সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মহিষঢালের গল্প


আজ আপনাদের কাছে মহিষঢালের গল্প। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে আমার সাইকেল চালিয়ে চলে যাওয়া সেই গ্রামে। আসলে কি জানেন বাংলার সব গ্রামের ছবিই এক। তাই নতুন করে আর কি বা বলার আছে এই গ্রাম নিয়ে। কী বা বিশেষ বিশেষত্ব আছে এই মহিষঢাল গ্রাম নিয়ে। তবু কি জানেন গ্রামের একটা আলাদা গন্ধ আছে। যে গন্ধটা ঠিক কোথা থেকে বের হয় সেটা ঠিক জানা যায় না। সেটা ঠিক ধরা যায় না। আর সেটা ঠিক বোঝাও যায় না কিছুতেই। কিন্তু সেটা শুধু মাত্র অনুভব করা যায়। 



কিন্তু গ্রামের একটা মাতাল করা মিঠে কড়া স্বাদের গন্ধ আছে। যে গন্ধ তার গায়ে যেনো সেঁটেই থাকে। ঠিক যেনো হলুদ সবুজ সর্ষে ক্ষেতের মাথায় গুনগুন করে উড়ে বেড়ানো প্রজাপতির মতোই। ঠিক যেনো ভেঙে পড়া দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঘুঁটের মতই। যার গায়ে গুবড়ে পোকা ঘুরে বেড়ায় আপনমনে তার নিজের মতো করেই। 

বোলপুর থেকে কম বেশী দশ কিলোমিটার রাস্তা হবে এই মহিষঢাল গ্রাম। সবুজ বিপ্লবের মতোই উন্নয়নের কালো মসৃণ পিচ রাস্তা ধরে কেমন গড়গড় করে সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে যাওয়া নিজের ছন্দে। সেই চেনা পথ ধরে, চেনা রাস্তার বাঁক ধরে। সেই পূর্বপল্লীর মাঠ, সেই বিশ্বভারতীর ফার্স্ট গেট, সেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সূবর্ণরেখা বই এর দোকান, সেই রতন কুঠির গেট, সেই শ্যামবাটি বাজার পার হয়ে একেবারে সোজা ক্যানেলের ধার। আর সেখান থেকেই এগিয়ে চলা প্রান্তিক স্টেশনের দিকে। একটু এগিয়েই সায়র বীথি পার্ক এর দিকে এগিয়ে যাওয়া সাইকেল করে। যে পথ ধরে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে কত নাম জানা বিখ্যাত সব হোম স্টে আর রিসর্ট এর জঙ্গল। রাস্তার ধারে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা প্রতীক্ষায় আর অপেক্ষায়। 

আর এই পথেই হঠাৎ করে সর্ষে ক্ষেতের মাঝে নিজে নেমে পড়ে একটু ছবি তুলে ফেললাম আমি। চারিদিকে বিশাল বাড়ির পাশে সর্ষে ক্ষেতের হাতছানি আমাকেও কেমন স্থবির করে দিলো যেনো। সাইকেল থামিয়ে নেমে পড়লাম ক্ষেতের মাঝে। মুঠো ফোনে নিজের ছবি তুললাম আমি। জানি এটা দেখে বউ আর মেয়ে গালাগাল দেবেই নিশ্চয়ই। কারণ অকেজো লোকের এই ছবি বন্দী জীবন আর কেই বা মেনে নেয় বলুন। এই কর্মহীন জীবনের মানুষকে কে আর দীর্ঘদিন রেয়াত করে সহ্য করে।‌ তবু তো লোভ সামলাতে পারলাম না আমি। দূরে মেঘের মাঝে সুয্যি মামার আড়াল আবডাল থেকে আমাকে লক্ষ্য করে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকা আর একদৃষ্টিতে আমায় জরিপ করা। আর মনে মনে বলা বুঝলাম কেনো তোমার এই অবস্থা। কাজ নেই, কম্ম নেই, আয় নেই, পয় নেই, খালি এদিক ওদিক দিশাহীন ভাবে বেরিয়ে পড়া আর ঘুরে বেড়ানো। এই এলোমেলো, এলেবেলে, বিন্দাস জীবন নিয়ে। 

