সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নকশাল নেতা সুবোধ মিত্র

কিছু কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা বোধহয় জীবনকে এক ভাবে গড়ে তোলার কথা ভাবেন। আর অন্য ভাবে তাঁরা জীবনকে গড়ে তোলেন। আসলে এইসব মানুষগুলো বোধহয় শুধুই নিজের কথা ভেবে বেঁচে আর বেড়ে ওঠেন না। শুধুই আত্মস্বার্থে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন না। তাঁরা মনে করেন নিজের জন্যে তো শুধুই বাঁচা নয়। মানুষের জন্যে, জল, জঙ্গল,নদী, জঙ্গলের সহজ সরল আদিবাসী মানুষদের জন্য, তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করা আর বাঁচা। আর সেটাই তো জীবনের আসল উদ্দেশ্য।  


আর সেটাকে মাথায় রেখেই তো তাঁর সেই আই এ এস হবার পরও কেমন সেই দেরাদুনে ট্রেনিং পিরিয়ডের সময়ে। হঠাৎ করেই সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সুখের নিশ্চিত জীবন ছেড়ে দিয়ে অজানা এক জীবনে ভেসে পড়া। নিজের জন্যে নয় প্রত্যন্ত গ্রামের মেঠো মানুষ গুলোর জন্য। সরকারের গোলামি করে তো আর, চাকরি করে তো আর সেই কাজ করা যাবে না কিছুতেই। তাই চাই আন্দোলন। জোরদার একটা আন্দোলন। যে আন্দোলন নাড়িয়ে দেবে সরকারের ভিত। আর তাতেই হাসি ফুটবে গরীব খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষের মুখে। যে সহজ সরল হাসি বড়ই সুন্দর। 

আর তাই শুধু তিনি একা নন উনিশ জন আই এ এস তাঁদের ট্রেনিং পিরিয়ডে আই এ এস ডিগ্রি ত্যাগ করে এই নকশালপন্থী আন্দোলনে যোগ দেন সেই সময়। সরকারের অফিসার হয়ে সরকারের কাজ করে কি করে মানুষের বিরুদ্ধে হয়ে কাজ করবেন তাঁরা। যদিও পরে বেশ কয়েকজন ফিরে যান পুরোনো কাজে আই এ এস এর কাজে যোগদান করেন তাঁরা। কিন্তু বেশ কয়েকজন প্রায় সাত আট জন নকশাল আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সালটা ১৯৬৯ সাল হবে সেই সময়।‌ সেই বিখ্যাত সত্তর এর দশক। তাদের মধ্যে ছিলেন একদম সেই প্রথম আমলের নকশাল নেতা সুবোধ মিত্র। যিনি আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। আজ আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে কালো অক্ষরে। সেই চারু মজুমদার আর কানু সান্যাল এর ঘনিষ্ট নকশাল নেতা সুবোধ মিত্র। একদম গ্রামের মেঠো রাস্তায় সহজ সরল মানুষদের ডাকে চলে এসেছেন তিনি এই প্রায় আশি বছর বয়সে এই প্রান্তিক এর কাছের পারুলডাঙা গ্রামে। 

সত্যিই কি অসাধারন এই তাঁর জীবন দর্শন। যিনি সারাজীবন ধরেই তো এই জল, জঙ্গল, নদী আর আদিবাসীদের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তিনি কোনোও হিসেব নিকেশ না করেই। হাজার শরীর খারাপ থাক অসুস্থ হয়েও বেরিয়ে পড়েছেন এদিক থেকে ওদিক হাসি মুখেই। কখনও বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামে তৈরি করেছেন দলের গোপন সংগঠন। কখনও বিহার এর রুখু সুখু এলাকায় দাপিয়ে কাজ করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যে একা একা শুধু মাত্র মানুষের কথা আর তাঁদের অধিকার এর দাবিকে আদায় করতে বদ্ধপরিকর হয়ে। হোকনা সেই দাবি আদায় বন্দুকের নলের মাধ্যমেই, ক্ষতি কি তাতে আর কি এমন। গরীব মানুষের দাবি আদায় তো হোক আগে। গরীব মানুষের মুখে আগে হাসি ফুটুক তো। তারপর দেখা যাবে কি করে হলো এই দাবি আদায়।

জীবনের এই দৌড় আর দিন যাপন ধীরে ধীরে তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে সারা দেশ জুড়েই। আজ বয়স বেড়েছে তাঁর অনেক। মাঝে মাঝেই মনে হয় এই যে এত আন্দোলন, ছুটে চলা, সব কি দাবি আদায় করা গেলো এই এক জীবনে। যে কাজ করবেন বলে সেই আই এ এস এর কাজে যোগ দিলেন না তিনি একদিন সেই যুবক হয়ে। নাকি কিছুটা ভুল হলো কে জানে। তবু তো আজও কেমন এই আশি বছর বয়সেও স্বপ্ন দেখেন গ্রামের মেঠো মানুষগুলোর জন্য আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে। তিনি যে স্বপ্ন দেখতে বড়ই ভালোবাসেন বরাবর। আর তাই এই বয়সেও বেরিয়ে পড়েন তিনি সেই যুবা কালের মতই হাসি মূখে। 

