সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাঁকো

সাঁকো পার হয়ে গেলেই যাওয়া যাবে নীলপুরে। এপারে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষন ধরেই ভাবছি আমি। সত্যিই বলতে কি এই সাঁকো পার হওয়া নিয়ে আমার একটু ভয় আছে ছোটো বেলা থেকেই। যে ভয়কে ঠিক বলে বোঝানো সম্ভব নয়। কী জন্য ভয়,অদ্ভুত এই অনুভূতি কে, ঠিক বলে বোঝানো যাবে না কোনো ভাবে আপনাদের। 

আচ্ছা যারা নিশ্চিন্তে সাঁকো পেরিয়ে ওপারে চলে যায়। তাদের কি কোনো ভয় হয় না। ওই যে ছোটো শিশুটা যে অবলীলায় এদিক ওদিক করতে করতে, টাল সামলাতে না পেরেও হাসি মুখে ওপারে চলে যায় তার কি ভয় করে না কোনও। আর ওই যে গ্রামের বউগুলো যারা গল্প করতে করতে এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কথা বলতে বলতে তাকিয়ে সাঁকো পার হয় নিশ্চিন্তে, তারাও কি ভয় পায় না কোনো সময়। কে জানে।

এই ভয়টাই আমায় সারা জীবন কুড়ে কুড়ে খায়, ঠিক ঘুন পোকার মতো। কেন যে একে জয় করতে পারলাম না কে জানে। আচ্ছা সেই যে ছোটো বেলার কথা মনে পড়ে গেলো আমার সাঁকোর সামনে দাঁড়িয়ে। 

মার সাথে গেছিলাম মামার বাড়ি হরিপালে। সেখানেই দেখেছিলাম সুমিকে। এক ঝলকে ওকে দেখে মনে মনে বেশ ভালো লেগেছিল তাকে। কিন্তু এই ভয় পেয়েই তো সেদিন তাকে কিছুই বলতে পারিনি। শুধু তাকে দুর থেকে দেখতাম এই মাত্র। 

কিন্তু গ্রামের ওই কালো দীঘল চোখের মেয়েটি হয়তো কিছু বুঝতে পেরেছিল। তাই যেদিন সে আমার কাছে তার মাকে লুকিয়ে দেখা করতে এলো। সেদিন আমি সত্যিই খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।

 বড়ো বাড়ির চৌহদ্দি পেরিয়ে সে এসেছিল দেখা করতে সবাইকে লুকিয়ে। কী জন্য জানিনা আমি। শুধু এটা জানি, আমিও চাইছিলাম ওর সাথে একটু একান্তে দেখা করতে। 

বাড়ির পেছনের উঠোনে সবে তখন ধান জড়ো করে রাখা হয়েছে শীতের সময়। মাঠ থেকে ওঠা খড়ের গাদায় তখন, সোঁদা মাতাল করা ধানের গন্ধে ম ম করছে গোটা উঠোন। 

সন্ধ্যা হয় হয়। ধান গাদার পাশ দিয়ে একটা সাদা পায়রা উড়ে এসে বসলো। ঠিক আমাদের দুজনের মাথার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা, আম গাছটায়। বক বকম শব্দ করে ওঠে সে আপন মনে। কিন্তু আমরা দুজন নিঃশব্দ। বাকহীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছি একে অপরের সামনে।

 সুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে শুকনো খড়ের মাথায় ধানের শীষ কে আঙুল দিয়ে ছিঁড়ে ওর ঠোঁটের মাঝে রেখেছে। অদ্ভুত দেখতে লাগছে ওকে। ভেজা শিশিরের বিন্দুতে স্নান করে। ওর ঠোঁট দুটো , যেনো ভিজে চুপ চুপে হয়ে গেছে। কালো কাজল টানা চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও আমার দিকে। 

গভীর নরম সেই দৃষ্টি। ওর মুখে চাপা একটা হাসি। বলতে নেই দুর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেই ওকে বেশ লাগতো। কেনো যে সামনে এলাম ওর ডাকে। কে জানে। কিছুটা হলেও অস্বস্তি বোধ করতে লাগলাম আমি একটু।আমার থেকে ও অনেক বেশি সাবলীল,স্বচ্ছন্দ।কোনো জড়তা নেই ওর মধ্যে।

আচমকাই ওর প্রশ্ন, এই কি দেখছো অমন করে আমায়।ওর প্রশ্নে আমার ঝটকা ভাঙ্গে। সত্যিই তো কি দেখছি ওকে অমন করে। ওর কালো রঙের দীঘল চোখের দিকে তাকিয়ে আমি ডুব দি আরও গভীরে। যেনো অতলে হারিয়ে যাই কোথাও।

 ওর ঠোঁটের ফাঁকে ঝুলছে ধানের টুকরোর ছড়া। একটা হাত দিয়ে ও খড়ের গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে আলতো করে আঙ্গুল নাড়ছে সে ধানের শীষে পরম যত্নে। একটু যেনো আনমনে এলো মেলো ও নিজেও।ওর কানের লতির পাশ থেকে ঝুলছে এক টুকরো চুল।কানের ঝুমকো দুল দুটো যেনো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে।এ ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। 

দুর থেকে দেখা ভালো লাগাকে এত কাছে দেখে,আমি কিছুই বলতে পারিনা ওকে।একদম চুপ করে যাই।মনের মধ্যে উথাল পাতাল করছে আমার। বুঝতে পারি আচমকাই ওর শরীরের আগুন,ছড়িয়ে পড়ে আমার ওপর।খুব ইচ্ছা করে সেই আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে। মনে হয় ওকে কাছে টেনে বলি সুমি,আমি তোমায় ভালবাসি। খুব,খুব ভালোবাসি।

 কিন্তু না,পারি না সেটা বলতে।মনে মনে ভাবলেও কিছুই বলতে পারলাম না আমি তাকে।মনের কথা বলতে পারলাম না আমি। কী একটা পাখির ডাক শুনে ও চমকে ওঠে। দুজনের হাতে হাত লেগে যায় অজান্তে। কিন্তু তবু,আমি পারিনা ওর আঙ্গুল ধরে বলতে আমি তোমায় ভালবাসি সুমি। 

একটা অজানা, অচেনা, ভয় আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। দূরে কোনো এক বাড়িতে শঙ্খ বেজে ওঠে। সন্ধ্যা বেলায় তুলসী তলায় পিদিম দিতে আসে কেউ। দুর থেকে তা দেখে সুমি বলে বোকা ছেলে, হাঁদারাম একটা। এই বলে এক দৌড়ে পালিয়ে যায় সে। আমার গালে একটা আলতো করে চিমটি কেটে।

 আমি দাঁড়িয়ে থাকি। একা একা। শুধু দেখি কালো চুলের বিনুনির গোছা ওর পিঠে ঝাপটা মারছে আর ও ত্রস্ত পায়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। সন্ধ্যার নরম আলোয় ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় সে।দূরে আরও দূরে। 

নিজের গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে অস্ফুটে বিড় বিড় করে আমি বলি। তুমি বিশ্বাস করো সত্যিই তো ভালোবাসি আমি তোমায়। কিন্তু সেই কথা শুনতে পায় না সে।

আর তখন আমার মনে হয় ওকে নয় আমাকে মারছে চাবুকের ঘা ওর চুলের বিনুনি দিয়ে সপাটে। চুপ করে আমি একাই দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষন। অনেক পরে ঘরে ফিরে ওকে কত খুঁজলাম। কিন্তু না কালো কাজল দীঘল চোখের দেখা পেলাম না আর। ভাবলাম ও হয়তো রাগ করেছে। বা হয়তো অভিমান করেছে সে।সত্যিই তো এতে আর আশ্চর্যের কি আছে।

 পরদিন মার সাথে ঘরে ফেরার সময় দেখলাম অনেক দূরে সেই খড়ের গাদার পাশে একা একা দাঁড়িয়ে আছে সুমি। কালো দীঘল চোখের দৃষ্টিতে পুড়িয়ে মারছে সে আমায়।

 কিন্তু না, একবারও আর কাছে এসে সে বলেনি, বোকা ছেলে কোথাকার। ভীতুর ডিম তুমি একটা। কালো কাজল পরা চোখ দুটো আমার যাত্রা পথের সারা রাস্তায়। তার চোখের আলোয় আলোকিত করে রেখেছিল গোটা যাত্রা পথ।

আমি চোখ বুজলেই আজও দেখতে পাই ওর ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা ধানের শীষের মাতাল করা গন্ধ।যা আমার মনকে ভরিয়ে দেয়। আমি ওর শরীরের আগুনের উত্তাপ অনুভব করি চোখ বুজে আজও এই বয়সে।

এই সাঁকোর সামনে দাঁড়িয়ে আমার মনে পড়ে গেল সেই কথা। সেই যে সাঁকো পেরিয়ে সেদিন সন্ধ্যায়, অজানা ভয়ে ভালো লাগাকে কাছে টেনে নিতে পারিনি আমি। সেই ছোটো বেলার ভয় তো আজও আমার মধ্যে রয়ে গেছে। 

তাই আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি এই ছোটো বাঁশের সাঁকোর সামনে। কিছুটা হলেও থমকে গেছি। বড়ো স্মৃতি মেদুর হয়ে গেছি আমি। স্মৃতির উত্তাপে আমি গলে যাচ্ছি দ্রুত।

আসলে এই তো সেদিন, যেদিন কাজের জায়গায় চেনা মুখ গুলো। সব অচেনা হয়ে ধরা দিল আমার কাছে। এক লহমায় সব কিছু দ্রুত ভুলে গেলো চেনা টুকরো টুকরো মুখ গুলো।সেদিন সত্যিই আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।

অফিসের ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকে আমিও সেদিন কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি সবার সামনে।মাথা নিচু করে সব শুনে অবাক করে বেরিয়ে এসেছি ঘর ছেড়ে।ঠিক এই ভাবেই বাঁশের সাঁকো পার করে বলতে পারি নি কিছু কথা। যা বললে হয়তো কিছু জায়গা পেতাম আমিও। কিন্তু না একটা সংকোচ বোধ হচ্ছিল আমার সেদিনও।

আসলে এই সাঁকো পার করে, নিজেকে বাঁচাতে আমার এগিয়ে আসার অভ্যাসটাই নেই আমার। সেই ছোটো কাল থেকেই এই অবস্থা। কেনো সেই যে রাতে পাড়ার কাকু রাতে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুব আদর করতে চাইলো বিছানায়, ঘুম পাড়াবে বলে সেদিন ও আমি ঘরে ফিরে বলতে পারি নি কিছুই কাউকে। চুপ করে থাকলাম।

যে দিন কলেজ থেকে বাইরে নিয়ে যাবার কথা হলো শিক্ষা মূলক ভ্রমণে। সেই দিনও তো আমি ঘরে ফিরে বাবা, মাকে বলতে পারিনি সবাই যাবে আমিও যদি যেতে পারি খুব ভালো লাগবে আমার। জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখার সৌভাগ্য হবে আমার।আমি জানি সেটা সম্ভব নয় আমাদের ঘরে।তাই সেদিন ও সাঁকো পেরিয়ে বলিনি কিছুই আমি।

আসলে সেই ছোটো বেলা থেকেই এই সাঁকো পেরিয়ে যাবার সাহস হয় নি আমার কোনো দিনই। তাই আজ এই অবস্থা আমার।তাই এই বয়সে এসেও আমাকে ভাবতে হয় সাঁকো পেরিয়ে কি করে ওপারে যাবো সেই কথা।

দূরে ওপারে কে যেনো দাঁড়িয়ে আছে। কে যেনো নীলপুরের রাস্তা ধরে এগিয়ে আসছে সাঁকোর দিকে। আবছা একটা অবয়ব এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। আমি দুর থেকে দেখি। কিন্তু বুঝতে পারি না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি আমি সাঁকোর এপারে।

আমি ভাবি ,আগে ওপারের লোক, এপারে চলে আসুক। তারপর ,আমি না হয় ধীরে ধীরে পার হবো।আমার তো কোনো তাড়া নেই জীবনের। যে জীবনের তাড়া খেয়ে,সকাল থেকে রাত অবধি দৌড় করছে অন্যরা।