যাই হোক এই দীর্ঘ পথেই এগিয়ে যেতে যেতে আমার পুরোনো বদরোগ বা অভ্যাস মতই অনেককে ফোন করলাম আমি। দেশের নায়ক নেতাজীর জন্মদিনে হয়তো ব্যস্ত সবাই। তাই কেউ আর আমার ফোন ধরলো না। কিন্তু আমি ভাবলাম সত্যিই কি তাহলে আমি এই সমাজে, এই সংসারে, এই নানা সম্পর্কের বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছি, একদম একা একাই ওই সৌরজগতে ঘুরপাক খাওয়া গ্রহের মতোই।

 সত্যিই অসাধারণ তো তাহলে এই একা জীবন। মাতৃহীন, বন্ধুহীন, আত্মীয় স্বজনহীন, এই জীবনে কারুর সাথে একটু কথাও বলতে পারবো না আমি। এতটাই আমি একা, একদম একাই। না, মন সায় দিলো না আমার। এই নির্বান্ধব জীবনে একটু কথা বলার লোক নেই আমার একদম। পরক্ষণেই ফোন করে ফেললাম আমার সেই কলকাতার আমলকী গাছের চেনা বন্ধুকে। খুব বেশিদিন হয়নি এই বন্ধুত্ব আমাদের। এক ফোনেই সেই বন্ধু আমার ফোনে উত্তর দিলো। বললো দাদা বলো কি খবর। আমি বললাম মহিষঢাল যাচ্ছি দাদা সর্ষে ক্ষেতের ছবি তুলতে দাঁড়িয়ে পড়েছি আমি রাস্তায়। সে বলল দাদা, ঘরে শুয়ে ছবি দেখি দাও আমায়। আমি ছবি দিলাম তাকে সে ছবি দেখে উত্তর দিলো বাহ ,দারুন সুন্দর। মনটা ভালো হয়ে গেলো আমার। তাহলে কেউ একজন তো ফোনে কথা বললো আমার সাথে উত্তর দিলো আমায় এই বন্ধুহীন জীবনে শীতের আলসেমির দুপুরে ঘুম ভেঙে উঠে। 

এগিয়ে চললাম আবার সেই শীর্ণকায় কোপাই এর ধার ধরে ছোট্ট গ্রামে মহিষঢালে। তালতোড় এর জমিদার বাড়ী পার হয়ে প্রান্তিক থেকে কোপাই যাওয়ার রেল লাইনের নিচের পথ ধরে এগিয়ে চললাম সেই গ্রামের দিকে। আর দেখলাম রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেই গ্রামের নামফলক। আর সেই নামফলকের সাথে তাল মিলিয়ে গোটা রাস্তা জুড়েই গরু মহিষের দল ঘরে ফিরছে তারা লাইন করে। সত্যিই তো নদীর ঢালু পথে সকাল হলেই গরু মহিষের বিচরণ ক্ষেত্র। আর সেই থেকেই তো এই জায়গার নাম হলো মহিষঢাল। লাঠি হাতে বৃদ্ধা আপন মনে এগিয়ে চলেছে ঘরের দিকে। আর সেই কোপাই ব্রিজের উপর চার পেয়েদের দুলকি চালে ঘরে ফেরা। কেমন যেনো উন্নয়নের রাস্তায় গতিও হঠাৎ করেই শ্লথ করে দিলো। ওদের দেখতে দেখতে, আর কোপাই নদীতে শেষ বেলায় কেমন জাল ফেলার ছবি তুলতে তুলতে আমি পৌঁছে গেলাম সেই গ্রামে। 

