সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতার জন্য দৌড়ে বেড়ানো নীলুদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমাদের হুগলী জেলার আজকাল পত্রিকার সেই হাসি মুখের নীলুদার কথা। হ্যাঁ , আমাদের সবারই পরিচিত সেই নীলরতন কুন্ডু। শীত পড়তে না পড়তেই নীলুদা এখন বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সকাল থেকেই তাঁর সেই মানকুন্ডুর খুব সম্ভবত মহাডাঙ্গা কলোনীর বাড়ীতে বেশ ব্যস্ততা। তার কারণ কিন্তু একটাই খবরের ব্যস্ততা নয় কিন্তু একদম। ব্যস্ততার কারণ একটাই আজ রানাঘাট এর কবিতা সন্মেলনে নিমন্ত্রণ রক্ষা করা তো, কাল বলাগড়‌ এর পাঠাগারে কবিতা পাঠ করতে চলে যাওয়া। আর তারপর দিন উত্তরপাড়ার গণভবনে বা শ্রীরামপুরে কোনো পাঠাগারে হাজির হয়ে যাওয়া। কাঁধে সাইড ব্যাগ নিয়ে আর বুক পকেটে পেন নিয়ে। হাতে সাদা কাগজ নিয়ে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে একমনে স্বরচিত কবিতা পাঠ করে চলেছেন তিনি একের পর এক মন দিয়ে। আর অনুষ্ঠান শেষে তারপর গলায় উত্তরীয় পড়ে, কবিতার জন্য স্মারক পুরষ্কার নিয়ে, হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে,হাততালি কুড়িয়ে হাসি মুখে ঘরে ফেরা। 


এই এত ধূলিকণা মাখা ধুসর স্বার্থ সঙ্কুল মায়াহীন ভালবাসাহীন পৃথিবীতে কবিতাকে এমন করে ভালোবাসা কিন্তু চাড্ডি খানি ব্যাপার নয় কিন্তু। শুধুই কবিতাকে ভালোবেসে বুঁদ হয়ে একটা নেশায় জীবন কাটিয়ে দেওয়া। একদিকে সেই বাংলা কাগজের সাংবাদিকতা। আর অন্য দিকে কবিতার প্রেমে বুঁদ হয়ে যাওয়া। সত্যিই অসাধারণ এই কবিতা প্রেমিক সাংবাদিক এর দ্বৈত সত্তাকে কিন্তু তারিফ করতেই হয়। আর তাই আঁকাবাঁকা অক্ষরে আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে আজ সেই কবি , সাংবাদিক নীলুদার কথা। সেই নীলরতন কুন্ডুর কথা

একদিকে যখন বাংলার একজন বিখ্যাত এক কবি পঞ্চাশ বছর ধরে কবিতা লিখে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই কবির গলায় অভিমানের স্বর। কিছুটা অভিমান আর আক্ষেপ করে বলেছেন তিনি আর লিখবেন না কিছুতেই। তাঁর লেখা আর প্রকাশ হবে না কোনোদিনই। কোনোভাবেই আর লেখা লেখা খেলায় মাতবেন না তিনি। দিনে, রাতে, নিদাঘ দুপুরে, হিমেল সন্ধ্যায় লেখা লেখা খেলা আর খেলবেন না তিনি। তাঁর কলমের আঁচড়ে সেই বেণীমাধবের আকুল করা আর্তি, ভালোবাসা, যন্ত্রণা ফুটে উঠবে না আর কোনোদিনই। সেখানে নীলুদার এই কবিতা নিয়ে পাগলামো আমার বেশ ভালই লাগে কিন্তু। আজকের এই শনিবার সকালে রানাঘাট স্টেশনে দুজনের একটা ছবি দেখে মনে হলো কিছু লেখা যেতে পারে আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে এই কবিতা পাগল মানুষটাকে নিয়ে। 

যে মানুষটার একদিন রাতে ট্রেনে উঠে নিজের চেনা স্টেশন হারিয়ে বা ছাড়িয়ে অন্য এক স্টেশনে চলে যাওয়া। রাতে ফেরার পথে শেষ ট্রেন না পেয়ে গাছের তলায় রাত কাটানো হাসি মুখে কোনো টেনশন না করে যে মানুষটা ভীড় ট্রেনে উঠে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও পকেট থেকে নোটবুক বের করে কবিতার লাইন খোঁজা তার নেশা। বহু চেনা ডেলি প্যাসেঞ্জার এর ডাকেও যে তাকিয়ে দেখেনা কিছুতেই। এহেন কবির সাথে আমার চুঁচুড়া শহরের ব্যানার্জী কেবিন এর সামনে দেখা হয় আজ থেকে বহুদিন আগে প্রায় পঁচিশ বছর তো হবেই। সেই চুঁচুড়াতে তখন নীলরতন কুন্ডু আর রথীন বন্দোপাধ্যায় এই সেই বহু পুরোনো দুজন রিপোর্টার এর কি দাপট আর লড়াই।