কথা হচ্ছিল আমার সুবোধদার সাথে পারুলডাঙার মাঠে দাঁড়িয়ে। মাঠের একধারে ভীড় জমেছে কিছু গ্রামের প্রান্তিক মানুষের। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের গ্রামে একটি শিশুদের জন্য পার্ক তৈরি করে দিতে এগিয়ে এসেছে। আর সেই পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা হলো আমার সাথে সুবোধ মিত্রর বহুদিন পরে, বহুবছর পরে। আমায় দেখেই একগাল হেসে বললেন এই তো ২৪ ঘণ্টার অভিজিৎ এসে গেছে। আমি হেসে বললাম না, আমি আর এখন ২৪ ঘণ্টায় নেই দাদা।

আমার মনে পড়ে গেলো সেই বহুদিন আগের কথা। সেই আদিবাসীদের নিয়ে একটি আন্দোলনে হঠাৎ করেই নকশাল নেতা সুবোধ মিত্রের ফোন ইন নিয়ে ছিলাম আমি ২৪ ঘন্টা চ্যানেলে সেই সময়। সেই কথা আজও মনে রেখেছেন তিনি। আর সেই থেকেই এই আমাদের দুজনের যোগাযোগ শুরু। যে যোগাযোগ করে দিয়েছিলেন আমায় তাঁর নম্বর দিয়েছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক হুগলী জেলার কোন্নগরের সেই রূপম চট্টোপাধ্যায়। আমার রূপম দা।

কত কথাই না মনে পড়ে গেলো আমার সেই ওনার কথা লিখতে বসে। বল্লভপুরের বাড়ীর পাশে স্কুল এর ছবি দিলেন আমায় বললেন এখানে এসো একদিন তুমি। সেই হঠাৎ শুনলাম অসুস্থ হয়েছেন তিনি একদিন ছবিতে দেখলাম।। পরে একদিন ফোন করলাম বললেন একটু ভালো আছি ভাই মাঝে খুব শরীর খারাপ হয়েছিল আমার। সেই কত স্মৃতি যে জড়িয়ে আছে আমার মনে কে জানে। মাঝে মাঝেই ফোন করে ফেলি আমি তাঁকে। এই সেদিন কথা হলো ওনার সাথে, বললেন আমি বল্লভপুর থেকে নাচনসা গ্রামে চলে এসেছি এসো একদিন তুমি অভিজিৎ আমার বাড়ি ভালো লাগবে। আমি বললাম হ্যাঁ, যাবো দাদা একদিন।

 
সত্যিই অসাধারণ এই জীবন। একটা মানুষ শুধু নিজে নন আরও লোকজনকে মোটিভেট করে আই এ এস এর ট্রেনিং এর সময়ে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিলেন জীবনকে একটু অন্য ভাবে দেখতে হবে। জীবনকে সবার জন্য বিলিয়ে দিতে হবে। জীবনকে উপলব্ধি করতে হবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সুখে হেসে খেলে লালবাতি গাড়ী চেপে নয়। একদম ছকে বাঁধা জীবন ধরে এগিয়ে চলা নয় তাঁর। আর তাঁর যেমন ভাবা তেমন কাজ। সত্যিই ভাবা যায় এমন ভাবনার একজন মানুষের কথা। 

সেই আমলে ১৯৭০ সালে বীরভূমে সর্বত্রই তখন নকশালদের দাপটে টেকা দায় গোটা জেলায়। যে কোনো রাজনীতির লোকদের তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। রোজ খুনোখুনি লেগেই আছে। সেই সময় থেকেই বীরভূমের দায়িত্বে ছিলেন এই প্রবীন নকশাল নেতা সুবোধ মিত্র। আর বর্ধমানের জেলার দিক দেখতেন কিষাণ দা। যিনি ভাগলপুর জেলে ছিলেন প্রায় ১১ বছর। পরে তিনি মারা যান। আর বীরভূমের দায়িত্বে সুবোধ দা ছাড়াও যাঁরা বিভিন্ন নকশাল নেতা এই বোলপুরের এলাকায় কাজ করতেন তাঁরা হলেন শৈলেন মিশ্র, ভারতজ্যোতি, সুজিত চট্টরাজ, নীরেন ঘোষ এরা কাজ করতেন বীরভূমের বিভিন্ন জায়গায় নকশাল মুভমেন্টে।

