সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফিরে এলো সেই গ্রাম

সবুজ গ্রাম, সবুজ বাংলা,বেশ চোখের দৃষ্টিতে আরাম এনে দেয় আমাদের। শহুরে জীবনের ছোঁয়া ছেড়ে গ্রামের সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে গভীর ভালোবাসা, মমত্ব বোধ। চেনা মানুষদের থেকেও অচেনা অজানা মানুষরা কত অল্প সময়ে কাছের মানুষ হয়ে ওঠে। আসলে শহুরে স্বার্থপর জীবনের মোরাম রাস্তায় দিন যাপন করে ক্লান্ত আমি, শেষ জীবনে তাই গ্রামেই ফিরতে চাই আমি। মিশতে চাই সহজ সরল করে গ্রামের মানুষের সাথে।


 যে মানুষদের সাথে জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে। কর্ম জীবনের বহু বছর কাটিয়েও তাদের বুঝে উঠতে পারলাম না, ঠিক করে চিনতে পারলাম না আজও। সেই সব মানুষদের থেকে দূরে, অনেক দূরে সরে গিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে চাই। যে স্বপ্ন দেখে আচমকা মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে উঠে বসতে হবে না আর আমায়। বেশ সুখ নিদ্রা দিয়ে সকালে ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে আলু ক্ষেত দেখা যাবে মাথা ঘুরিয়ে। মাঠের মাঝে সর্ষে ফুল এর মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে সকাল গড়িয়ে দুপুর হবে। আদিগন্ত বিস্তৃত ধানের সবুজ ক্ষেতকে দেখে ভালবেসে সন্ধ্যার মেঘমালাকে বুকে চেপে রেখে আবার ঘুমোতে যাওয়ার কথা ভাবতে পারবো আমি নিশ্চিন্ত মনে। আর ভাবতে হবে না আমায় পরের দিন কি করে অঙ্ক কষে মেপে মেপে পা ফেলে বাঁচবো আমি। 

আসলে জীবনের এই দৌড় ভালো লাগছে না কিছুতেই আর। জীবনের দৌড়ের এই চু কিত কিত খেলায় আর পেরে উঠছি না আমি, সত্যিই বলতে কি হাঁফিয়ে উঠছি একদম। তাই সব ছেড়ে দিয়ে বিবাগী বাউল হতে চাই আমি। হারিয়ে যেতে চাই সব ছেড়ে দিয়ে নতুন জীবনের সন্ধানে। একদম সব ভুলে নতুন জীবনের সন্ধানে দৌড় দিতে চাই আমি। প্রাণপণে দে দৌড় এই পাঁশুটে জীবন ছেড়ে। সেই ছোটো বেলায় যেমন দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দৌড় দিতাম। তেমন দৌড় দিয়ে হারিয়ে ফেলতে চাই আমার অতীত, আমার বর্তমানকে। 

শুধু ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি আমি আবার নতুন করে। যে স্বপ্ন দেখে জীবনের বাকি কটা দিন কাটাতে পারি নীরবে,নিভৃতে,নির্ভয়ে। পরম আনন্দে নিশ্চিন্তে জীবন কাটাতে চাই আমি। যে জীবনে চলতে চলতে অবিশ্বাস ছোবল মারবে না আর আমায় কোনো দিন। যে জীবনে চলতে চলতে কোনো বিচ্ছেদ মনের মাঝে দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা দেবে না আর। শুধু যেনো এই অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি আমি যে আমরা সবাই মানুষ। সবাই সবাইকে নিয়ে একসাথে চলতে পারি।

 সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবনের মানুষ হয়ে যেনো বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারি আমি। অহঙ্কার, ক্ষমতার দম্ভকে দূরে সরিয়ে যেনো সহজ সরল ভাবে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারি। মাটির রাস্তায় হেঁটে, মাটির ধুলো গায়ে মেখে, বলতে পারি আকাশ পানে তাকিয়ে হে ভগবান আমায় তুমি সবাইকে বিশ্বাস করে বাঁচার শক্তি দিও। 

সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন কাটিয়ে,আমি হেসে যেনো বলতে পারি এই তো বেশ আছি আমি। কষ্ট, দুঃখকে সুখ মনে করে যেনো চুপ করে মুখ বুজে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে পারি আমি সবার মাঝে। হাজার অপমান মুখ বুজে সহ্য করে যেনো চুপ করে থাকতে পারি। জীবনের এই ব্যালেন্সের সফর নামার একদম শেষ পর্বে এটাই চাই আমি। হে ভগবান, হে আল্লাহ, হে প্রভু, তুমি আমায় এই শক্তি টুকু দিও। আর কিছুই চাই না আমি তোমার কাছে। পৃথিবীর রূপ,রং, রসকে উপভোগ করে, প্রকৃতির মাঝে মাটির সাথে মিশে, যেনো সহজ সরল মাটির মানুষ হয়ে বাঁচতে পারি। শুধু এই প্রাথর্নাই করি আমি তোমার কাছে। হে প্রভু তুমি আমায় শক্তি দিও।

ফিরে এলো সেই গ্রাম - অভিজিৎ বসু।
আঠাশ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...