এই বাংলা মিডিয়ায় কিছু কিছু মানুষ থাকেন যারা শুধু নীরবে নিভৃতে কাজ করে যান। মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করে যান হাসিমুখে। নিজেদের হাতে অনেককে কাজের সুযোগ দিয়ে নিজের হাতে তাদের তৈরি করে, কেমন দুর থেকে তাদের থেকে নিজেকে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ে যেতে দেখেও কেমন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন রাস্তার পাশে বা খেলার মাঠের ধারে আনমনে। আর মনে মনে ভাবেন এই জীবনে আর নিজেকে বদলে নেওয়া হলো না কিছুতেই তাঁর অনেক চেষ্টা করেও। থাক না এই জীবনে না হোক পরের জীবনে তো চেষ্টা করবে সে নিজেকে কিছুটা বদলে যেতে। যেভাবে হোক টাকা রোজগার করতে। তাহলে হয়তো তার পরিবারটি বেঁচে যাবে।
বাংলা সাংবাদিকতার ময়দানে এই নানা ধরনের আর নানা রকমের বদলে যাওয়া আর বদলে নেওয়া মানুষ জনের কাছে এই বর্ধমানের পার্থ চৌধুরী একজন হাল আমলের একজন বদলে না যাওয়া এক সাংবাদিক। ২৪ ঘণ্টার চ্যানেলের সেই পার্থ চৌধুরী। যাকে এক ডাকে সবাই চেনে। বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, কাটোয়া, কালনা, বাঁকুড়া , পুরুলিয়া, এমন নানা জায়গার টিম তৈরির দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন সেই সময় প্রয়াত অভীক দত্ত ও অঞ্জন বন্দোপাধ্যায়। কিছুই ভাবতে হয়নি তাঁদের সেই সময়।
নতুন চ্যানেলে এমন সব দৌড়ে বেড়ানো ছুটে বেড়ানো সাংবাদিকদের জোগাড় করে নিজের চ্যানেলের টিম করে নিজে বেশ ভালো পজিশনে ছিলেন সেই সময়। সেই বর্ধমানের পার্থ চৌধুরী আর তার সঙ্গে অরূপ লাহা। অভিন্ন হৃদয় জুটি ওদের দুজনের। এই সাংবাদিকদের যেখানে সব সময় নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, নানা বদনাম করা হচ্ছে তাদের নামে। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পার্থ চৌধুরী এত গুলো বছর কাজ করেও কেমন গায়ে পাক না লাগিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিলো হাসিমুখে। একদম মাটির কাছে থেকেই। মাটির গন্ধ শুঁকে।
আজ সাদা জীবনের কালো কথায় সেই বর্ধমানের কার্জন গেটের সেই হাসিমুখের ২৪ ঘণ্টার পার্থ চৌধুরী। সেই খুব কম পয়সায় কাজ করা এক সাংবাদিক, যে একদিন ক্ষমতার উচ্চ শিখরে থেকেও কেমন অগোছালো হয়েই জীবন কাটিয়ে দিলো। যে তার মেয়ের মুখে হাসিফোটাতে গিয়ে ক্রমেই সে পিছিয়ে পড়ে গেলো অন্যদের থেকে। তবু ওর সেই দাদা কি খবর গো শুনতে বেশ ভালই লাগে। দাদা, তোমার সময় আমরা বেশ ভালোই ছিলাম। আর আমি ওর কথা শুনে বলি কাউকে এই ভালো রাখার সুযোগ পেলে তাকে ভালো রাখাই উচিৎ।
যে গল্পটা বলা দরকার এই বর্ধমানের পার্থ চৌধুরী কে নিয়ে লিখতে গেলে সেটা হলো একদিন সার্কিট হাউসে বসেই তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু একটি লোকাল চ্যানেলকে একটি ইন্টারভিউ দেন। সেই ইন্টারভিউ এর মধ্যে সেই বিখ্যাত উক্তি তাঁর ঐতিহাসিক ভুল এর কথার উল্লেখ করেন তিনি আবার। যদিও তার আগে সুরভী বন্দোপাধ্যায় তাঁকে নিয়ে লেখা জ্যোতি বাবুর অটো বায়োগ্রাফিতে নানা অজানা কথার উল্লেখ করেন। যে কথা জ্যোতি বসুকে নিয়ে আর কোথাও মেলে না। আর সেই বই এর প্রকাশ এর আগেই দি এশিয়ান এজ কাগজে জ্যোতি বসুর এই কথা এক্সক্লুসিভ আট কলম স্টোরি বের করেন বিখ্যাত সাংবাদিক এম জে আকবর। রাতারাতি সারা দেশেই হৈ চৈ হুল্লোড় পড়ে যায় এই লেখা কাগজে বের হতে। বিখ্যাত হয়ে যায় এম জে আকবর এর কাগজ এশিয়ান এজ।
