সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইটিভির সেই বিবেক

প্রতিদিন ভোরবেলায় দিল্লী থেকে বিবেকের গুড মর্নিং চলে আসে আমার কাছে। সেই দেড় হাজার কিলো মিটার পথ পেরিয়ে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে চলে আসে ওর সুপ্রভাত এর মেসেজ বা বার্তা। একদম নিয়ম করে, ঘড়ি ধরে, সময় মেপেই। কতদিন তো ওর সাথে কোনও যোগাযোগ নেই, কথা নেই, কেজো সম্পর্কও নেই তবু ও কেমন করে যেনো আজও মনে রেখেছে আমায়। বছর শেষের এই দিনে ভোরবেলায় দূরে মোরগের ঝুঁটি তুলে ডাক দেওয়া আর জানলার কার্নিশে পায়রার বক বকম ডাক শুনতে শুনতে ওর এই লেখা লিখছি আমি। চারিদিক কেমন চুপচাপ, স্থির। কিছুটা হয়তো বছর শেষের মন খারাপের জন্যই আর তার মাঝেই ধীরে ধীরে ভোরবেলায় আলো ফোটার সময়েই বিবেকের এই মন ভালো করা সুপ্রভাত বার্তা। 


সত্যিই জীবনের এই নানা ওঠা আর পড়ার মাঝে। নানা জিজ্ঞাসা এর কেনোর মাঝে। নানা অনুমতি আর বিনা অনুমতিতে লেখার সাহস দেখানোর মাঝেই উড়ে এলো বিবেকের এই গুড মর্নিং মেসেজ। যা আমার থমকে যাওয়া মনকে কেমন এক লহমায় ভালো করে দিলো আবার। আমার একটু আটকে পড়া জীবনকে আবার গতিময়তা ফিরিয়ে দিলো আবার। কতদিন যে ওর সাথে কথা হয়নি আমার। কতদিন যে ওর গলা শোনা হয়নি আমার। 

ওর বাড়ী কোথায় আমার জানা হয়নি। ওর ঘরে কে কে আছে সেটাও পরিষ্কার নয়। সেই দিল্লিতে ইটিভির ওবি ভ্যানের ডিউটি করা বিবেক। সেই ইটিভির চাকরি করা হায়দরাবাদ এর বিবেক। সেই ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে নীল রঙের ওবি ভ্যান নিয়ে ডিউটি করতে আসা বিবেক। সেই ডানকুনি মোড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকে দেওয়া পুলিশের। দ্রুত গাড়ি চালিয়ে এসে দশটা পঞ্চান্ন মিনিটে ডানকুনির মাইতি পাড়ায় পৌঁছে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওবির ছাতা তুলে ছবি পাঠাবার ব্যবস্থা করে এগারোটার হাওয়ারলি বুলেটিনে মমতার ছবি ধরিয়ে দেওয়া বিবেক। 

সেই সিঙ্গুরে লাঠি চার্জের দিন সারাদিন ধরে জেনারেটর চালিয়ে দুর থেকে তেল জোগাড় করে রামোজি ফিল্ম সিটিতে ছবি পাঠানোর ব্যবস্থা করা বিবেক। আর কত কি বলব। সেই চব্বিশ ঘণ্টার রিপোর্টার সৌরভ গুহকে তৃণমূল এর লোকজন ওর বুম দেখে ওকে তাড়া করলে ইটিভির ওবি ভ্যান এর মধ্যে সৌরভকে তুলে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ওকে সেদিন বাঁচিয়ে দেওয়া বিবেক। সত্যিই লিখতে বসলেই যে কেমন একের পর এক নানা ঘটনাই মনের মধ্যে ভেসে ওঠে আমার। সেই লেখার কি আর অনুমতি নেওয়া যায় লেখার আগে। জীবনের এই ফেলে আসা দিনের সম্পর্ক কি শুধুই অনুমতি আর তার দরজার চৌকাঠে আটকে থাকে কে জানে।