 একে অপরের সাথে টেক্কা দিয়ে, প্রতিযোগিতা করছে একে অপরের সাথে জোর কদমে। একে অন্যকে ঠেলে ফেলে দিয়ে এগিয়ে চলছে, আগে যেতে হবে বলে।কোনো সম্পর্কের বাঁধন কে অস্বীকার করেই।

কিন্তু তার তো কোনো এই দৌড়ে যাবার মাথা বাথ্যাই নেই। এই অসম দৌড় প্রতিযোগিতায় সে অংশ গ্রহণ করেনি কোনো দিন।আর কোনও তাড়া ও নেই তার।সে তাই বিন্দাস জীবন কাটিয়ে দিতে চায়,অন্যদের থেকে।যে জীবনে ই এম আই এর হিসেব না মিললেও বিন্দাস থাকার জন্য চেষ্টা করা যায় মাত্র।

সত্যিই বলতে কি এটাই বা কজন ভাবতে পারে কে জানে। হয়তো সে পাগল বলেই এমন ভাবতে পারে। নীলপুরের দিক থেকে কালো রঙের একটা মেয়ে কোলে বাচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসছে। দুর থেকে বোঝা যাচ্ছে না কে সে। তবু আমি দুর থেকে দেখি তাকে। 

মনে মনে ভাবি, সে আমার সুমি নয়তো। কে জানে, হয়তো হবেও। একটু সরে দাঁড়াই আমি সাঁকোর পাস থেকে।ধীরে ধীরে সে এগিয়ে আসে। দুর থেকে কাছে, আরো কাছে। একদম নাগালের মধ্যে। চলে আসে সে।

 বহুদিন পর দেখি কোলে ছেলেকে নিয়ে সুমি সেদিনের মত আজও অবলীলায় সাঁকো পেরিয়ে এপারে চলে এলো নির্ভয়ে। আমার সামনে,একদম আমার সামনে এসে দাঁড়ালো সুমি। ওর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে অমলিন হাসি ঝুলছে।

 আগের সেই রূপের আগুনে আমায় পুড়িয়ে মারল না আর।শুধু অস্ফুটে ও বলে ফেলল, আজও ভয় পাও তুমি। এত দিনেও ভয় কাটাতে পারলে না তুমি।সত্যিই কি যে বলি তোমায়। বলে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে আমার দিকে।


আমি ওর কথা শুনেও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। দেখলাম পায় পায় তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে সাঁকো পেরিয়ে। আমায় পেরিয়ে, সুমি চলে যাচ্ছে। দূরে অনেক দূরে। 

আমি একাই দাঁড়িয়ে রইলাম, মাথা নিচু করে সাঁকোর সামনে। সত্যিই তো আজ এই বয়সে এসেও আমি ভয় কাটাতে পারলাম না কোনো ভাবেই। 

তাহলে কি আর আমার এই জীবনে কোনদিনই ভয় কাটিয়ে সাঁকো পার হওয়া হবে না।আমি কোনোদিন যেতে পারবো না, ওই ওপারের নীলপুরে।জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও কি সংকোচ আর লজ্জায় লাল হয়ে মরবো তিলে তিলে প্রতি মুহূর্তে। 

এই কথা ভেবে আমি ধীরে ধীরে এগোতে থাকি সাঁকোর দিকে। কিন্তু ভাবি, কি হবে ওপারে গিয়ে আমার ভালোবাসা তো নেই ওপারে নীলপুরে। সে তো হারিয়ে গেছে আমায় ছেড়ে একটু আগেই। যাবার সময় সে বলে গেছে আমায়। আজও তুমি ভয় পাও। ছি ছি এত দিনেও তুমি ভয় কাটাতে পারলে না।

 এই ভেবে আর এগোতে, মন চায় না আমার। সাঁকোর সামনে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আমি। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি ওপারে। ভাবি নিশ্চয় একদিন আমার ভয় কাটবে। এই আশা নিয়েই আমি দাঁড়িয়ে থাকি সাঁকোর সামনে মাথা নিচু করে।

সাঁকো - অভিজিৎ বসু।
সাত ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক ও গুগল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...