গ্রামের রাস্তায় তখন বাঁশপাতার মিষ্টি গন্ধ ভুরভুর করছে। ঠিক যেনো মিঠে পানের পাতায় আমার দিদার সেই জর্দা কৌটো খুললে যে গন্ধ বের হতো একদম সেই গন্ধ।গরুর গায়ের গন্ধ আর বাঁশ বন এর ভিতর থেকে আসা একটি মিষ্টি গন্ধ গায়ে মেখে এগিয়ে চললাম আমি সেই মহিষঢাল বাঙালি পাড়ার দিকে ধীরে ধীরে সাইকেল না চালিয়ে পায়ে হেঁটে। আদিবাসী পাড়া পার হয়ে একে ওকে জিজ্ঞাসা করতে করতে। সেই মেঠো রাস্তায় শুকনো খড় এর ওপর কেমন দুটি কালো ছাগলের পথ আটকে খেলা করা। মাটির বাড়ীর ঘুঁটে দেওয়া দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মা মাটি মানুষের উজ্জ্বল প্রতীক। গ্রাম্য বৌ এর লাজুক চাওনি। আর গাছের নিচে পড়তে বসা দুই শিশুর আমায় অবাক চোখে দেখা। 

বেশ ভালই লাগলো আমার। শীতের পড়ন্ত বিকেলের রোদ তখন সর্ষে ক্ষেতের ওপর থেকে ধীরে ধীরে সরে গিয়ে দূরে গাছের আড়ালে মুখ লুকোতে ব্যস্ত ত্রস্ত পায়ে। ওই গ্রামের কলে জল নিতে আসা লাজুক প্রকৃতির বউ এর মতই। না ঘরে ঘরে সরকারের জল পৌঁছে যায়নি এখনো এই গ্রামের সব বাড়ীতে। যদিও গ্রামের এক ছেলের জবাব পাইপ পড়েছে অনেক আগেই এই গ্রামে। জল এসে হাজির হয়নি উন্নয়নের গতির সাথে তাল মিলিয়ে দ্রুত গতিতে। বাহ দারুন সুন্দর তো। এগিয়ে গেলাম আরও কিছুটা গ্রামের ভেতরে আমি পায়ে হেঁটে।

 গ্রামের ধারে রাস্তার পাশে আলপনা দেওয়া ছোট্ট জায়গায় ঠাকুরের থানে উল্টোনো ঘট আনমনে পড়ে আছে একা একাই কেমন করে যেন। জমির আলপথ ধরে ঘরে ফেরা পুরুষ নারীর দল সারাদিনের চাষের কাজ সেরে ঘরে ফিরছে তারা।‌ গোটা গ্রাম জুড়েই তখন অন্ধকার নামছে ধীরে ধীরে। সেই মাটির গন্ধ মাখা জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম আমি এদিক ওদিক একা,একদম একাই। 

সেই শুকনো খড়ের গাদায় তখন নরম রোদের আলতো ছোঁয়া। রং চটা মাটির বাড়ী, টিনের চাল, উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা ধানের মরাই, আলোহীন ঘর দুয়ার, দূরে ভেসে আসা শিয়ালের ডাক,ঝি ঝি পোকার ডাক, আর সেই মিষ্টি গন্ধ মাখা অন্ধকার পথ ধরে হেঁটে বেড়ালাম আমি একা একাই। 

শীতের সন্ধ্যায় তখন দূরে শিয়ালের মন কেমন করা হুক্কা হুয়া ডাক, সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বেলে উঠোনে দাঁড়িয়ে সেই ছাপা শাড়ি পরা লাজুক বউ এর প্রদীপ হাতে প্রনাম করা। আর সেই স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রং চটা মাটির ঘর, দুয়ার, আলপথ, সর্ষে ক্ষেতের হলুদ ফুলের মিষ্টি গন্ধ, সেই বাঁশ পাতার মিষ্টি মন কেমন করা গন্ধ, সেই মাটির উঠোনে আলপনা দেওয়া ধানের মড়াই এর গন্ধে ভরপুর এই গ্রাম। সেই গন্ধকে বুকে জড়িয়ে ঘরে ফেরার পথ ধরলাম আমি। অন্ধকার পথ পেরিয়ে উজ্জ্বল অলোকময় শহরে। যে শহরে বড্ড বেশি ভীড়। যে শহরে বড্ড বেশী হিসেব নিকেশ করে কথা বলা, চলা আর দ্রুত গতিতে বদলে যাওয়া। 

মহিষঢালের গল্প - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...