আর তারপরে জ্যোতি বসু বর্ধমানে এক সরকারি অনুষ্ঠানে এসে ফের স্থানীয় লোকাল একটি কেবল চ্যানেলে আবার বলেন এই ঐতিহাসিক ভুল এর কথা। যে সময় এই গোটা সাক্ষাৎকার নেওয়ার ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মদন ঘোষ। সেই সময় জ্যোতি বসুর এই সাক্ষাৎকার দেবার সময় সার্কিট হাউসে তিনি ছিলেন। হাজির ছিল এই পার্থ চৌধুরী ও লোকাল একটি ক্যামেরাম্যান। কোনও প্রশ্ন করা যাবে না এই শর্তে ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন সেই সময় জ্যোতি বসু এমনটা শোনা যায়। আর জ্যোতি বসুর এই বিখ্যাত দামী ইন্টারভিউ ট্রান্সফার নিয়ে ইটিভির বর্ধমানের জেলার দায়িত্বে থাকা রিপোর্টার হীরক কর সেটি কোলকাতায় পাঠায় আশীষ ঘোষদার কাছে। আর সেই জ্যোতি বসুর বিখ্যাত উক্তি ঐতিহাসিক ভুল প্রথম ইটিভি বাংলাতে প্রচারিত হয়। কোনও টিভি চ্যানেলে সেটাই প্রথম দেখানো হয় এই কথা। যা আজও ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।
আসলে তিনি সেই সময় একটু দলকে শিক্ষা দিতে এই মন্তব্য করেছিলেন বলেই মনে করা হয়। কারণ জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে যে সারা দেশ জুড়ে হৈ চৈ পড়ে গেছিল। একজন বাঙালি প্রধনমন্ত্রী পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলো সবাই। আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু সব কিছুই ভেস্তে যায় দলের একশ্রেনীর নেতাদের কারণে। আর তারপরেই জ্যোতি বসুর বিখ্যাত উক্তি ছিল এটা ঐতিহাসিক ভুল। পরে যদিও কলকাতার পার্টি কংগ্রেসে দল কিছুটা এই দলীয় নিয়মের দুটো ক্লস রদবদল করে পরে। সেই কথাই আমায় গল্প করতে করতে বললেন প্রবীণ সাংবাদিক আমার প্রাক্তন বস শুভাশীষ মৈত্র। তাঁর কথায় জ্যোতি বসু নিজেই এই বইটি কলকাতা বইমেলায় উদ্বোধন করতে আসেন। বইটির নাম অ্যান অথোরাইজড বায়োগ্রাফি অফ জ্যোতি বসু। সেই বই এর উদ্বোধন এর সময় তিনি বলেন এই বই এর যে সব কথা ইনভার্টেড কমার মধ্য লেখা হয়েছে সেই সব কথাই আমার নিজের কথা। এগুলো লেখকের মন গড়া কথা নয়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি অফিস যাবার সময় তাঁর স্ত্রী জ্যোতি বসুর পকেটে পূজোর ফুল গুঁজে দিতেন। এই বইটি পড়ে লন্ডন থেকেও প্রকাশিত হয়। আর বর্ধমান সার্কিট হাউস এর এই গোটা ঘটনার সাক্ষী ছিল সেই দিন পার্থ চৌধুরী। পরে সুরভী বন্দোপাধ্যায় এর লেখা বইতে দেখা যায় জ্যোতি বসুর মুখে এই তাঁর জীবনের নানা ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে সেটি লেখা হয়েছে জ্যোতি বসুকে নিয়ে তাঁর এই বইতে। যে বই আজও দলিল হয়ে আছে। যে বই জ্যোতি বসু নিজেই অনুমোদন করে গেছেন।
সেই আকাশ বাংলার পার্থ, সেই ২৪ ঘন্টার পার্থ, সেই চলচিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার এর খুব নিকটের পার্থ। সেই প্রয়াত অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় আর অভীক দত্তর খুব ভরসার ছেলে পার্থ। যার সাদামাটা হাসিখুশি জীবন। সেই পার্থর চিরাচরিত নির্লোভ আর অনাড়ম্বর জীবন। যে জীবন নিয়ে পার্থর থেকেও গর্ব অনুভব করি আমি। আজকাল যে এমনটা দেখাই যায়না কিছুতেই। ভালো থাকিস ভাই পার্থ।
বর্ধমানের পার্থ - অভিজিৎ বসু।
ষোলো জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন