সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কনগ্রাচুলেশন মিন্টে


সেক্টর ফাইভের সেই বিখ্যাত বিল্ডিং গোদরেজ ওয়াটার সাইড এর মিডিয়া অফিস থেকে মিন্টের এই অবসর নেওয়ার সময়ের ছবিটা হঠাৎ করেই আমার কাছে উড়ে চলে এলো। বোলপুরের রামকৃষ্ণ রোডের এই নয়শো স্কোয়ার ফিটের ভাড়া বাড়ির দু কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটে। আচ্ছা একটু কি আজ ওর হাসিটা যেন কেমন অচেনা ঠেকছে আমার কাছে। সেই ওর প্রাণ খোলা আর দিলখোলা দাঁত বের করে হাসিটা কেমন যেনো একটু অন্য রকম লাগলো যেনো। সেই হাতে ওর আংটি। গায়ে ব্লেজার। চোখের চশমার ভিতরে এক দৃষ্টিতে ও তাকিয়ে আছে ওর সব চেনা সহকারীদের দিকে। হাসি হাসি মুখ করে একটু যেনো লজ্জা লজ্জা ভাব।

 কিন্তু এই যে চাকরি জীবনের শেষ দিন। কর্ম জীবনের শেষ দিন। দৌড়ের জীবনের শেষ দিন। ক্যামেরার লেন্সে চোখ দিয়ে ছবি তোলার শেষ দিন। মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর সঙ্গী হয়ে জেলা সফরের শেষ দিন। ভোটের ময়দানে ডিউটি করার শেষ দিন। সকাল হলেই দৌড়ে অফিস যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরার শেষ দিন। আর তার আবার ঘটা করে দিন পালন করা। এটা যেনো কেমন একটু বেমানান লাগে আমার নিজের।

 আচ্ছা এটা কেন হয় এমন বলুন তো, যে মানুষটা সারা জীবন ধরে দৌড়ে বেড়ালো, ছুটে বেড়ালো, খবর করতে গিয়ে মার খেলো, মাথা ফাটালো, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে চক্ষুশূল হলো, রিপোর্টারদের কথা শুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছবি তুলে বেড়ালো। নিজের স্বার্থে কোনোভাবেই সমঝোতা করলো না কারুর সাথেই কোনো পক্ষের সাথেই। যাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেনে, রাজ্যের সব মন্ত্রীরা চেনে, আর তাকেই আজ ফুল মিষ্টি আর একটা প্যাকেট আর কিছু উপহার দিয়ে বলে দেওয়া হলো যে কাল থেকে তোমার ছুটি। একদম ছুটি। আর আসতে হবে না অফিস। 
বেশ মজার ব্যাপার কিন্তু। সেই সিনেমার দৃশ্যে দেখেছিলাম রাজাকে দিয়ে জোর করে যুদ্ধ করতে নিয়ে যাবেন মন্ত্রিমশাই। আর তারপর যুদ্ধ হয়ে গেলেই ছুটি। 

গোটা জীবনের এই জার্নির ছুটি। দৌড় এর ছুটি। কর্ম তৎপরতার ছুটি। ক্ষমতার বৃত্তের ব্যাসার্ধ ধরে হেঁটে চলে বেড়ানো আর বিন্দাস জীবন কাটানোর ছুটি। অবশ্য এই ছুটি তো আমি কবেই নিয়েছি নিজে নিজেই। যে ছুটির জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমিও। কর্মময় জগৎ থেকে ছুটিময় জগতে বিচরণ করা আপন ছন্দে ঠিক যেনো বাড়ির রোদমাখা উঠোনে চড়ুই এর মতো। লেজ তুলে আনন্দে ঘুরে বেড়ানো আর খুঁটে খুঁটে খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। সত্যিই হয়তো ওর প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগবে তারপর বেশ গা সওয়া হয়ে যাবে কিন্তু ব্যাপারটা। 

যাই হোক জীবন তো এই নিয়মেই চলে। জীবন তো ঠিক এইভাবেই সরল রেখা ধরে তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য পথে এগিয়ে যায়। যে জীবনের শুরু হয় কঠিন কঠোর সংগ্রাম করে, লড়াই করে, সাইকেল চালিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে, বিয়ে বাড়ীর ছবি তুলে, রাতের অন্ধকারে মোটর সাইকেল চালিয়ে জেলায় দৌড়ে বেরিয়ে খবর করে,কাগজের অফিসে ছবি পৌঁছে দিয়ে একমাস পরে অল্প কিছু টাকা পেয়ে। সেই মায়াময় জীবনের ছুটি হয়ে যায় হঠাৎ করেই। জীবন এর ঘড়ির কাঁটা জানান দেয় তোমার সময় শেষ। 

সত্যিই অসাধারণ এই জীবন। জীবনের এই বিস্কুট দৌড়। যে দৌড়ে কেউ গোটা বিস্কুট পেয়ে দৌড়ে পৌঁছে যায় জীবনের শেষ প্রান্তে হাসি মুখে। আবার কেউ এই দৌড়ে একটুকরো বিস্কুট পেয়ে মাঝপথেই ডিস কোয়ালিফাই হয়ে যায় আটকে যায় তার দৌড়। মুখ থুবড়ে পড়ে তার চারিপাশ। কেউ ভিকট্রি ল্যাপে পৌঁছে হাততালি কুড়িয়ে উপহার নিয়ে ফুল নিয়ে হাসি মুখে বাড়ী ফিরে যায়। আর কেউ মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়ে বাজারে বাতিল মাল বলে গণ্য হয় আর সকলের কাছে হাসির খোরাক হয়। তাকে দেখে বিদ্রুপ করে লোকজন। 


সত্যিই অসাধারণ এই দুই জীবন। যে জীবন নিয়ে আমার বেশ গর্ব হয়। ভালো থেকো মিন্টে তুমি। অবসর জীবনে ভালো থেকো তুমি। আমি জানিনা সেই টেকনিকাল অরিন্দম এখন কোথায় থাকে কি কাজ করে। আমি জানিনা সেই সুদীপ অফিস বয় কোথায় কি করে বর্তমানে। আর আমি তো কবেই রিপোর্টার থেকে টোটো চালক হয়ে গেছি এই মিডিয়া ছেড়ে হাসি মুখেই। তুমি তবু আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করলে শেষ পর্যন্ত হাসি মুখে লড়াই করে অবসর নেওয়ার দিনে পৌঁছতে পারলে। বিস্কুট দৌড়ের শেষ লাইনে পৌঁছতে পারলে তুমি। কনগ্রাচুলেশন মিন্টে। ভালো থেকো তুমি।

কংগ্রাচুলেশন মিন্টে - অভিজিৎ বসু।
তিরিশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য থাক নামটা দিলাম না আর।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...