 ঘড়ির মোড়ে একদিকে তখন সেই কংগ্রেসের রবীন মুখোপাধ্যায় আর বড়বাজার এলাকায় ডাকাবুকো তপন দাশগুপ্তের গলাবাজি আর দাপটে ত্রস্ত দুই পার্টি অফিস। এ বলে আমায় দেখে তো ও বলে আমায় দেখ। আমি তখন সবে ঘড়ির মোড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি এদিক ওদিক একা একাই। তেমন কাউকেই চিনিনা সেই সময় সদর শহরে। দেখেছিলাম সেই সময় নীলুদাকে মুখে সিগারেট নিয়ে বেশ একটা গম্ভীর মুখে পুলিশ, নেতা, থানা, এসপিকে পকেটে পুরে ঘড়ির মোড়ে ব্যানার্জী কেবিনে বসে আছেন একটা কোণে একা চুপটি করে। গুটি গুটি পায়ে হাজির হয়ে পরিচয় দিলাম আমি। বললাম আমি অভিজিৎ যদি কোনো খবর হয় একটু দেবেন দাদা। সিগারেট এর ধোঁয়া আমার মুখের সামনে ছেড়ে চশমার ফাঁক থেকে আমায় দেখে বললেন, অভিজিৎ কোনো চিন্তা নেই চলে আসবে এদিকে। আমি থাকি বিকেল থেকে এখানেই। খবর নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। সব মিলে যাবে। এই চাঁদু চা দে এই টেবিলে। 
আমি যদিও চা খাইনা কিন্তু যদি কিছু মনে করেন এই দাপুটে সাংবাদিক তাই না বলতে পারলাম না কিছুতেই। আর চা দেওয়া যুবক চাঁদুর ব্যস্ত হয়ে দৌড়ে আসা দেখে মনে হলো যেন থানার বড়বাবুর ডাকে কনস্টেবল পড়ি মরি করে ছুটে এসেছেন চা নিয়ে। নীলুদা আমায় বললেন, খাও অভিজিৎ। এই প্রথম আলাপ আমার। এরপর তো ধীরে ধীরে সহজ সরল হয়েছে সম্পর্ক ধীরে ধীরে। সেই পুলিশের এসপি একাদশ আর সাংবাদিকদের এই শীতকালে ক্রিকেট খেলা হলেই সেই নীলুদার ফোন আসতো অভিজিৎ সব ব্যবস্থা আছে তুমি চলে এসো কিন্তু।

 যদিও হয়তো কাজের চাপে টিভি সাংবাদিকতার চাপে যাওয়া হয়নি আমার কোনোদিন এসপি অফিসের সেই সবুজ খেলার মাঠে। কিন্তু নিয়ম করে খেলা করা, সেই উপেন, কিট্টু , মিল্টন, বিধান, পলাশ, তাপস দা, সৌরভ হাজরা চুঁচুড়া শহরের আরও কতজন যে ছিল সেই সময়। সেই সময় নির্মল ঘোষ ছিল প্রতিদিন কাগজের হয়ে কাজ করত। আর শ্রীরামপুরের সাংবাদিকরাও যেতো এই পুলিশ আর সাংবাদিকের খেলা খেলতে অনেকেই। কিন্তু গোটা অনুষ্ঠানের আয়োজক উদ্যোগ নেওয়া সবটাই কিন্তু নীলুদার হাতে থাকতো। পরে যদিও এটা হাত বদল হয়ে মিল্টন সেন এর হাতে চলে যায় বোধহয়। কিন্তু সাংবাদিক দলের ম্যানেজার হলেন আমাদের নীলরতন কুন্ডু। নিজেই অঘোষিত একজন ম্যানেজার তিনি। 

