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে রিপোর্টার হয়ে যাওয়া যায় কিছুটা। এদিক ওদিক থেকে খবর নিয়ে সেটা অন্যকে দিয়ে লিখিয়ে অফিসে পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু স্টেজে উঠে যাত্রাপালার অভিনয় করা খুব দুরূহ কাজ এটা। কখনও রাজা। কখনও হরিশচন্দ্র। আবার কখনও সিরাজদ্দৌলা। কিম্বা অন্য যে কোনো চরিত্রের অভিনয় করা। হাসিমুখে লাইভ দেবার মত পার্ট মুখস্থ বলা দ্রুত। সত্যিই এটা বেশ কঠিন ব্যাপার আরকি। আর সেই কঠিন কাজটাই ও হাসিমুখে করে চলে সবার সামনে। 


ডায়মন্ডহারবার এর চব্বিশ ঘণ্টার বিখ্যাত সেই সাংবাদিক নকীব উদ্দিন গাজী। চব্বিশ ঘণ্টার আগে আমি যখন ইটিভির চাকরি করতাম। সুরজিৎ দেব ছিল ইটিভির প্রতিনিধি সেই সময় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাতে। দু হাজার সালে আমি সাগর মেলা কভারেজ করতে গিয়েছিলাম। নকীব নাকি সেই সময় থেকেই চেনে আমায়, নাম শুনেছে আমার। সুরজিৎকে বেশ ভালোবাসে নকীব দাদা বলে ডাকে। আর সেই সূত্রেই আমার পূর্ব পরিচিত ও। 


 চব্বিশ ঘণ্টার চাকরি করতে এসে জল আর জঙ্গলের এলাকার রিপোর্টার নকীবকে পেলাম আমি। বেশ সুন্দর হাসিখুশি গাল দিলেও একদম রাগ করে না কোনও সময়। অফিসের বাবুদের কাছে কমপ্লেন করেনা যে অ্যাসাইনমেন্টের দাদা গাল দিয়েছে বলে। মন খুলে কথা বলা যায় আর কি। ফোনে রেকর্ড করে অফিসের অন্য বাবুদের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে বলে না এমন বললো শোনো তুমি। হয়তো গ্রাম এর জল হাওয়ায় বড়ো হয়েছে বলেই ও এমন হয়েছে।

সেই নকীব এর এই অভিনয় করা যাত্রা পালায় এটা মাঝে মাঝেই ওর ছবি দেখতাম। বেশ সুন্দর রাজা রাজরা, প্রজা, গ্রামবাসীর সাজে চেনা নকীব অন্য নকীব হয়ে যেতো সেই সময়। একদম যেনো চেনার উপায় নেই। খবরের খোঁজে দৌড়ে বেড়ানো নকীব কেমন মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছন্দে অভিনয় করে যায় হাসি মুখে, এটা সত্যি ওর একটা বড়ো গুণ। যা আমরা অনেকেই জানতাম না এতদিন। হয়তো ছোটকাল থেকেই ও অভিনয় ওর নেশা ছিল। সেই নেশায় ও এমন করে বাঁচিয়ে রেখেছিল তারপর সেই নেশার ঘোরে অভিনয় করা। রাজারাজরার পোশাকে গলায় লম্বা মালা পড়ে দাড়ি মুখে বেশ ভালই লাগে ওকে দেখে ছবিতে। কত জন এর কত যে এমন গুণ লুকিয়ে আছে কে জানে। আমরা তার সন্ধান পাইনা কিছুতেই।

বর্ষা কাল এলেই নকীব এর ফোন আসতো দাদা এইবার কিন্তু ভালো ইলিশ ধরা পড়েছে। আমি যদিও মাছ খাইনা। নিরামিষ আহার গ্রহণ করি। কিন্তু সেই ইলিশ ডায়মন্ডহারবারের মাছের আড়তে দেখা গেলেই নকীব এর ফোন দাদা ভালো মাল উঠেছে কিন্তু। একবার ঠিক হলো অফিসে ইলিশ মাছ আনা হবে। শুভ্রনীল ঘোষ জেলার বস ওর উদ্যোগে ইলিশ এলো ট্রেন করে বরফ দিয়ে দু পেটি টাটকা ইলিশ। সবটাই নকীব এর চেষ্টায় আর শুভ্রর উদ্যোগে। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে অফিস এর গাড়ী করে মাছ এলো পোদ্দার কোর্টের আট তলায়। দু পেটি ইলিশ মাছ। সেই মাছ বণ্টনের দায়িত্ব নিয়েছিলাম আমি। হিসাব মিলিয়ে টাকা নিয়ে মাছ বিলি।

কেউ একটা, কেউ দুটো, কেউ তিনটে কিনে বাড়ী নিয়ে গেলো ইলিশ মাছ সস্তায় পেয়ে। কিন্তু একজন মহিলা বিখ্যাত রিপোর্টার ছটি ইলিশ মাছ নিয়েছিলেন তিনি সেই দিন। এবং তার সবকটি মাছ এক সাইজের বড়ো মাছ চাই বলেই তার আবদার ছিল আমার কাছে। মাছ প্রতি দাম ধার্য হয়েছিল দু পেটি মাছের। একটা গোটা মাছ মনে দুশো টাকার কমে বিক্রি হয়েছিল। আর তাই ভীড় উপচে পড়েছিল ইলিশ মাছ কেনার জন্য সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে আট তলায় ক্যান্টিনের ভিতরে।‌ কিন্তু কেউ কেউ আবার একদম এই দাম দিয়ে ইলিশ কিনে হাতে ঝুলিয়ে বাড়ী নিয়ে যাবার পক্ষপাতী ছিলেন না একদম। তাঁদের মতে, দাম দিয়ে ইলিশ কিনব বাড়ীর জন্য নৈব নৈব চ। এটা খুব প্রেস্টিজ এর ব্যাপার নয় কি। বিনে পয়সার জিনিস হলে ভেবে দেখা যেতে পারে। নেওয়া যাবে কি যাবে না। 

নকীব এর সেই যাত্রা পালার সেই অভিনয়ের পাশাপাশি এই বর্ষার ইলিশ পর্ব একটা বেশ মজার ব্যাপার ছিল সেই সময় চব্বিশ ঘণ্টায়। যা প্রতি বর্ষা এলেই নকীবকে বলা হতো। পরে যদিও একবার কিরণ মান্না পূর্ব মেদিনীপুরের রিপোর্টার সে একবার ইলিশ পাঠিয়েছিল অফিসে। যাই হোক সাদা জীবনের কালো কথায় তাই রিপোর্টার নকীব এর কথা, সেই যাত্রার পালাগানের সেই নকীব এর কথা মনে পড়ে গেলো আমার এই রাতের বেলায়। ওর সাথে মাঝে মাঝেই কথা হয় আমার আজও। ও বলে দাদা পুরোনো দিনগুলো বেশ ভালো ছিল কি বলো। তুমি ফিরে এসো আবার দাদা। তোমরা সবাই ফিরে এসো বেশ ভালোই লাগবে আমাদের। কিন্তু আমি জানি সেটা আর সম্ভবই নয় কোনো ভাবেই এই জীবনে। 

আমাদের নকীব - অভিজিৎ বসু।
ত্রিশ নভেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...