যে বীরভূমের সুরুলে এর প্রত্যন্ত গ্রামে সেই সময় রাজ্যে প্রথম আন্ডার গ্রাউন্ড রেডিও স্টেশন তৈরি করা হয়েছিল যাতে সব গোপন খবর আদানপ্রদান করা যায় সেই মাধ্যমে। যা এই এলাকার নকশালরা করে। সেই সময় বারবার কংগ্রেসের বিভিন্ন ছাত্র ফ্রন্টের নেতাদের ওপর আক্রমণ করেছে এই দাপুটে এলাকার নকশাল নেতারা। যে কোনো ভাবেই সেই সব ছাত্র ফ্রন্টের কংগ্রেসের নেতারা কোনও সময় হোস্টেল থেকে, বাড়ী থেকে, পালিয়ে বেঁচেছেন কোনরকমে। যাঁর মধ্যে একজন হলেন সেই আমলের কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদের বড়ো নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়। যিনি এখনও এই কথা বলেন গল্প করতে করতে হাসতে হাসতে নিজের ঘরে বসে। সেই ইন্দিরা গান্ধীর ছবি আজও তাঁর ঘরের দেওয়ালে টাঙানো আছে। সেই আমলের নবীন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁকে পছন্দ করতেন খুব, সেই গল্প অন্য একদিন লিখবো।

আসলে সেই দিন বদলের স্বপ্ন দেখা এই সময়, এই কালটি বেশ কঠিন সময় পার করেছে এই বাংলার রাজনীতিতে। যে রাজনীতিতে বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস। এটা ছাড়া আর কিছুই যে তাঁদের কাছে ছিল না তখন। আর সেই বিখ্যাত উক্তিকে স্মরণ করেই তো এতগুলো বছর জীবনের কাটিয়ে দেওয়া আর শুধুই দৌড়ে বেড়ানো। এই বীরভূমের নকশাল আন্দোলন নিয়ে বইও আছে অগ্নি সামন্তর। মুলুকের নকশাল আন্দোলন এর ঘটনা নিয়েও লেখা হয়েছে। সম্প্রতি লেখক রূপম চট্টোপাধ্যায় তাঁর বইতে মুলুক এর ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। সেই সুবোধ মিত্র যিনি পড়ে সম্ভবত Communist Organisation of India (Marxist–Leninist)। COI (ML) তৈরি করেন। 

ভারতের কমিউনিস্ট সংগঠন (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) ছিল ভারতের একটি রাজনৈতিক সংগঠন। সিওআই (এমএল) গঠিত হয়েছিল মে ১৯৮৫ সালে ছয়টি ভিন্ন গোষ্ঠীর একীকরণের মাধ্যমে। কানু সান্যাল সিওআই (এমএল) এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।সিওআই (এমএল) নির্বাচনে অংশ নেয়। ২০০৩ সালে সিওআই (এমএল) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) ইউনিটি ইনিশিয়েটিভের সাথে একীভূত হয়ে একটি ইউনিফাইড সিপিআই (এমএল) গঠন করে।

সেই বিখ্যাত মানুষটিকে এই আমার এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবনে ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পেয়ে বড়ো ভালো লাগলো আমার। যিনি আজও সেই আদিবাসীদের ডাকে বেরিয়ে পড়েন ঘর ছেড়ে মাঝে মাঝেই। সেই চেনা পথ ধরে হেঁটে বেড়ান একা একা। আদিবাসীদের জঙ্গলের অধিকার নিয়ে, এই দ্রুত হারিয়ে যাওয়া খোয়াই নিয়ে, নষ্ট হয়ে যাওয়া কোপাই নিয়ে, মনে মনে ভাবেন আবার আন্দোলনে নামার কথা এই এতো বছর পরেও এতদিন পরেও। 

তাঁর বুকের ভিতরটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে ওঠে। তিনি ভাবেন একটা জনস্বার্থ মামলা করলে কেমন হয়। তাহলে যদি এই জঙ্গলকে একটু বাঁচানো যায়। এই নদীকে একটু বাঁচানো যায়। একদিন এই মানুষ গুলোর একটু মুখে হাসি ফোটানো যায়। জীবন মানেই শুধুই মুনাফা অর্জন করা নয়। শুধুই টাকা আয় করে ব্যাংক ব্যালেন্স করা নয়। জীবনের অর্থ তো শুধুই মুনাফা লাভ করা নয়। আরও অনেক কাজ বাকি আছে যে এই একটা ছোট্টো জীবনে।
তাই পারুলডাঙার মাঠে দাঁড়িয়ে ঘুরতে ঘুরতে তিনি যেনো স্মৃতি চারণ করে ফিরে গেলেন সেই সত্তরের আগুন ঝরা দশকে। সেই মানুষটি সত্তরের দশকের মতই আবার একটি বারের মত আন্দোলনে নেমে পড়তে চান। যে বন্দুকের আন্দোলন এই গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের জন্যই। ভালো থাকবেন আপনি সুবোধ দা। সুস্থ থাকুন। আনন্দে থাকুন। 

নকশাল নেতা সুবোধ মিত্র - অভিজিৎ বসু।
তেইশ জানুয়ারী দু হাজার চব্বিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...