আর এই নীলুদার সাথে সদ্য প্রয়াত কবি অরুণ চক্রবর্তীর ছিল গভীর বন্ধুত্ব। লাল পলাশের দেশে যার রচয়িতার ছিল অভিন্ন হৃদয় এর গভীর সম্পর্কও। দুজনের গভীর গোপন সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এই অমলিন সম্পর্ক হঠাৎ করেই যেনো কেমন তাল কেটে গেলো। কবিতার মঞ্চে অরুণ দা আর নীলুদা একসাথে দুজনে হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই জেলা থেকে অন্য জেলায় হাসি মুখে। আবার কখনও চাঁদনী রাতে কেউ ঘরে না ফিরে আকাশ দেখেই আর মাটির গন্ধ মেখে রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন দুজনে হাসিমুখে চাঁদের নরম এলোমেলো আলোকে গায়ে মেখে। আবার কোনো সময় চুঁচুড়া স্টেশনে এর সেই গোপালের চায়ের দোকান, ব্যানার্জী কেবিনের সেই রাস্তার পাশের কোনের টেবিল এর সামনে বসে আছেন দুজনে। ঘড়ির মোড়ের ঘড়ি সাক্ষী এই সবের। 

সেই ফাল্গুনী দা, তরুণ দা, গৌতম দা, নাজিমুদ্দিন, সবার একসাথে কপি লেখা শ্রীরামপুরে পল্লী ডাক এর অফিসে বসে। নীলু দা কপির ইন্ট্রো ভাবছেন আর পায়চারি করছেন গম্ভীর মুখে হাতে সিগারেট নিয়ে। সবার কপি লেখা শেষ হলে সব কপি নিয়ে দেখে নিয়ে সব থেকে ভালো খবরের কাগজে কপি পাঠিয়ে দেওয়া। আর হাসি মুখে বলা আমার লেখাটা কিন্তু ফ্যান্টাস্টিক হয়েছে বুঝলি ফাল্গুনী, বুঝলি তরুণ। এই বলে বলতেন চল একটা চা খেয়ে আসি। এরপরেই দিলীপের লাল চা চলে আসতো কাঁচের গ্লাসে ঠক ঠক আওয়াজ করতে করতে। এটাই তো ছিল আমাদের সেই ফেলে আসা দিনের খবর লেখার স্মৃতি কথা। যেখানে ফ্যাক্স মেশিন দিয়ে বা ফ্যাক্স কার্ড এর মাধ্যমে খবর চলে যেতো কলকাতায় সংবাদ পত্রের অফিসে। আজ সেই সব অতীত। ফ্যাক্স মেসিনের আওয়াজ আর শোনাই যায়না যে। 

আসলে ফেলে আসা সেই চুঁচুড়া থানা, ব্যানার্জী কেবিন, বন্ধ ডানলপ কারখানার গেট, চন্দননগর এর জগদ্ধাত্রী পূজো, চুঁচুড়া শহরের বিখ্যাত কার্তিক পূজো, সেই নীলুদার বিয়েতে সপরিবারে মানকুন্ডুর বাড়ীতে যাওয়া। খুব খাতির যত্ন করে আমাদের সবাইকে খাওয়ানো আজও মনে পড়ে যায় আমার। দেখতে দেখতে কতগুলো বছর যে কেটে গেলো জীবনের। সেই দৌড়ে বেড়ানো জীবনে, ছুটে বেড়ানো জীবনে স্থবিরতা নেমে এলো ধীরে ধীরে। হারিয়ে গেল চন্দ্রমল্লিকার গন্ধ মাখা জীবন এর সৌরভ। কেমন যেনো পানসে হয়ে গেছে এই জীবন। একঘেয়ে এই জীবনে এখন শুধুই রাতের অন্ধকারে স্মৃতি জড়িয়ে উত্তাপ নেওয়ার চেষ্টা করা। আর এপাশ ওপাশ করা।

আর নীলুদা এসবের মাঝে হাজার শরীর খারাপের মাঝে, অসুস্থতার মাঝে, এখনও নীলুদা কবিতার জন্য দৌড়ে বেড়ায়। খবরের জন্য দৌড়ে বেড়ায়। যা দেখে মনে হয় সত্যিই অসাধারণ স্যালুট জানাই আপনাকে নীলুদা। কবিতার জন্য এই ভালোবেসে দৌড়ে বেড়ানো 
শিশির মাখা পথ পেরিয়ে, চন্দনগরের স্ট্যান্ড ঘাট পেরিয়ে, মানকুন্ডুর আমবাগান পেরিয়ে, সিঙ্গুরের মাঠের আলপথ ধরে এই এগিয়ে চলা। শুধুই একটি কবিতার লাইনের জন্য। ভালো থাকবেন দাদা আপনি। সুস্থ থাকুন। আর কবিতাকে ভালোবেসে এইভাবেই দৌড়ে বেড়ান আপনি। 

কবিতার জন্য দৌড়ে বেড়ানো নীলুদা - অভিজিৎ বসু।
বাইশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...