 আজ ভোর বেলায় বছর শেষের দিনে আমার ওর কথা মনে পড়ে গেলো কেনো কে জানে। সেই ফেসবুকে ওর আমায় পিং করা। বন্ধ যোগাযোগ চালু হলো আবার আমাদের দুজনের। আলাপ হওয়া আবার নতুন করে। ফোনে যোগাযোগের শুরু হওয়া। আর তারপর সেই ইটিভির পুরোনো দিনের কথা শোনা ওর মুখে। এমন সব নানা অভিজ্ঞতা যে আজও মনে পড়ে যায়আমার আজ। ধীরে ধীরে সেই একসময়ের জনপ্রিয় চ্যানেল ইটিভির রমরমা বাজারে মন্দা শুরু হওয়া। হায়দরাবাদ থেকে ওর দিল্লী চলে যাওয়া সেই ওবির গাড়ি নিয়ে। এইভাবেই তো আমাদের সেই ফেলে আসা ইটিভির সংসারে বিবেক উজ্জ্বল হয়েই ছিল এক সময়। 
আমি জানিনা আজ ও কোথায় আছে কি কাজ করে কিছুই জানিনা আমি। শেষ কথায় বলেছিল দাদা টিভির দিন শেষ। এই ওবির দিন শেষ প্রায়। এখন সব ছবি পাঠানোর জন্য নিত্য নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে চ্যানেলগুলো। আর তাই বোধহয় আমাদের দিনও ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে দাদা। সেই জেনারেটর দিয়ে ওবিকে দ্রুত স্টার্ট দিয়ে তার মাথার ছাতাকে খুলে সেট করে গ্রামের ভীড়ে সেই মিডিয়ার ফেলে আসা অতীত দিনগুলোর সেই ওবির ইঞ্জিনিয়ার এর বিবেকের কথা মনে পড়ে গেলো আজ আমার বহুদিন পর। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় তাই বছর শেষের দিনে লিখে ফেললাম সেই হারিয়ে যাওয়া বিবেকের কথা।
 সেই সিঙ্গুরের তিন ফসলি জমির মাঠ, সেই সর্ষে ফুল ধরা মাঠে হলুদ প্রজাপতির ডানা মেলে ওড়াউড়ি, সেই আলপথ ধরে গ্রামে যেতে যেতে সবুজ কড়াই শুঁটি তুলে সেটা খেতে খেতে গ্রামে পৌঁছে যাওয়া খবরের সন্ধানে। আর গ্রাম থেকে ফিরে এসে বিবেককে বলা দাদা এই ছবিটা ক্যাসেট দিলাম পাঠিয়ে দাও তুমি হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্কে। স্লাগ দিও সিঙ্গুর ইনসিডেন্ট।

 সত্যিই কতদিন যে এমন করে ছবি পাঠানো হয়নি আমার সেই সিঙ্গুরের মাঠ থেকে খবর করে নতুন নতুন স্লাগ দিয়ে। আর বিবেক হাসিমুখে বলতো দাদা কিচ্ছু চিন্তা করোনা তুমি আমি ওবিকে রেডি করেই ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি এক্ষুনি। সারাদিন মুড়ি খেয়ে শশা খেয়ে, কোনোদিন একটা রুটি খেয়েই তো খবরের নেশায় দিন কেটে গেছে আমাদের। সেই সব দিনগুলো হারিয়ে গেলো, বদলে গেলো। আমাদের জীবনের স্থিতি হারিয়ে গেলো। ছবি পাঠানোর দিন শেষ হয়ে গেলো। হারিয়ে গেলো ইটিভির সেই লাল বুম। সাথে সাথে একটা বছরও শেষ হয়ে গেলো। ভালো থেকো তুমি বিবেক।

ইটিভির সেই বিবেক - অভিজিৎ বসু।
একত্রিশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...